ঘুরে আসুন আলুটিলার ‘রহস্যময়’ গুহা, যেভাবে যাবেন
Published: 10th, June 2025 GMT
পাহাড়ের পাদদেশে অন্ধকার গুহা। মশাল জ্বালিয়ে যেতে হয় ভেতরে। গুহায় প্রবেশ করতেই তৈরি হয় গা ছমছম করা অনুভূতি। দেখা যায়, মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে উড়ছে বাদুড়। হিমশীতল পাহাড়ি ঝরনার জলধারা আর পাথর মাড়িয়ে যেতে যেতে একসময় অন্ধকার শেষ হয়ে আসে। দেখা মেলে সবুজ গাছপালায় ঘেরা সুন্দর পাহাড়। রোমাঞ্চকর যাত্রার এমন অভিজ্ঞতা নেওয়া যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির আলুটিলা গুহায়।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে আলুটিলা পাহাড়ে এ প্রাকৃতিক গুহার অবস্থান। স্থানীয় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের কাছে এটি ‘মাতাই হাকর’ বা ‘দেবতার গুহা’ নামে পরিচিত। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়কের পাশে ‘আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র’। এটির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ ফুট ওপরে। গুহায় যেতে হলে ২৬৬টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হয়। সিঁড়ি দিয়ে নামার পর দেখা মেলে একটি বড় বটগাছ। এর পাশেই গুহার প্রবেশমুখ।
গুহার বাইরে লতাপাতায় ঘেরা। ভেতরে নিরিবিলি ও শীতল পরিবেশ। গুহাটি দেখতে অনেকটা ভূগর্ভস্থ টানেলের মতো, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহাটি অতিক্রম করতে সময় লাগে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট। কোনো প্রকার সূর্যের আলো প্রবেশ না করায় গুহায় ঢুকতে মশাল বা টর্চ সঙ্গে নিতে হয়। কোথাও কোথাও গুহাটির উচ্চতা খুব কম, সেখানে মাথা নিচু করে হেঁটে যেতে হয় দর্শনার্থীদের।
গুহার বাইরে লতাপাতায় ঘেরা। ভেতরে নিরিবিলি ও শীতল পরিবেশ। গুহাটি দেখতে অনেকটা ভূগর্ভস্থ টানেলের মতো, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহাটি অতিক্রম করতে সময় লাগে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট। কোনো ধরনের সূর্যের আলো প্রবেশ না করায় গুহায় ঢুকতে মশাল বা টর্চ সঙ্গে নিতে হয়। কোথাও কোথাও গুহাটির উচ্চতা খুব কম হওয়ায় মাথা নিচু করে হেঁটে যেতে হয়।গুহাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে রহস্যময় গুহা হিসেবে পরিচিত। এই গুহা নিয়ে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। কেউ বলেন, প্রায় দেড় শ বছর আগে ভূমিকম্পের কারণে পাহাড়ের পাদদেশে এই গুহার সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেকে বলেন, পাহাড়ি ঝরনার কারণে সৃষ্ট ফাটল থেকে ধীরে ধীরে এ গুহার সৃষ্টি।
সম্প্রতি আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের ছুটি উপলক্ষে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। পর্যটকদের বেশির ভাগই গুহা ঘুরে যাচ্ছেন। ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা জুমায়েরা আফসানা নামের এক নারীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘পিচ্ছিল পাথর আর স্বচ্ছ পানি মাড়িয়ে গুহার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়েছি। খুবই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়েছে। আলুটিলা এসে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি’।
ফেনী থেকে আসা আরেক পর্যটক আকমল হোসেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র আর গুহার ছবি দেখে প্রথমবারের মতো খাগড়াছড়ি ঘুরতে এসেছেন। আলুটিলার পাশাপাশি খাগড়াছড়ির শহরের আশপাশের অনেক পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন তিনি।
জানতে চাইলে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরোফিন জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে দূরের এবং স্থানীয় পর্যটকেরা যাতে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারেন, সে লক্ষ্যে পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
যেভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেন ও কদমতলী বিআরটিসি বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ি যাওয়া যায় বাসে করে। আর ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে সেন্ট মার্টিন, এস আলম, শ্যামলী, শান্তিসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস ছাড়ে। খাগড়াছড়ি শহর বাস টার্মিনাল থেকে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, চাঁদের গাড়ি বা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আট কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি-মাটিরাঙ্গা সড়কের আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রে নামতে হবে, তা ছাড়া বাসে করে খাগড়াছড়ি শহরে যাওয়ার পথেও ওই জায়গাটিতে নামা যায়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রুমা ও থানচি যেতে পর্যটকদের বাড়তি আগ্রহ
ঈদুল আজহার ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিবারের মতো এবারো ঈদের পরদিন থেকেই পর্যটকদের আগমন শুরু হয়েছে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে ছুটির বাকি দিনগুলো কাটাতে পার্বত্য এ জেলার দিকে আসছেন তারা।
দীর্ঘদিন পর রুমা ও থানচি থেকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় এই দুই উপজেলায় যেতে বাড়তি আগ্রহ দেখাচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে রুমা ও থানচির যেসব এলাকায় এখন পর্যন্ত ভ্রমণ নিষিদ্ধ রয়েছে; ওইসব এলাকায় না যেতে পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঈদের তৃতীয় দিন কুয়াকাটা পর্যটকে মুখর
খাগড়াছড়ির বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে স্থানীয়দের ভিড়
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, বান্দরবানের আবাসিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলোর রুম ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত আগাম বুকিং রয়েছে। কিছু কিছু হোটেল ও রিসোর্টের শতভাগ রুম বুক হয়ে গেছে। এই বুকিংয়ের হার আগামী ১০ জুন পর্যন্ত রয়েছে।
বান্দরবানের নীলাচল ও মেঘলা পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, পরিবার এবং বন্ধুদের নিয়ে পর্যটকরা ছুটে এসেছেন পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগে। তারা নীলাচলের উঁচু থেকে নেমে আসা কুয়াশার চাদরের মাঝে দাঁড়িয়ে ক্যামেরাবন্দি করছিলেন প্রতিটি মুহূর্ত। অন্যদিকে, মেঘলার স্বচ্ছ লেকে প্যাডেল বোটে চড়ে অনেকে উপভোগ করছেন জলভ্রমণের আনন্দ। খুশিতে আত্মহারা শিশু ও তরুণ-তরুণীরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আপনজনের সঙ্গে কাটাচ্ছেন সময়।
থানচি বাসস্ট্যান্ডে দেখা হয় ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, “গত রোজার ঈদে আমি বান্দরবানের নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক এবং নীলগিরি ভ্রমণ করেছি। এবার বন্ধুদের নিয়ে থানচির রাজা পাথর দেখতে এসেছি।”
তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আগে থানচি যেতে পারিনি। এবার যেহেতু, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে, তাই রাজা পাথর ঘুরতে যাচ্ছি।"
তানভীর ইসলামসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ২৬ জন বাইকার বগালেক যাচ্ছিলেন। মরুং বাজার এলাকায় কথা হয় তানভীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন বগালেক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এখন যেহেতু প্রশাসন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে, এই সুযোগ মিস করতে চাই না।”
শফিকুল আলম নামে আরেক পর্যটক জানান, তারা ছয় বন্ধু মিলে চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান এসেছেন। বান্দরবান আশেপাশের নীলাচল, মেঘলা পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে তারা রুমায় বগালেকে ঘুরতে যাবেন।
থানচি ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ জানান, থানচি উপজেলায় পর্যটকদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় ঈদের পরদিন থেকেই পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। তারা রাজা পাথর (বড় পাথর), তিন্দু এবং তমা তুঙ্গি পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণ করছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, কিছু পর্যটক ট্যুর ইভেন্টের আড়ালে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে কিছু নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করছেন। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তার প্রভাব পুরো উপজেলায় পড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, রুমা ও থানচির নিষিদ্ধ বা সংবেদনশীল এলাকায় পর্যটকদের যাওয়া যেন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কারণ, যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনার প্রভাব সরাসরি ওই এলাকার পর্যটন ব্যবসার ওপর পড়তে পারে। তাই পর্যটকদেরকেও নিষিদ্ধ এলাকায় ভ্রমণে যাওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, “ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় পর থেকে থানচি উপজেলায় পর্যটক আসতে শুরু করেছে। খুব বেশি পর্যটক আসছেন, এটি বলা যাবে না। সামনের দিনগুলোতে পর্যটক বাড়বে বলে মনে করছি।”
তিনি আরো বলেন, “উপজেলায় বিজিবি, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যে সব এলাকা ভ্রমণ নিষিদ্ধ রয়েছে ওইসব এলাকায় না যেতে পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।”
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, “বান্দরবান যেহেতু পর্যটন এলাকা, সেহেতু পর্যটকদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করে থাকি। পর্যটকদের নিরাপত্তা বিষয়ে আমরা দেখভাল করে থাকি। ঈদের ছুটিতে নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়েছে। টুরিস্ট পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবসময় পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্তক অবস্থানে আছেন।”
ঢাকা/চাইমং/মাসুদ