বান্দরবানের রুমা ও থানচি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
Published: 6th, June 2025 GMT
বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার থেকে রুমায় বগা লেক পর্যন্ত এবং থানচিতে তুমাতুঙ্গি ও তিন্দু পর্যন্ত ভ্রমণ করা যাবে। নির্দেশিত স্থান ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়া যাবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জেলা প্রশাসক শামীম আরা আংশিক প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসকের গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৩ জুন জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির রক্ষা ও সমন্বয়–সংক্রান্ত কোর কমিটির সভার সিদ্ধান্তে ও সেনাবাহিনীর বান্দরবান ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের বৃহস্পতিবারের চিঠির আলোকে দুই উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণ–সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা শর্তসাপেক্ষে বাতিল করা হলো। থানচি উপজেলা সদর থেকে মদক অভিমুখে তিন্দুমুখ ও বাকলাই অভিমুখে তুমাতুঙ্গি পর্যন্ত পর্যটকেরা যেতে পারবেন। রুমায় রুমা বাজার থেকে মুনলাইপাড়া হয়ে বগা লেক পর্যন্ত যাওয়া যাবে।
দুই উপজেলায় নির্দেশিত স্থান ভ্রমণে যাওয়ার জন্য তিনটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলো হচ্ছে, প্রথমত, নির্দেশিত স্থানগুলোর বাইরে কোথাও যাওয়া যাবে না; দ্বিতীয়ত, প্রশাসনের নিবন্ধিত ট্যুরিস্ট গাইড সঙ্গে নিতে হবে এবং পর্যটন সেবাকেন্দ্রে ও চেকপোস্ট চাহিত তথ্য (জাতীয় পরিচয়পত্রের ছায়ালিপি, মুঠোফোন নম্বর) দিতে হবে।
রুমায় ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর থেকে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। মাঝে কিছুদিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এরপর গত বছরে পুরো জেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এক মাস পর ৬ নভেম্বর থেকে বান্দরবান সদর, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়। চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি রোয়াংছড়ির দেবতাখুম থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় পর্যটকেরা বর্তমানে সেখানে ভ্রমণ করতে পারেন।
রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি দুর্গমে নতুন আত্মপ্রকাশ হওয়া সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তৎপরতা শুরু হয় ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়। কেএনএফের সঙ্গে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া নামের একটি জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতার ব্যাপারেও অভিযোগ উঠেছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই বছরের ৯ অক্টোবর থেকে কেএনএফ ও শারক্কীয়া জঙ্গিদের দমনে সমন্বিত অভিযান শুরু করে। অভিযানে নিরাপত্তা বিবেচনায় ২০ অক্টোবর থেকে রুমা ও রোয়াংছড়িতে পর্যটক ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পাহাড় ধসের আশঙ্কায় লামা উপজেলা প্রশাসন ১ জুন থেকে লামা মিরিঞ্জা পাহাড়ে পর্যটনকেন্দ্র ও আবাসিক হোটেল বন্ধ ঘোষণা করে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে সেগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুনবান্দরবানের তিন উপজেলায় ভ্রমণে আবারও নিষেধাজ্ঞা১৫ মার্চ ২০২৩.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন উপজ ল য় বর থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।