ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার ঘিরে ট্রাম্পের নতুন কূটনীতি
Published: 7th, August 2025 GMT
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দক্ষিণ এশিয়ার সাধারণ সমাজে পাগলাটে এক নেতা হিসেবে ভাবা হয়। যেন তিনি মনের খেয়ালে চলা এক ভাবুক রাজা। কিন্তু সম্প্রতি শুল্কযুদ্ধে ট্রাম্প যেভাবে এই অঞ্চলের শাসকদের ঘাম ছুটিয়ে চলেছেন এবং তাতে পুরো অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক ছক যেভাবে ঝাঁকুনি খাচ্ছে, সেটা টিম-ট্রাম্পের কূটনৈতিক দক্ষতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে সবাইকে।
এত দিন এই অঞ্চলে সবাই ভেবেছে ভারতের মিত্র হতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্কে টানাপোড়েন কমবে না। কিন্তু শুল্কযুদ্ধে পাওয়া যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। আবার যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমার নীতিও আগের মতো থাকছে না আর। সামরিক জান্তার ঘনিষ্ঠ অস্ত্র ব্যবসায়ী কয়েকটি সংস্থার ওপর থেকে এরই মধ্যে এত দিনকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ গত ফেব্রুয়ারিতেও এই জান্তা ও তার সহযোগীদের যুক্তরাষ্ট্র ‘নিরাপত্তা হুমকি’ বলেছে।
আরও পড়ুনট্রাম্প যেভাবে মিয়ানমারকে চীনের হাতে তুলে দিচ্ছেন০১ আগস্ট ২০২৫শুল্কযুদ্ধে ভারতের নাজেহাল অবস্থায় পাকিস্তানে উল্লাসশুল্কযুদ্ধে ট্রাম্প পাকিস্তানের রপ্তানি পণ্যের জন্য শুল্ক রাখলেন ১৯ ভাগ। যা ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের প্রথম দফা শুল্কের (২৫ শতাংশ) চেয়ে অনেক কম ছিল। এমনকি ভিয়েতনামের চেয়েও কম ছিল। এখন ভারতের জন্য শুল্কহার ৫০ শতাংশ করার পর বিষয়টা ভয়ংকর ধাঁচের বোমা নিক্ষেপের মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। স্বভাবতই ভারতের এই নাজুক অবস্থায় পাকিস্তানজুড়ে সুখের অনুভূতি বইছে।
যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের টেক্সটাইলের অন্যতম গন্তব্য। নতুন শুল্কহারে তাদের রপ্তানির অতীত ধারা চালু থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তানের সেনাসমর্থিত সরকার এটাকে বিরাট এক কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখাচ্ছে। সরকারের দাবি, সর্বশেষ ঘটনা আসলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের সামগ্রিক গভীরতার প্রকাশ্য।
ভারতের সঙ্গে সদ্য শেষ হওয়া যুদ্ধেও ট্রাম্প পাকিস্তানকে সহায়তা করেছেন বলে দক্ষিণ এশিয়ায় ধারণা ছিল। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে সেটা টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা ছিল না পাকিস্তানের। ট্রাম্প যুদ্ধ থামিয়ে তাদের উপকারই করলেন। আর এখন দুই দেশের অসম শুল্কহারের ঘটনায় সবাই ভাবছে ওয়াশিংটন দক্ষিণ এশিয়ায় প্রকৃতই পাকিস্তানকে মদদ দিচ্ছে। প্রশ্ন হলো, টিম-ট্রাম্প ভারতের ওপর এত রুষ্ট কেন?
আরও পড়ুন‘বন্ধু’ ট্রাম্পের শুল্কের ঠ্যালা সামলাতে পারবে তো মোদির ভারত!১১ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে হঠাৎ শৈত্যপ্রবাহনয়াদিল্লির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভের বড় কারণ, রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনাকাটায়। এ ছাড়া ভারতের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য প্রবেশে আরও উদার অবস্থা দেখতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ভারত এসব ব্যাপারে সহজে ছাড় দেওয়ার পাত্র নয়। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পক্ষে সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিও প্রকাশ করে। তারই পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের রপ্তানি পণ্যে শুল্কহার ২৫+২৫=৫০ শতাংশ ঠিক করে দিলেন ট্রাম্প। এই ঘোষণা ভারতজুড়ে হতবিহ্বল অবস্থা তৈরি করেছে। এর জন্য অবশ্য বিজেপি সরকার কম দায়ী নয়।
ভারতের জনমানসে নরেন্দ্র মোদি সরকার গত দেড় দশকে এ রকম ধারণা তৈরি করে রেখেছে যে তাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের দৃঢ় ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ রয়েছে। এমনও বলা হয়েছে, চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সব সরকার ভারতকে চায় এবং সেই বন্ধুত্বের ভালো মূল্য দিতেও প্রস্তুত তারা।
নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র অবস থ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক, আন্দোলনরত ‘তথ্য আপা’দের কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান
টানা ৭২ দিন রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় আন্দোলনের পর মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে একটি প্রতিনিধিদলের আলোচনা হয়। এ সময় উপদেষ্টা আন্দোলনরতদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান।
ঝালকাঠি সদরের তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও আন্দোলন পরিচালনা কমিটির সভাপতি সংগীতা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁদের আলোচনা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী সপ্তাহে তথ্য আপা প্রকল্প রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তাঁদের কাজে ফিরে যেতে বলেছেন উপদেষ্টা।
অবশ্য উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ‘এই সরকার কোনো প্রকল্প রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করছে না। তাই এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। তাঁদের জন্য বিকল্প কী প্রস্তাব নেওয়া যায়, সেটা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। সেই বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে তাঁদের জানিয়েছি।’
২০১১ সালে পাইলট আকারে ১৩টি উপজেলায় তথ্য আপা প্রকল্প শুরু হয়। পরে ২০১৮ সালের শেষ দিকে ৪৯২টি উপজেলায় প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। পরে তা দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুন করা হয়। গত বছর আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন করা হয়।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘জাতীয় মহিলা সংস্থা’র বাস্তবায়ন করা এ প্রকল্পের পুরো নাম ছিল ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন’। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘তথ্য আপা: তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প’।