কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রশিক্ষণসহ উদ্ভাবন ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী দক্ষতা অর্জনে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল সোমবার মরক্কোর মারাকেশ শহরে দেশটির যুব, সংস্কৃতি ও যোগাযোগবিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মেদ মেহদি বেনসাইদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।

বৈঠকে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক তরুণ, যাদের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার সার্বিকভাবে কারিগরি, প্রযুক্তিনির্ভর এবং যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রশিক্ষণসহ উদ্ভাবন ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী দক্ষতা অর্জনে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে মরক্কোর যুবসমাজের কর্মস্পৃহা ও উদ্ভাবনী শক্তির প্রশংসা করেন আসিফ মাহমুদ। দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং যৌথ উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

মরক্কোর যুবমন্ত্রী মোহাম্মেদ মেহদি বেনসাইদ আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় গ্লোবাল ইয়ুথ সামিটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানান। তিনি বাংলাদেশ ও মরক্কোর মধ্যে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং দুই দেশের যুব উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মতবিনিময়ের ওপর জোর দেন।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামে অংশ নিতে মারাকেশ সফর করছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। মোহাম্মেদ মেহদি বেনসাইদের সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি মৌরিতানিয়া, জর্ডান, গাম্বিয়া, জিবুতিসহ ওআইসিভুক্ত অন্যান্য দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মরক ক র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চিরকুট: ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’

রাজশাহীর পবার একটি ঘরে শুক্রবার সকালে চার মরদেহের সঙ্গে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে, যার শব্দ-বাক্যে জীবন-সংসারে অভাব ও ঋণের চরম অভিঘাতের কথা লেখা রয়েছে। তার মধ্যে দুটি বাক্য এমন- “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না।”

দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা একটি পরিবারের কর্তা ব্যক্তির বর্ণনা অনুযায়ী, প্রথমে স্ত্রী, তারপর ছেলে-মেয়ের প্রাণ নিয়ে নিজেও শেষ হয়ে গেছেন। তবে এই চিরকুট যে তারই লেখা, সেটি তদন্তের আগে নির্ধারণ করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য পুলিশের।

পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বামনশিকড়ে শুক্রবার সকাল এল চারজনের জীবনাবসনের শোকের ছায়া নিয়ে। বৃহস্পতিবার রাত দ্বিপ্রহরে একই ঘরে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

আরো পড়ুন:

পদ্মায় গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই ছাত্রের লাশ উদ্ধার

কুমিল্লায় মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার

৩৫ বছর বয়সি মিনারুল ইসলামের সংসার ছিল স্ত্রী মনিরা খাতুন (২৮), ছেলে মাহিম (১৪) ও মেয়ে মিথিলাকে নিয়ে। তারা এখন বামনশিকড়ের অভাবে-ঋণে হারিয়ে যাওয়া একটি শোকগাথা।

মতিহার থানার ওসি আবদুল মালেকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মিনারুলের ঘরে তাদের লাশের পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। চিরকুটে বেশ কিছু কথা লেখা আছে। তবে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

দুই পাতার চিরকুটের ছবি রাইজিংবিডি ডটকমের হাতে এসেছে, যেখানে অভাব-ঋণ, বাবা-ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া কষ্টের কথা লেখা রয়েছে।  

চিরকুটের এক পাতায় লেখা আছে, “আমি মিনারুল নিচের যে সব লেখা লেখবো। সব আমার নিজের কথা লিখে যাচ্ছি। কারণ, আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাবো। এই মৃত্যুর জন্য কারো কোনো দোষ নেই। আমি মিনারুল প্রথমে আমার স্ত্রীকে মেরেছি। তারপর আমার মাহিমকে (ছেলে) মেরেছি। তারপর আমার মিথিলাকে (মেয়ে) মেরেছি। তারপর আমি নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছি।”

চিরকুটে আরো লেখা আছে, “আমাদের চারজনের মরা মুখ যেন বাপের বড় ছেলে ও তার স্ত্রী-সন্তান না দেখে এবং বাপের বড় ছেলে যেন জানাজায় না আসে। আমাদের চার জনকে কাফন দিয়ে ঢাকতে আমার বাবা যেন টাকা না দেয়। এটা আমার কসম।”

চিরকুটের দ্বিতীয় পাতায় লেখা আছে, “আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম, কারণ আমি একা যদি মরে যাই তাহলে, আমার স্ত্রী-সন্তানরা কার আশায় বেঁচে থাকবে? কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবে না।”

এরপরের বাক্যগুলো হুবহু এমন, “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই আমারা বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম সেই ভাল হলো। কারও কাছে কিছু চাইতে হবে না। আমার জন্যে কাউকে মানুষের কাছে ছোট হতে হবে না। আমার বাবা আমার জন্য অনেক মানুষের কাছে ছোট হয়েছে, আর হতে হবে না। চিরদিনের জন্য চলে গেলাম। আমি চাই সবাই ভালো থাকবেন।”

শেষে লেখা, “ধন্যবাদ।”

ঢাকা/কেয়া/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ