হত্যার পর সুগন্ধি মাখিয়ে স্বামীর লাশ রেখে দেন স্ত্রী
Published: 6th, May 2025 GMT
সাত বছর আগে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীকে দরজার চৌকাঠের সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে খুন করেন স্ত্রী। এরপর কম্বল মুড়িয়ে সাত দিন লাশটি মালামাল রাখার ঘরে সুগন্ধি দিয়ে রাখা হয়। পরে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত পুকুরে ফেলা হয়। সেখান থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফন করে। এভাবে স্বামীকে খুনের বর্ণনা দিয়ে গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দেন স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪২)।
সূত্রবিহীন এই লাশের পরিচয় শনাক্ত ও খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার গ্রেপ্তার করা হয় নাছিমার দেবর জসিম উদ্দিন ও অটোরিকশাচালক আবুল কালামকে।
সিআইডি সূত্র জানায়, নিহত নাজিম উদ্দিন দীর্ঘদিন সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছিলেন। উচ্চমাধ্যমিকে পড়া তাঁর এক ছেলে নিখোঁজ হয়। পরে বিষয়টি জানতে পেরে স্ত্রীকে না জানিয়ে ২০১৭ সালের জুনে চট্টগ্রামের রাউজানের দক্ষিণ সর্ত্তা গ্রামের বাড়িতে আসেন নাজিম। ছেলে নিখোঁজের বিষয়টি না জানানোর কারণে স্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ হন তিনি। স্ত্রীও এভাবে স্বামীর দেশে আসা মেনে নিতে পারেননি।
সংসার খরচ চালানো, ঋণ পরিশোধ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয় নাছিমার। ঘটনার দিন ২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট নাছিমাকে ঝগড়ার এক পর্যায়ে চড় মারেন স্বামী নাজিম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজিমকে ঘরের দরজার চৌকাঠের সঙ্গে ধাক্কা দেন নাছিমা। মাথায় আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নাজিম। রক্তক্ষরণে মারা যান। ওই সময় ঘরে স্বামী–স্ত্রী ছাড়া কেউ ছিলেন না। স্ত্রী নাছিমা স্বামীর লাশ পার্শ্ববর্তী মালামাল রাখার ঘরে নিয়ে যান। কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখা লাশ থেকে কোনো দুর্গন্ধ যেন বের না হয়, এ জন্য নানা রকম সুগন্ধি ব্যবহার করেন। এভাবে সাত দিন ওই ঘরে রেখে দেন। ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা রক্ত মুছে ফেলেন। পুড়িয়ে ফেলেন নাজিমের পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। স্কুলপড়ুয়া দুই মেয়ে ঘরে এলে তাদের জানানো হয় তাদের বাবা আবার বিদেশ চলে গেছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা ছত্রধর ত্রিপুরা আরও বলেন, নাছিমা পরে তাঁর স্বামীর লাশটি ঘরের পাশের পরিত্যক্ত পুকুরের পাড়ে জঙ্গলে ফেলে দেন। সেখান থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম লাশটি দাফন করে। প্রথমে মামলাটি থানা–পুলিশ তদন্ত করে। দুই বছর পর সিআইডিতে আসে তদন্তের জন্য।
সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার ছত্রধর ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, সূত্রবিহীন এই মামলার তদন্তে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়। স্ত্রী নাছিমা আক্তার স্বামীকে খুনের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীকে খুন করার কথা স্বীকার করেন। এমনকি লাশ সাত দিন ঘরে কম্বল মুড়িয়ে সুগন্ধি লাগিয়ে রাখেন। পরে আদালতের নির্দেশে তিন আসামিকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের পক্ষে কি বাগরাম ঘাঁটি ফের দখল করা সম্ভব?
ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভবত ‘অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার রাখিতে যাইবার মতো’ বিড়ম্বনার মুখে পড়েছেন।
তিনি প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে রীতিমতো চুক্তি করে আফগানিস্তানের ‘অধিকার ছাড়িয়া’ দেওয়ার পর মার্কিন সেনারা ঘটিবাটি রেখে যে বাগরাম ঘাঁটি ফেলে চলে এসেছিলেন; আজ পাঁচ বছর পর তিনি সেই ঘাঁটির ‘অধিকার’ দাবি করে বসেছেন।
সেই ‘অধিকার’ বুঝে না পেলে তিনি ‘খুব খারাপ কিছু’ ঘটিয়ে ফেলবেন বলে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার লন্ডন সফর করার সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের পাশে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প ঘর ভরা সাংবাদিকদের সামনে বলেছেন, ‘আমরা বাগরাম ঘাঁটি ফেরত চাই।’
ঘাঁটিটির ওপর আদৌ আন্তর্জাতিক আইনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অধিকার আছে কিনা, ঘাঁটির মালিক দেশটি সেটিকে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করতে দেবে কিনা, যদি না দেয় তো আইন অনুযায়ী তা পাওয়ার সুযোগ আছে কিনা—এসবের ধার তিনি ধারেননি।
ট্রাম্প পরে তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ সরাসরি মাস্তানি ভাষায় বলেছেন, ‘বাগরাম ঘাঁটি না দিলে আফগানিস্তানের কপালে খারাবি আছে’।
আরও পড়ুনতালেবানের কাছে হারের দায় যেভাবে ট্রাম্প-বাইডেন দুজনেরই১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪এই ঘটনা গরিব উপেনের কাছ থেকে ‘দুই বিঘা জমি’ হাতিয়ে নেওয়া সেই ‘বাবু’র কথা মনে করিয়ে দেয়। উপেনের শেষ সম্বল দুই বিঘে জমি দেখিয়ে ‘বাবু বলিলেন, “বুঝেছ উপেন, ও জমি লইব কিনে”’।
জমির ওপর নিজের অধিকারের ন্যায্যতা দাঁড় করাতে বাবু যুক্তি দিয়ে উপেনকে বোঝালেন, ‘বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা, পেলে দুই বিঘে প্রস্থ ও দিঘে সমান হইবে টানা—ওটা দিতে হবে।’
আন্তর্জাতিক ‘বাবু’ ডোনাল্ড ট্রাম্পও একই কায়দায় বলেছেন, চীন যেখানে পরমাণু অস্ত্র বানায়, সেখান থেকে বাগরাম মাত্র ঘণ্টাখানিকের পথ। তা ছাড়া রাশিয়াও কাছাকাছি। সব দিক থেকে সুবিধা। এই কারণে ঘাঁটিটা দরকার; ‘ওটা দিতে হবে।’
বছর দশেক আগে হলে, আফগানিস্তান হয়তো খুব একটা গাঁইগুঁই করতে পারত না। কিন্তু এখন আমেরিকার পক্ষে যে আগের মতো কথায় কথায় হামলা চালানো সহজ না, তা চীন জানে, রাশিয়া জানে, ভারত জানে, এমনকি আফগানিস্তানও জানে।
সম্ভবত সে কারণে আফগানিস্তান কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। আফগানিস্তানের সরকার প্রধান বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছু বলেননি।
এখন যে বাগরাম বিমান ঘাঁটি নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটির বিষয়ে ট্রাম্প বলেছেন, এই ঘাঁটিটি যুক্তরাষ্ট্রের বানানো। এখানে কোটি কোটি ডলার খরচ করেছে তারা।