এক মাস ধরে পানির নিচে সড়ক-উঠান, ভোগান্তিতে মানুষ
Published: 6th, August 2025 GMT
বাড়ির চারপাশে হাঁটুপানি। চলাচলের কাঁচা সড়কও ডুবেছে। নূরুল আমিনের যাতায়াতের মূল ভরসা এখন ডিঙিনৌকা। গত এক মাস ধরে এভাবেই দিন কাটছে তাঁর। নূরুল আমিনের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের পূর্ব একলাশপুর গ্রামে। তাঁর অভিযোগ, ‘আগে বর্ষায় এলাকার খাল দিয়ে পানি বের হতো। এখন সব খাল দখল হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘরও নির্মাণ হয়েছে। কেউ কারও কথা শোনে না। তাই এখন পুরো এলাকা পানিবন্দী।’
অবশ্য শুধু নূরুল আমিন নয়। গত এক মাস ধরে তাঁর মতো অবস্থা বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও চৌমুহনী পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকার মানুষের। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, এই উপজেলায় জনসংখ্যা ৬ লাখ ১১ হাজার ৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫৬ জন ও নারী ৩ লাখ ২৭ হাজার ৩২৫ জন।
সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার পূর্ব একলাশপুর, মধ্যম একলাশপুর, হাজীপুর, চৌমুহনী পৌরসভা, লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়কই ডুবে রয়েছে পানিতে। দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকায় সড়কের অবস্থাও বেহাল। ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা সব জায়গায় হাঁটু থেকে কোমরপানি। এলাকায় যাতায়াতের অন্যতম বাহন এখন হয়ে উঠেছে ডিঙি নৌকা। অনেকেই বাড়ি থেকে মূল সড়ক পর্যন্ত চলাচলের জন্য বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পানি নিষ্কাশনের খাল ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তোলার কারণেই এমন দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা।
উপজেলার আমানউল্যাহপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাহারুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ইউনিয়নের অর্ধেকের বেশি গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে। এতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তাঁরা।
জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার শিক্ষার্থীদেরও। পূর্ব একলাশপুর গ্রামের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলে, প্রতিদিন তিন কিলোমিটার হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে তাকে স্কুলে যেতে হয়। অনেক সময় ইউনিফর্ম ভিজে যাওয়ায় স্কুলে যেতে পারে না সে। তার সহপাঠীরাও একই ভোগান্তিতে পড়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলে, তার অনেক সহপাঠী পানির কারণে বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। চারপাশে পানি থাকায় শৌচাগারও ব্যবহার করতে পারে না তারা।
এক মাস ধরে পানির নিচে সড়ক-উঠান, ভোগান্তিতে মানুষ । সম্প্রতি উপজেলার একলাশপুর এলাকা থেকে তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
এক পরিবারে একই দিনে সাত কবরের শোক
এক পরিবারে একই দিনে খোঁড়া হয়েছে সাত কবর। তাদের দাফনের প্রস্তুতি চলছে। জানাজা শেষে ওই কবরে শুইয়ে দেওয়া হবে তাদের। এই শোকে বিমর্ষ-বিমূঢ় পরিবারটি; শোকে স্তব্ধ এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার গভীর রাতে ওমান থেকে ফেরা লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম চওপল্লী গ্রামের বাহার উদ্দিনের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমেছে। তাকে আনতে ঢাকায় গিয়ে ফেরার পথে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলাইয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাড়ির রাস্তার মাথায় বুধবার (৬ আগস্ট) ভোরে দুর্ঘটনায় নিহত হন তার পরিবারের সাতজন।
বাহার উদ্দিন বলছেন, তাদের বহনকারী হায়েস গাড়ির চালকের ঘুমের কারণে এই দুর্ঘটনায় পড়েন তারা। গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খালে গিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই সাতজন মারা যান।
আরো পড়ুন:
‘চালকের ঘুমই’ চিরঘুমে পাঠাল সাতজনকে
আশুলিয়ায় উল্টো পথে চলা রিকশাকে চাপা দিল লরি, নিহত ৩
নিহত সাতজনের পরিচয় জানিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন: বাহার উদ্দিনের মা মোরশিদা (৫৫), স্ত্রী কবিতা (২৪), মেয়ে মিম (২), নানি ফয়জুন্নেছা (৮০), ভাবি লাবনী (৩৩), ভাতিজি রেশমী (৮) ও লামিয়া (৯)।
নিহতদের মধ্যে বাহারের নানি ফয়জুন্নেছার দাফনের প্রস্তুতি চলছে তার গ্রামের বাড়িতে। আর ছয়জনের কবর খোঁড়া হয়েছে পশ্চিম চওপল্লী গ্রামে।
হায়েস গাড়ি খালে পড়ে যাওয়ার পর এলাকাবাসীর সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মরদেহগুলো উদ্ধার করেন।
উদ্ধারকারীরা বলেছেন, খালে পড়ে গাড়িটি পানিতে ডুবে যায়।
বাহার উদ্দিন, তার শ্বশুর ও আরো দুজন বেঁচে আছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর মধ্যে বাহার বাড়ি ফিরেছেন। অন্য তিনজনের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে।
বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন বাহার।
ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা হয় তার। সেখানে আগে থেকে ঠিক করে রাখা হায়েস গাড়িটি প্রস্তুত ছিল। তবে চালককে তিনি বলেছিলেন, এত রাতে না গিয়ে ভোরে রওনা দিলে ভালো হতো।
তবে চালক বাহারের কথা শোনেননি। আস্তে-ধীরে চালানোর কথা বলে রওনা হন চালক। পথের মধ্যে চালককে ঘুমে ঢলে পড়তে দেখে তাকে বিশ্রাম নিতে পরামর্শ দিলেও চালক তা উপেক্ষা করে গাড়ি চালাতে থাকেন। এই ঘুমের কারণেই দুর্ঘটনা হয়েছে বলে অভিযোগ তার।
বাহার বলেন, “তিন বছর পর দেশে ফিরলাম। পরিবারের সবাই আমাকে আনতে গিয়েছিল। এখন তারা কেউ নেই। আমি একা হয়ে গেলাম।”
ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানান চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোবারক হোসেন।
ঘটনাস্থল থেকে বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি মো. লিটন দেওয়ান বলেন, “রেকারের সাহায্যে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি খাল থেকে তোলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে আর কোনো মরদেহ নেই।”
বাহারের স্বজনদের মাতমে ভারী হয়ে উঠেছে পশ্চিম চওপল্লী গ্রাম। একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ঢাকা/লিটন/রাসেল