প্রশাসনিক স্থবিরতার কারণেই ‘মব কালচারের’ প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে নানাবিধ সামাজিক অপরাধের বিভিন্ন মাত্রার প্রকাশ দেখা যাচ্ছে। প্রশাসনিক স্থবিরতার কারণেই মব কালচারের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবৈধ কালো টাকা এবং গোপন অপতৎপরতার প্রভাবে মব কালচারের নামে সমাজে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চলছে। আবার অন্যদিকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বার্থান্বেষী মহল বিএনপির নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই পরিকল্পিত অপপ্রচার, অপতৎপরতা, কৃত্রিমভাবে তৈরি সামাজিক অশান্তি গণতন্ত্রের পথচলাকে বাধাগ্রস্ত করা এবং নির্বাচন পেছানোর সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা বলে জনগণ মনে করে। শেখ হাসিনার আমলে অদ্ভুত উন্নয়নের বয়ানের মতো এখন নির্বাচন পেছানো নিয়ে নানা ধরণের বয়ান দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে দল থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। দলের ভেতরে থেকে অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হলে তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যে বেশ কিছু নেতাকর্মীকে বহিষ্কার, অব্যাহতি প্রদান, পদ স্থগিত, কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, দলের পক্ষ থেকে এমন চলমান সাংগঠনিক ব্যবস্থার বিষয়ে গণমাধ্যমে খুব একটা উল্লেখ করা হয়নি। উপরন্তু, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঢিলেঢালা ভূমিকা রহস্যজনক। দলের পক্ষ থেকে বারবার অপরাধী ও বিশৃঙ্খলাকারিদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হলেও প্রশাসন নির্বিকার থাকছে। দুস্কৃতিকারিদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দল থেকে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হলেও প্রশাসন কোন সহযোগিতা করছে না।’

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন খুব একটা সক্রিয় হয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেউ কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কলকাঠি নাড়ছেন বলে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়। এ রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে সমাজ সংস্কৃতি, সভ্য আচরণ বিপন্ন হয়ে পড়বে। প্রশাসনিক এই নিষ্ক্রিয়তার কারণে জনগণের এখন জীবনমরণের প্রশ্ন।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের স্থায়ী পুনরুজ্জীবন ও ঐতিহাসিক সার্থকতা নির্ভর করছে রাষ্ট্র ও সমাজে শান্তি ও স্থিতির ওপর। আর এ ক্ষেত্রে দক্ষ প্রশাসন খুবই জরুরি। কিন্তু আওয়ামী আমলের কালো টাকা ও তাদের দোসরদের ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ তৎপরতার কারণে দুস্কৃতিকারিরা আশকারা পাচ্ছে এবং সমাজে নৈরাজ্য তৈরীর সম্ভাবনা সৃষ্টির আলামত দেখা যাচ্ছে।’’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন। বহুদলীয় গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার মূলমন্ত্র বুকে ধারণ করে এই দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। গণতন্ত্রের মূল নীতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেই শত প্রতিকুলতা ও ঝড়-ঝাপটা অতিক্রম করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে এসেছে। স্বজাতির সব ধর্ম ও বর্ণের সজ্জন মানুষ ও বিভিন্ন শ্রণি-পেশায় যুক্ত ব্যক্তিরা এই দলের সদস্য হতে পারেন। সমাজবিরোধী কোন ব্যক্তি, দখলবাজ, চাঁদাবাজদের স্থান এই দল বরদাস্ত করে না।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু দল যখনই এ ধরনের ঘটনা অবহিত হয় তখনই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দ্বিধা করেনি। বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই গণতান্ত্রিক সংবিধান ও সুশাসনের জন্য আইনী ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণ করার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং এরজন্য নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করে এসেছে। এই দল মনে করে একটি আদর্শ রাষ্ট্র ও সমাজে নেতৃস্থানীয় মানুষদের যোগ্যতা, দক্ষতা, ন্যায়পরায়ণতা, সৎ ও মানবিক গুণাবলী থাকা ব্যক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিএনপি যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবারই উল্লিখিত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। জাতীয়তাবাদী শক্তির সমবেত ধ্বণীই হচ্ছে সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ মব গণতন ত র ব এনপ র ব যবস থ গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে: মির্জা ফখরুল

দেশে এখন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছে। কমিশনের মধ্য দিয়ে সংস্কারের সনদ হয়েছে, বিএনপি তাতে স্বাক্ষর করেছে। দেশে এখন একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো পরিস্থিতি ও পরিবেশ তৈরি হয়েছে।’

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

রেজা কিবরিয়ার বিএনপিতে যোগদান উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে। তিনি গণ অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সেভাবেই প্রস্তুতি চলছে। বিএনপি আশা করে, দেশের মানুষ এই সুযোগ গ্রহণ করবে। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদ গঠন করবে। এর মধ্য দিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।

বিএনপির একাধিকবার রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিএনপি যদি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তাহলে অবশ্যই দেশকে সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন। সারা দেশের মানুষ তাঁর রোগমুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইছেন। আল্লাহ যেন তাঁকে দ্রুত সুস্থ করে দেন, দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ দেন।

খালেদা জিয়ার সবশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকেরা জানতে চান। জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। চিকিৎসকেরা কাজ করছেন। আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের যুক্ত রেখেই তাঁর চিকিৎসা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় ফতুল্লা ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ড বিএনপির দোয়া
  • ভোট পেছাতে কয়েকটি দল ষড়যন্ত্র করছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মোহাম্মদ আলীর দোয়া মাহফিল
  • খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মো. আলীর দোয়া মাহফিল
  • খালেদা জিয়া এদেশের মানুষের ঐক্য ও ভালোবাসার প্রতীক : সজল
  • খালেদা জিয়া দুঃশাসনের নিপীড়নের শিকার হয়েও আপোষ করেননি : মামুন মাহমুদ
  • যে কারণে এখনই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলনীতি জরুরি
  • ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন: জামায়াত আমির
  • রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকারের দাব
  • দেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে: মির্জা ফখরুল