বিশ্বকাপ জিতলেই কি ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় হয় কেউ—প্রশ্ন রোনালদোর
Published: 5th, November 2025 GMT
ব্রিটিশ সাংবাদিক পিয়ার্স মরগানকে সাক্ষাৎকার দিতে গেলেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যেন নিজের আগল খুলে দেন। ২০২২ সালে মরগানকে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকারে ছিল বিস্ফোরক সব মন্তব্য, যা ফুটবল–বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। সম্প্রতি আবারও সেই মরগানের মুখোমুখি হয়েছেন রোনালদো। দুই পর্বের সেই সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার রাতে। অন্তরঙ্গ এই সাক্ষাৎকারে রোনালদো তাঁর ক্যারিয়ার, অর্জন, অবসর ও ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে কথা বলেছেন। এই সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপ জেতা নিজের স্বপ্ন নয় বলেও মন্তব্য করেছেন ‘সিআর সেভেন’। বিশ্বকাপ জিতলেই ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় হয়ে যায় কি না—এমন প্রশ্নও রেখেছেন তিনি। দীর্ঘ সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশ এখানে তুলে ধরা হলো।
প্রথম বিলিয়নিয়ার ফুটবলার হওয়ার অনুভূতি
আমি জানতাম, এমনটাই হবে। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার ছিল। সত্যি বলতে, আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন আমি একটা গোল্ডেন বল জিতেছি। কারণ, এটা আমার নিজের অর্জন। ফুটবলের ট্রফি, চ্যাম্পিয়নস লিগ, গোল্ডেন বল—এসবের পাশাপাশি এটা ছিল আমার জীবনের অন্যতম বড় লক্ষ্য। আর্থিক ও ব্যবসায়িক দিক থেকেও এটাই ছিল আমার অন্যতম উদ্দেশ্য।
অবসর নিয়ে
শিগগিরই (অবসর নেব)। আমার মনে হয় আমি প্রস্তুত থাকব। এটা অবশ্যই কঠিন হবে। হ্যাঁ, সময়টা কঠিনই হবে। সম্ভবত আমি কাঁদবও।
ফুটবলের বিকল্প কী
আমার মনে হয় কিছুই না। কোনো কিছুই তুলনীয় নয়। ফুটবলে গোল করার সময় যে রোমাঞ্চ বা উত্তেজনা অনুভব করি, তার সঙ্গে কোনো কিছুই তুলনীয় নয়।
আর্সেনালের প্রিমিয়ার লিগ জয়ের সম্ভাবন
হতে পারে। এটা সম্ভব। আমার মনে হয়, প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর মান প্রায় সমান। ম্যানচেস্টার (ইউনাইটেড) লিগ জিতবে না। কারণ, এখন তারা অনেক পয়েন্টে পিছিয়ে আছে। সম্ভব? হ্যাঁ, তবে আমি সেটা বিশ্বাস করি না। সম্ভবত আর্সেনালই পারবে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ব্যর্থতা নিয়ে
আমার কাছে এটা দুঃখজনক। কারণ, এটা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্লাবগুলোর একটি। এই ক্লাব এখনো আমার হৃদয়ের খুব কাছের। বর্তমানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোনো সঠিক কাঠামো নেই। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে এটা বদলাবে। কারণ, ক্লাবটির সম্ভাবনা সত্যিই অসাধারণ। ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্ত ভিত তৈরি করতে হলে বুদ্ধিমান ও যোগ্য মানুষদের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুননিজেকে মেসির চেয়ে ভালো দাবি রোনালদোর২১ ঘণ্টা আগেনিজের পছন্দের ফুটবলার
না, বিশেষ কোনো খেলোয়াড়কে আমার পছন্দ নয়। উদাহরণ দিয়ে বলি, আমি ব্রাজিলের খেলা দেখি। কারণ, তাদের অনেক বড় খেলোয়াড় আছে—রোনালদো, রোনালদিনিও, কাকা। হ্যাঁ, আমি আর্জেন্টিনার খেলাও দেখি তাদের খেলোয়াড়দের কারণে। আমি একজন খেলোয়াড়ের জন্য খেলা দেখি না।
কত সম্পদ আছে জানেন কি না
১০০ ভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারব না। কিন্তু হ্যাঁ, আমাকে নিজের বিষয়–আশয়ের খবর রাখতে হয়। এটা স্বাভাবিক।
নিজের কেনা সবচেয়ে দামি জিনিস
সেটা একটা বিমান, যেটা গ্লোবাল এক্সপ্রেসের।
গাড়ি.
..
আমার কত কার আছে জানি না। আমি কার গুনি না। ৫০ থেকে ৬০টি হবে। যদি তুমি বাজি ধরো, তবে আমি বলব, আমি জানি না। আর কারের মধ্যে আমি বুগাত্তিস পছন্দ করি।
বিয়ের তারিখ ঠিক করেছেন কি না
এখনো না। আমরা বিশ্বকাপের পর ট্রফি নিয়ে করার পরিকল্পনা করছি।
সাংবাদিক পিয়ার্স মরগানকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ বক প ফ টবল র মরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক সরকারযুক্ত সংবিধানই জনগণ চায়
ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত হয়েছিল সংবিধানে, তা–ই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে আপিল বিভাগে এ–সংক্রান্ত শুনানিতে বলেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল–পরবর্তী নির্বাচনগুলোর চিত্র দেখিয়ে জয়নুল আবেদীন বলেছেন, ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন এবং ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে—দেশের জনগণ এমন বিতর্কিত কোনো নির্বাচন হোক, তা চায় না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর আজ রোববার ষষ্ঠ দিনের মতো শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে বিএনপি মহাসচিবের আপিল–সংক্রান্ত শুনানি করেন জয়নুল আবেদীন।
সকাল ৯টা ২০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। বেলা ১১টা থেকে মাঝে বিরতি দিয়ে ১টা পর্যন্ত শুনানি চলে। পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দিন রাখা হয়েছে। এদিন বিরতির পর শুনানি শুরুর আগে প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের অপর বিচারপতিদের সঙ্গে এজলাসে আসেন বাংলাদেশে সফররত নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউত। বিচারপতিদের সঙ্গে এজলাসে বসে এই শুনানি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেই একটি আলোচিত বিষয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিএনপি সরকার সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে যুক্ত করেছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার দুই বছর পর সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এনে এই ব্যবস্থা বাতিল করে। তার আগে সর্বোচ্চ আদালতের এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
ওই রায়ের ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন ও আপিল বিভাগের রুলসের ব্যত্যয় ঘটেছে দাবি করে শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘রায়ে সইয়ের আগেই তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার, সংসদ তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে সংবিধান সংশোধন (পঞ্চদশ সংশোধনী) করে। পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা ও স্বাক্ষরের (বিচারপতিদের রায়ে সই করা) আগে সরকার সংসদ তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের বলে তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করে, যা দেশবাসীর জানা। দেশের বিবেকবান মানুষ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে এই সংবিধান সংশোধনকে সরকারের হীন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছিল। এটি জনগণের বিরুদ্ধে বড় ষড়যন্ত্র।’
বিএনপির একসময়ের আইনবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন শুনানিতে বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করেছেন। সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে বহাল রাখার লক্ষ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি (বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক) দেশের প্রচলিত আইন ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রুলস যথাযথভাবে অনুসরণ না করে সর্বশেষ (পূর্ণাঙ্গ রায়) রায় দেন, যা প্রথমে দেওয়া রায়ের (শর্ট অর্ডার সংক্ষিপ্ত রায়) সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।’
শুনানিতে অবসরের পর রায়ে সই প্রসঙ্গ
অবসরের পর কোনো বিচারপতি রায়ে সই করলে তার আইনগত মূল্য কী হবে—এ প্রসঙ্গ ওঠে শুনানিতে। বিরতির পর শুনানিতে অংশ নিয়ে এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিবের অপর আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, রায় ঘোষণা ও রায়ে সই করা দুটি ভিন্ন বিষয়। রায় ঘোষণার সময় এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতির পদে আসীন ছিলেন। সংক্ষিপ্ত রায়ে যা ছিল, পূর্ণাঙ্গ রায়ে তা পরিবর্তন করা হয়েছে।
দেওয়ানি কার্যবিধি, আপিল বিভাগের রুলস ও সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ তুলে ধরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘শর্ট অর্ডারের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায়ে যে পার্থক্য, তা পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করেছেন একজন বিচারপতি। এই বিচারপতিও বলেননি অবসরের পরে বিচারপতি খায়রুল হকের লেখা রায়টি অবৈধ হয়েছে। স্বাক্ষর পরে করেছেন বলে রায় অবৈধ বলা যাবে না। কারণ, অবসরের পর কোনো বিচারপতি রায়ে সই করতে পারবেন না কিংবা কত দিনের মধ্যে সই না করলে সেটি অবৈধ হবে, এমন বাধ্যবাধকতা আইনে নেই।’
রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘প্রকাশ্য আদালতে কোনো বিচারপতি যখন কোনো রায় দেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে দিলে ছোটখাটো দাড়ি, কমা, শব্দ বাদ পড়েছে—এগুলো ছাড়া যেকোনো পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই সেটি রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) ছাড়া হবে না, যার ওপর শুনানি চলছে।’
এ মামলায় সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের একটি সংগঠন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়। ওই প্রসঙ্গে সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক বলেন, ‘অবসরের পর রায়ে সই করলে তা বাতিল বা অকার্যকর হবে না। যেদিন প্রকাশ্য আদালতে রায় ঘোষণা করলেন, সেই তারিখ হচ্ছে মূল। এটি হচ্ছে রায়ের তারিখ। কবে সই করলেন, এটি প্রাসঙ্গিক নয়। আপিল বিভাগের রুলসে বলা আছে, এ ক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধির (সিপিসি) বিধান কার্যকর হবে না। আপিল বিভাগের জন্য সিপিসি প্রযোজ্য নয়।’
মামলার পূর্বাপর
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আপিল বিভাগের ২০১১ সালের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।
রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে অপর রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এ অনুসারে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের করা রিভিউসহ অপর রিভিউ আবেদন এবং বিএনপির মহাসচিবের আপিল শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে।
পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের ওপর ২১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়। এরপর ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত সংগঠনের পক্ষে শুনানি করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। এরপর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল এবং এ এস এম শাহরিয়ার কবির শুনানি করেন। শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্য উপস্থাপনের পর হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (রিভিউ আবেদনকারী) পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইমরান এ সিদ্দিক শুনানি করেন। এরপর বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে জয়নুল আবেদীন শুনানি শুরু করেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছর পর গত আগস্টে বিচারপতি খায়রুল হক গ্রেপ্তার হন। তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন।