ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আগামী কয়েক বছরে বড় বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীগুলো। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক চালচিত্র পাল্টে দিতে চায় তারা। ‘রাইজিং নর্থইস্ট ইনভেস্টর সামিট’ বা উদীয়মান উত্তর-পূর্ব বিনিয়োগকারী সম্মেলনে এ লক্ষ্যে বৃহৎ বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানি।

ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ আগামী পাঁচ বছরে উত্তর-পূর্ব ভারতে ৭৫ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন রিলায়েন্স চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি। তিনি বলেন, খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য, স্বাস্থ্যসেবা, সৌরবিদ্যুৎসহ একাধিক খাতে বিনিয়োগ হবে এই অর্থ। এ ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে পণ্য সংগ্রহ করে রিলায়েন্স রিটেলের সরবরাহব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনাও আছে তাঁদের। তাঁর দাবি, এই বিনিয়োগের মাধ্যমে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

অন্যদিকে, আদানি গ্রুপ আগামী ১০ বছরে উত্তর-পূর্ব ভারতে ৫০ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। গৌতম আদানি বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, স্মার্ট মিটার, জলবিদ্যুৎ সংরক্ষণ, বিদ্যুৎ সঞ্চালন, ডিজিটাল অবকাঠামো, মহাসড়ক, পণ্য পরিবহন ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণ খাতে এই অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। প্রতিটি প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।’

অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ডসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর জন্য ছয়টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুকেশ আম্বানি। এর মধ্যে সংযোগ ও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। আম্বানি বলেন, জিও ইতিমধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৯০ শতাংশ মানুষকে তাদের নেটওয়ার্কের আওতায় এনেছে। এই পরিসর আরও বাড়িয়ে প্রায় শতভাগে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি, যা ডিজিটাল সুবিধার সর্বজনীন বিস্তারের দিকে জিওর বৃহৎ পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত।

গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে আম্বানি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো সিঙ্গাপুরের মতোই উন্নত হতে পারবে। তিনি আরও বলেন, রিলায়েন্স শুধু বড় অঙ্কের বিনিয়োগই করবে না, স্থানীয় মানুষকে সরাসরি এই অগ্রযাত্রার অংশীদার বানাবে। শিল্প, প্রযুক্তি ও কর্মসংস্থানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে তাঁর প্রতিষ্ঠান।’

দীর্ঘদিন ধরেই অবকাঠামোগত কারণে ভারতের অন্যান্য অংশের তুলনায় পিছিয়ে আছে দেশটির উত্তর-পূর্ব অঞ্চল। এই অঞ্চল সেভেন সিস্টার্স নামে বেশি পরিচিত। ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের উন্নয়নে কয়েক বছর ধরেই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তার ধারাবাহিকতায় এই বিনিয়োগের ঘোষণা দিলেন ভারতের শীর্ষ দুই ধনী।

লাইভ মিন্টের সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে এক বছর ধরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয় উত্তর-পূর্ব অঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ও আটটি রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ প্রচার কার্যক্রমের সমাপ্তি হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই সম্মেলন। দুই দিনের এই সম্মেলন নয়াদিল্লির ভারত মণ্ডপে আয়োজন করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম ব ন

এছাড়াও পড়ুন:

কর্মবিরতিতে অচলাবস্থায় এনবিআর: বিজিবি-পুলিশ মোতায়েন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলসহ চার দফা দাবিতে আজ রোববারও পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালন চলছে। আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ের নিচে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতির কর্মসূচি পালন করছেন।

তবে কাস্টমস হাউস, এলসি স্টেশন, রপ্তানি কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কর্মবিরতির বাইরে রয়েছে।

এদিকে আজ সরেজমিন দেখা গেছে, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করছেন। কেউ বাইরে, কেউ ভেতরে দাঁড়িয়ে কিংবা পেপার বিছিয়ে বসিয়ে অলস সময় পার করছেন।

অন্যদিকে এনবিআরের ভবনের ভেতরে এবং বাইরে বিপুল সংখ্যক বিজিবি এবং পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। তাদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য উপস্থিত নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। তাদের অভিযোগ পরিষদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এনে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করছে সরকার। 

ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে কর্মসূচি শেষে আজ বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী করণীয় জানানো হবে।

তবে নতুন কোনো ঘোষণা না এলে আগামীকাল সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ছাড়া আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে বলে জানা গেছে।

যে চার দাবিতে আন্দোলন:
নতুন অধ্যাদেশ বাতিল, চেয়ারম্যানকে অপসারণ এবং রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া এনবিআরের প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনা করে প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করছেন। এনবিআরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ