আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি ঘোষিত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে বিক্ষোভ করছে বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা। 

বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নেতাকর্মীরা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের ছনবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভ করে। 

আরো পড়ুন:

টাঙ্গাইল-৩: প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিএনপির বিক্ষোভ

টাঙ্গাইলে বিএনপির আনন্দ মিছিলে আ.

লীগ নেতার স্লোগান 

এতে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মমিন আলীর শত শত কর্মী-সমর্থকরা অংশ নেয়। 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ২৩৭ আসনে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। এতে মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে শেখ মো. আবদুল্লাহর নাম রয়েছে। তিনি সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও শিল্পপতি।

মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে শ্রীনগরের চকবাজার এলাকায় বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে। পরে সেখান থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মমিন আলীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শ্রীনগর উপজেলার ছনবাড়ী এলাকায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে অবস্থান নেয়।

সেখানে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, ওই আসনে দলের ত্যাগী নেতা মমিন আলীকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তারা বলেন, দলের কঠিন সময়ে মমিন আলী তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত রেখে দলকে উজ্জীবিত রেখেছেন। সেই সময়ে যাকে নেতাকর্মীরা পাশে পায়নি, এমন একজনকে দল মনোনয়ন দিয়েছে। এ কারণে ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানান তারা।

ঢাকা/রতন/বকুল 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ন ত কর ম র ব এনপ র শ র নগর

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যাশলেস ব্যাংকিংয়ের স্বপ্ন কি অধরাই থেকে যাবে?

আমরা এখন এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যখন ব্যাংকিং ও লেনদেনব্যবস্থা দ্রুত ডিজিটালে রূপান্তরিত হচ্ছে। প্রশ্ন হলো—বাংলাদেশ কি একদিন পুরোপুরি ক্যাশলেস অর্থনীতির দিকে এগোবে, নাকি এটি কেবল একটি স্বপ্ন হিসেবেই থেকে যাবে?

উত্তর খুঁজতে হলে এটির ইতিহাস, বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা, বর্তমান বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে একসঙ্গে দেখতে হবে।

ক্যাশলেস ব্যাংকিং মানে হলো নগদ অর্থ ব্যবহার না করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-ওয়ালেট বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করা। ধারণাটি নতুন নয়, এর শেকড় বহু পুরোনো।

মধ্যযুগীয় ইউরোপে, বিশেষ করে উত্তর ইতালিতে ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ বা ‘বিনিময় বিল’ ব্যবহৃত হতো রেমিট্যান্স ও ঋণ লেনদেনের জন্য। এটি ছিল নগদ মুদ্রাবিহীন লেনদেনের প্রথম উদাহরণ।

১৯৬০-৭০ দশকে ব্যাংকিং খাতে কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার ডিজিটাল লেনদেনের ভিত্তি গড়ে তোলে। তখনই প্রথম এটিএম চালু হয়ে নগদ উত্তোলনের নতুন ধারা সূচনা করে। ১৯৮০ সালে টেলিফোন ও হোম ব্যাংকিং পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়।

আরও পড়ুনক্যাশলেস হওয়ার শর্তই কি হবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ‘অ্যাকিলিস হিল’১৭ জুন ২০২৪

ইউনাইটেড আমেরিকান ব্যাংক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এই ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদান শুরু করে যা প্রযুক্তির কারণে খুবই সীমিত ছিল।

১৯৯০-এর দশকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং শুরু হয় এবং ২০০০-এর দশকে অনলাইন ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

২০০৭ সালের পর স্মার্টফোন ও মোবাইল অ্যাপস ব্যাংকিংকে আরও সহজলভ্য করে তোলে। এরপর ২০২০ সালের পর ফিনটেক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইনসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাংকিং খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে।

ফলে ডিজিটাল ব্যাংকিং আজ বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই প্রধান আর্থিক লেনদেনের মাধ্যম উঠেছে।

বিশ্বের অনেক দেশ এখন নগদহীন অর্থনীতির পথে এগিয়ে চলছে। উত্তর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সুইডেন সবচেয়ে এগিয়ে, যেখানে ৯০ শতাংশেরও বেশি লেনদেন এখন ডিজিটাল মাধ্যমে হয়।

নরওয়ে, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যে ২০২৪ সালে মোট অর্থ প্রদানের মধ্যে নগদ লেনদেন ছিল মাত্র ১০ শতাংশেরও কম। যুক্তরাষ্ট্রেও ৮৯ শতাংশ ভোক্তা ডিজিটাল লেনদেনকে পছন্দ করেন।

আরও পড়ুনক্যাশবিহীন লেনদেনে অভ্যস্ততা স্মার্ট প্রজন্মের চাহিদা২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

এশিয়াতেও ক্যাশলেস লেনদেনের বিপ্লব দ্রুত এগোচ্ছে। চীনে দৈনিক প্রায় ৮০ শতাংশ লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে হয়, আর ভারতে ইউপিআই (ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস) সিস্টেম ডিজিটাল পেমেন্টকে পৌঁছে দিয়েছে সর্বত্র, যার মাধ্যমে ৮৫ শতাংশ ডিজিটাল লেনদেন সম্পন্ন হচ্ছে।

বাংলাদেশেও ডিজিটাল লেনদেন এখন মোট লেনদেনের প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি—প্রায় ৪৭ থেকে ৫৬ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ডিজিটাল পেমেন্টের হার প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অর্থাৎ ক্যাশলেস অর্থনীতি শুধু উন্নত দেশের সুবিধা নয়, এটি এখন বৈশ্বিক অগ্রগতির মূল ধারা।

ক্যাশলেস অর্থনীতির সুফল স্পষ্ট। এটি লেনদেনে স্বচ্ছতা আনে এবং করফাঁকি, ঘুষ ও অবৈধ অর্থচক্র সীমিত করে। ফলে রাজস্ব আয় বাড়ে ও জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

জাতিসংঘভিত্তিক বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স ও বাংলাদেশ সরকারের আস্পায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) কর্মসূচির ২০২২ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ ডিজিটাল পেমেন্ট বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের জিডিপি বছরে ১.৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা অর্থনীতিতে বছরে অতিরিক্ত ৬.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ করবে।

আরও পড়ুনতথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি চালু রাখা কেন জরুরি২০ এপ্রিল ২০২৪

নগদহীন লেনদেন শুধু অর্থনীতির জন্য নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও সময় ও খরচ সাশ্রয় করে। নোট ছাপানো, পরিবহন ও সংরক্ষণে ব্যয় কমে আসে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি পায়।

মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা এমএফএস এখন ব্যাংকবহির্ভূত কোটি মানুষের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে বিকাশ, নগদ, উপায়, রকেট বা ট্যাপের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশে ডেবিট কার্ডধারীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার এবং ক্রেডিট কার্ডধারী ২৯ লাখ ৫০ হাজার।

কার্ড লেনদেনের পরিমাণ ৫ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৪৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

মে ২০২৫ মাসেই এমএফএসে লেনদেন হয়েছে ৪৪ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ ডিজিটাল লেনদেন ক্রমেই বাড়ছে, যদিও নগদ লেনদেনের ওপর নির্ভরতা এখনো পুরোপুরি কাটেনি।

আরও পড়ুননগদবিহীন লেনদেন: পথটা মোটেও সহজ নয়২১ অক্টোবর ২০২৫

তবে আশার খবর হলো—সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যেই ইন্টারঅপারেবল ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম (আইআইপিএস) চালুর পথে, যা ব্যাংক, এমএফএস ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে একত্রিত করবে।

এরপরও কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। নগদ লেনদেনের প্রচলন এখনো বাড়ছে প্রায় ১০ শতাংশ হারে। গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ও ডিজিটাল জ্ঞানের ব্যাক ঘাটতি।

অনেকে এখনো প্রতারণা, ওটিপি জালিয়াতি বা ফিশিংয়ের ভয়ে ডিজিটাল লেনদেন থেকে দূরে থাকেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কমিশন বা সার্ভিস চার্জের কারণে ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণে অনীহা দেখান।

এ ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্য সুরক্ষার ঘাটতিও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ খুবই জরুরি।

সরকারি রোডম্যাপ হওয়া উচিত ধাপে ধাপে—প্রথমে নগদ লেনদেনের ওপর নির্ভরতা কমানো, পরে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল লেনদেনের পরিবেশ তৈরি করা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ডিজিটাল পরিবর্তনের চলমান ধারা, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের বিস্ফোরণ ও সরকারের রোডম্যাপ প্রমাণ করে আমরা সঠিক পথে আছি।

তার মধ্যে, অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে হবে।

সব ব্যাংক ও এমএফএসের মধ্যে পূর্ণ ইন্টারঅপারেবিলিটি গড়ে তুলতে হবে। জনগণকে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সুবিধা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে—স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি’কে বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য কমিশন কমানো বা প্রণোদনা সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।

একই সঙ্গে ব্যাংক ও ফিনটেক খাতে শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলা, নারী, প্রবীণ, প্রবাসী ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সহজলভ্য ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করাও সময়ের দাবি।

সরকারি রোডম্যাপ হওয়া উচিত ধাপে ধাপে—প্রথমে নগদ লেনদেনের ওপর নির্ভরতা কমানো, পরে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল লেনদেনের পরিবেশ তৈরি করা।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ডিজিটাল পরিবর্তনের চলমান ধারা, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের বিস্ফোরণ ও সরকারের রোডম্যাপ প্রমাণ করে আমরা সঠিক পথে আছি।

নগদ লেনদেন এখনো অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ হলেও আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত নগদ নির্ভরতা কমিয়ে ডিজিটাল লেনদেনকে নিরাপদ, সহজ ও জনপ্রিয় করা।

পরিশেষে, যেদিন দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরের মানুষ সমানভাবে প্রযুক্তির প্রতি আস্থা রেখে ডিজিটাল লেনদেনে অংশ নেবে—সেদিনই বলা যাবে, ক্যাশলেস ব্যাংকিং আর স্বপ্ন নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনীতির বাস্তবতার অংশ।

এম এম মাহবুব হাসান ব্যাংকার, উন্নয়ন গবেষক ও লেখক।
ই-মেইল: [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ