ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দক্ষিণ এশিয়ার সাধারণ সমাজে পাগলাটে এক নেতা হিসেবে ভাবা হয়। যেন তিনি মনের খেয়ালে চলা এক ভাবুক রাজা। কিন্তু সম্প্রতি শুল্কযুদ্ধে ট্রাম্প যেভাবে এই অঞ্চলের শাসকদের ঘাম ছুটিয়ে চলেছেন এবং তাতে পুরো অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক ছক যেভাবে ঝাঁকুনি খাচ্ছে, সেটা টিম-ট্রাম্পের কূটনৈতিক দক্ষতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে সবাইকে।

এত দিন এই অঞ্চলে সবাই ভেবেছে ভারতের মিত্র হতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্কে টানাপোড়েন কমবে না। কিন্তু শুল্কযুদ্ধে পাওয়া যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। আবার যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমার নীতিও আগের মতো থাকছে না আর। সামরিক জান্তার ঘনিষ্ঠ অস্ত্র ব্যবসায়ী কয়েকটি সংস্থার ওপর থেকে এরই মধ্যে এত দিনকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ গত ফেব্রুয়ারিতেও এই জান্তা ও তার সহযোগীদের যুক্তরাষ্ট্র ‘নিরাপত্তা হুমকি’ বলেছে।

আরও পড়ুনট্রাম্প যেভাবে মিয়ানমারকে চীনের হাতে তুলে দিচ্ছেন০১ আগস্ট ২০২৫শুল্কযুদ্ধে ভারতের নাজেহাল অবস্থায় পাকিস্তানে উল্লাস

শুল্কযুদ্ধে ট্রাম্প পাকিস্তানের রপ্তানি পণ্যের জন্য শুল্ক রাখলেন ১৯ ভাগ। যা ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের প্রথম দফা শুল্কের (২৫ শতাংশ) চেয়ে অনেক কম ছিল। এমনকি ভিয়েতনামের চেয়েও কম ছিল। এখন ভারতের জন্য শুল্কহার ৫০ শতাংশ করার পর বিষয়টা ভয়ংকর ধাঁচের বোমা নিক্ষেপের মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। স্বভাবতই ভারতের এই নাজুক অবস্থায় পাকিস্তানজুড়ে সুখের অনুভূতি বইছে।

যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের টেক্সটাইলের অন্যতম গন্তব্য। নতুন শুল্কহারে তাদের রপ্তানির অতীত ধারা চালু থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তানের সেনাসমর্থিত সরকার এটাকে বিরাট এক কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখাচ্ছে। সরকারের দাবি, সর্বশেষ ঘটনা আসলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের সামগ্রিক গভীরতার প্রকাশ্য।

ভারতের সঙ্গে সদ্য শেষ হওয়া যুদ্ধেও ট্রাম্প পাকিস্তানকে সহায়তা করেছেন বলে দক্ষিণ এশিয়ায় ধারণা ছিল। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে সেটা টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা ছিল না পাকিস্তানের। ট্রাম্প যুদ্ধ থামিয়ে তাদের উপকারই করলেন। আর এখন দুই দেশের অসম শুল্কহারের ঘটনায় সবাই ভাবছে ওয়াশিংটন দক্ষিণ এশিয়ায় প্রকৃতই পাকিস্তানকে মদদ দিচ্ছে। প্রশ্ন হলো, টিম-ট্রাম্প ভারতের ওপর এত রুষ্ট কেন?

আরও পড়ুন‘বন্ধু’ ট্রাম্পের শুল্কের ঠ্যালা সামলাতে পারবে তো মোদির ভারত!১১ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে হঠাৎ শৈত্যপ্রবাহ

নয়াদিল্লির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভের বড় কারণ, রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনাকাটায়। এ ছাড়া ভারতের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য প্রবেশে আরও উদার অবস্থা দেখতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ভারত এসব ব্যাপারে সহজে ছাড় দেওয়ার পাত্র নয়। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পক্ষে সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিও প্রকাশ করে। তারই পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের রপ্তানি পণ্যে শুল্কহার ২৫+২৫=৫০ শতাংশ ঠিক করে দিলেন ট্রাম্প। এই ঘোষণা ভারতজুড়ে হতবিহ্বল অবস্থা তৈরি করেছে। এর জন্য অবশ্য বিজেপি সরকার কম দায়ী নয়।

ভারতের জনমানসে নরেন্দ্র মোদি সরকার গত দেড় দশকে এ রকম ধারণা তৈরি করে রেখেছে যে তাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের দৃঢ় ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ রয়েছে। এমনও বলা হয়েছে, চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সব সরকার ভারতকে চায় এবং সেই বন্ধুত্বের ভালো মূল্য দিতেও প্রস্তুত তারা।

নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র অবস থ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দাপুটে জয়ে ক্যাম্প ন্যুতে বার্সেলোনার প্রত্যাবর্তন

ফেরান তোরেসের দুর্দান্ত জোড়া গোল আর শুরুর দিকেই রবার্ট লেভানদোভস্কির আঘাত; সব মিলিয়ে দুই বছর পর ন্যু ক্যাম্পে ফিরে এসে একেবারে রাজকীয় ভঙ্গিতেই নিজেদের উপস্থিতি জানান দিল বার্সেলোনা। ১০ জনের বিলবাওকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে লা লিগায় টানা তিন জয়ের আনন্দে ভাসল কাতালানরা।

নবায়ন কাজের কারণে দীর্ঘ বিরতির পর ন্যু ক্যাম্পে এটি ছিল বার্সার প্রথম ম্যাচ। শুরুতেই যেন সেই অপেক্ষার সব ক্ষত মুছে দিলেন লেভানদোভস্কি। ম্যাচের মাত্র চার মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে বল কাড়ার পর নিচু শটে উনাই সিমোনকে পরাস্ত করেন তিনি।

আরো পড়ুন:

দ্রুততম ৪৪ গোলে রোনালদোর রেকর্ড ভাঙলেন এমবাপ্পে

মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনাকে হারাল রিয়াল

এরপর দানি ওলমোর প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেয় বিলবাওয়ের রক্ষণ দেয়াল। লামিন ইয়ামালের শটও রুখে দেন সিমোন। অন্যদিকে আক্রমণে উঠেও সুযোগ নষ্ট করেন উনাই গোমেজ ও নিকো উইলিয়ামস। আয়েরিক লাপোর্তের হেডও পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।

এরপর ফেরান তোরেস ও ফিরমিন লোপেজও গোলের খোঁজে সক্রিয় হন। গার্সিয়া চোট কাটিয়ে একাদশে ফিরেই বিলবাওয়ের নিশ্চিত গোল ঠেকান।

হাফটাইমের ঠিক আগে ইয়ামালের দারুণ বাঁকানো পাসে সুযোগ পান তোরেস। নিচু শটে সিমোনকে পরাস্ত করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তিনি। সিমোন ছুঁয়ে দিলেও গোল ঠেকাতে পারেননি।

বিরতির পর মাত্র তিন মিনিটের মাথায় লোপেজ দারুণ এক প্রচেষ্টায় সোজা শটে তৃতীয় গোলটি করেন। ৫৪ মিনিটে লোপেজের ওপর বিপজ্জনক ট্যাকল করে ওইহান সানসেট লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে বিলবাওয়ের দুর্ভাগ্য আরও ঘনীভূত হয়।

এরপর ডানি ভিভিয়ান হুমকি তৈরি করলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। পাল্টা আক্রমণে ওলমোর শটও অল্পের জন্য বাইরে যায়। ভিভিয়ান পরে আরেকবার হেডে গোল করতে উদ্যত হয়েছিলেন, তবে গার্সিয়ার গ্লাভসে আটকে যায় বল।

অবশেষে ৯০ মিনিটে ইয়ামালের সূক্ষ্ম পাস ধরে ঠান্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে ম্যাচের শেষ শব্দটি লিখে দেন ফেরান তোরেস।

দুই বছর পর ঘরের মাঠে ফিরল বার্সেলোনা। আর তোরেস-ইয়ামালরা যেন সেই আনন্দকে ফুটিয়ে তুললেন মাঠজুড়ে গোলের আতশবাজিতেই।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ