টানা বৃষ্টিতে আরও মোহনীয় সিলেটের সাদা পাথর, বেড়েছে পর্যটক
Published: 4th, May 2025 GMT
যত দূর চোখ যায় শুধু পাথর আর পাথর। ছোট, মাঝারি, বড়—নানা আকারের পাথর। অধিকাংশই সাদা। তবে কালো ও ধূসর পাথরও চোখে পড়ে। সেই পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তীব্র স্রোতের স্ফটিক স্বচ্ছ পানি। সীমান্তের ওপারে সারি সারি পাহাড় থেকে কলকল শব্দে পানি এঁকেবেঁকে এপারের ধলাই নদে এসে মিশছে।
দৃষ্টিনন্দন এই স্থানটির অবস্থান সিলেটের সীমান্তঘেঁষা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে। নৈসর্গিক স্থানটি ‘সাদা পাথর’ নামে পরিচিত। ভারত অংশে সবুজে আচ্ছাদিত সারি সারি পাহাড় আর আকাশে মেঘের খেলা। বাংলাদেশ অংশে ‘পানির মধ্যে পাথরের বিছানা’ খ্যাত সাদা পাথরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত স্বচ্ছ শীতল পানিতে গা ভাসিয়ে দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন পর্যটকেরা।
মূলত বর্ষাকালেই সাদা পাথর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। তবে সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল নামায় বর্ষার আগেই সাদা পাথর যেন পূর্ণ যৌবনে পৌঁছেছে। গেল বর্ষার পর এ সময়ে সাদা পাথরের সৌন্দর্য আরও মোহনীয় ও অপূর্ব হয়ে উঠেছে। ফেসবুকে এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় কয়েক দিন ধরে পর্যটকদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। মহান মে দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে।
ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া নিয়ে মূল পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথরে যেতে হয়। জনপ্রতি ভাড়া পড়ে ১০০ টাকা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পেহেলগামে হামলার ছক ‘পাকিস্তানে লস্কর-ই-তৈয়বার সদরদপ্তরে’
পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার যোগসাজশের ইঙ্গিত আছে। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে বলে একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি অনলাইন।
এনআইএর ওই সূত্রগুলো জানিয়েছে, পেহেলগামে ২৬ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া সন্ত্রাসী হামলার ছক লস্কর-ই-তৈয়বা-ই করেছে। আইএসআইয়ের ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দাদের নির্দেশনায় হয়েছে বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে। হামলার ছকটি পাকিস্তানে লস্করের সদরদপ্তরে চূড়ান্ত হয়েছে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।
আটক একাধিক চর জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, বেসামরিক পর্যটকদের ওপর ওই নৃশংস হামলার কেন্দ্রে থাকা হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান এবং আলি ভাই ওরফে তালহা ভাই পাকিস্তানি নাগরিক। তারা তাদের পাকিস্তানভিত্তিক ‘হ্যান্ডলারদের’ সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং সময়, লজিস্টিকস ও হামলা কার্যকরের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নিতেন।
হাশমি ও আলি ভাই হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতে প্রবেশ করেন। গোপন সহায়তাকর্মীদের (ওজিডব্লিউ) একটি নেটওয়ার্ক তাদের আশ্রয়, ঘোরাফেরা ও হামলার স্থান নির্ধারণসহ স্থানীয় লজিস্টিকাল সরবরাহ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তদন্তের জন্য এনআইএ বিপুল পরিমাণ ফরেনসিক ও ইলেকট্রনিক তথ্য জড়ো করেছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া ৪০টির বেশি কার্তুজ ব্যালিস্টিক ও রাসায়নিক উপাদান পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়।
তদন্তকারীরা হামলার স্থানটির থ্রিডি ম্যাপিং করেছেন এবং উপত্যকার আশপাশের মোবাইল টাওয়ার থেকে ডাম্প ডেটাও সংগ্রহ করেছেন।
হামলার কয়েক দিন আগে ওই এলাকায় হঠাৎ করে স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছিল। তদন্তকারীরা বৈসরন ও এর আশপাশে অন্তত তিনটি স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহারের বিষয় নিশ্চিত হয়েছেন। এগুলোর মধ্যে দুটির সঙ্কেত শনাক্ত ও পর্যালোচনা করা হয়েছে।
এনআইএ এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৮০০-এর বেশি লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এখনো নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যাও দেড় শতাধিক। তাদেরকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদের মধ্যে গোপন সহযোগী (ওজিডব্লিউ) যেমন আছে, তেমনি জামাত-ই-ইসলামি ও হুরিয়াত কনফারেন্সের বিভিন্ন উপদলসহ নিষিদ্ধঘোষিত অনেক সংগঠনের সঙ্গে জড়িতরাও আছেন।
বারামুল্লা, অনন্তনাগ, সোপোরে, পুলওয়ামা ও কুপওয়ারাসহ একাধিক জেলায় অভিযান চলছে। সন্ত্রাসীদের সহায়তাকারী সন্দেহে অনেকের বাড়িঘরেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
১৯৯৯ সালে আইসি-৮১৪ ছিনতাইয়ের অন্যতম মূল চরিত্র মুশতাক আহমেদ জারগার ওরফে লাত্রুমের বাড়িতেও তল্লাশি হয়েছে। মুশতাক এখন পাকিস্তান থেকেই কার্যক্রম চালান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হামলাকারীদের গতিবিধি শনাক্ত করতে এনআইএ পেহেলগাম ও এর আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট ও জনবহুল স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। আশপাশের অঞ্চলের নিরাপত্তা চেকপোস্টগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে তাদের চলাচলের ধরন চিহ্নিত করার কাজও চলছে।
হতাহতদের পরিবারের সদস্য, ঘোড়াচালক, খাবার বিক্রেতাসহ এক ডজনেওর বেশি প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। অনেকেই বলছেন, হামলাকারীদের শরীরে ক্যামেরা লাগানো ছিল। প্রচারের উদ্দেশ্যে পুরো ঘটনাটি রেকর্ড করতেই সম্ভবত শরীরে ক্যামেরা লাগিয়েছিলেন তারা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পেহেলগামে হামলায় জড়িতরা ১৫ এপ্রিলের দিকে পেহেলগাম যান। এরপর তারা বৈসরন, অরু ও বেতাব উপত্যকা ও স্থানীয় একটি পার্ক ভালোভাবে রেকি করেন এবং তুলনামূলক কম নিরাপত্তা উপস্থিতি দেখে বৈসনকে হামলার স্থান হিসেবে বেছে নেন। হামলার আগে অন্তত দুইদিন তারা বৈসরনে পর্যটকদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। এই কাজে চার গোপন সহযোগী (ওজিডব্লিউ) তাদের সহযোগিতা করেছিলেন।
ঢাকা/শাহেদ