দিনের প্রহর এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ কিছুটা পরিবর্তিত হয়। সকালে রক্তচাপ যা থাকে, বিকেল বা সন্ধ্যায় একই রকম থাকে না। সারা দিনের যেকোনো সময় খাবার খাওয়া হলে তার কিছুক্ষণের মধ্যে রক্তচাপ একটু বেড়ে যায়। ক্যাফেইন, ধূমপান, অ্যালকোহল, অনিদ্রা ও মানসিক চাপের মতো আরও কিছু বিষয় রক্তচাপ বাড়ায়। বুঝতেই পারছেন, এসব বিষয় খেয়াল রেখে তবেই রক্তচাপ মাপতে হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন রাজধানীর পপুলার মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.

নওসাবাহ্ নূর

সকালের সুবিধা-অসুবিধা

সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময়টা রক্তচাপ মাপার জন্য অনেক দিক থেকেই ভালো। ঘুম থেকে উঠে আপনি মনের দিক থেকে অনেকটাই সতেজ থাকেন। এই সময় পেটে কোনো খাবার থাকে না। আগের দিন চা, কফি, চকলেট বা ক্যাফেইনসমৃদ্ধ অন্য কোনো খাবার খেয়ে থাকলে সেটির প্রভাবও থাকবে না। এই সময়টায় আপনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাব থেকেও মুক্ত, যদি না কেউ আপনার ঘর বা বারান্দার কাছে ধূমপান করে থাকেন। তবে বিপত্তি বাধতে পারে অন্য কারণে। প্রস্রাবের চাপ থাকা অবস্থায় রক্তচাপ বাড়তে পারে। আবার বাথরুম থেকে ঘর পর্যন্ত হেঁটে আসতে গিয়েও রক্তচাপের খানিকটা তারতম্য হতে পারে।

যদি মাপেন সকালে

দিনের অন্যান্য সময়ের থেকে সকালেই সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপা সহজ। সকালে উঠে বাথরুমের কাজ সেরে নিন। দাঁত ব্রাশ ও গোসল করলেও ক্ষতি নেই। তবে শারীরিক শ্রম হয়, এমন কোনো কাজ করবেন না। এমনকি ছাদ কিংবা বারান্দার বাগানেও পানি দিতে যাবেন না। বরং বাথরুম থেকে বের হয়ে একটা চেয়ারে সোজা হয়ে বসে বিশ্রাম করুন। পা জোড়া রাখুন মেঝেতে, সমানভাবে। এক পায়ের ওপর অন্য পা তুলে বসবেন না। চেয়ারটি যেন থাকে একটি টেবিলের কাছে, যেখানে অনায়াসে হাত রাখতে পারবেন আপনি। টেবিলের বিকল্প হিসেবে চেয়ারের চওড়া হাতলও কাজে লাগানো সম্ভব।

৫ থেকে ১০ মিনিট পর চেয়ারে বসা অবস্থায়ই রক্তচাপ মাপুন। রক্তচাপ মাপার আগে কিছু খাবেন না, চা-কফি বা স্যালাইন তো নয়ই। রক্তচাপের ওষুধ সেবন করবেন না, ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ করবেন না। এমনকি রক্তচাপ মাপার আগে সংবাদপত্র পড়া, টেলিভিশন দেখা বা ইন্টারনেট ব্যবহার থেকেও বিরত রাখুন নিজেকে। কারণ, খারাপ খবর পেলে রক্তচাপ বাড়তে পারে। এভাবে নিয়ম মেনে রক্তচাপ মাপা হলে আপনি সঠিক ‘রিডিং’ পাবেন।

আরও পড়ুনউচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ৭টি সহজ ঘরোয়া উপায়২৩ জুন ২০২৫অন্য সময়ে

সারা দিনে একবার রক্তচাপ মাপার প্রয়োজন হলে সকালে মাপাই যথেষ্ট। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে একাধিকবার রক্তচাপ মাপার নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক নির্দেশনা দেবেন তা সন্ধ্যায় মাপতে হবে, নাকি রাতে ঘুমের আগে। সে ক্ষেত্রেও কিন্তু একই ধরনের বিষয় মেনে চলতে হবে। চাপ থাকলে প্রস্রাব করে নিন রক্তচাপ মাপার আগেই। রক্তচাপ মাপার আগে একইভাবে চেয়ারে বিশ্রাম নিন। মানসিক চাপ দূরে সরিয়ে রাখুন। খাবার, পানীয় বা ওষুধ গ্রহণ করলে, ধূমপান করলে কিংবা শারীরিক শ্রমের কাজ করলে আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর রক্তচাপ মাপুন। বাইরে গেলেও বাড়ি ফেরার আধা ঘণ্টা পর রক্তচাপ মাপা ভালো।

খেয়াল রাখুন

স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গেলে মানসিক চাপের কারণে রক্তচাপ খানিকটা বাড়তে পারে। তাই বাড়িতে মাপা ভালো।

পরপর কয়েক দিন রক্তচাপ মাপলে দিনের একই সময়ে মাপতে চেষ্টা করুন।

মনে রাখবেন, হঠাৎ মাথা ঘোরালে, অসুস্থ অনুভব করলে যেকোনো সময়ই রক্তচাপ মাপার প্রয়োজন হতে পারে। তখন এত সব প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা করা যাবে না।

আরও পড়ুনম্যানুয়াল নাকি ডিজিটাল, রক্তচাপ মাপার যন্ত্র কোনটি ভালো১৭ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দাপুটে জয়ে ক্যাম্প ন্যুতে বার্সেলোনার প্রত্যাবর্তন

ফেরান তোরেসের দুর্দান্ত জোড়া গোল আর শুরুর দিকেই রবার্ট লেভানদোভস্কির আঘাত; সব মিলিয়ে দুই বছর পর ন্যু ক্যাম্পে ফিরে এসে একেবারে রাজকীয় ভঙ্গিতেই নিজেদের উপস্থিতি জানান দিল বার্সেলোনা। ১০ জনের বিলবাওকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে লা লিগায় টানা তিন জয়ের আনন্দে ভাসল কাতালানরা।

নবায়ন কাজের কারণে দীর্ঘ বিরতির পর ন্যু ক্যাম্পে এটি ছিল বার্সার প্রথম ম্যাচ। শুরুতেই যেন সেই অপেক্ষার সব ক্ষত মুছে দিলেন লেভানদোভস্কি। ম্যাচের মাত্র চার মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে বল কাড়ার পর নিচু শটে উনাই সিমোনকে পরাস্ত করেন তিনি।

আরো পড়ুন:

দ্রুততম ৪৪ গোলে রোনালদোর রেকর্ড ভাঙলেন এমবাপ্পে

মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনাকে হারাল রিয়াল

এরপর দানি ওলমোর প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেয় বিলবাওয়ের রক্ষণ দেয়াল। লামিন ইয়ামালের শটও রুখে দেন সিমোন। অন্যদিকে আক্রমণে উঠেও সুযোগ নষ্ট করেন উনাই গোমেজ ও নিকো উইলিয়ামস। আয়েরিক লাপোর্তের হেডও পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।

এরপর ফেরান তোরেস ও ফিরমিন লোপেজও গোলের খোঁজে সক্রিয় হন। গার্সিয়া চোট কাটিয়ে একাদশে ফিরেই বিলবাওয়ের নিশ্চিত গোল ঠেকান।

হাফটাইমের ঠিক আগে ইয়ামালের দারুণ বাঁকানো পাসে সুযোগ পান তোরেস। নিচু শটে সিমোনকে পরাস্ত করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তিনি। সিমোন ছুঁয়ে দিলেও গোল ঠেকাতে পারেননি।

বিরতির পর মাত্র তিন মিনিটের মাথায় লোপেজ দারুণ এক প্রচেষ্টায় সোজা শটে তৃতীয় গোলটি করেন। ৫৪ মিনিটে লোপেজের ওপর বিপজ্জনক ট্যাকল করে ওইহান সানসেট লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে বিলবাওয়ের দুর্ভাগ্য আরও ঘনীভূত হয়।

এরপর ডানি ভিভিয়ান হুমকি তৈরি করলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। পাল্টা আক্রমণে ওলমোর শটও অল্পের জন্য বাইরে যায়। ভিভিয়ান পরে আরেকবার হেডে গোল করতে উদ্যত হয়েছিলেন, তবে গার্সিয়ার গ্লাভসে আটকে যায় বল।

অবশেষে ৯০ মিনিটে ইয়ামালের সূক্ষ্ম পাস ধরে ঠান্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে ম্যাচের শেষ শব্দটি লিখে দেন ফেরান তোরেস।

দুই বছর পর ঘরের মাঠে ফিরল বার্সেলোনা। আর তোরেস-ইয়ামালরা যেন সেই আনন্দকে ফুটিয়ে তুললেন মাঠজুড়ে গোলের আতশবাজিতেই।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ