কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ-লালমাই-নাঙ্গলকোট) সংসদীয় আসন ভেঙে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রকাশিত খসড়া তালিকা বাতিল ও বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

বুধবার বিকেল ৪টা ৩০ থেকে ৫টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারী নেতা-কর্মীরা। এতে সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপি, কুমিল্লা মহানগর দক্ষিণের ৯ ওয়ার্ড ও লালমাই উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। এতে মহাসড়কের দ্বিমুখী লেনে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট তৈরি হয়।

এর আগে একই দাবিতে গত সোমবার মানববন্ধন করে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি দেন মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারীরা।

আজ বিকেলে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা ‘তোর খসড়া তুই নে, আমার ঠিকানা ফিরিয়ে দে’, ‘কুমিল্লা-৯ আসন ফিরিয়ে দাও, দিতে হবে’, ‘আমরা সবাই মনির সেনা, ভয় করি না বুলেট বোমা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বৃহত্তর কুমিল্লা সদর দক্ষিণ এলাকা নিয়ে সাবেক কুমিল্লা-৯ আসনটি ফিরিয়ে দেওয়া এবং নির্বাচন কমিশনের খসড়া বাতিল না করলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীরা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ও পৌরসভা (বর্তমানে সদর দক্ষিণ, লালমাই উপজেলা ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ড) নিয়ে বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসনের সীমানা ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরী এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে মনিরুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসনটি বিলুপ্ত করে কুমিল্লা-৬, কুমিল্লা-৮ ও কুমিল্লা-১০ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। চার থেকে পাঁচ দফা পরিবর্তনের পর বর্তমানে কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ-লালমাই-নাঙ্গলকোট) আসনে আছে বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসনটি। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন, আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যেখানে কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহাল করার কথা, তা না করে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসনকে ভেঙেচুরে ত্রিখণ্ডিত করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে ইসি। অন্যায়ভাবে কুমিল্লা-১০ আসনের লালমাই উপজেলাকে বর্তমান কুমিল্লা-৯ আসনের লাকসামের সঙ্গে এবং কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলাকে কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আর কুমিল্লা-১০ আসনের নাঙ্গলকোট উপজেলার সঙ্গে কুমিল্লা-৯ আসনের মনোহরগঞ্জ উপজেলাকে যুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এই হটকারী সিদ্ধান্ত তাঁরা মানেন না। অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবি জানান তাঁরা।

সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও আসন পুনরুদ্ধারের জন্য গঠিত ‘সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি’র আহ্বায়ক মুহম্মদ আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় আখতার হোসেন জানান, তাঁদের দাবি আদায়ে আগামী ১২ আগস্ট লালমাইতে এবং ১৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর দক্ষিণ স্থানীয় বিএনপির উদ্যোগে বৃহৎ জনসভা আয়োজন করা হবে।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সমাজসেবক জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এই আন্দোলন শুধু একটি আসনের জন্য নয়। এটি আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। আসন পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

এদিকে মহাসড়ক অবরোধের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন বাসের চালক ও যাত্রীরা। পরে কর্মসূচি শেষ হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ময়নামতি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, আসন পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এক ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। কয়েক হাজার মানুষ মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ায় প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে তাঁরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র আসন র স কর ম র র ধ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’—তিন দিন আগে হুমকি পেয়েছিলেন সরোয়ার

চট্টগ্রামে ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলাকে গুলি করার তিন দিন আগে তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন আরেক ‘সন্ত্রাসী’ মো. রায়হান। ওই সময় সরোয়ারকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, তাঁর সময় শেষ, যা খাওয়ার যেন খেয়ে নেন। সরোয়ারের বাবা আবদুল কাদের প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

গতকাল বুধবার রাতে আবদুল কাদেরের সঙ্গে নগরের বায়েজিদ বোস্তামীর চালিতাতলী এলাকার খন্দকারপাড়া এলাকার বাড়িতে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে তিন দিন আগে গত রোববার মুঠোফোনে হুমকি দিয়েছিলেন সন্ত্রাসী রায়হান। বলেছিলেন, “তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে।”’

গতকাল নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলীর খন্দকারপাড়া এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগ করছিলেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপির প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ। জনসংযোগের বহর এগোতে এগোতে চলছিল স্লোগান। হঠাৎ গুলির শব্দ। ছত্রভঙ্গ হয়ে যান নেতা-কর্মীরা। ঘটনাস্থলেই গুলিতে মারা যান সরোয়ার। গুলিবিদ্ধ হন এরশাদ উল্লাহসহ চারজন। সরোয়ারের পিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও দেখা গেছে এমন দৃশ্য। এরশাদ উল্লাহসহ অন্যরা নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানায়, সরোয়ারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র, হত্যাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।

সরোয়ারের বাবা আবদুল কাদের বলেন, তাঁর ছেলেকে প্রায়ই হুমকি দিতেন বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী, তাঁর সহযোগী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও মো. রায়হান। এ জন্য তাঁর ছেলে সতর্ক হয়ে চলাফেরা করতেন। সঙ্গে লোকজনও থাকত। কিন্তু বুধবার তাঁর বাড়ি থেকে দুই থেকে তিন শ গজ দূরে রাস্তার পাশে দোকানে গণসংযোগ চালান বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ। যেহেতু নিজের এলাকা কেউ কিছু করবে না, সে জন্য ছেলের আত্মবিশ্বাস ছিল। সরোয়ার নিজেও এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়েছেন। পরে গণসংযোগে অংশ নেন তিনি।

আবদুল কাদের যখন কথা বলছিলেন, তখনো তাঁর পাঞ্জাবি ও লুঙ্গিতে লেগে ছিল ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। ছেলেকে যখন গুলি করা হচ্ছিল, তখন তিনিও কাছে ছিলেন। লোকজনের ভিড় থাকায় বুঝতে পারেননি ছেলেকে গুলি করা হয়েছে। পরে ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় রিকশা ও সিএনজি করে হাসপাতালে নিয়ে যান আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘রিকশাতেই আমার ছেলে আমার কোলে মারা যায়। তবু মনকে বোঝাতে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম।’

আবদুল কাদের আরও বলেন, ‘এভাবে বাড়ির কাছে ছেলেকে মেরে ফেলবে, তা কল্পনা করিনি কখনো। বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমানকেও রাস্তায় পেটানোর হুমকি দিয়েছিলেন সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ।’

আবদুল কাদের যখন কথা বলছিলেন, তখনো তাঁর পাঞ্জাবি ও লুঙ্গিতে লেগে ছিল ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। ছেলেকে যখন গুলি করা হচ্ছিল, তখন তিনিও কাছে ছিলেন। লোকজনের ভিড় থাকায় বুঝতে পারেননি ছেলেকে গুলি করা হয়েছে। পরে ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় রিকশা ও সিএনজি করে হাসপাতালে নিয়ে যান আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘রিকশাতেই আমার ছেলে আমার কোলে মারা যায়। তবু মনকে বোঝাতে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম।’

চট্টগ্রাম নগরের হামজারবাগের এই স্থানেই গুলি করা হয় সরয়ারকে। ঘটনার পর গতকাল সেখানে বসে কথা বলছিলেন তাঁর বাবা আবদুল কাদের । তাঁর পাঞ্জাবিতে তখনো লেগেছিল ছেলের রক্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ