সুনামগঞ্জে পরিবহনশ্রমিকদের তিন দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। আজ সোমবার সকালেও সুনামগঞ্জ থেকে কোনো বাস সিলেট, ঢাকাসহ দেশের অন্য কোথাও ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

বাসভাড়া নিয়ে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পরিবহনশ্রমিকদের মধ্যে ঝগড়ার জেরে গতকাল রোববার বিকেলে শ্রমিকেরা প্রথমে সড়ক অবরোধ করেন। পরে তাঁরা কর্মবিরিতর ডাক দেন। গতকাল সন্ধ্যার পর সুনামগঞ্জ থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আজ সকাল থেকেও কোনো বাস সুনামগঞ্জ ছেড়ে যায়নি। সকালে থেকে সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা ধর্মঘটে যোগ দেন। কেউ কেউ সিএনজি অটোরিকশা চালানোর চেষ্টা করলে তাতে বাধা দেন শ্রমিকেরা।

সকালে সিলেট যাবেন বলে জেলা শহরের বাস টার্মিনালে আসেন তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা এরশাদ মিয়া। সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর এক আত্মীয় চিকিৎসাধীন। কিন্তু বাস টার্মিনালে এসে দেখেন কোনো বাস চলছে না। এরশাদ মিয়া বলেন, কখন বাস চলবে, সেটিও কেউ বলতে পারছেন না। এতে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।

টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা ঢাকার বাসিন্দা সামিয়ান ইসলাম বলেন, ‘সকালের বাসে ঢাকায় যাব। এ জন্য টিকিট নেওয়া ছিল। এখন এসে দেখি বাস চলছে না। কী করব, বঝুতে পারছি না। সিলেটেও যাওয়া যাচ্ছে না।’

সুনামগঞ্জে দূরপাল্লার একটি পরিবহনের ব্যবস্থাপক বলেন, বাসে টিকিট দেওয়ার পর গতকাল সন্ধ্যায় হঠাৎ করে ঘোষণা দেওয়া হয় বাস চলবে না। এরপর তাঁরা পরিবহন শ্রমিকদের অনেক বুঝিয়েছেন, অন্তত রোববার রাতে যেন বাস চলে, এতে যাঁরা টিকিট নিয়েছেন তারা নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতে পারবেন, কিন্তু শ্রমিকেরা শোনেননি। তিনি বলেন, রাতে বিকল্প ব্যবস্থায় অনেকে সিলেটে গেছেন, কিন্তু আজ সকাল থেকে আর সেটি সম্ভব হচ্ছে না। সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকেরা।’

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার তোফায়েল আহাম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন, আমরা সেটিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক আছে। আশা করি একটা সমাধান আসবে।’

জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা জানান, তিন দফা দাবিতে শ্রমিকেরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। তাই সুনামগঞ্জ থেকে সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাঁদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার ও কারাগারে থাকা শ্রমিকের মুক্তি।

আরও পড়ুনসুনামগঞ্জের পরিবহনশ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক১২ ঘণ্টা আগে

গতকাল সকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাস ভাড়া নিয়ে একটি বাসের শ্রমিকের ঝগড়া হয়। এর জেরে বিকেলে দুই ঘণ্টা সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক অবরোধ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। পরে তাঁরা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। এরপর সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটসহ দেশের অন্য কোথাও বাস ছেড়ে যায়নি।

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস শান্তিগঞ্জ উপজেলায় সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশে সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট অবস্থিত। জেলা শহর থেকে এটির দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার।

পরিবহন শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকালে জেলা শহর থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী সিলেটগামী একটি বাসে করে ক্যাম্পাসে যান। সেখানে নামার সময় ভাড়া নিয়ে শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝগড়া হয়।

পরিবহনশ্রমিকদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা শান্তিগঞ্জে ক্যাম্পাসে নামার সময় ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে সেখানে একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। শ্রমিকদের মারধর করে ক্যাম্পাসে আটকে রাখেন। এই ঘটনা জানাজানি হলে দোষীদের বিচার দাবিতে বেলা তিনটার দিকে সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনালের সামনে সড়ক অবরোধ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এ সময় সড়কের দুদিকে যানবাহন আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন মানুষজন। পরে পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে বিকাল পাঁচটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

জেলা বাস-মিনিবাস, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক বলেন, ‘বারবার শ্রমিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু শ্রমিকেরা ন্যায্য বিচার পাননি। একটি দুর্ঘটনার জেরে দেলোয়ার হোসেন নামে একজন শ্রমিক পাঁচ মাস ধরে জেলে আছেন। আমরা তাঁর মুক্তি চাই। এ ছাড়া আনোয়ার হোসেন নামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার আরেক শ্রমিক হামলার শিকার হয়েছিলেন। মামলা হওয়ার পরও পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে শান্তিগঞ্জ আসার সময় অর্ধেক ভাড়া দেওয়া নিয়ে বাসের চালকের সহকারীর সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই সহকারী এক শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা বাধে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ থ ক পর বহন অবর ধ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সুনামগঞ্জের পরিবহনশ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক

বাসভাড়া নিয়ে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সুবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এ কারণে রোববার সন্ধ্যার পর সুনামগঞ্জ থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেজাউল করিম রোববার রাত ১০টার দিকে জানিয়েছেন, তিন দফা দাবিতে শ্রমিকেরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তাই সুনামগঞ্জ থেকে সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সোমবার সকাল থেকে জেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাও চলবে না।

শ্রমিকদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, শ্রমিকদের ওপর হামলার বিচার, কারাগারে থাকা শ্রমিকের মুক্তি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার সকালে সুবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাসভাড়া নিয়ে একটি বাসের শ্রমিকের ঝগড়া হয়। এর জেরে বিকেলে দুই ঘণ্টা সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক অবরোধ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। পরে তাঁরা ধর্মঘটের ডাক দেন। এরপর সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটসহ দেশের অন্য কোথাও বাস ছেড়ে যায়নি।

সুবিপ্রবির অস্থায়ী ক্যাম্পাস সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলায় সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশে সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে অবস্থিত। জেলা শহর থেকে এটির দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার।

পরিবহনশ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার সকালে জেলা শহর থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী সিলেটগামী একটি বাসে করে ক্যাম্পাসে যান। সেখানে নামার সময় ভাড়া নিয়ে শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝগড়া হয়।

পরিবহনশ্রমিকদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা শান্তিগঞ্জে ক্যাম্পাসে নামার সময় ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে সেখানে একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে দোষীদের বিচার দাবিতে বেলা তিনটার দিকে সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনালের সামনে সড়ক অবরোধ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এ সময় সড়কের দুই দিকে যানবাহন আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন মানুষজন। পরে পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে বিকেল পাঁচটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

সুনামগঞ্জ জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুজাউল কবির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাড়া নিয়ে এর আগেও শ্রমিকদের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করেছেন। শ্রমিকদের মারধর ও বাস ভাঙচুর করেছেন। রোববার তাঁরা একজন শ্রমিককে মারধর করেন। ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা এ ঘটনার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেন।
সুবিপ্রবির রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে শান্তিগঞ্জ আসার সময় অর্ধেক ভাড়া দেওয়া নিয়ে বাসের চালকের সহকারীর সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই সহকারী একজন শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা বাধে। আবদুর রহমান বলেন, বাসে থাকা শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন ঝগড়ায় জড়ানো বাসের চালকের সহকারী মাদকাসক্ত ছিলেন।

জেলা বাস-মিনিবাস, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল হক বলেন, ‘বারবার শ্রমিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু শ্রমিকেরা ন্যায্য বিচার পাননি। একটি দুর্ঘটনার জেরে দেলোয়ার হোসেন নামে আমাদের একজন শ্রমিক প্রায় পাঁচ মাস ধরে জেলে আছেন। আমরা তাঁর মুক্তি চাই। এ ছাড়া আনোয়ার হোসেন নামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার আরেক শ্রমিক হামলার শিকার হয়েছিলেন। মামলা হওয়ার পরও পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুনামগঞ্জের পরিবহনশ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক