আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ–৪ আসনে (ইটনা–মিঠামইন–অষ্টগ্রাম) বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলীয় পদ স্থগিত থাকা ফজলুর রহমান। তিনি দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন।

দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে গত আগস্টে ফজলুর রহমানের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলীয় সব ধরনের পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। তখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। গত সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

কিশোরগঞ্জ–৪ আসনে ফজলুর রহমানের নাম ঘোষণার পর তাঁর সমর্থকেরা আনন্দমিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। ইটনা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মনির উদ্দিন বলেন, ‘ফজলুর রহমানের মনোনয়নে হাওরে বিএনপি নেতা–কর্মীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এ জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ নীতিনির্ধারকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

এ সম্পর্কে ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মতো একজন মুক্তিযোদ্ধাকে দল যেভাবে মূল্যায়ন করেছে, সে জন্য আমি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বাকিটা জীবন এলাকার মানুষের পাশে থেকে তাঁদের সুখ–দুঃখের অংশীদার হয়ে থাকতে চাই।’

আরও পড়ুননোটিশের জবাব দিলেন ফজলুর রহমান, তিন মাসের জন্য পদ স্থগিত করল বিএনপি২৬ আগস্ট ২০২৫

কিশোরগঞ্জ জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া যাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ফজলুর রহমান ছাড়া অন্যরা হলেন কিশোরগঞ্জ–২ (কটিয়াদী–পাকুন্দিয়া) আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো.

জালাল উদ্দিন, কিশোরগঞ্জ–৩ (করিমগঞ্জ–তাড়াইল) আসনে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এম ওসমান ফারুক ও কিশোরগঞ্জ–৬ (ভৈরব–কুলিয়ারচর) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম।

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, কিশোরগঞ্জের ছয়টি আসনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে চারটির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এগুলোই চূড়ান্ত নয়, দল চাইলে পরিবর্তন করতে পারে।

আরও পড়ুনকোন আসনে বিএনপির প্রার্থী কে, দেখে নিন০৩ নভেম্বর ২০২৫

বিভিন্ন মন্তব্যের জেরে গত ২৬ আগস্ট তিন মাসের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের দলের সব পদ স্থগিত করা হয়। তবে দল থেকে কারণ দর্শানো ও পরে দলীয় পদ স্থগিত করায় তাঁর অনুসারীরা প্রতিবাদ জানান। পদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশসহ দলের নেতা–কর্মীরা নানা কর্মসূচিও পালন করেন। ফজলুর রহমান নিজেও এলাকায় একাধিক সমাবেশে ধানের শীষ মার্কা ফেরত চান। গত ২০ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলনে তাঁকে আমন্ত্রণ না দেওয়ার প্রতিবাদে তাঁর সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে সম্মেলনে যোগ দেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফজল র রহম ন র ক শ রগঞ জ জ ল ব এনপ র স

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে: নজরুল ইসলাম খান

বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিদের পক্ষে কাজ করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে শহীদ জিয়া এবং বিএনপি দেশকে নতুন কিছু দেয়। নতুন ও যুগান্তকারী দীর্ঘ উন্নয়নের জন্য কাজ করে। সে জন্য আগামী দিনে বিএনপির পক্ষ থেকে যাঁদেরকে মনোনীত করা হবে, তাঁদের বিজয়ী করার জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে।’

ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ‘শহীদ জিয়া শ্রমিক জাগরণ, উৎপাদন ও উন্নয়ন শীর্ষক’ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন নজরুল ইসলাম খান। আজ বুধবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে এ সভা হয়।

আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘‌৩১ দফা যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন, সেখানে সব শ্রেণি–পেশার মানুষের কথা বলা আছে। শ্রমিকদের কথা, বিশেষ করে বলা আছে। আমরা যদি এই পরিবর্তনে আমাদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে আমাদের আকাঙ্ক্ষা অনেক কিছুই পূরণ হবে।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‌আমরা বিশ্বাস করি, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের জন্য যুগান্তকারী উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। সেই ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের বিজয়ী করতে হবে। শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশে সবাইকে সংগঠিতভাবে কাজ করতে হবে।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, শিশুদের উন্নয়ন, কৃষি, শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সর্বস্তরের মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন সবার জন্য উন্নয়ন—কিছু মানুষের জন্য নয়। কিন্তু আজ দেশে অসম উন্নয়ন চলছে। কেউ কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন, আবার কেউ দিন দিন দরিদ্র হচ্ছেন—এটাই শহীদ জিয়ার চাওয়া বাংলাদেশ নয়।’

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, শ্রমিকের মর্যাদা নিশ্চিত না হলে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, শ্রমের মর্যাদা, ন্যায্য মজুরি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। যদি একজন শ্রমিক ঠিকমতো ঘুমাতে না পারে, ভালো খাবার না পায়, চিকিৎসা–সুবিধা না পায়, তাহলে সে কীভাবে উৎপাদনশীলভাবে কাজ করবে? একজন শ্রমিকের পেট খালি থাকলে তাঁর কাছ থেকে ভালো কাজ আশা করা অন্যায়।

আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বিএনপি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ষড়যন্ত্র ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় যাঁরা গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করছেন, তাঁরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। জনগণ আর প্রহসনের নির্বাচন মেনে নেবে না।

৭ নভেম্বরের চেতনা ঐক্যের চেতনা ছিল বলে উল্লেখ করে এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজও আমাদের সেই ঐক্য দরকার—সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ, যাঁরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না, গণতন্ত্রকে ভয় পান, তাঁরা সব সময় ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন। আমরা বিশ্বাস করি, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সেই ঐক্য গড়ে তুলতে পারব।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপিরসহ শ্রমিক–বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ উজ জামান মোল্লা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ