গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জন্য শেয়ারধারীদের রেকর্ড লভ্যাংশ দেবে ওষুধ খাতের দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বা স্কয়ার ফার্মা। কোম্পানিটি গত অর্থবছরের জন্য লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করবে ১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। প্রতি শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিটি ১২০ শতাংশ বা ১২ টাকা করে লভ্যাংশ দেবে। আজ বুধবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় লভ্যাংশের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোম্পানি সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কয়ার ফার্মা গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে সম্মিলিতভাবে ২ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এই মুনাফা থেকে শেয়ারধারীদের মধ্যে কোম্পানিটি বিতরণ করবে ১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। কোম্পানি–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কয়ার ফার্মা তাদের ব্যবসার ইতিহাসে গত অর্থবছরেই রেকর্ড মুনাফা করেছে। কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে ১৯৯৫ সালে। তালিকাভুক্তির পর গত অর্থবছরে রেকর্ড মুনাফার পাশাপাশি শেয়ারধারীদের জন্য রেকর্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর আগে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ১১০ শতাংশ হারে বা শেয়ারপ্রতি ১১ টাকা লভ্যাংশ দিয়েছিল।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে স্কয়ার ফার্মার সম্মিলিত মুনাফা ছিল ২ হাজার ৯২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সেই মুনাফা ৩০৫ কোটি টাকা বা সাড়ে ১৪ শতাংশ বেড়েছে। আর লভ্যাংশ বাবদ বিতরণ করা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৮৯ কোটি টাকা। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি লভ্যাংশ বাবদ শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করেছিল ৯৭৫ কোটি টাকা। চলতি বছর প্রথমবারের মতো তা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

গত অর্থবছরে স্কয়ার ফার্মা ও তার সহযোগী কোম্পানিগুলো মিলে সম্মিলিতভাবে ৭ হাজার ৬২৯ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। তার আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ১০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে ৬১৯ কোটি টাকার। কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে কোম্পানিটির মুনাফা বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসার প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বড় ভূমিকা রেখেছে বিনিয়োগ থেকে পাওয়া মুনাফা। গত অর্থবছরে শেয়ারবাজার ও আর্থিক খাতে অর্থ বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা করেছে কোম্পানিটি। এই খাত থেকে স্কয়ার ফার্মা মুনাফা করেছে ৬২১ কোটি টাকা। আগের বছরে এই খাত থেকে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ৪৬৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারবাজার ও আর্থিক খাতে বিনিয়োগ করা অর্থের বিপরীতে স্কয়ার ফার্মার মুনাফা ১৫৬ কোটি টাকা বা সাড়ে ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। বিনিয়োগ থেকে ভালো মুনাফা করায় সার্বিকভাবে কোম্পানিটির মুনাফায় নতুন রেকর্ড হয়েছে।

* গত অর্থবছর স্কয়ার ফার্মা ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিতভাবে ৭ হাজার ৬২৯ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে।
* শেয়ারবাজার ও ব্যাংক খাতের বিনিয়োগ থেকে মুনাফা করেছে ৬২১ কোটি টাকা।
* লভ্যাংশ বাবদ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন ২৮৫ কোটি টাকা।

স্কয়ার ফার্মার সম্মিলিত মুনাফা হিসাব করা হয়েছে কোম্পানিটির সহযোগী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া মুনাফা যোগ করে। সহযোগী এসব প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বাদ দিলে এককভাবে গত অর্থবছরে স্কয়ার ফার্মার মুনাফা ছিল ১ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এককভাবে স্কয়ার ফার্মার মুনাফা করেছিল ১ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে স্কয়ার ফার্মার মুনাফা প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ কমেছে। তবে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো ব্যবসা করায় বছর শেষে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটি রেকর্ড মুনাফা করেছে।

এদিকে গত অর্থবছরে কোম্পানিটি লভ্যাংশ বাবদ যে অর্থ বিতরণ করবে, তার মধ্যে স্কয়ার ফার্মার উদ্যোক্তা–পরিচালকেরা পাবেন ৪৬৪ কোটি টাকা। কারণ, কোম্পানিটির শেয়ারের প্রায় ৪৪ শতাংশই রয়েছে তাদের হাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লভ্যাংশ পাবেন ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাঁরা পাবেন ২৮৫ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রায় ২৭ শতাংশই ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। কোম্পানিটির ঘোষিত লভ্যাংশ বাবদ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১৬১ কোটি টাকা। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১৫৪ কোটি টাকা।

রেকর্ড মুনাফার কারণ জানতে চাইলে স্কয়ার ফার্মার নির্বাহী পরিচালক মো.

জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, নিজেদের ব্যবসা প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সহযোগী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের বিপরীতে এ বছর ভালো মুনাফা পেয়েছে স্কয়ার ফার্মা। পাশাপাশি শেয়ারবাজার ও আর্থিক খাতে অর্থ বিনিয়োগ করে সেখান থেকেও ভালো মুনাফা এসেছে। এ কারণে বছর শেষে স্কয়ার ফার্মা রেকর্ড মুনাফা করেছে। সেই সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আমরা শেয়ারধারীদের জন্য সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স কয় র ফ র ম র ম ন ফ র কর ড ম ন ফ শ য় রব জ র ও ব তরণ কর র ব যবস র জন য ত অর থ শ ব বদ আর থ ক সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত থেকে দেড় হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি

পেঁয়াজ আমদানির জন্য শেষ পর্যন্ত ভারতকেই বেছে নিল সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আজ রোববার ভারত থেকে ১ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে।

আমদানি অনুমতিকে সংক্ষেপে আইপি বলা হয়। মোট ৫০ জন আমদানিকারককে এ আইপি দেওয়া হয়। তবে কোনো আমদানিকারকই ৩০ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন না। আবার কেউ দ্বিতীয়বারের জন্য আমদানির আবেদন করতে পারবেন না। আমদানির অনুমতির বা আইপির মেয়াদ থাকবে ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণে গতকাল শনিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছিল, গত ১ আগস্ট থেকে যেসব আমদানিকারক আইপির জন্য আবেদন করেছেন, তাঁরাই পাবেন এই সুযোগ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আইপির জন্য এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০০টি আবেদন জমা আছে। আজ ৫০টি আবেদন বাছাই করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে। সার্ভারে যাঁরা আগে ঢুকতে পেরেছেন, তাঁরাই আইপির জন্য বিবেচিত হয়েছেন।

হিলি সীমান্তের কাছে অবস্থিত বিজয় এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বন্টি জয়সয়াল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ তিনি সারা দিন চেষ্টা করেও সার্ভারে ঢুকতে পারেননি। কাল আবার চেষ্টা করবেন। একজনের জন্য ৩০ টন, পরিমাণটা কম হয়ে গেছেও বলে মনে করেন তিনি।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গত ৯ নভেম্বর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাজারে দাম না কমলে এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের আইপি দেওয়া হবে। তবে দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে তা আর দেওয়া হবে না। বাণিজ্য উপদেষ্টার এমন ঘোষণা কার্যকর হয়েছে এক মাস পর।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) এক বছর আগে পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের ওপর নির্ভর না করে বিকল্প উৎস খোঁজার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিল। উৎসগুলো হচ্ছে পাকিস্তান, তুরস্ক, মিসর, চীন ও মিয়ানমার। বাংলাদেশ এত বছর ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করে আসছিল। এ ছাড়া চীন ও তুরস্ক থেকেও পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছিল, তবে তা পরিমাণে কম।

গত ২৮ নভেম্বর ভারতের দ্য ইকোনমিকস টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের বরাতে বলা হয়েছে, একসময় ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া পেঁয়াজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। তবে গত আট মাসে বাংলাদেশ খুবই সামান্য পরিমাণ পেঁয়াজ কিনেছে ভারত থেকে। যদিও ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম ভারতের স্থানীয় বাজারের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার টন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টন এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষ না হতেই ৪২ লাখ ৬৪ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন। মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের কিছু থাকে বীজের জন্য, কিছু পচে যায়। ফলে মৌসুম শেষে সরবরাহে একটু টান পড়ে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোক্তাস্বার্থের কথা ভেবে আজ ৫০টি আইপি দেওয়া হয়েছে, আরও দেওয়া হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে পরিস্থিতি অনুযায়ী এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। তবে পেঁয়াজের দাম কমে এলেই আমদানির অনুমতি বন্ধ করা হবে। কারণ, কৃষকের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।’

এদিকে প্রথম আলোর দিনাজপুরের বিরামপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আজ বিকেল সোয়া চারটায় ভারত থেকে ৩০ টন পেঁয়াজবোঝাই একটি ট্রাক হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই বন্দর দিয়ে সর্বশেষ চলতি বছরের ৩০ আগস্ট ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল।

পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রকি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আতিক হাসান জানিয়েছেন, ভারত থেকে প্রতি টন পেঁয়াজ আমদানিতে ২৫০ মার্কিন ডলারে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ১২ রুপি এবং গাড়িভাড়াসহ বন্দর পর্যন্ত খরচ পড়তে পারে কেজিপ্রতি ১৮ রুপি।

এদিকে আমদানির ঘোষণায় এক দিনের ব্যবধানে আজ ঢাকার খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৪০ টাকায়। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারের চিত্রও প্রায় একই। আমাদের চট্টগ্রাম অফিস জানায়, আমদানি অনুমতির খবরে দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ আড়ত খাতুনগঞ্জের মোকামগুলোতে কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারত থেকে দেড় হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি
  • এনভয় টেক্সটাইলসের এজিএম অনুষ্ঠিত
  • প্রবাসী আয়ে বড় চমক কৃষি ব্যাংকের
  • পণ্য রপ্তানি টানা চার মাস কী কারণে কমছে