শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধ এলাকার আশপাশে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে জাজিরা প্রান্তের আলম খারকান্দি এলাকায় অন্তত ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে গ্রামের একটি দ্বিতল মসজিদ, দুটি দোকান, সাতটি বসতবাড়িসহ মাঝিরঘাট-পালের চর সড়কের ৫০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

এ নিয়ে সপ্তম দফায় বাঁধের ৮০০ মিটারসহ এক কিলোমিটার এলাকা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল। গত দুই মাসে বাঁধের পাশে থাকা ৩৫টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫৭টি বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের পাশের তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার ও মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাতবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে আছে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরে পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। নাওডোবার ওপর দিয়েই পদ্মা সেতু পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মিত। এসব অবকাঠামো নির্মাণে ২০১২ সালে জমি অধিগ্রহণের সময় থেকে নাওডোবা এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষা করতে সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্বে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণে) আলাম খাঁর কান্দি, ওছিম উদ্দিন মাতবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি ও মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাতবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।

আজ সকালে বাঁধের পাশে থাকা আলম খারকান্দি গ্রামের দ্বিতল একটি মসজিদ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এ সময় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একই সময় ভাঙনে মসজিদের পাশে থাকা সাতটি বসতবাড়ি ও দুটি দোকান নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের পাশ দিয়ে ছিল মাঝিরঘাট-পালের চর সড়ক। ওই সড়কের ৫০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। খবর পেয়ে বালুভর্তি জিও টিউব ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন পাউবোর কর্মীরা।

নদীভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মঙ্গলবার দুপুরে জাজিজার আলমখার কান্দি এলাকায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ল ন হয় এল ক য় মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

গকসু নির্বাচন: জাহিদের প্রচারণায় সবুজের ডাক

৭ বছরের দীর্ঘ নীরবতা শেষে আবারো সরগরম হয়ে উঠেছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ক্যাম্পাস। ৩২ একরের সবুজ চত্বরে এখন নির্বাচনী হাওয়া বইছে।

আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচনের চতুর্থ কার্যনির্বাহী পরিষদের ভোটগ্রহণ। ইতোমধ্যেই প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন ভোটারদের মন জয় করার প্রচারে। প্রার্থী-সমর্থকদের দৌড়ঝাঁপ, লিফলেট ছড়াচ্ছে, স্লোগান ভেসে আসছে চারদিক থেকে। শিক্ষার্থীরা কেউ সমর্থনে শ্লোগান দিচ্ছে, কেউবা চুপচাপ তাকিয়ে দেখছে প্রার্থীদের কর্মযজ্ঞ।

আরো পড়ুন:

ইবিতে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু বৈদ্যুতিক শাটলের 

পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা ঢাবি হল সংসদ নেতাসহ ৬ শিক্ষার্থী

এই কোলাহলের ভিড়েই ব্যতিক্রম মো. জাহিদ হাসান। তিনি সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু প্রচারে তার ভিন্ন সুর, ভিন্ন আয়োজন। অন্যদের মতো কেবল লিফলেট বিলি বা মতবিনিময় নয়; তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ছোট ছোট বীজ। তিনি সবার নজর কেড়েছেন পরিবেশবান্ধব প্রচারণার এই অভিনব কৌশল দিয়ে।

প্রথমে অনেকে অবাক হয়েছেন। লিফলেট খুলতেই ভেতরে জড়িয়ে আছে কচি সবুজ বীজ। সঙ্গে লেখা এক টুকরো বার্তা, “এই লিফলেটে বীজ আছে, দয়া করে ভিজে মাটিতে ফেলবেন। আমি এজিএস হই আর না হই, এই বীজ থেকে অন্তত একটা গাছ হোক। যেটা ছায়া দেবে, অক্সিজেন দেবে, আর বলবে একজন শিক্ষার্থী একদিন স্বপ্ন দেখেছিল পরিবর্তনের।”

কথাগুলো পড়ে চুপ হয়ে গেছেন অনেকেই। সাধারণত হ্যান্ডবিল পড়ে শেষ হলে তা ছুড়ে ফেলা হয় মাটিতে। ময়লায় ভরে যায় ক্যাম্পাস। কিন্তু বীজসংবলিত এই লিফলেট তো আর বর্জ্য নয়, এটা ভবিষ্যতের এক সম্ভাবনা। এতে শুধু ভোটারদের মনোযোগই আকৃষ্ট হচ্ছে না, ছড়িয়ে পড়ছে পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও। ফলে তার প্রচারণা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

জাহিদ বলেন, “সাধারণ প্রচারপত্র পড়ার পর তা বর্জ্যে পরিণত হয়। কিন্তু বীজযুক্ত প্রচারপত্র ফেলে না দিয়ে শিক্ষার্থীরা তা রোপণ করতে পারবেন, যা ভবিষ্যতে ফলপ্রসূ হবে। পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। আমি চাই, আমার প্রচারণা শুধু ভোটের জন্য না হয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনায় নতুন দিশা আনুক। পরিবর্তনের শুরুটা হোক এক টুকরো সবুজ থেকে।”

তার কথা শোনার পর অনেকে মুগ্ধ হয়েছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, এই তরুণের স্বপ্ন হয়তো সত্যিই একদিন বড় পরিবর্তন ডেকে আনবে। যেখানে অন্যরা স্লোগানে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, সেখানে তিনি দিচ্ছেন এক খণ্ড সবুজের আশ্বাস। অনেকে বলছেন, ‘স্মার্ট ক্যাম্পেইন’।

শুধু বীজ বিলি করেই থেমে থাকেননি জাহিদ। তার মুখে শোনা যায় দৃঢ় উচ্চারণ—“আমি নির্বাচিত হলে ছাত্র সংসদে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকবে। আর যদি সেটা না পারি, তবে আমি নিজেই পদত্যাগ করব।”

ক্যাম্পাসজুড়ে তার এই ঘোষণা ছড়িয়ে পড়েছে ঝড়ের মতো। শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে লিখছেন, “এমন প্রার্থীই জিতে যাক।”

জাহিদের এই প্রচারণা যেন নির্বাচনী উত্তেজনার ভিড়ে একটুকরো নির্মল বাতাস। যেখানে অন্য প্রার্থীরা লিফলেট আর শোডাউনে ব্যস্ত, সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন বীজ।

অনেকেই বলছেন, জাহিদ হাসানের উদ্যোগকে অনেকেই ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্য এক ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখছেন। কারণ, রাজনৈতিক প্রচারণায় পরিবেশবান্ধব চিন্তার এমন প্রয়োগ দেশে খুব একটা দেখা যায় না। তার এই ছোট উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মনে এক বড় পরিবর্তনের বার্তা ছড়িয়েছে।

নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। প্রচারের শব্দ আরো তীব্র হচ্ছে। কিন্তু এর মাঝেও শিক্ষার্থীরা যখন সেই বীজ হাতে মাটিতে ফেলছেন, তখন যেন ভেতরে ভেতরে বুনছেন আরেক রকম স্বপ্ন।

হয়তো জাহিদ জয়ী হবেন, হয়তো হবেন না। কিন্তু তার হাত থেকে ছড়িয়ে পড়া এই বীজগুলো একদিন অঙ্কুরিত হবে, বেড়ে উঠবে। আর প্রতিটি গাছ সাক্ষী হয়ে থাকবে—একজন শিক্ষার্থী একসময় স্বপ্ন দেখেছিল, পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে একটুখানি সবুজ থেকেই।

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ