জুলাই–সেপ্টেম্বরে শুল্ক–কর আদায়ে ঘাটতি ৯ হাজার কোটি টাকা
Published: 22nd, October 2025 GMT
শুল্ক–কর আদায়ে প্রতিবারের মতো এবারও পিছিয়ে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) সার্বিকভাবে শুল্ক ও কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৮ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা।
এনবিআরের হিসাব অনুসারে, গত জুলাই–সেপ্টেম্বর সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৯৯ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৯১ হাজার ৫ কোটি টাকা। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে সাড়ে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের হালনাগাদ চিত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এনবিআরের কর্মকর্তা বলছেন, ব্যবসা–বাণিজ্যে শ্লথগতি থাকায় রাজস্ব আদায় তুলনামূলক কম হয়েছে। তবে বছরের শেষ দিকে রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়বে বলে মনে করেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, করের আওতা বৃদ্ধি, কর পরিপালন নিশ্চিতকরণ, কর ফাঁকি প্রতিরোধ ও ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পুনরুদ্ধার করার কাজ করছে এনবিআর।
রাজস্ব আদায়ে গতি নেই
চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের পুরো প্রথম প্রান্তিকেই (জুলাই–সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আদায়ে গতি নেই। কোনো মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি কর ও শুল্ক কর্মকর্তারা।
গত জুলাইয়ে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ১১১ কোটি টাকা। কিন্তু জুলাইয়ে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। ঘাটতি ২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। পরের মাসে লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা।
অন্যদিকে গত সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৮ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। ফলে ২ হাজার ৩২২ কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে।
সব খাতেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও আয়কর—এই তিন খাতের মধ্যে ভ্যাট খাতে শুধু লক্ষ্য পূরণ হয়েছে।
আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে। তিন মাসে ঘাটতি হয় ৬ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। এই খাতে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৫ হাজার ২৩ কোটি টাকা। এ সময়ে আদায় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা।
আমদানি খাতে তিন মাসে ৩০ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। এই খাতে ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৬৮ কোটি টাকা।
গত জুলাই–সেপ্টেম্বরে ভ্যাট বা মূসক আদায়ের লক্ষ্য পূরণ করেছে। এই খাতের লক্ষ্যের চেয়ে ৭১০ কোটি টাকা বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে। ভ্যাট আদায় হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এ সময়ে এই খাতের লক্ষ্য ছিল ৩৪ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকার শুল্ক–কর আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ জন্য বহুজাতিক সংস্থাটির আরোপিত নানা ধরনের শর্ত মানতে হচ্ছে। এই শর্ত থেকে রাজস্ব খাতও বাদ যায়নি। সে অনুযায়ী, এই খাতে বড় দুটি শর্ত হলো প্রতিবছর জিডিপির দেড় শতাংশ পরিমাণ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে ও ২০২৭ সালের মধ্যে সব ধরনের করছাড় তুলে দিতে হবে এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কৌশল ঠিক করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই স প ট ম বর এনব আর র শ ল ক কর এই খ ত
এছাড়াও পড়ুন:
বন ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় দুটি যুগান্তকারী অধ্যাদেশ পাস
দেশের বন, জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশ পাস করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘বন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এবং ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
নির্বাচনে পুলিশকে ‘ঐতিহাসিক দায়িত্ব’ পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
দেশের সুরক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর ত্যাগ ও নিষ্ঠা দৃষ্টান্তমূলক: প্রধান উপদেষ্টা
বন সংরক্ষণে প্রায় ১০০ বছর ধরে কার্যকর দি ফরেস্ট এক্ট, ১৯২৭ বর্তমান পরিবেশগত বাস্তবতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আর পর্যাপ্ত নয়।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ণের চাপ, অবৈধ দখল, বনভূমি উচ্ছেদসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন ‘বন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ অধ্যাদেশে প্রাকৃতিক বন রক্ষা, বনভূমির রেকর্ড ও সীমানা সংরক্ষণ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা, উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ দখল প্রতিরোধ, অবক্ষয়িত বন পুনরুদ্ধার, আগ্রাসী প্রজাতি নিয়ন্ত্রণ এবং কর্তনযোগ্য ও কর্তন নিষিদ্ধ বৃক্ষের তালিকা হালনাগাদের মতো বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২’ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা এবং আন্তর্জাতিক নীতিমালার পরিবর্তনের কারণে নতুন ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রণীত হয়েছে। নতুন অধ্যাদেশে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণ, শিকার, পাচার, হত্যা ও বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় করা হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা, বন্যপ্রাণী উদ্ধার, শুশ্রূষা, পুনর্বাসন, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানুষ-বন্যপ্রাণীর সুসমন্বিত সহাবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘বন্যপ্রাণী ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সংরক্ষণ কার্যক্রমে বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় জনগোষ্ঠী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা হয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, পাস হওয়া এই দুটি নতুন অধ্যাদেশ বনসম্পদ, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে দেশের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে পরিবেশগত নিরাপত্তা জোরদার হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ প্রকৃতি সংরক্ষণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা/এএএম/এসবি