স্যুট পইরা আইলে ছাইড়া দিও না, খেয়াল রাইখ
Published: 10th, May 2025 GMT
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশযাত্রার ঘটনার পর শনিবার সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শনে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। পরিদর্শনে গিয়ে তিনি ইমিগ্রেশনের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন। এ বিষয়ে পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেন জাহাঙ্গীর আলম।
এ সময় ইমিগ্রেশনে উপস্থিত একজন পুলিশ সদস্যকে উদ্দেশ্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘স্যুট পইরা আইলে ছাইড়া দিবা আর অন্যদের আটকায়ে রাখবা তা কইরো না, একটু খেয়াল রাইখ।’
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশযাত্রার ঘটনায় তদন্ত কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদনের পর যারা দায়ী তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারা দায়ী তাদের কয়েকজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, কাউকে অ্যাটাচ করা হয়েছে এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে এসবির পক্ষ থেকে একটি নিষেধাজ্ঞা ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কাছে নিষেধাজ্ঞা পাঠিয়েছে কি-না আমি জানি না। আমার কাছে এই ব্যাপারে তথ্য নেই। আপনারা যেহেতু বললেন আমি খোঁজ নেব। যেহেতু তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, কমিটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। যারা দোষী তাদের শাস্তি পেতেই হবে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ২০১১ সালের পর বিদেশে যাইনি। তাই সিস্টেমটা জানার জন্য এসেছিলাম, কীভাবে ইমিগ্রেশন হয় সেসব দেখার জন্য। আমি দেখলাম আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আবেদন করা আছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইন্টারপোল প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারপোল তো আমার কথা অনুযায়ী কাজ করবে না। এ ক্ষেত্রে তারা (ইন্টারপোল) তাদের আইন-কানুন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান ব্লকেড কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের যেন ভোগান্তি না হয় সে ব্যাপারে আপনারাও (সাংবাদিকরা) সচেতন করতে ভূমিকা পালন করতে পারেন। সবার দাবি-দাওয়ার আন্দোলনগুলো যদি রাস্তা ছেড়ে এমন একটি জায়গায় করা হয় যেখানে ভোগান্তি হবে না, তাহলে সেটা খুব ভালো হয়।
দাবিগুলো অযৌক্তিক বলব না উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা (ছাত্র-জনতা) শুরুতে আন্দোলন যেখানে শুরু করেছিল সেখান থেকে শিফট করে অন্য জায়গায় গেছে। এরপরও জরুরি পরিবহন ও অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াত করছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
নিষিদ্ধ সময়ে নফল নামাজ: কখন পড়া যাবে, কখন নয়
ইসলামে নামাজের জন্য কিছু সময়কে ‘নিষেধের সময়’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যখন সাধারণত নফল নামাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশনা এসেছে যেন মুসলিমরা ইবাদতে কোনো ধরনের শিরক বা পৌত্তলিকতার সন্দেহের ধারেকাছেও না যায় এবং নামাজের সময়গুলো কেবল আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট থাকে।
হাদিসে এই নিষিদ্ধ সময়গুলোর বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে।
আল-কুদস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিকহ ও উসুল বিশেষজ্ঞ হুসামুদ্দিন আফানাহ এই সংক্রান্ত হাদিসগুলো ও ফিকহবিদদের বক্তব্য সারসংক্ষেপ করেছেন। তবে এই নিষেধাজ্ঞার সময়গুলোতেও কিছু বিশেষ কারণযুক্ত নফল নামাজ আদায় করা বৈধ, যেমন ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ (মসজিদে প্রবেশের নামাজ) ইত্যাদি।
স্পষ্ট নিষিদ্ধ ৫ সময়রাসুলুল্লাহ (সা.) একাধিক হাদিসে মোট পাঁচটি সময়ে বিশেষভাবে নফল নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন। এই পাঁচটি সময়ে নিষিদ্ধতা সাধারণ নফল নামাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে এ সময়গুলোতে কাজা নামাজ আদায় করা বৈধ।
ক. তিন নির্দিষ্ট মহাজাগতিক মুহূর্ত: উকবা ইবনে আমের আল-জুহানি (রা.) বলেন, “তিনটি সময়ে আল্লাহর রাসুল আমাদের নামাজ পড়তে বা আমাদের মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করতেন: যখন সূর্য উদয় হতে থাকে যতক্ষণ না তা পুরোপুরি উপরে উঠে যায়; যখন সূর্য মধ্যাকাশে থাকে যতক্ষণ না তা পশ্চিম দিকে হেলে যায়; এবং যখন সূর্য ডোবার জন্য ঝুঁকে যায় যতক্ষণ না তা ডুবে যায়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৩১)
এই হাদিস অনুযায়ী, তিনটি নির্দিষ্ট মুহূর্ত হল:
১। সূর্যোদয়ের সময়: সূর্য পুরোপুরি উঠে যাওয়া পর্যন্ত।
২। মধ্যাহ্নের সময়: যখন সূর্য ঠিক মাথার ওপরে থাকে (ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়)।
৩। সূর্যাস্তের সময়: যখন সূর্য অস্ত যেতে শুরু করে এবং পুরোপুরি ডুবে যায়।
আরও পড়ুনইসলামে গিবত নিষিদ্ধ: পরচর্চা ও পরনিন্দা মারাত্মক পাপ১৯ এপ্রিল ২০২৪খ. দুই ফরজ নামাজের পর: আবু সাইদ খুদরি (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, নবীজি বলেছেন, “আসরের ফরজ নামাজের পর সূর্য ডোবা পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই, এবং ফজরের ফরজ নামাজের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮২৭)
এই হাদিস অনুযায়ী, আরও দুটি সময় নিষিদ্ধ:
৪। আসরের ফরজ নামাজের পর: সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত।
৫। ফজরের ফরজ নামাজের পর: সূর্য পুরোপুরি উঠে যাওয়া পর্যন্ত।
তবে মনে রাখতে হবে, এই নিষেধাজ্ঞা নামাজের সঙ্গে সম্পর্কিত, সময়ের সঙ্গে নয়। অর্থাৎ কেউ যদি আসরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার অনেক পরে নামাজ আদায় করে, তবে তার নামাজ শেষ হওয়ার পর থেকেই নফল নামাজ নিষিদ্ধ হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮২৭)
বিশেষ কারণে নিষিদ্ধ অন্যান্য সময়উপরের পাঁচটি সময় ছাড়াও আরও কিছু পরিস্থিতি আছে, যখন নফল নামাজ আদায় করা উচিত নয়।
ক. ফজরের আজান ও জামাতের মধ্যে: ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি বলেছেন, “ফজরের পর দুই সিজদা ছাড়া আর কোনো নামাজ নেই।” (তিরমিজি, হাদিস: ৪১৯)
ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেছেন, এই হাদিসের অর্থ হল, ফজরের আজান হওয়ার পর থেকে ফরজ নামাজের ইকামত দেওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত ছাড়া অন্য কোনো নফল নামাজ পড়া মাকরুহ।
হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, “আল্লাহ রাসুল ফজর উদিত হওয়ার পর কেবল দুটি সংক্ষিপ্ত রাকাত (ফজরের সুন্নাত) পড়তেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৭২)
খ. ফরজ নামাজের ইকামত হলে: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি বলেছেন, “যখন নামাজের জন্য ইকামত দেওয়া হয়, তখন ফরজ নামাজ ছাড়া আর কোনো নামাজ নেই।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭১০)
গ. দুই ঈদের নামাজের আগে: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) ঈদের দিন বের হয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। তিনি এর আগে বা পরে কোনো নামাজ পড়েননি।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৮৯)।
অতএব, ঈদের জামাতের আগে কোনো নফল নামাজ পড়া উচিত নয়।
আরও পড়ুনজীবিকার জন্য পরিশ্রম করা ইবাদত১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ঘ. জুমার খুতবার সময়: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি বলেছেন, “জুমার দিন যখন ইমাম খুতবা দেন, তুমি যদি তোমার সঙ্গীকে বলো: ‘চুপ করো’দ, তবে তুমিও অনর্থক কাজ করলে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৪
ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় নফল নামাজে ব্যস্ত থাকা ‘নীরবতা রক্ষা করে খুতবা শোনা’র ওয়াজিবের পরিপন্থী।
নিষিদ্ধ সময়ে বৈধ নামাজউপরে বর্ণিত নিষিদ্ধ সময়গুলোর মধ্যে কিছু বিশেষ অবস্থায় নামাজ আদায় করার বৈধতা রয়েছে। এই মতটি অনেক ফিক্হবিদের কাছে গ্রহণযোগ্য।
ক. কাজা নামাজ: কেউ যদি নামাজ ভুলে যায় বা ঘুমিয়ে পড়ার কারণে তার ফরজ নামাজ কাজা হয়ে যায়, তবে সেই নামাজ নিষিদ্ধ সময়েও স্মরণ হওয়া মাত্র আদায় করা যাবে।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, “কেউ যদি নামাজ ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে থাকে, তবে যখনই তার মনে পড়বে, সে যেন তা আদায় করে নেয়। এর কোনো কাফফারা নেই, কেবল এটিই তার কাফফারা।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৭)
খ. তাহিয়্যাতুল মসজিদ: মসজিদে প্রবেশ করার পর বসার আগে দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ নামাজ মসজিদে ঢোকার আদব হিসেবে পড়া মোস্তাহাব। অনেকের মতে, এটি নিষিদ্ধ সময়েও পড়া বৈধ।
কেননা, নবীজি (সা.) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে, তখন সে যেন দুই রাকাত নামাজ না পড়ে না বসে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৪৪)
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, জুমার দিন নবীজি (সা.) খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়লেন। নবীজি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি দুই রাকাত নামাজ পড়েছ?” সে বলল, “না।” তিনি বললেন, “তাহলে উঠে দুই রাকাত সংক্ষিপ্ত নামাজ পড়ে নাও।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৪৩)
শরীয়তে নফল নামাজকে উৎসাহিত করা হলেও, কিছু নির্দিষ্ট সময়ে নফল নামাজ বর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ একাগ্রতা নিশ্চিত করার জন্য। এই নিষেধাজ্ঞা মূলত সাধারণ নফল নামাজের জন্য প্রযোজ্য।
তবে কাজা নামাজ এবং তাহিয়্যাতুল মসজিদের মতো কারণযুক্ত নফল নামাজ নিষিদ্ধ সময়েও আদায় করা যায়, যা এই নিষেধের সাধারণ বিধান থেকে ব্যতিক্রম।
আরও পড়ুননফল ইবাদত গোপনে আদায় করা উত্তম০৫ অক্টোবর ২০২৪