সাত বছর আগে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীকে দরজার চৌকাঠের সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে খুন করেন স্ত্রী। এরপর কম্বল মুড়িয়ে সাত দিন লাশটি মালামাল রাখার ঘরে সুগন্ধি দিয়ে রাখা হয়। পরে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত পুকুরে ফেলা হয়। সেখান থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফন করে। এভাবে স্বামীকে খুনের বর্ণনা দিয়ে গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দেন স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪২)।

সূত্রবিহীন এই লাশের পরিচয় শনাক্ত ও খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার গ্রেপ্তার করা হয় নাছিমার দেবর জসিম উদ্দিন ও অটোরিকশাচালক আবুল কালামকে।

সিআইডি সূত্র জানায়, নিহত নাজিম উদ্দিন দীর্ঘদিন সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছিলেন। উচ্চমাধ্যমিকে পড়া তাঁর এক ছেলে নিখোঁজ হয়। পরে বিষয়টি জানতে পেরে স্ত্রীকে না জানিয়ে ২০১৭ সালের জুনে চট্টগ্রামের রাউজানের দক্ষিণ সর্ত্তা গ্রামের বাড়িতে আসেন নাজিম। ছেলে নিখোঁজের বিষয়টি না জানানোর কারণে স্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ হন তিনি। স্ত্রীও এভাবে স্বামীর দেশে আসা মেনে নিতে পারেননি।

সংসার খরচ চালানো, ঋণ পরিশোধ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয় নাছিমার। ঘটনার দিন ২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট নাছিমাকে ঝগড়ার এক পর্যায়ে চড় মারেন স্বামী নাজিম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজিমকে ঘরের দরজার চৌকাঠের সঙ্গে ধাক্কা দেন নাছিমা। মাথায় আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নাজিম। রক্তক্ষরণে মারা যান। ওই সময় ঘরে স্বামী–স্ত্রী ছাড়া কেউ ছিলেন না। স্ত্রী নাছিমা স্বামীর লাশ পার্শ্ববর্তী মালামাল রাখার ঘরে নিয়ে যান। কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখা লাশ থেকে কোনো দুর্গন্ধ যেন বের না হয়, এ জন্য নানা রকম সুগন্ধি ব্যবহার করেন। এভাবে সাত দিন ওই ঘরে রেখে দেন। ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা রক্ত মুছে ফেলেন। পুড়িয়ে ফেলেন নাজিমের পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। স্কুলপড়ুয়া দুই মেয়ে ঘরে এলে তাদের জানানো হয় তাদের বাবা আবার বিদেশ চলে গেছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা ছত্রধর ত্রিপুরা আরও বলেন, নাছিমা পরে তাঁর স্বামীর লাশটি ঘরের পাশের পরিত্যক্ত পুকুরের পাড়ে জঙ্গলে ফেলে দেন। সেখান থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম লাশটি দাফন করে। প্রথমে মামলাটি থানা–পুলিশ তদন্ত করে। দুই বছর পর সিআইডিতে আসে তদন্তের জন্য।

সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার ছত্রধর ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, সূত্রবিহীন এই মামলার তদন্তে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়। স্ত্রী নাছিমা আক্তার স্বামীকে খুনের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীকে খুন করার কথা স্বীকার করেন। এমনকি লাশ সাত দিন ঘরে কম্বল মুড়িয়ে সুগন্ধি লাগিয়ে রাখেন। পরে আদালতের নির্দেশে তিন আসামিকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তদন ত স আইড

এছাড়াও পড়ুন:

এপ্রিলে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১১ জনের মৃত্যু: এইচআরএসএস

রাজনৈতিক সহিংসতায় গত এপ্রিল মাসে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ১১ জন নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরএসএস বলেছে, এপ্রিলে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপির আটজন এবং আওয়ামী লীগের তিনজন রয়েছেন। গত মাসে এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৭৮টি। এ সময় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৭২৭ জন। তবে মার্চের তুলনায় এপ্রিল মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা কমেছে। মার্চ মাসে এই সংখ্যা ছিল ৯৭টি। মার্চে নিহত হয়েছিলেন ২৩ জন। এসব ঘটনায় আহত হন অন্তত ৭৫৫ জন।

এপ্রিল মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এইচআরএসএস বলছে, রাজনৈতিক সহিংসতার ৭৮টি ঘটনার মধ্যে ৩৯টি বিএনপির অন্তঃকোন্দলের কারণে হয়েছে। এসব ঘটনায় ৭ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন ৪৬৭ জন। বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ২৫টি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০২ জন।

এইচআরএসএস আরও বলেছে, গত মাসে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে দুটি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন তিনজন। বিএনপি-এনসিপির মধ্যে তিনটি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ছয়জন। আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে তিনটি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন চারজন। এনসিপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের চারটি ঘটনায় আহত হয়েছেন পাঁচজন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে তিনটি ঘটনায় ১ জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, ভুক্তভোগীদের পরিবার ও এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী এপ্রিলে র‍্যাবের গুলিতে একজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। থানা হেফাজতে একজন মারা গেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ