মামলা ডিবিতে, ৮ আসামির রিমান্ড চেয়ে আবেদন
Published: 9th, July 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার কড়ইবাড়ী গ্রামে মা ও ছেলেমেয়েকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আট আসামির সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ। আজ বুধবার রিমান্ড শুনানি হবে। এদিকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। কুমিল্লার এসপি মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খানের নির্দেশে সোমবার রাতে মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গতকাল সকাল থেকে মামলার তদন্ত শুরু করেছে ডিবি।
গত বৃহস্পতিবার কড়ইবাড়ী গ্রামে রোকসানা বেগম ওরফে রুবি, তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকিকে কুপিয়ে হত্যা করে হামলাকারীরা। এ ছাড়া কুপিয়ে গুরুতর জখম করা রুবির আরেক মেয়ে রুমা আক্তার বর্তমানে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় রুবির মেয়ে রিক্তা আক্তার শনিবার বাঙ্গরা বাজার থানায় বাচ্চু মিয়াসহ ৩৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আটজন মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন, মা ও ছেলেমেয়েকে হত্যার সময় ঘাতকদের টার্গেটে আরও ছিলেন রুবির পরিবারের অন্য সব সদস্য। তিনজনকে হত্যার সময় ঘাতকরা তাদের হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। তবে ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে পালিয়ে বেঁচে যান বাদী রিক্তা আক্তার ও তাঁর বোন আহত রুমা। ঘটনার সময় বাড়িতে না থাকায় রক্ষা পান রুবির স্বামী জুয়েল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, মামলার প্রধান আসামি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ঘটনার পর থেকে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে। তাঁকে গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, শিমুল চেয়ারম্যানের নির্দেশ না থাকলে গ্রামের লোকজন তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করার সাহস করত না। এলাকায় সব অপরাধের নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাই প্রতিটি গ্রামেই ছিল তাঁর একক আধিপত্য।
জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সমকালকে বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার ডকেট (আদালতের নথি) হাতে পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে।’
মঙ্গলবার কুমিল্লার আদালত পুলিশের পরিদর্শক সাদেকুর রহমান সমকালকে বলেন, গ্রেপ্তার আট আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। বুধবার এ বিষয়ে শুনানি হবে।
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, এসপির নির্দেশে মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাদী ও তাঁর স্বজনের নিরাপত্তার বিষয়ে ওসি বলেন, আমরা বাদী (রিক্তা) ও তাঁর স্বজনদের বলেছি, নিরাপত্তা যা যা দরকার তা পুলিশ করবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।