অস্পৃশ্য

তার মুখ কবেই তো ভুলে গেছি, তবু
কার্তিক এলেই তীব্র নিনাদের মতো
মনে পড়ে তাকে, নিভৃত বিস্ময়ে
মৃদু লয়ে কাছে আসে আশ্চর্য বিষাদ ঋতু
একলা দহনে দাউ দাউ জ্বলে পাপ—
চলে যায় ছিন্ন অন্ধকারে, নির্জলা আগুন!
দর্পণ পেরিয়ে দূরে আরও দূরে
জন্ম-জন্মান্তরে অশরীরী ছায়া প্রেমে;
বুক চিরে শূন্যে ভেসে ওঠে নীলাভ জোছনা
হৃদয় মন্থনে শুধু অনন্ত-বঞ্চনা নিয়ে
হেঁটে যায় পথ, চারদিকে নেমে আসে
অস্পৃশ্য কুয়াশা, শান্ত নীড়ে অদ্ভুত বিকেল
দুঃখবোধ আর স্মৃতিটুকু নিয়ে তবু
জাদুর মতন ছেড়ে যায় শেষ দেখা ট্রাম
দুচোখের কোণে অতর্কিতে হানা দেয়
তখন প্রার্থনা আর আনন্দ অসুখ।

ঠোঁট

এখানে বৃষ্টির পর খুব একা লাগে
তখন শ্রাবণদিনে নারী
শুধু খেলা করে, নাচে-গায়!
উড়ে উড়ে ঘুরে মরে ভ্রমণের দল
প্রবল জলের স্রোতে শেওলা দেখা দিলে,
সহসাই ময়ূর পেখম মেলে ধরে
প্রিয়, আজ অনন্ত শূন্যতা মেলে ধরো;
বাধাহীন হয়ে তবু ভেতরে-বাহিরে
চুম্বনে চুম্বনে এনে দাও প্রহেলিকা
ক্রমাগত ভ্রমণের তীব্র আকুলতা
কখনো ভেবেছ তেমন অশরীরীরা
কাছে এলে, তোমার ঠোঁট আমার ঠোঁট
ছুঁতে চায়, কতবার বলো কত কত
করেছ চুম্বন? তবু কি কোথাও
মিলেছে আশ্রয়? আমাদের দুজনের
দুঠোঁট যখন ছুঁয়ে যাবে
সবকিছু মনে হবে আশ্চর্য বিস্ময়!

অন্তহীন

ভেবে দেখো
অন্য কোনোভাবে
নতুন পথের দিকে,
রওনা হওয়ার আগেই
কতটুকু তৃষ্ণায়-ক্লান্তিতে
চোখ মুদে আসে আমাদের!

জলের অপেক্ষা ছিল পথে
পথ ফিরে যেতে চেয়েছিল
সাঁকোটির কাছে,

তবু এই মেঘ-ঝোড়ো দিন শেষে
জঙ্গল পেরিয়ে এলে,
কুয়াশার ঘনঘোর ছায়া হয় আর
বহুদূর থেকে অপেক্ষার
প্রতিধ্বনি ভেসে আসে কাছে;

চন্দ্রচূড় পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু
চূড়ায় জোছনা ভেসে যায়
ভেসে যায় জোনাকির
নেশাতুর হাতছানি;

তোমাকে ভোলার জন্য
বিক্ষুব্ধ-উত্তাল হয়
নোনা প্রমত্ত সমুদ্র!
তন্ময় ঘড়ির কাঁটা থমকে যায়
নিদারুণ ক্ষোভে.

..

আরও কয়েকটা বছর ভুলে
থাকতে হবে
ভুলে থাকতে হবে
চাওয়া-পাওয়ার
মায়াবী ফাঁদ
ভেঙে ফেলতে চাই
যত আশাতীত সম্ভাবনা!

পথে ভেঙে দেয়
সালতির পর সালতি সাজিয়ে
গড়ে তোলা সমস্ত নদীর
সেতুবন্ধগুলো,

নেই অন্য কোনো সম্ভাবনা
নেই আর ভেবে দেখার ইচ্ছেটুকুও

আর কোনো পথ খোলা নেই
যেন সব পথ শুধু
হারিয়ে গিয়েছে অন্তহীন
অন্ধ পথের নেশায়...

হেমন্ত চেয়েছি শুধু

রেশম কুয়াশা ফোটা হেমন্তের সুখ
গুটি গুটি পায়ে এগোয় হিমের দিকে
এগিয়ে চলেছি স্বপ্নালু শৈশব থেকে
আমিও তেমনি করে, তোমার দিকেই...
পাখিদের শীতের ইশারা মোহময়
নীলাদ্রি আকাশে ধূপ চন্দনের আলো
কুসুম কুসুম রোদে রোশনাই খুব
প্রজাপতির ডানায় ভাসে হেমন্তের
অবারিত ঋতু, মনের উঠোনে ওড়ে
কাশফুল তুলো—গাঙচিল হয়ে শূন্যে
ভাসে বিচ্ছেদ যন্ত্রণা সুচের মতন।
তোমার বুকের ওম পেতে হলে বলো
কত কতকাল তবে অপেক্ষায় রব?
নতুন কি কোনো বার্তা দেবে?
চোখে, ঠোঁটে, চিবুকে, বাহুতে,
অথবা বৃক্ষের শাখা-প্রশাখায়, শূন্য
মনের অচল কোণে হিমেল নিদ্রায়?

হৃদয় ভরে আছে বৃষ্টিতে

নেশারু তুষার ঝরে ঝরে
বৃষ্টিতে হৃদয় ভরে গেছে
তবু দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল
সেদিন, অলিভবাগান, বিনিদ্র রাতে
গূঢ় নির্জনতম রাস্তায়
সঙ্গী হয়েছিল স্মৃতি চোখের পাতায়
ঘুমন্ত রাতের আকাশে অদেখা স্বপ্ন
পুষ্পধনু যেন দক্ষিণের
পাহাড়ে আলতো ঝুলে থাকে,
শীতের কুন্দন, বৃষ্টি জড়ানো দুপায়ে,
অলেখা কবিতা আর নিষ্ফল প্রেমের
শীতলতা নিয়ে আকুতি লুকানো ছিল;
দাসত্বে আবদ্ধ দুচোখের কোণ,
ব্যথিত বৃত্তের মাঝে নীরবতা
দীর্ঘদিন ধরে, অদৃশ্য ফাটল দেখা দিলে
বিচ্ছেদের ভীতি ভেঙে যায়;
তখন দুজন আধোচেনা
মানুষ দুদিকে শুধু ঘুরপাক খায়!
 
এই প্রেম অকারণ বরিষণ তবু...

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ম বন

এছাড়াও পড়ুন:

শামীম ওসমানদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা সাহসী তরুণরা লড়াই করেছে নূর

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে অসংখ্য সংগ্রামী এবং সাহসী তরুণ রয়েছে যারা এই নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে হাসিনার পতনের জন্য লড়াই করেছে। মানুষের সমর্থন পেলে তারাই আগামীর  জনপ্রতিনিধি হবে।

শুক্রবার(৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যুব ও ছাত্র অধিকার পরিষদের আয়োজনে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজবিরোধী তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য সংগঠনের মত কেউ কেউ চাঁদাবাজি করে দাবি করে তিনি নুরু বলেন,মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই মাদকের ব্যবসা-বাণিজ্য চলে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায়। শুধুমাত্র ব্যক্তি পাল্টায় দৃশ্যপট পাল্টায় না।

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন কল-কারখানা, শিল্প মালিকদের কাছ থেকে আগে শামীম ওসমানের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের লোকের চাঁদা নিতো। এখনো কেউ না কেউ চাঁদা নিচ্ছে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাস বন্ধে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট দরকার। কিন্তু কেউ সেটি চায় না। কারণ সবাই ভোটকেন্দ্র দখল করার জন্য, গুন্ডামি, মাস্তানি করার জন্য তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে চায়।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামীতে বাংলাদেশ কোন দিকে এবং কীভাবে পরিচালিত হবে তার ফয়সালা হবে এই নির্বাচনে। তাই ছাত্র-জনতাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনারা নির্বাচনে কাদেরকে ভোট দিবেন। ভালো মানুষকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে দেশের ভালো হবে। পেশিশক্তি, কালো টাকার মাফিয়া, দুর্বৃত্তদের পেছনে স্লোগান দিয়ে রাজনীতি করার দিন শেষ।

গণঅধিকার পরিষদ এখন পর্যন্ত কারও সঙ্গে নির্বাচনী জোট করেনি দাবি করে  নুরুল হক বলেন, রাষ্ট্র ব্যবস্থা, দেশের পরিবর্তনের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা বিবেচনার পর জোটের কথা ভাববেন।

নুরুল হক আরও বলেন,  ক্ষমতা জনগণের কাছে। কাজেই জনগণ যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলেই কেবলমাত্র পরিবর্তন সম্ভব। শুধুমাত্র টেলিভিশনে টকশো কিংবা রাজনীতির মাঠে বক্তব্য দিয়ে দেশ পরিবর্তন হবে না। মানুষকে পরিবর্তন হতে হবে।

নুরুল হক বলেন, ৫ আগস্টের আগে যে স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা নিয়ে তরুণরা জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছে গণঅভ্যুন্থানের  পরের ১৫ মাসেও পূরণ হয়নি।
 
৫ই আগস্টের পূর্বে যেই স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তরুণরা নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছে এই ২৪শের গণঅভ্যুন্থানের পরের মাসে সেই স্বপ্ন এবং পরিবর্তন কতটুকুপূরণ হয়েছে? পূরণ কি হয়েছে? পূরণ হয় নাই। কাজেই ওই যে আমরা রাজপথে বারবার স্লোগান দেই। দিয়েছি তো রক্ত। আরো দেব রক্ত। আমরা আর রক্ত দিতে চাই না। আমরা আর রক্ত দিব না।

রক্ত ২৪শে জুলাই গণহত্যা পর্যন্ত যা দিয়েছি সেই রক্তের শপথ গড়া এই শহীদদের স্বপ্নের সারা বাংলাদেশ নির্মাণ করবো। ২৪শে জুলাই পরবর্তী এটাই হোক আমাদের দীপ্ত শপথ। ঠিক। আমরা যারা রাজপথে বারবার স্লোগানে বলি শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।

কিন্তু বাংলাদেশের গত ৫০ বছরে শহীদের রক্ত অনেক ক্ষেত্রেই বৃথা গিয়েছ। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা যেই লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি সেটি পূরণ হয় নাই

সম্পর্কিত নিবন্ধ