বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বগুড়া জেলা কমিটির সাবেক সদস্যসচিব সাকিব খান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরীকে মুঠোফোনে ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। সাইবার সুরক্ষা আইনের মামলায় তাঁর জামিনের বিরোধিতা করে রাজধানীর শাহবাগ থানা থেকে ঢাকা মহানগর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আজ বুধবার পাঠানো নথিতে (ফরোয়াডিং) এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

গত সোমবার শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ২২ ও ২৭  ধারায় সাকিব খানকে আসামি করে মামলা করেন। রাতেই যৌথ বাহিনী তাঁকে বগুড়া শহরের নারুলী এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে। আজ বুধবার আদালতে জামিন শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো.

মনিরুল ইসলাম।

আদালতে পাঠানো নথিতে স্বাক্ষর করেছেন শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান। এতে উল্লেখ করা হয়, সাকিব খান নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পরিচয়ে একজন পুলিশ সুপারের পদায়নের জন্য প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরীকে একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি/ ব্যক্তিরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর নাম ভাঙিয়ে পুলিশ সদস্য ও বিসিএস কর্মকর্তাদের পদায়ন এবং নিয়োগের কথা বলে অর্থ আদায় করে আসছিলেন। আসামি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। সাইবার অপরাধ মনিটরিংকালে এসব তথ্য পেয়ে সাকিব খানকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ২২ ও ২৭  ধারায় বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ কারণে তদন্ত শেষ না হওয়ায় তাঁকে কারাগারে আটকে রাখা প্রয়োজন। জামিন দিলে চিরতরে পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে মামলার তদন্ত ব্যাহত হবে।

আরও পড়ুনঢাকায় হওয়া সাইবার সুরক্ষা আইনের মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার২১ অক্টোবর ২০২৫

আসামি সাকিব খানের আইনজীবী মোছা. মেহেরুন্নেছা প্রথম আলোকে বলেন, সাকিব খানের জামিন চেয়ে সিএমএম আদালতে জামিন আবেদন করা হয়। বুধবার শুনানি শেষে ২৩ নম্বর আদালতের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলাম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

আইনজীবী মোছা. মেহেরুন্নেছা আরও বলেন, বৃহস্পতিবার একই আদালতে আবার জামিন আবেদন করা হবে। আগামী রোববার জামিন শুনানি হবে বলে আশা করছেন।

পুলিশের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০ অক্টোবর রাতে শাহবাগ থানা-পুলিশ সাইবার অপরাধ পর্যবেক্ষণ করাকালে তথ্য পায়, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরীকে ফোন করে একজন কর্মকর্তাকে পুলিশ সুপারের পদায়নের জন্য সাকিব খান সুপারিশ করেন। এ সময় সাকিব খান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীকে ঘুষের প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পরিচয়ে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর নাম ভাঙিয়ে পুলিশ সদস্য এবং বিসিএস কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছেন। এতে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভুয়া পরিচয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর কাছে সুপারিশ ও পুলিশ কর্মকর্তাদের থেকে অর্থ আদায় করে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ২২ ও ২৭  ধারায় অপরাধ করেছেন।

তবে সাকিব খানের বাবা ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে সাকিব খানকে ফাঁসানো হয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে কারও কাছ থেকে অর্থ লেনদেনে তাঁর ছেলে জড়িত নন। সারা দেশে সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী করে সাকিব খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ মিথ্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে।

সাকিব খানকে সাইবার সুরক্ষা আইনে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশসহ সব কালো আইন বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার বগুড়ায় সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। এতে এনসিপি, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হব গ থ ন বখস চ ধ র কর মকর ত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিজিবিতে দুই হাজারের বেশি পদ সৃষ্টি

সীমান্ত পাহারায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বাহিনীটির বিভিন্ন পর্যায়ে ২ হাজার ২৫৮টি পদ সৃষ্টি করেছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভুরুঙ্গামারী, থানচি ও মেহেরপুরের ৩টি বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নে ২ হাজার ২২৬টি পদ এবং বর্ডার গার্ড হাসপাতাল, গুইমারায় ৩২টি পদ মিলিয়ে মোট ২ হাজার ২৫৮টি পদ সৃজন করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রসারিত অর্গানোগ্রামের অধীন বিজিবিতে ৩ জন নতুন পরিচালক, ৯ জন অতিরিক্ত পরিচালক এবং ৯ জন উপপরিচালক নিয়োগ করা হবে। তাঁদের সশস্ত্র বাহিনী থেকে ডেপুটেশনে আধাসামরিক বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হবে, যেখানে যথাক্রমে লেফটেন্যান্ট কর্নেল, মেজর ও ক্যাপ্টেনের সমতুল্য তিনটি পদ অফিসারদের জন্য নির্ধারিত থাকবে।

সংশোধিত কাঠামোতে পরিদর্শক পদমর্যাদার তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ডেপুটেশনে নিয়োগ করা হবে আধাসামরিক বাহিনীটিতে। অন্যদের বিজিবি নিয়োগ বিধিমালা অনুসারে নিয়োগ করা হবে।

তাঁদের মধ্যে তিনজন সুবেদার মেজর (সকল শ্রেণি), ৫৭ জন নায়েব সুবেদার (সকল বিভাগ), ২৪০ জন হাবিলদার (সকল শ্রেণি), ২৮৫ জন নায়েক (সকল শ্রেণি), ১৫ জন ল্যান্স নায়েক (অফিস সহকারী), ৩২৭ জন ল্যান্স নায়েক (সকল শ্রেণি), ১৫ জন সৈনিক (অফিস সহকারী) এবং ১ হাজার ২২১ জন সৈনিক বা সিপাহি (সকল শ্রেণি)।

এ ছাড়া কয়েকটি বিভাগে বেসামরিক কর্মীও নিয়োগ করবে বিজিবি। এর মধ্যে তিনজন ইমাম, তিনজন হিসাবরক্ষক, তিনজন উচ্চ বিভাগের কেরানি, তিনজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট, তিনজন ধাত্রী ও তিনজন অফিস সহযোগীর পদ রয়েছে।

এ ছাড়া বিজিবির গুইমারা হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধি করা হবে নতুন এই নিয়োগের ফলে। সেখানে নতুন সৃষ্ট পদের মধ্যে রয়েছে ৭ জন হাবিলদার (সকল শ্রেণি), ৩ জন নায়েক (সকল শ্রেণি), ৬ জন ল্যান্স নায়েক (সকল শ্রেণি) এবং ১৪ জন সৈনিক (সকল শ্রেণি)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ