প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর মঙ্গলবার ছিল প্রথম বড় নির্বাচনের দিন। এদিন নিউইয়র্ক সিটির মেয়রসহ অনুষ্ঠিত কয়েকটি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা অনেকাংশে জয়লাভ করেছেন।

এখন ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। একটি বড় বিষয় অনেকের নজরে এসেছে। সেটি হলো অর্থনীতি। এখন তা এক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্প গত শরৎকালে দেশের অর্থনীতি ভালো করার জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেটি পূরণ করতে পারেননি। এ ব্যর্থতা রিপাবলিকানদের জন্য আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।

মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাটরা ভার্জিনিয়া ও নিউজার্সির গভর্নর নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। নতুন গভর্নর নির্বাচনের জন্য শুধু এ দুই অঙ্গরাজ্যে ভোট হয়েছে। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ার সুপ্রিম কোর্টের তিন আসনও দখল করেছেন ডেমোক্র্যাটরা। এ ছাড়া কলোরাডো থেকে মেইন পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে গণভোটে নানা প্রস্তাব পাস হয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প অনেকটাই ছিলেন অনুপস্থিত। তবে রিপাবলিকান প্রার্থীরা তাঁর সঙ্গে নিজেদের ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত রেখেছেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, গত বছর তাঁর বড় জয় এবারও তাঁদের জন্য পথ খুলে দেবে। কিন্তু তাঁদের ধারণা ছিল ভুল।

ডেমোক্র্যাটরা আশা করছেন, তাঁদের জয় সামনের মধ্যবর্তী নির্বাচনে নতুন কৌশলের পথ দেখাবে। তবে সতর্ক থাকারও প্রয়োজন। মঙ্গলবারের নির্বাচন শুধু কিছু নির্বাচনী অঙ্গরাজ্যেই সীমিত ছিল; যাদের অধিকাংশই নীল–অধ্যুষিত (ডেমোক্র্যাট ভোটার সংখ্যাগরিষ্ঠ) এবং সাধারণত যে দল হোয়াইট হাউসে ক্ষমতায় থাকে, তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভালো ফলাফল পায় না।

এদিকে ওয়াশিংটনে রিপাবলিকানদের জন্য হয়তো আরও উত্তেজনাপূর্ণ খবর হলো, একজন স্বঘোষিত গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটির পরবর্তী মেয়র হয়েছেন।

এ বছর নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প অনেকটাই ছিলেন অনুপস্থিত। তবে রিপাবলিকান প্রার্থীরা তাঁর সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক দৃঢ় দেখানোর চেষ্টা করেছেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, গত বছরের বড় জয় এবারও তাঁদের জন্য পথ খুলবে। কিন্তু তাঁরা ভুল ছিলেন।নতুন ডেমোক্রেটিক কৌশল

সাবেক কংগ্রেস সদস্য আবিগেইল স্প্যানবার্গার ভার্জিনিয়ার পরবর্তী গভর্নর হচ্ছেন। অঙ্গরাজ্যের প্রথম নারী গভর্নরও তিনি। নিউজার্সির গভর্নরের আসন জিতেছেন আরেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য মিকি শেরিল। তাঁরা নির্বাচনী প্রচারে মূলত অর্থনীতি, জননিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছেন।

মঙ্গলবারের নির্বাচনী ফলাফলে দেখা গেছে, দ্রুত বর্ধনশীল শহরতলী, গ্রামীণ এলাকা ও সেনাবাহিনীর ভোটার অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ডেমোক্র্যাটরা চার বছর আগে তুলনায় ভালো করেছেন।

ডেমোক্র্যাটরা দলের চরম-বাম নীতির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই জিতেছেন। স্প্যানবার্গার তাঁর বিজয় ভাষণে বলেছেন, তাঁরা ‘পক্ষপাতের চেয়ে বাস্তববাদিতা’কে গুরুত্ব দিয়েছেন।

বেশ কিছু ডেমোক্র্যাট নেতা মনে করেন, মধ্যপন্থী কৌশলই তাঁদের দলের পুনর্জাগরণের চাবিকাঠি হতে পারে; বিশেষ করে গত বছর রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্ট পদে ও কংগ্রেসের উভয় কক্ষে জেতার পর।

আরও পড়ুনজোহরান মামদানির ঐতিহাসিক জয়ের রহস্য কী৪ ঘণ্টা আগে

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, উভয় অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাটরা মূলত জীবনযাত্রার ব্যয়, যেমন খাদ্যপণ্য, জ্বালানি ও স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান খরচের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন; যা নিয়ন্ত্রণে রীতিমতো লড়তে হচ্ছে ট্রাম্পকে।

অর্থনৈতিক নীতিতে মধ্যপন্থী অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি, স্প্যানবার্গার ও শেরিল প্রগতিশীল বিষয়গুলো, যেমন এলজিবিটিকিউ অধিকার এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ট্রাম্পের আক্রমণ প্রতিরোধ করায় বেশি গুরুত্ব দেননি। স্প্যানবার্গার প্রচারে ট্রাম্পের নামও খুব কম উল্লেখ করেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প, জোহরান মামদানি, মিকি শেরিল (নিচে বাঁয়ে) ও আবিগেইল স্প্যানবার্গার (নিচে ডানে).

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প য নব র গ র র প বল ক ন দ র জন য কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে 

বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।

বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকা/নাজমুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হজরত আদম (আ.) এবং পৃথিবীতে তাঁর প্রথম আবাস
  • সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি, পদ ১০ হাজার ২১৯, প্রথম ধাপে ৬ বিভাগে
  • হাসিনার বিচারের রায় হচ্ছে আগামী সপ্তাহে: মাহফুজ 
  • দেশভাগ ত্রয়ী: শেকড়চ্যুত, ঠিকানাশূন্য মানুষের গল্প
  • বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে 
  • কুবিতে খেলার মাঠে মারামারির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
  • খুলনায় বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল, ভোলা সদরে কার্যক্রম স্থগিত