সুনামগঞ্জে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। আজ সোমবার দুপুরে এই জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। এতে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, জেলা পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাসভাড়া নিয়ে হাতাহাতির পর গতকাল রোববার বিকেলে প্রথমে সড়ক অবরোধ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এরপর বিকেল পাঁচটা থেকে লাগাতার ধর্মঘট শুরু করেন তাঁরা।

আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে বৈঠক শুরু হয়। এতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বাসমালিক ও শ্রমিকেরা উপস্থিত ছিলেন। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পালের সভাপতিত্বে শিক্ষার্থীরা রোববার সকালের ঘটনা তুলে ধরেন। বাসশ্রমিকেরাও ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে বিস্তারিত আলোচনার পর শ্রমিকেরা তাঁদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। বৈঠকে পদার্থবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল লতিফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকির হোসেন, জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া, জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেজাউল কবির, সাধারণ সম্পাদক নূরুল হক উপস্থিত ছিলেন।

শ্রমিকনেতা সেজাউল কবির বলেন, ‘প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বলেছে, আর এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না।’

জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জানান, তিন দফা দাবিতে শ্রমিকেরা কর্মবিরতির কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন। তিন দফা দাবির মধ্যে ছিল শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার ও কারাগারে থাকা শ্রমিকের মুক্তি দিতে হবে।

পরিবহনশ্রমিকদের ডাকে ধর্মঘটের কারণে গতকাল বিকেল থেকে সুনামগঞ্জ থেকে কোনো বাস সিলেট, ঢাকাসহ দেশের অন্য কোথাও ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

সুনামগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস শান্তিগঞ্জ উপজেলায় সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশে সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনিস্টিউটে অবস্থিত। জেলা শহর থেকে এটির দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার।

পরিবহনশ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকালে জেলা শহর থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী সিলেটগামী একটি বাসে করে ক্যাম্পাসে যান। সেখানে নামার সময় ভাড়া নিয়ে শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এতে এক শিক্ষার্থী আহত হন।

আরও পড়ুনসুনামগঞ্জে তিন দফা দাবিতে পরিবহন ধর্মঘটে বাস চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি৩ ঘণ্টা আগে

পরিবহনশ্রমিকদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা শান্তিগঞ্জে ক্যাম্পাসে নামার সময় ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে সেখানে একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। শ্রমিকদের মারধর করে ক্যাম্পাসে আটকে রাখেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে দোষীদের বিচার দাবিতে বেলা তিনটার দিকে সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনালের সামনে সড়ক অবরোধ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। পরে পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে বিকেল পাঁচটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে শান্তিগঞ্জ আসছিলেন। অর্ধেক ভাড়া দেওয়া নিয়ে বাসের চালকের সহকারীর সঙ্গে তাঁদের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই সহকারী একজন শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেন। তিনি বাসের জানালার সঙ্গে ধাক্কা খান। এতে তাঁর মাথা ফেটে যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ পর বহন

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়ার তিনটি মিগ-৩১ রুখে দেওয়ার দাবি ন্যাটোর

ইউরোপের বাল্টিক অঞ্চলের দেশ এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় রাশিয়ার তিনটি যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশ করেছে বলে দাবি করেছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। শুক্রবার অনুপ্রবেশের ঘটনার পর সেগুলো রুখে দেওয়া হয় বলে জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ন্যাটো বলেছে, এটি রাশিয়ার ‘বেপরোয়া আচরণ’।

ন্যাটোর সদস্যদেশ এস্তোনিয়া। রুশ যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশকে ‘নির্লজ্জ’ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনুমতি না নিয়েই রাশিয়ার তিনটি মিগ–৩১ যুদ্ধবিমান ন্যাটোর সদস্য এস্তোনিয়ার আকাশে প্রবেশ করে। ফিনল্যান্ড উপসাগরের ওপর সেগুলো মোট ১২ মিনিট ছিল।

রুশ যুদ্ধবিমানের ‘অনুপ্রবেশ’ নিয়ে ন্যাটোর মুখপাত্র অ্যালিসন হার্ট বলেন, যুদ্ধবিমানগুলো শনাক্ত করার পর দ্রুত পদক্ষেপ নেন তাঁরা। সেগুলোকে পথিমধ্যে আটকে দেওয়া হয়। বিস্তারিত না জানিয়ে তিনি বলেন, এটি রাশিয়ার বেপরোয়া আচরণ এবং ন্যাটোর জবাব দেওয়ার সক্ষমতার আরও একটি উদাহরণ।

এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি মস্কো। তবে ২০২২ সালে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ন্যাটো ও মস্কোর মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে ন্যাটোর আরও দুই সদস্যদেশ—পোল্যান্ড ও রোমানিয়া তাদের আকাশে রাশিয়ার ড্রোন অনুপ্রবেশের দাবি করেছে।

ন্যাটো রুশ যুদ্ধবিমান তাড়ানোর দাবি করার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেছেন, ইউরোপের সম্পদ ব্যবহার করে সদস্যদেশগুলোর প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে সহায়তা দিয়ে যাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমাদের সংকল্প কতটা দৃঢ়, তা পরীক্ষা করে দেখছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আমাদের দুর্বলতা প্রকাশ করা উচিত হবে না।’

একই সুরে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেন এক্সে লিখেছেন, ‘আমরা প্রতিটি উসকানির জবাব দৃঢ়তার সঙ্গে দেব, পাশাপাশি পূর্ব সীমান্তকে আরও শক্তিশালী করতে বিনিয়োগ করব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ