কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 22nd, June 2025 GMT
আগের চেয়ে বাড়তি করে অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনা এবং ভবন নির্মাণে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব বাজেটে করা হয়েছিল। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করার সময় সেটি পরিপূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ রোববার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরের সভাকক্ষে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে সকালে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা আগামী এক জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড.
নির্বাচিত সরকারের আমলে বাজেট জাতীয় সংসদেই উপস্থাপন করা হয়। পরে মাসজুড়ে সেই প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা হতো সংসদে। জুন মাসের শেষ দিকে সংসদে পাস হতো নতুন অর্থবছরের বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদে আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। তবে বাজেট ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের শুধুমাত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মধ্যমে নাগরিকদের থেকে মতামত নেওয়া হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ত ব
এছাড়াও পড়ুন:
উপদেষ্টা পরিষদে আজ পাস হতে পারে বাজেট
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আজ (রোববার) প্রস্তাবিত ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের নির্ধারিত ৭ লাখ ৯০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হতে পারে। আর সভায় এই বাজেট পাস বা অনুমোদন করা হতে পারে।
আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছরের যাত্রা শুরু হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনুসের সভাপতিত্বে সভাটি সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, তেজগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এর আগে অর্থ উপদেষ্টা গত ২ জুন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে আগামী অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটটি জাতির সামনে উপস্থাপন করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অর্থ উপদেষ্টার ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের পক্ষ থেকে নতুন অর্থবছরে বাজেটটি উপদেষ্টা পরিষদে পাস করার জন্য উত্থাপন করা হবে। এতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আওতাধীন কয়েকটি করের হার পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। এতে আলোচিত কালো টাকা সাদা করার বিদ্যমান সুবিধা বহাল রাখা হবে কীনা সে বিষয়ে উপদেষ্টার পরিষদের মতামত নেওয়া হতে পারে।
গত ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা যে বাজেট প্রস্তাবটি ঘোষণা করেন তাতে আবাসনখাতে ৫ গুণ বেশি কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার বিধান রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী ব্যাপক সমালোচনা মুখে এই সুবিধা বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে আবাসন মালিকদের সংগঠন রিহ্যাব অর্থ উপদেষ্টা ও এনবিআর চেয়ারম্যান সাথে দেখা করে দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থার স্বার্থে বিদ্যমান সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছিল।
এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানান, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে উপদেষ্টা পরিষদ। ফলে এখন এ বিষয়টি নিষ্পত্তি উপদেষ্টার পরিষদের সভায় হতে পারে বলে সূত্র জানায়।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৯ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সুযোগ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২ সেপ্টেম্বর এনবিআর ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে সে সময় স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্লোর স্পেস ও ভ’মি আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত থাকলে তা নির্ধারিত হারে আয়কর দিয়ে বৈধ করার বিধানটি বহাল রাখা হয়। এর মধ্যে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর বাড়িয়ে কিছু কাটছাঁট করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলভেদে তিন থেকে পাঁচ গুণ কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতেই দেখায় দেয় বিপত্তি অর্থনীতিবীদসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে সরকারের এই প্রস্তাবের ব্যাপক সমালোচনা করা হয়।
অর্থ বিলে বলা হয়েছে, সরকারিভাবে নির্ধারিত এলাকা ভেদে ফ্ল্যাট বা ভবন কেনা এবং নির্মাণে কালোটাকা সাদা করতে হলে প্রতি বর্গফুটে নির্দিষ্ট হারে কর দিতে হবে। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশায় ২ হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট বা ভবনের ক্ষেত্রে কর হবে প্রতি বর্গফুটে ২ হাজার টাকা। একই এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের কম আয়তনের ক্ষেত্রে কর নির্ধারিত হয়েছে ১৮০০ টাকা।
ধানমন্ডি, উত্তরা, মহাখালী, লালমাটিয়া, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কাওরান বাজারসহ অন্যান্য অভিজাত এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট বা ভবনের ক্ষেত্রে কর হবে ১৮০০ টাকা এবং অনধিক আয়তনের ক্ষেত্রে ১৫০০ টাকা।
অপরদিকে, ঢাকা ও চট্রগ্রাম মহানগরীর বাইরে সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে বড় ফ্ল্যাটের (১৫০০ বর্গফুটের বেশি) ক্ষেত্রে কর প্রতি বর্গফুটে ৭০০ টাকা এবং ছোট ফ্ল্যাটে (১৫০০ বর্গফুটের কম) কর ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা সদরের পৌর এলাকায় বড় ফ্ল্যাটের জন্য কর প্রতি বর্গফুটে ৩০০ টাকা এবং ছোট ফ্ল্যাটের জন্য ২৫০ টাকা। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বড় ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে কর ১৫০ টাকা এবং ছোট ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা।
ভবন নির্মাণেও সুযোগ
শুধু অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনা নয়, ভবন নির্মাণেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। এলাকা ভেদে প্রতি বর্গফুটে ৫০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত কর দিয়ে এই সুবিধা নেওয়া যাবে।
শর্তসাপেক্ষে বৈধতা
তবে দুটি শর্ত উল্লেখযোগ্য: ১. অর্থটি যদি অপরাধমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয়, তবে তা বৈধ করা যাবে না। ২. অর্থের উৎস বৈধ না হলে, আইনের এই ধারায় সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।
এদিকে, আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে (অনুদানসহ- দুই লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৩ শতাংশ। এই ঘাটতির মধ্যে বড় একটি অঙ্ক পূরণ করা হবে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকবহিভর্’ত ঋণ আসবে ২১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণ সহায়তা ধরা হয়েছে নিট ৯৬ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে রাজস্ব আয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে করসমূহ থেকে আসবে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতায় আদায়ের টার্গেট ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর-বহিভর্’ত ১৯ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, সম্পদের সুষম বণ্টন ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পথ প্রশস্ত হবে এবারের বাজেট বাস্তবায়নে। পাশাপাশি, রাজস্ব আয় ও সরকারি ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে একটা যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নও এ বাজেটের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঢাকা/হাসনাত/টিপু