যাত্রাবাড়ী হত্যাযজ্ঞের নির্মম চিত্র
Published: 5th, August 2025 GMT
৫ আগস্ট ২০২৪। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পালানোর খবরে যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে কিছুটা দূরে বিজয়োল্লাস করছিলেন দুই ভাই—মাদ্রাসাশিক্ষার্থী দ্বীন ইসলাম ও সামিউল ব্যাপারী। দুই সন্তানের সে উচ্ছ্বাস দেখছিলেন বাবা শাহ আলম ব্যাপারী। একসঙ্গেই ছিলেন তাঁরা। কিন্তু বিপুল মানুষের উচ্ছ্বাসের তোড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান বাবা আর দুই ছেলে।
বেলা ২টা ৫২ মিনিট। যাত্রাবাড়ী থানার সামনের মহাসড়কে শত শত বিক্ষোভকারীর সঙ্গে মিশে ছিলেন দ্বীন ইসলাম ও সামিউল ব্যাপারী। হঠাৎ শুরু হলো পুলিশের মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ। ছোট ভাইকে নিয়ে দৌড়ে ফ্লাইওভারের স্তম্ভের আড়ালে চলে যান দ্বীন ইসলাম।
ঠিক ৩ মিনিট পর এবার বিচ্ছেদ ঘটে দুই ভাইয়ের মধ্যে। দ্বীন ইসলাম আটকে পড়ে মৃত্যুর মুখে। বড় ভাইয়ের হাতে গুলি লাগার দৃশ্য দেখে জীবন বাঁচাতে তাঁকে রেখেই পালিয়ে যান সামিউল ব্যাপারী।
শাহ আলম ব্যাপারী এরপর যখন দুই সন্তানকে আবিষ্কার করেন, তখন তাঁদের একজন মৃত, আরেকজন মানসিকভাবে উদ্ভ্রান্ত।
সেই একটি দিনেই যাত্রাবাড়ীতে ঘটে গিয়েছিল এ রকম অজস্র ঘটনা—চিরবিচ্ছেদের, মর্মান্তিক বেদনার, অসহায় নির্মম মৃত্যুর। সেসব মর্মান্তিক গল্পের এক বেদনাদায়ক সমাহার প্রথম আলোর নতুন অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্র রক্তাক্ত মহাসড়ক: যাত্রাবাড়ী হত্যাকাণ্ড। প্রতিটি গল্পের মূল একটিই—সরকারি নির্দেশে সাধারণ মানুষের ওপর পুলিশের নির্মম বর্বরতা। প্রথম আলোর ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে একযোগে আজ সেটি মুক্তি পাচ্ছে।
৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানা এলাকা থেকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ১ কিলোমিটারজুড়ে ঘটেছে শত শত ঘটনা। প্রতিটি গল্পের ভেতরে আছে আরও অসংখ্য স্তর। বেলা যত গড়িয়েছে, ঘটনার ব্যাপকতা বেড়েছে। সকাল আটটা থেকে শুরু করে প্রতি ঘণ্টা, মিনিট, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে সেকেন্ডের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও খুঁজে বের করেছি। ৫ মাসের অনুসন্ধানে উন্মোচন করেছি গল্পের খুঁটিনাটি নানা স্তর।
সারা দিন সেদিন দফায় দফায় কোথায় কীভাবে গুলি করে কত মানুষকে হত্যা করা হয়—তার প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে এই অনুসন্ধানে। নিরীহ মানুষের ওপর কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে, তা–ও উঠে এসেছে এতে। দফায় দফায় পুলিশের মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ, চিৎকার, প্রাণ বাঁচানো আকুতি ও চেষ্টা, বাঁচার জন্য দৌড়ে পালাতে গুলি খেয়ে পথের ওপরে মৃত্যুবরণ, এমনকি মোবাইলে ছবি তুলতে তুলতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া—পর্দায় এ এক অবিশ্বাস্য কিন্তু জীবন্ত হত্যাযজ্ঞের দলিল।
আবদুন নূরের গল্পটা অবিশ্বাস্য ও বেদনার। নিজ ফোনে গুলিবর্ষণের মুহূর্ত ধারণ করছিলেন তিনি। অন্যদের সতর্কও করছিলেন। কিন্তু নূর নিজেই গুলিবিদ্ধ হন।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে কতজন নিহত হয়েছেন, গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন—এই প্রামাণ্যচিত্রে তার প্রমাণ যেমন মিলেছে, তেমনি ধরা পড়েছে বহু মানুষের জীবনের অন্তিম ও করুণ কিছু মুহূর্তও। যেমন ইমন গাজী। পুলিশ তাঁকে গুলি করে মাত্র ৪ মিটার দূর থেকে। প্রাণঘাতী গুলি আর ছররা গুলি। শরীরের তিন জায়গায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুলিবিদ্ধ হওয়ার তিন ঘণ্টা পর ভ্যানগাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় অন্য আরও লাশের স্তূপের ভেতর থেকে আচমকা চোখ মেলে তাকান তিনি। অতি ভাগ্যবানের মতো নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসেন তিনি। এই প্রামাণ্যচিত্র তাঁরও গল্প।
গণ–অভ্যুত্থানের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে প্রথম আলোর সংবাদকর্মী হিসেবে এর আগে আরও দুটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছি। মোহাম্মদপুরের ঘটনা নিয়ে ছোট পরিসরের প্রামাণ্যচিত্র কাউন্সিলর আসিফ–রাজীবের নেতৃত্বে গুলিবর্ষণ, ছিলেন নানকের সহকারীও। বড় পরিসরে তৈরি করেছি সাভার গণহত্যা: হাসিনা পালানোর পরের ৬ ঘণ্টা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ব ন ইসল ম গল প র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ নিলেন মীর মুগ্ধর ভাই স্নিগ্ধ
জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত মীর মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়েছেন। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাতে এ তথ্য জানা গেছে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৬ আসন (রূপনগর-পল্লবী) থেকে বিএনপির প্রার্থী ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক জানান, স্নিগ্ধর সদস্যপদ গ্রহণের সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
বিএনপির প্রার্থীকে অভিনন্দন জানালেন জামায়াতের প্রার্থী
টাঙ্গাইলে বিএনপির আনন্দ মিছিলে আ.লীগ নেতার স্লোগান
এ সময় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান ও স্নিগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ