গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও গুলিতে শুক্রবার দুপুরের আগেই অন্তত ৩৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজার কেন্দ্রে নেটজারিম করিডোর এলাকায় ত্রাণ সহায়তার জন্য অপেক্ষা করার সময় আইডিএফের গুলিবর্ষণে প্রাণ গেছে ২৩ জনের। এর আগে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি হামলায় গাজা সিটি ও উত্তর গাজায় ৬৪ জন এবং মধ্য গাজায় সহায়তার অপেক্ষায় থাকা ২২ জনসহ মোট ৯২ ফিলিস্তিনি নিহত হন।

গাজায় নির্বিচার হামলার পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরেও অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, আজ ইসরায়েলি সেনারা পশ্চিম তীরের নাবলুসের উত্তরের শহর টুবাসে অভিযান চালিয়েছে।

গত প্রায় দু’বছরের যুদ্ধে গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলায় ১৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বেশির ভাগই নিহত হয়েছে গাজায়। মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, হামলায় শতাধিক স্কুল ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে জাতিসংঘ পরিচালিত প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া অনেক স্কুলকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী। একে শিক্ষা ও শিশু অধিকার লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।

এদিকে বিশ্ব শরণার্থী দিবসে এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, যতদিন ইসরায়েলি দখলের অবসান না হয় এবং বাস্তুচ্যুতরা নিজেদের ঘরে ফিরে যাওয়ার সুযোগ না পান, ততদিনে জিম্মি সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। পশ্চিম তীরের শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি অভিযানকে হামাস ‘ফিলিস্তিনের মানুষকে ধ্বংসের বিপজ্জনক পরিকল্পনা’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

অন্যদিকে, জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, বর্তমানে গাজায় যে বিশাল বাস্তুচ্যুতি ঘটছে, তা ১৯৪৮ সালের নাকবার (বিপর্যয়) সঙ্গে তুলনীয়। তখন ৭ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে নিজেদের বাড়িঘর থেকে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘৭৭ বছর পেরিয়ে গেলেও ফিলিস্তিনিরা এখনও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন।’ জাতিসংঘের মানবিক সহযোগিতা সংস্থার (ওসিএইচএ) তথ্য অনুযায়ী, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ (সংখ্যায় যারা প্রায় ১৯ লাখ) বাসিন্দা নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। 

এ ছাড়া দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো শুক্রবার আল-আকসা মসজিদের সব গেট বন্ধ করে জুমার নামাজে মুসল্লিদের অংশ নিতে বাধা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। জেরুজালেমের গভর্নর অফিস জানিয়েছে, মসজিদের প্রধান প্রবেশপথগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনী অবস্থান নেয় এবং অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক মানুষকে ভেতরে ঢুকতে অনুমতি দেওয়া হয়। বাব আল-সাহিরা গেটেও মুসল্লিদের আটকে দেওয়া হয়। 

১৩ জুন থেকে ইসরায়েল আল-আকসায় প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে। এর পর টানা ছয় দিন পুরোপুরি বন্ধ ছিল পবিত্র এই মসজিদে প্রবেশ। বৃহস্পতিবার শুধু ৪৫০ জনকে জোহরের নামাজ পড়তে দেওয়া হয়েছিল। এরপর আবার মুসলিমদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের প্রবেশের জন্য বাব আল-মাগারিবা গেট খোলা রাখা হয়। জেরুজালেম গভর্নর অফিস একে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর নজিরবিহীন হস্তক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা বলছে, ইসরায়েল আল-আকসা মসজিদের ঐতিহাসিক ও আইনি অবস্থান পরিবর্তনের চেষ্টা করছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল শরণ র থ ইসর য় ল প রব শ ত হয় ছ মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

আজই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: জয়নুল আবদিন ফারুক

আজ সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। আজ মঙ্গলবার সকালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

জয়নুল আবদিন ফারুক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে সমাবেশে বলেন, ‘আপনাকে আমরা পছন্দ করি। কিন্তু কারও কথায় নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করবেন না। বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব, আজকেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন।...হাসিনার বিচার আপনার করেন, কোনো আপত্তি নাই। এই বাংলাদেশে প্রত্যেক নিপীড়নকারীর বিচার হবে ইনশাআল্লাহ।’

সমাবেশে একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে বিএনপির নেতা ফারুক বলে, ‘যারা ’৭১-এর স্বাধীনতা মানে না, যারা ড. ইউনূসের নির্বাচন মানে না, তারা এখন ষড়যন্ত্র করে তারেক রহমানকে ক্ষমতায় আসতে দিতে চায় না, তাদের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব। নির্বাচন ইনশাআল্লাহ হবে। বঙ্গোপসাগরে যেমন বাঁধ দেওয়া সম্ভব নয়, তেমনি বিএনপিকে বাদ দিয়ে এই দেশে কোনো নির্বাচন কেউ করতে পারবে না।’

সমাবেশে পিআর পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা। সেনবাগ থানা-পুলিশের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু যারা এখনো চোরাগোপ্তা বসে বসে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের কেন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না।’

দলে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘যাঁরা সেনবাগে এমপি হতে চান, দয়া করে জনগণের কাছে যান। বিভেদ সৃষ্টি করে নতুন লোক আমদানি করে এই দেশে রাজনীতি করানো কঠিন হবে।’

সেনবাগ বাজারের জেলা পরিষদ মার্কেট চত্বরে আয়োজিত এ সমাবেশে সেনবাগ উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে একটি আনন্দ মিছিল সেনবাগ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ