মাগুরা সদরের পারনান্দুয়ালী বেপারী পাড়ার গৃহবধূ লিজা এখন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে এবং অলটারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (এডিআই) বাস্তবায়নে মাগুরায় প্রথমবারের মতো তিনি চালু করেছেন ‘রেডি টু কুক ফিশ’ প্রযুক্তিভিত্তিক মাছ প্রক্রিয়াজাত ও বিক্রয় কার্যক্রম।

২০২৪ সালের ২৮ জুন শুরু হওয়া এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগের আওতায় লিজা পেয়েছেন ডিপ ফ্রিজ, দোকান উন্নয়ন খাতে নগদ সহায়তা, মাছ সংগ্রহে অর্থ সহায়তা, প্রচারের জন্য লিফলেট ও সাইনবোর্ড। ঘরের পাশে ছোট দোকানে বসেই তিনি এই কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তার স্বামী জাকির হোসেনও তাকে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছেন।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে নদী, সাগর, ঘের ও পুকুরের দেশি ও সামুদ্রিক মাছ সংগ্রহ করে সেগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ধুয়ে, কেটে, বেছে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ভোক্তারা অফলাইনে দোকান থেকে এবং অনলাইনে ঘরে বসেই পাচ্ছেন ঝামেলাহীন, পরিচ্ছন্ন ও রান্নার জন্য প্রস্তুত মাছ।

আরো পড়ুন:

কাপ্তাই হ্রদ: মৎস্য আহরণের প্রথম দিন রাজস্ব আয় ২০ লাখ টাকা

‘অ্যান্টিবায়োটিক গুরুতর হুমকি হয়ে উঠছে’

‘রেডি টু কুক ফিশ’ সেবাটি শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তারা অল্প দামে অল্প পরিমাণে মাছ কিনে ঘরে বসে রান্না করতে পারছেন, যা সময় ও পরিশ্রম- দুটোই বাঁচাচ্ছে।

মাগুরা ওয়ার্ল্ড নার্সিং কলেজে শিক্ষার্থী সুফিয়া খাতুন বলেন, “আমি একজন শিক্ষার্থী। আমি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করি। বেশিরভাগ সময় আমাকে কলেজ ও পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। এ কারণে বাজারে যাওয়া এবং বাজার থেকে মাছ কিনে এনে কেটে রান্না করা খুবই কষ্টসাধ্য। হঠাৎ সন্ধান পেলাম রেডি টু কুক ফিশ অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। এরপর থেকে আমি প্রয়োজন অনুযায়ী অনলাইনে অর্ডার দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা মাছ ক্রয় করে রান্না করি। এতে করে আমার সময় বেঁচে যাচ্ছে এবং আমিষের চাহিদা পূর্ণ হচ্ছে।”

স্কুল শিক্ষিকা মারুফা সুওলতানা বলেন, “আমি একজন কর্মজীবী নারী। দিনের বেশিরভাগ সময় আমাকে অফিসে থাকতে হয়। কাটাকাটির ঝামেলায় মাছ খাওয়া প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল আমাদের পরিবারে। কিন্তু বর্তমানে রেডি টু কুক ফিশ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে দিনে-রাতে যেকোনো সময় অর্ডার দিয়ে সহজেই পরিবারের মাছের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।”

লিজার ব্যবসার মাধ্যমে ইতোমধ্যে দুজন নারীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন তারা মাছ পরিষ্কার, কাটা এবং প্যাকেটজাত করার কাজ করেন। এভাবে একজন নারী হিসেবে লিজা নিজে স্বাবলম্বী হয়ে অন্য নারীদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছেন।

মাছ প্রক্রিয়াজাত কাজে যুক্ত থাকা সকিনা খাতুন বলেন, “আগে শুধু নিজের ঘরে কাজ করেই সময় পার করতাম। কিন্তু বর্তমানে লিজা আপুর প্রতিষ্ঠানে মাছ কাটা, ধোয়া এবং প্যাকেট জাতের কাজ করি। এতে করে আমার মাসে আয় হচ্ছে প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা। এই টাকায় আমার সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতে সুবিধা হচ্ছে।”

লিজা অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও তার পণ্য বিক্রি করছেন। ধীরে ধীরে তৈরি করেছেন একটি নিজস্ব গ্রাহকভিত্তি। তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছিল। সংসারের চাপে সেটা সম্ভব হয়নি। অনেক চিন্তা করে মাথায় এল, মাছ ধোয়া, কাটা, বাছাইয়ের ঝামেলা থেকে মানুষকে মুক্তি দিলে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে। আমি সেটাই করলাম, আর মানুষ সেটা গ্রহণ করেছে। পরিবার ও স্বামীর সহযোগিতায় আমি আমার ব্যবসা বড় করতে চাই। একদিন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হব, আশা করি।”

এডিআই এর মৎস্য কর্মকর্তা সামিউর রহমান বলেন, “লিজার মতো উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে আমরা চাই, নারীরা প্রযুক্তি নির্ভর উদ্যোগে এগিয়ে আসুক। এ উদ্যোগটি মডেল হিসেবে কাজ করবে।”

সম্প্রতি মাগুরা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম শাহজাহান সিরাজ সরেজমিনে লিজার দোকান পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, “এডিআই এর এই উদ্যোগ শুধু একজন নারীকে নয়, পুরো সমাজকে উপকারে আনবে। আমরা এ ধরনের কাজের পাশে আছি।”

ঢাকা/শাহীন/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উদ য ক ত ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমতি ছাড়াই মেটার বিজ্ঞাপনে স্কুলশিক্ষার্থীদের ছবি

ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। মেটা তার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিজ্ঞাপনে স্কুলছাত্রীদের ছবি ব্যবহার করছে বলে সমালোচনা চলছে। স্কুলগামী কিশোরী শিক্ষার্থীদের ছবি ব্যবহার করছে মেটা। জানা গেছে, এসব ছবি ৩৭ বছর বয়সী পুরুষদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক অভিভাবক বিষয়টিকে ভয়ানক ও বিব্রতকর বলে মনে করছেন।

দেখা গেছে, ৩৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে মেটার খুদে ব্লগ লেখার সাইট থ্রেডসে যোগ দেওয়ার বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হচ্ছে। ইনস্টাগ্রামে এই বিজ্ঞাপন দেখা যায়। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের পোস্টে ১৩ বছর বয়সী স্কুল ইউনিফর্ম পরা নারী শিক্ষার্থীর মুখ ও নাম দেখা যায়।

মেটা শিশুদের ছবি ব্যবহার করেছে; কারণ, তাদের অভিভাবকেরাই স্কুলে থেকে ফেরার পরে তোলা এসব ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন। অভিভাবকেরা অবশ্য মেটার বিজ্ঞাপনের নিয়ম জানতেন না। একজন মা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট প্রাইভেট করা ছিল। প্রাইভেট থাকার পরেও বিভিন্ন পোস্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে থ্রেডসে চলে গেছে। আরেক অভিভাবক জানান, তিনি তাঁর মেয়ের ছবিটি একটি পাবলিক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছিলেন। সেই ছবি পরে অপরিচিত ব্যক্তির কাছে শিশুর ছবিসহ সাজেশন হিসেবে দেখানো হচ্ছিল। এসব ছবি দেখা এক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, এমন পোস্ট উদ্দেশ্যমূলকভাবে উসকানিমূলক। এতে সংশ্লিষ্ট শিশু ও তাদের পরিবারকে শোষণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ছবিতে থাকা ১৩ বছর বয়সী এক মেয়েশিশুর বাবা এই ঘটনাকে পুরোপুরি ভয়ানক বলে অভিহিত করেছেন। বিভিন্ন ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সব স্কুলছাত্রীই ছোট স্কার্ট পরে আছে। তাদের পা হয় উন্মুক্ত বা স্টকিং পরা সবাই। সেই বাবা জানান, আমার শেয়ার করা একটি ছবি ফেসবুকের মতো এমন একটি বিশাল কোম্পানি যৌনতাপূর্ণ উপায়ে পণ্যের বিপণনের জন্য ব্যবহার করেছে। বিষয়টি দেখে আমি খুবই বিরক্ত বোধ করেছি।

মেটা অবশ্য জানিয়েছে, এসব ছবি তাদের নীতি লঙ্ঘন করে না। মেটার ভাষ্যে, যেসব ছবি কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ও মানদণ্ড মেনে জনসম্মুখে শেয়ার করা হয়, তা ব্যবহার করে অন্যদের থ্রেডস ভিজিট করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। মেটার সিস্টেম কিশোর-কিশোরীদের মাধ্যমে শেয়ার করা থ্রেডস পোস্ট সুপারিশ করে না। যেসব ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তা আসলে প্রাপ্তবয়স্কদের অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন দেখা এক ব্যক্তি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শুধু স্কুলছাত্রীদের ছবি দিয়েই প্রচারমূলক পোস্ট পাঠানো হচ্ছে। কোনো স্কুল ইউনিফর্ম পরা ছেলের ছবি দেখা যায়নি। এখানে যৌনতার একটি দিক আছে বলে মনে হচ্ছে।

১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর মা জানান, আমার মেয়ের স্কুলে যাওয়ার একটি সাধারণ ছবি প্রকাশ করেছি। আমার কোনো ধারণাই ছিল না ইনস্টাগ্রাম থেকে তা নিয়ে প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি অনেক জঘন্য। সে একজন নাবালিকা মাত্র। এ ধরনের কাজে কখনোই আমি সম্মতি দিতাম না। টাকার বিনিময়েও আমি স্কুল ইউনিফর্ম পরা মেয়ের ছবি দিয়ে অনলাইন মাধ্যমে লোক আকর্ষণ করার অনুমতি দিতাম না। যিনি এই অভিযোগ করেছেন সেই মায়ের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২৬৭ জন ফলোয়ার আছেন। আর তাঁর সন্তানের পোস্টটি প্রায় ৭ হাজার ভিউ পেয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই ফলোয়ার নয়। অর্ধেক দর্শক ৪৪ বছরের বেশি বয়সী ও ৯০ শতাংশই পুরুষ।

আরেকজন মা অভিযোগ করে বলেন, মেটা এমন কিছু করছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। আমাদের কিছু না জানিয়ে এসব হচ্ছে। মেটা কনটেন্ট তৈরি করতে চায়। এটি খুবই ঘৃণ্য কাজ। থ্রেডসে বিজ্ঞাপনটি কে তৈরি করেছে? প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য মাধ্যমের প্রচারে শিশুদের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে কেন?

মেটা জানিয়েছে, এ ধরনের পোস্টকে রেকমেন্ডেশন টুলের মাধ্যমে অন্যদের সামনে প্রদর্শন করা হচ্ছে। কোম্পানির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, শেয়ার করা ছবি আমাদের নীতি লঙ্ঘন করে না। এসব ছবি অভিভাবকেরা জনসমক্ষে পোস্ট করেছেন। আমাদের ব্যবস্থায় টিনএজারদের নিজেরা শেয়ার করা ছবি থ্রেডস পোস্টে সুপারিশ করা হয় না। ব্যবহারকারীরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন মেটা তাদের পাবলিক পোস্টকে ইনস্টাগ্রামে সুপারিশ করবে কি না।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনের থাকা ৩৭ বছর বয়সী ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী জানান, কয়েক দিন ধরে আমাকে থ্রেডসে যাওয়ার জন্য মেটার বিজ্ঞাপন বারবার দেখানো হয়। সেখানে শুধু অভিভাবকের পোস্ট করা স্কুল ইউনিফর্ম পরা মেয়েদের ছবি ছিল। কিছু ছবিতে তাদের নামও দেখা যাচ্ছিল। একজন বাবা হিসেবে, আমি মনে করি মেটার এ ধরনের পোস্ট প্রাপ্তবয়স্কদের লক্ষ্য করে প্রচারের জন্য উপযুক্ত নয়।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারত ম্যাচের আগে দলে মনোবিদ যুক্ত করেছে পাকিস্তান
  • প্রকাশ্য থেকে গুপ্ত: ভেতর থেকে দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি
  • ডাকাতি হওয়া ২৩ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩
  • বেতনের অর্ধেক যদি চলে যায় বাসা ভাড়ার পেছনে...
  • রাজনৈতিক ‘অস্ত্র’ না হয়ে প্রভাবমুক্ত হোক পুলিশ
  • গকসু নির্বাচন: জাহিদের প্রচারণায় সবুজের ডাক
  • রাকসুতে দুঃখ ঘোচাতে চায় ছাত্রদল, জয় ধরে রাখতে মরিয়া শিবির
  • শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব
  • চুয়াডাঙ্গায় আবাসিক হোটেল থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার
  • অনুমতি ছাড়াই মেটার বিজ্ঞাপনে স্কুলশিক্ষার্থীদের ছবি