পাহাড়ের পাদদেশে অন্ধকার গুহা। মশাল জ্বালিয়ে যেতে হয় ভেতরে। গুহায় প্রবেশ করতেই তৈরি হয় গা ছমছম করা অনুভূতি। দেখা যায়, মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে উড়ছে বাদুড়। হিমশীতল পাহাড়ি ঝরনার জলধারা আর পাথর মাড়িয়ে যেতে যেতে একসময় অন্ধকার শেষ হয়ে আসে। দেখা মেলে সবুজ গাছপালায় ঘেরা সুন্দর পাহাড়। রোমাঞ্চকর যাত্রার এমন অভিজ্ঞতা নেওয়া যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির আলুটিলা গুহায়।

খাগড়াছড়ি শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে আলুটিলা পাহাড়ে এ প্রাকৃতিক গুহার অবস্থান। স্থানীয় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের কাছে এটি ‘মাতাই হাকর’ বা ‘দেবতার গুহা’ নামে পরিচিত। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়কের পাশে ‘আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র’। এটির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ ফুট ওপরে। গুহায় যেতে হলে ২৬৬টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হয়। সিঁড়ি দিয়ে নামার পর দেখা মেলে একটি বড় বটগাছ। এর পাশেই গুহার প্রবেশমুখ।

গুহার বাইরে লতাপাতায় ঘেরা। ভেতরে নিরিবিলি ও শীতল পরিবেশ। গুহাটি দেখতে অনেকটা ভূগর্ভস্থ টানেলের মতো, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহাটি অতিক্রম করতে সময় লাগে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট। কোনো প্রকার সূর্যের আলো প্রবেশ না করায় গুহায় ঢুকতে মশাল বা টর্চ সঙ্গে নিতে হয়। কোথাও কোথাও গুহাটির উচ্চতা খুব কম, সেখানে মাথা নিচু করে হেঁটে যেতে হয় দর্শনার্থীদের।

গুহার বাইরে লতাপাতায় ঘেরা। ভেতরে নিরিবিলি ও শীতল পরিবেশ। গুহাটি দেখতে অনেকটা ভূগর্ভস্থ টানেলের মতো, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহাটি অতিক্রম করতে সময় লাগে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট। কোনো ধরনের সূর্যের আলো প্রবেশ না করায় গুহায় ঢুকতে মশাল বা টর্চ সঙ্গে নিতে হয়। কোথাও কোথাও গুহাটির উচ্চতা খুব কম হওয়ায় মাথা নিচু করে হেঁটে যেতে হয়।

গুহাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে রহস্যময় গুহা হিসেবে পরিচিত। এই গুহা নিয়ে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। কেউ বলেন, প্রায় দেড় শ বছর আগে ভূমিকম্পের কারণে পাহাড়ের পাদদেশে এই গুহার সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেকে বলেন, পাহাড়ি ঝরনার কারণে সৃষ্ট ফাটল থেকে ধীরে ধীরে এ গুহার সৃষ্টি।

সম্প্রতি আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের ছুটি উপলক্ষে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। পর্যটকদের বেশির ভাগই গুহা ঘুরে যাচ্ছেন। ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা জুমায়েরা আফসানা নামের এক নারীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘পিচ্ছিল পাথর আর স্বচ্ছ পানি মাড়িয়ে গুহার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়েছি। খুবই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়েছে। আলুটিলা এসে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি’।

ফেনী থেকে আসা আরেক পর্যটক আকমল হোসেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র আর গুহার ছবি দেখে প্রথমবারের মতো খাগড়াছড়ি ঘুরতে এসেছেন। আলুটিলার পাশাপাশি খাগড়াছড়ির শহরের আশপাশের অনেক পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন তিনি।

জানতে চাইলে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরোফিন জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে দূরের এবং স্থানীয় পর্যটকেরা যাতে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারেন, সে লক্ষ্যে পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

যেভাবে যাবেন

চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেন ও কদমতলী বিআরটিসি বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ি যাওয়া যায় বাসে করে। আর ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে সেন্ট মার্টিন, এস আলম, শ্যামলী, শান্তিসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস ছাড়ে। খাগড়াছড়ি শহর বাস টার্মিনাল থেকে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, চাঁদের গাড়ি বা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আট কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি-মাটিরাঙ্গা সড়কের আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রে নামতে হবে, তা ছাড়া বাসে করে খাগড়াছড়ি শহরে যাওয়ার পথেও ওই জায়গাটিতে নামা যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ট ল প রব শ

এছাড়াও পড়ুন:

মাদক গ্রহণে নিষেধ করা হয়েছিল, উৎমাছড়ায় যেতে নয়—বৈঠকে দাবি

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্র উৎমাছড়ায় পর্যটকদের বাধা কিংবা যেতে নিষেধ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁদের দাবি, পর্যটকদের মাদক গ্রহণে নিষেধ করেছিলেন তাঁরা।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন স্থানীয় লোকজন। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে এই বৈঠক হয়।

গত রোববার কোম্পানীগঞ্জের উত্তর রনিখাই ইউনিয়নে উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে যেতে পর্যটকদের বাধা দেওয়ার এক ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, বেড়াতে আসা লোকজনকে চলে যেতে অনুরোধ করেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। বেড়াতে আসা অনেকে মদ্যপান ও অশ্লীল কার্যকলাপ করে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। পাশাপাশি এলাকাটি পর্যটনকেন্দ্র নয়, সেখানে যাতে তাঁরা আর না আসেন, এমনটিও বলা হয়েছিল পর্যটকদের।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, পর্যটকদের উৎমাছড়ায় যেতে বাধা দেওয়া ব্যক্তিরা স্থানীয় যুবসমাজ পরিচয়ে সেখানে যান। পর্যটকদের বাধা কিংবা নিষেধ করা হয়নি বলে বৈঠকে দাবি করেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, শহরের পোশাকের সঙ্গে গ্রাম এলাকার পোশাক সামঞ্জস্য নয়। যাঁরা বেড়াতে যান তাঁদের পোশাক ‘শালীন’ রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন তাঁরা।

বৈঠকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, পর্যটনকেন্দ্রে যেতে স্থানীয় লোকজন বাধা দিতে পারেন না। পর্যটকেরা কোনো অন্যায় কিংবা বেআইনি কাজ করলে স্থানীয় প্রাশাসনকে জানাতে হবে। পর্যটকদের নিয়ে নিজেদের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই—বৈঠকে এমনটি বুঝিয়ে বলা হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, উৎমাছড়ায় বেড়াতে যাওয়া জন্য নির্দিষ্ট কিংবা উপযুক্ত রাস্তা নেই। এ জন্য পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর মাড়িয়ে যাতায়াত করেন। এতে তাঁরা অসুবিধায় পড়েন। বৈঠকে এমন দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় মাদক সেবন ও অশ্লীলতা হয়, এমনটিও দাবি করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের বলা হয়েছে, অবৈধ কোনো কিছু করে থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা প্রশাসনকে জানাতে। আর পর্যটকদের বাধা না দিতে।

কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে যেসব কথা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর কথাবার্তার মিল নেই। এ জন্য তিনি স্থানীয় আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে মঙ্গলবার বিকেলে উৎমাছড়া এলাকায় গেছেন।

‘যাঁরাই নিষেধ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে’
উৎমাছড়ায় পর্যটকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, এ অঞ্চলে এমন ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। বিষয়টি ইউএনওকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দেখছেন। ইউএনও জানার চেষ্টা করছেন, বিষয়টি কী? তিনি বলেন, ‘এটা কে করল, কারা করল, কেন করল, সেটা আজকের মধ্যেই ইউএনও তদন্ত করে বের করবেন। এরপর যদি আইনি ব্যবস্থা নিতে হয়, তা-ও নেওয়া হবে।’

পর্যটকেরা কি নির্বিঘ্নে উৎমাছড়ায় যেতে পারছেন?—এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সবাই সেখানে আগের মতোই যেতে পারবেন। পর্যটক তো যাচ্ছেন, তা তো বন্ধ নেই। কেউ নিষেধ করতে পারবেন না। যে বা যাঁরাই নিষেধ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া পর্যটকদের সুবিধার্থে উৎমাছড়ায় স্থানীয় প্রশাসন সব ধরনের নজরদারিও বাড়িয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রূপগঞ্জের জামায়াতের কর্মী সম্মেলন উপলক্ষে প্রস্তুতি মূলক সভা  
  • সিলেটে প্রশাসনের ভূমিকা চাই
  • রাঙানো গেল না ‘বাঁকবদলের’ উপলক্ষ
  • ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর সোনারগাঁয়ের পর্যটনকেন্দ্র
  • উৎমাছড়ায় পর্যটকদের যেতে বাধা, ভিডিও ভাইরাল
  • মাদক গ্রহণে নিষেধ করা হয়েছিল, উৎমাছড়ায় যেতে নয়—বৈঠকে দাবি
  • বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ফুটবল ম্যাচে বিশেষ নিরাপত্তা
  • পাহাড়ের কোলে স্নিগ্ধ রিসাং
  • জাফলংয়ে পর্যটকদের সঙ্গে স্থানীয়দের হাতাহাতি, উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে যেতে বাধা