মোদির অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়ালো
Published: 6th, August 2025 GMT
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকারের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের ধারণা ছিল ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের বিশাল বাজারকে কোনোভাবেই এড়াতে পারবেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় বড় ধরনের ছাড় দিতে তারা প্রস্তুত ছিলেন না। এর পরিণতিতে ভারতের ওপর ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কের খড়গ নেমে এসেছে। বুধবার রয়টার্স এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ভারতীয় কর্মকর্তাদের পাঁচ দফা বাণিজ্য আলোচনার হয়েছিল। সর্বশেষ আলোচনার পরে ভারতীয় কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি অনুকূল চুক্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, তারা গণমাধ্যমে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন- শুল্ক ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে। ভারতীয় কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, ট্রাম্প ১ আগস্টের সময়সীমার কয়েক সপ্তাহ আগে নিজেই চুক্তিটি ঘোষণা করবেন। কিন্তু ঘোষণাটি কখনো আসেনি।
শেষ পর্যন্ত ৩০ জুলাই ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার অপরাধে তিনি ভারতের ওপর আরো শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন। বুধবার তিনি ভারতের ওপর আরো ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর ফলে ভারতের ওপর আরোপিত মোট মার্কিন শুল্কের পরিমাণ হলো ৫০ শতাংশ।
উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক ভুল বিচার, ভুলবার্তা এবং তিক্ততার মিশ্রণ বিশ্বের বৃহত্তম ও পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চুক্তিটি ভেঙে দিয়েছে, যাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৯০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন সফর করেছিলেন। ওই সময় মোদি ও ট্রাম্প ২০২৫ সালের শরৎকালের মধ্যে একটি চুক্তি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্বিগুণেরও বেশি করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে সম্মত হন। ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি পূরণের জন্য ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত জ্বালানি কেনার এবং প্রতিরক্ষা আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা এখন স্বীকার করেছেন, ট্রাম্প একটি ‘বড়’ আসন্ন চুক্তির কথা বলার পর ভারত অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। তারা এটিকে একটি সংকেত হিসেবে নিয়েছিল যে, একটি অনুকূল চুক্তি হাতে আসছে। এরপর নয়াদিল্লি তার অবস্থান কঠোর করে, বিশেষ করে কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের উপর।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে আলোচনায় জড়িত একজন ভারতীয় কর্মকর্তা বলেছিলেন, “আমরা দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৪০ কোটি মানুষের বাজারকে উপেক্ষা করতে পারে না।”
হোয়াইট হাউসের কাছে এটি অগ্রহণযোগ্য ছিল।
আলোচনার সাথে পরিচিত ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি সূত্র বলেছেন, “ট্রাম্প বৃহত্তর বাজারে প্রবেশ সুবিধা, বিনিয়োগ ও বৃহৎ ক্রয়ের মাধ্যমে একটি শিরোনাম-আকর্ষণীয় ঘোষণা চেয়েছিলেন।”
একজন ভারতীয় কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, নয়াদিল্লি অন্যদের প্রস্তাবের সাথে মেলে না।
উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়া ট্রাম্পের ১ আগস্টের সময়সীমার ঠিক আগে একটি চুক্তি করে। তারা ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, জ্বালানি আমদানি এবং চাল ও গরুর মাংসের উপর ছাড় দিয়ে ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ হার নিশ্চিত করে।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ও লবিস্ট মার্ক লিনস্কট বলেন, “এক পর্যায়ে উভয় পক্ষই চুক্তি স্বাক্ষরের খুব কাছাকাছি ছিল। অনুপস্থিত উপাদানটি ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের লাইন।”
আলোচনায় জড়িত একজন ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মোদি ফোন করতে পারতেন না, কারণ ট্রাম্পের সাথে একতরফা কথোপকথন অন্য পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেছেন।
তবে, অন্য তিনজন ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে মধ্যস্থতা করার বিষয়ে ট্রাম্পের বারবার মন্তব্য আলোচনাকে আরো চাপে ফেলেছে। এটি মোদিকে শেষ পর্যায়ে ফোন না করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
এই কর্মকর্তাদের এক জন বলেছেন, “পাকিস্তান সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়নি। আদর্শভাবে, ভারতের উচিত ছিল মার্কিন ভূমিকা স্বীকার করা এবং চূড়ান্ত কলটি আমাদেরই ছিল তা স্পষ্ট করে দেওয়া।”
ভারতীয় সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দুর্বল বিচারবুদ্ধির কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেছেন, “ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, জাপান এবং ইইউর সাথে আমেরিকার আরো ভালো চুক্তি হওয়ার পর আমাদের প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহায়তার অভাব ছিল। আমরা এখন এমন একটি সংকটের মধ্যে আছি যা এড়ানো যেত।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত র শ ষ পর য কর ত র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাকসুতে দুঃখ ঘোচাতে চায় ছাত্রদল, জয় ধরে রাখতে মরিয়া শিবির
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আর মাত্র চারদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। রাকসু নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে, তেমনি নির্বাচনী মাঠে বেশ জোরালো উপস্থিতি নিয়ে নামছে ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির।
ডাকসু ও জাকসুর ৫৩টি পদে একটিতেও জয় না পাওয়ার দুঃখ ঘোচাতে চায় ছাত্রদল। অন্যদিকে, ডাকসু-জাকসুতে বড় জয় পাওয়ার পর আত্মবিশ্বাসী ছাত্রশিবির এবার রাবিতেও তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে চায়।
আরো পড়ুন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: পোষ্য কোটা নিয়ে ছাত্র-শিক্ষক হাতাহাতি
রাকসু নির্বাচন: আলোচিত ভিপি প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার রাকসুতে ভিন্নধর্মী কৌশল ও প্রচার গ্রহণ করেছে এ দুই শক্তি।
চলতি মাসের ৯ সেপ্টেম্বর এবং ১১ সেপ্টেম্বর নানা অভিযোগ আর নাটকীয়তার মধ্যে শেষ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। দুইটি সংসদের মোট ৫৩টি পদেই পরাজিত হয়েছে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল। কোথাও কোনো অবস্থানই তৈরি করতে পারেনি সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ভোটে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেল। ডাকসুর ২৩টি ও জাকসুর ২০টি পদে বিজয়ী হয়েছে তারা। ডাকসুর বাকি পাঁচটি পদের মধ্যে চারটিতে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এবং একটি পদে জয় পেয়েছেন বামপন্থি প্যানেল ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ এর একজন প্রার্থী।
অন্যদিকে, জাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে একটি (ভিপি পদ) গেছে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের হাতে, দুটি পদ পেয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), আর দুটি পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বাকি সব পদে জয়ী হয় শিবির সমর্থিতরা।
এছাড়া জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই আন্দোলনের কয়েকজন নেতাও অংশ নিয়েছিলেন ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে। কিন্তু তারাও ভোটে জিততে পারেননি।
গত ৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাকসুর ২৩টি পদে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করে ছাত্রদল। এবারের প্যানেলে তারা ক্লিন ইমেজধারী, নির্যাতিত এবং বহুমাত্রিক পরিচয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিয়েছে। এতে রয়েছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়, রাজশাহী ফুটবল দলের গোলকিপার, ব্যান্ড সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, ডিনস পুরস্কারজয়ী শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মী ও জনপ্রিয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
প্যানেলে শীর্ষ তিন পদের মধ্যে একটিসহ মোট চারটি পদে নারী প্রার্থী রাখা হয়েছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বিশেষ করে ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর তার নম্র স্বভাব, সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ এবং ইতিবাচক ছাত্র নেতৃত্বের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পেরেছেন।
জিএস পদে আছেন নাফিউল জীবন, যিনি ছাত্রলীগের হাতে বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এজিএস পদে জাহিন বিশ্বাস এষা একজন বলিষ্ঠ নারী কণ্ঠ এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরিচিত মুখ, যিনি নারী ভোটারদের মনোযোগ কৌশলে টানছেন।
বছরের পর বছর আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চলার পর গত ১৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। নবগঠিত এই কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দলের শীর্ষ অন্তত ২০ নেতার ছাত্রত্ব নেই। তাই তারা প্রার্থী হতে পারেননি। বাকি যাদের ছাত্রত্ব আছে, তাদের ক্যাম্পাসে পরিচিতি যেমন কম, তেমনি অভিজ্ঞতার দিক থেকেও বেশ পিছিয়ে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্রদলের প্যানেলে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত ও ‘অনভিজ্ঞ’ যাদের প্রার্থী করা হয়েছে, তারা শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে কতটুকু জায়গা নিতে পারবেন!
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী নাফিউল জীবন বলেন, “ডাকসু ও জাকসুর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। এবার আমরা নতুন উদ্যম, শিক্ষার্থীদের আস্থা ও সমর্থন নিয়ে রাকসুতে ইতিবাচক ফলাফলের বিষয়ে আশাবাদী। নতুন মুখ মানেই নতুন চিন্তা, নতুন চেতনা এবং নতুন ভাবনা। শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে উদ্যম ও সততাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি—এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
তিনি বলেন, “আমরা সহিংসতা নয়, শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করছি। শান্তিপূর্ণ প্রচার ও সমস্যার সমাধানের পরিকল্পনাই আমাদের বিজয়ী হওয়ার প্রধান বিষয়।”
ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবীর বলেন, “ডাকসু কিংবা জাকসুর সঙ্গে রাকসুর তুলনা করা যথার্থ হবে না। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবেশ, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আলাদা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণ, চলাফেরা এবং ক্যাম্পাস সংস্কৃতিও অন্যদের থেকে ভিন্ন। তাই রাকসুর প্রেক্ষাপটকে ঢাবি বা জাহাঙ্গীরনগরের নির্বাচনের সাথে এক কাতারে ফেলা সঠিক হবে না।”
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, যদিও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক সময় ‘শিবিরের ক্যান্টনমেন্ট’ বলা হয়, তবুও শিক্ষার্থীদের আস্থা ও সমর্থন নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল রাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হবে।”
অপরদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রশিবিরের প্রভাবাধীন বলে পরিচিত। তবে এবারের নির্বাচনে ছাত্রশিবির ভিন্ন পথে হেঁটেছে। ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ নামে একটি বৈচিত্র্যময় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠন করে তারা চমক দিয়েছে। এখানে শুধু ভিপি পদে রয়েছেন রাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। বাকি পদগুলোতে নানা সংগঠন, শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।
জিএস পদে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা, এজিএস পদে ‘সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক’ এর সভাপতি সালমান সাব্বির। প্যানেলে আছেন তিনজন নারী শিক্ষার্থী-ছাত্রী সংস্থার সভানেত্রী সাইয়্যেদা হাফসাসহ দুজন। সহ-সমাজসেবা সম্পাদক পদেও নারী প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাহী সদস্য পদে আছেন একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী। এছাড়া জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো দ্বীপ মাহবুবকেও প্যানেলে রেখেছে শিবির।
এ বৈচিত্র্যকে শিবির নেতৃত্বের অন্যতম কৌশল বলা হচ্ছে। তারা প্রচারে ছাত্রদলের মতো আক্রমণাত্মক না হয়ে শিবিরের স্বভাবসুলভ বিনয়ী আচরণ, কুশল বিনিময় এবং সাংস্কৃতিক উপায়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছাচ্ছেন।
শিবির প্যানেলের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী জাহিদ হাসান জোহা এক নতুন মাত্রা যোগ করেছেন প্রচারে। গম্ভীরা গানের সুরে কখনো কৃষক, কখনো শিক্ষক, কখনো গায়ক সেজে ক্যাম্পাস মাতিয়ে তুলছেন তিনি। গানে গানে শিবিরের ইশতেহার শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরছেন, এটি শিবিরের অন্যতম সৃজনশীল প্রচার হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের অনুমিত ‘নিজস্ব ভোট’ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। তাছাড়া ছাত্রী সংস্থার কারণে ছয়টি নারী হলের ভোটারদের বড় একটি অংশ শিবিরের দিকে থাকতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ হাজার ভোটারের প্রায় ৪০ শতাংশ আবাসিক হলে থাকেন, বাকি ৬০ শতাংশ আশপাশে, যেখানে শিবিরের সামাজিক প্রভাব দীর্ঘদিনের।
রাবি ছাত্র শিবিরের সভাপতি ও ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ এর ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর জাহিদ বলেন, “ডাকসু, জাকসু এবং রাকসু—প্রতিটি নির্বাচনের প্রেক্ষাপট আলাদা এবং সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, নির্বাচনী ধারা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিও স্বতন্ত্র। তাই প্রতিটি নির্বাচনকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। তবে ডাকসু ও জাকসুতে শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতি যে আস্থা রেখেছেন, সেটি আসলে শিক্ষার্থীদের একটি বার্তা। তারা পরিবর্তন চান, তারা সৎ, যোগ্য ও সাহসী নেতৃত্ব চান।”
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে, আর সেই ধারাবাহিকতাই আমরা রাকসুতেও বজায় রাখতে চাই। অনেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শিবিরের ঘাটি বলে কিন্তু আমরা এভাবে কখনো বলি না। কারণ এখানে সব মতাদর্শের শিক্ষার্থীরা থাকেন। তাদের মনে আঘাত লাগতে পারে। আমরা নারী শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর সবাইকে সম্মান-শ্রদ্ধা করি। সব মতাদর্শ একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।”
তিনি আরো বলেন, “রাকসুতে আমরা শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও সমস্যাগুলো সরাসরি শুনে সেগুলোর সমাধানকে আমাদের ইশতেহারে রাখছি। আমরা চাই একটি নিরাপদ, স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গন, যেখানে ভিন্নমত দমন নয়, বরং অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি চর্চা হবে। ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক শক্তিকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
“আমাদের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। শেষ পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য একটাই শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। আমরা বিশ্বাস করি, রাকসুতেও শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর আস্থা রাখবেন,” যোগ করেন শিবির সভাপতি।
ঢাকা/মেহেদী