দিনাজপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকলেও ক্লাস হয়নি, ফিরে গেছে শিক্ষার্থীরা
Published: 9th, November 2025 GMT
দিনাজপুর শহরের চাউলিয়াপট্টি এলাকায় শিক্ষা দপ্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুর রহমান। প্রতিদিনের মতো বাবার সঙ্গে সে আজ রোববার সকাল সাড়ে আটটায় বিদ্যালয়ে যায়। তবে কিছু সময় পরই সে বাড়ি ফিরে গেছে।
আবদুর রহমানের মতো বিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীরা ক্লাস হবে না জেনে বাড়ি ফিরে গেছে। শিক্ষকেরা তাদের জানিয়েছেন, আন্দোলন ও কর্মবিরতির কারণে বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেলের দশম গ্রেড বাস্তবায়ন, শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি ও চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদানসহ তিন দফা দাবিতে ঢাকায় আন্দোলন করছেন শিক্ষকেরা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’–এর ব্যানারে এই আন্দোলন চলছে। গতকাল শনিবার আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের মিছিলে পুলিশ চড়াও হয়। এ সময় লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেডে শতাধিক শিক্ষক আহত হন। এর প্রতিবাদে সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেয় প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ।
আজ সকালে দিনাজপুর শহরের কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। বেলা সোয়া ১১টায় শহরের মর্ডান মোড় এলাকায় ঘাষিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, দুটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা বসে আছে। ওই কক্ষে শিক্ষক ছিলেন না। অফিস কক্ষে বসেছিলেন তাঁরা। সহকারী শিক্ষক নুরজাহান বেগম বলেন, ‘এটা শিক্ষকদের যৌক্তিক আন্দোলন। আমরা আন্দোলনের সঙ্গেই আছি। সকালে কিছু বাচ্চা এসেছে, তাদের তো আর ফেরত দিতে পারি না। এ জন্য ক্লাসে বসিয়ে রেখেছি। অফিসেই ছিলাম, ওরা হইহুল্লোড় করছে দেখে ক্লাসে এলাম।’
দুপুর ১২টায় বালুয়াডাঙ্গা এলাকায় শিক্ষা দপ্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কোনো শিক্ষার্থীর দেখা পাওয়া যায়নি। প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষক অফিস কক্ষে বসে গল্প করছেন। সহকারী শিক্ষক শারমিন ফারজানা বলেন, ‘শহরের অভিভাবকেরা শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়ে জানেন। এ জন্য অনেকেই বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাননি। সকালে অল্পসংখ্যক বাচ্চা এসেছিল। আমাদের কর্মবিরতির কথা জেনে ওরা বাড়ি চলে গেছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘যৌক্তিক দাবি নিয়ে শিক্ষকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। এমন একটা দেশে বাস করি, যেখানে শিক্ষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে মাঠে আন্দোলন করতে যেতে হয়। রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনীর হাতে মার খেতে হয়। সরকারের উচিত শিক্ষকদের সঙ্গে বসে বিষয়গুলোর সমাধান করা। আমরা শিক্ষক বিদ্যালয়ে ও শ্রেণিকক্ষে থাকতে চাই, রাজপথে নয়।’
দুপুর সাড়ে ১২টায় শহরের লালবাগ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। বিদ্যালয়ের মাঠে খেলা করছিল কয়েকজন শিক্ষার্থী। চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ‘আজ কী জানি একটা দিবস, এ জন্য ক্লাস হবে না। ম্যাডাম বলেছেন, ক্লাস নেবেন না।’
বেলা একটায় শহরের কলেজ মোড় এলাকায় কাহারোল উপজেলার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘সহকারী শিক্ষকেরা বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছেন। এটা যৌক্তিক আন্দোলন। অথচ সরকার বুঝতে চাইছে না। সকালে স্কুলে গিয়েছিলাম। ক্লাস হবে না দেখে চলে এলাম।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র এল ক য় সরক র শহর র সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও মনোনীত প্রার্থীর শোডাউন, প্রশাসনের ১৪৪ ধারা
গাইবান্ধার সাঘাটায় জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি নাহিদুজ্জামান নিশাত ও গাইবান্ধা-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ফারুক আলমের কর্মী-সমর্থকদের মোটরসাইকেল শোডাউনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সম্ভাব্য সংঘর্ষ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
রবিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে বিষয়টি জানাজনি হয়। এর আগে, শনিবার সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর মো. আল কামাহ্ তমাল স্বাক্ষরিত এ আদেশ জারি করা হয়।
আদেশে বলা হয়েছে, শোডাউনকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রুপ পরস্পর বিরোধী অবস্থানে রয়েছে। এতে সংঘর্ষ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা থাকায় রবিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সাঘাটা উপজেলা ও এর আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা কার্যকর থাকবে।
এ সময় এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, মাইকিং, আগ্নেয়াস্ত্র বা দেশীয় অস্ত্র বহন, পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে চলাফেরা নিষিদ্ধ থাকবে। তবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গাইবান্ধা-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ফারুক আলমের কর্মী-সমর্থক এবং বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা নাহিদুজ্জামান নিশাদের কর্মী-সমর্থকরা একই দিনে শোডাউনের ঘোষণা দিলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছেন।
চলতি বছরের ২৪ আগস্ট দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ ও সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাহিদুজ্জামান নিশাতকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে গত ৩ নভেম্বর গাইবান্ধা-৫ আসনে ফারুক আলম সরকারকে ধানের শীষের প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি।
ঢাকা/মাসুম/রাজীব