দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) বাজারে মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য বিক্রি ও মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় ছয়টি দোকানকে মোট ৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে হিলি বাজারে এ অভিযান পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দিনাজপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন। অভিযান চলাকালে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

অভিযানকালে বাজারের বিভিন্ন মুদি দোকান ও খাদ্যপণ্য বিক্রয়কেন্দ্র তদারকি করা হয়। এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য মজুদ ও বিক্রির পাশাপাশি মূল্য তালিকা না রাখার প্রমাণ পাওয়ায় ছয়টি দোকানকে জরিমানা করা হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দিনাজপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেছেন, ভোক্তাদের সুরক্ষায় নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি কিংবা মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এ ধরনের অভিযানের ফলে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ব্যবসায়ীদেরও নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনায় উৎসাহিত করা হচ্ছে।

ঢাকা/মোসলেম/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর খ দ যপণ য র স রক

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্নীতি দমনে রাসুল (সা.)

দুর্নীতি মানবসমাজের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। রাসুল (সা.)-এর জীবনবিধান, শিক্ষা ও নৈতিক আদর্শ মানবতার সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। এ জীবনবিধান দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলতে সক্ষম।

রাসুল (সা.) ‘মদিনা সনদ’ নামে একটি আদর্শ সনদ প্রণয়ন করেন। ইসলামি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে এবং দুর্নীতি দমনে তাঁর নীতি ও আদর্শের যে পরিচয় দিয়েছেন, তার বিবরণ নিচে দেওয়া হলো।

দুর্নীতি

দুর্নীতি হলো নৈতিক, সামাজিক ব্যাধি, বিরুদ্ধাচরণ, অসদাচরণ ও নীতিহীন কাজ। নীতিসিদ্ধ নয়, তাই দুর্নীতি। দুর্নীতি প্রতিরোধে উপায়গুলো নিম্নরূপ:

১. আমানত: আমানতদারিকে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা হকদারকে আমানত ফিরিয়ে দাও এবং ন্যায় ও নিষ্ঠার সঙ্গে বিচারকার্য পরিচালনা করবে। আল্লাহর উপদেশ কতই না উৎকৃষ্ট! নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সুরা নিসা, আয়াত-৫৮)।

রাসুল (সা.) বলেন, আমানতের খেয়াতন কেয়ামতের আলামত। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ইয়া নবী (সা.), আমানত কীভাবে নষ্ট হবে? তিনি বললেন, ‘অযোগ্যরা যোগ্যদের মসনদ থাকবে, এটাও কেয়ামতের আলামত।’

নবীজির (সা.) প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ‘আমিন’ জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার ওপর নজর রাখতেন। অন্যায়ভাবে কিছু গ্রহণ করলে তা চুরি হিসেবে গণ্য হতো।

২. সততা: সততা ও নিষ্ঠার উজ্জ্বল উদাহরণ নবীজি (সা.)। নবুওয়াতের পূর্বেই তিনি ‘আল-আমিন’ উপাধি লাভ করেন এবং সততা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম।

৩. আল্লাহভীতি: দুর্নীতি প্রতিরোধের চাবিকাঠি আল্লাহভীতি। ‘আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ উত্তরণের পথ দেখাবেন।’ (সুরা তালাক: ২)

আরও পড়ুনযার কবরে নেমে রাসুল (সা.) লাশ দাফন করেন২৯ মার্চ ২০২৫

৪. ন্যায়বিচার: মাখযূম গোত্রের ফাতেমা বিনত আবুল আসাদ অভিজাত বংশীয় নারী মক্কা বিজয়ের দিন চুরি করে ধরা পড়ে। তার চুরির বিষয়টি প্রমাণিত হয়। রাসুল (সা.) বিলাল (রা.)-কে তার হাত কাটার আদেশ দেন। কুরাইশ নেতারা ভালো করেই জানেন, রাসুল (সা.) বিচারকার্যে কোনোরূপ ছাড় দেন না। তাঁরা উসামা ইবনে যায়দ (রা.)-কে সুপারিশের জন্য মনোনীত করেন।

তিনি সুপারিশ করলেন, রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত হদ্দ (শরয়ি শাস্তি)-এর বিরুদ্ধে সুপারিশ করছ? সবার উদ্দেশে বললেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তীরা এ জন্যই ধ্বংস হয়েছে, অভিজাত ব্যক্তিদের চুরি বা অপরাধ ছিল বৈধ; কিন্তু দুর্বল ব্যক্তি করলে তার জন্য হদ্দ কার্যকর হতো।’

এটা ছিল এক নগ্ন বৈষম্য। মানুষ হিসেবে সবাই সমান।

অন্যের জান, মাল ও ইজ্জতের ওপর আঘাত করাই হলো দুর্নীতি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতিকারী নারী কিংবা পুরুষ, মুসলিম কিংবা অমুসলিম, অভিজাত কিংবা সাধারণ, কোনো ভেদাভেদ নেই। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি সাব্যস্ত হলে বৈষম্যের বিপরীতে ন্যায়বিচার হবেই। বৈষম্য একটি জাতি ধ্বংসের মূল কারণ। রাসুল (সা.) বলেন, বিচারকার্যে বৈষম্যের কারণে অনেক জাতি ধ্বংস হয়েছে। এখানে বৈষম্যের ঠাঁই নেই। ইসলাম ন্যায় ও ইনসাফের ধর্ম।

রাসুল (সা.) বিচারকার্যে ইনসাফ রক্ষায় কঠোর গুরুত্বারোপ করতেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা ফাতিমা মাখযূমির শাস্তি মওকুফের সুপারিশ করছ! মনে রেখো! ফাতিমা মাখযূমি কেন, আমার মেয়ে ফাতিমার ক্ষেত্রেও অনুরূপ বিধান। কোনোরূপ আপনপ্রীতির সুযোগ নেই।’

রায় কার্যকরের পর ফাতিমা মাখযূমি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া নবী (সা.), আমার তাওবা কবুল হয়েছে? তিনি বললেন, অবশ্যই। মাঝেমধ্যে তিনি ‘আয়েশা (রা)-এর নিকট গমনাগমন করতেন এবং রাসুল (সা.)ও তাঁকে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন।

আরও পড়ুনএক অবিশ্বাসীর মৃত্যুতে রাসুল (সা.)-এর সহৃদয়তা২৯ জানুয়ারি ২০২৫দুর্নীতি অপসারণ

মক্কা বিজয়ের পর রাসুল (সা.) মক্কার বাজারে তদারকির জন্য সাঈদ ইবনে আস (রা.)-কে নিযুক্ত করেছেন। রাসুল (সা.) স্বয়ং বাজারে গমন করে খাদ্যের ধোঁকাবাজি ও ভেজাল নির্ণয়ে খবরদারি করতেন।

রাসুল (সা.) খাদ্যশস্যের একটি স্তূপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিলেন এবং স্তূপের মালিককে ডেকে বললেন, শস্য ভেজা কেন? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। তিনি বলেন, ‘ভেজাগুলো ওপরে রাখলে না কেন? ক্রেতারা দেখতে পারত। মনে রেখো, যে ধোঁকা দেবে সে আমার উম্মত নয় (আমার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই)।’

শাসকের মৌলিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো অধীনস্থের নিরপেক্ষভাবে অধিকার আদায় করা এবং জনগণের জানমালের হেফাজত করা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। তোমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।

একজন শাসকও দায়িত্বশীল, পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, স্ত্রী তার স্বামীর ঘরসংসার ও সন্তানের দায়িত্বশীল, গোলাম তার মনিবের মালসম্পদের ওপর একজন দায়িত্বশীল। সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই একেকজন দায়িত্বশীল। আর তোমাদের প্রত্যেককেই (কেয়ামত দিবসে) তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

দুর্নীতিবাজ শাসক

রাসুল (সা.) বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ শাসক জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।’ দুর্নীতি দমন ও আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠায় রাসুল (সা.)-এর প্রয়াস বিশ্বমানবতার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।

সন্ত্রাস ও দুর্নীতি প্রতিরোধে নবীজির শিক্ষা পুনর্জাগরণ অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা, সহনশীলতা ও মানবিকতার চর্চা বাড়াতে হবে। প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক নৈতিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সন্ত্রাসবিরোধী ও দুর্নীতিবিরোধী গড়ে তুলবে।

সারকথা

ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র শাশ্বত চিরন্তন ও পরিপূর্ণ জীবনবিধান। যা সত্য, সুন্দর ও মার্জিত, তা–ই ইসলামে অনুমোদিত। অন্যায়, অসত্য, অসুন্দর বা কদর্যতা এবং উচ্ছৃঙ্খলতা ইসলামে অননুমোদিত।

দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে অস্ত্র বা কঠোর আইনের পরিবর্তে আদর্শ ও নৈতিকতার পুনর্জাগরণ প্রয়োজন। রাসুল (সা.)-এর জীবনধারা দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তাঁর আদর্শ গ্রহণে দুর্নীতি চিরতরে বন্ধ হবে। প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায়, শান্তি ও মানবতার দীপ্ত ভবিষ্যৎ।

আরও পড়ুনউত্তম ব্যবসায়ী হওয়ার নববি কৌশল০৯ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ