‘আপনার জীবনে দারুণ এক মুহূর্ত এটা। একটা পুরস্কার জিতলেন, যে পুরস্কার দাবার চৌকোনা বোর্ডে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি’—কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলেন মনন রেজা। উত্তর দিলেন খুবই ছোট্ট করে, ‘জি।’
এরপর তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো গত বছর তাঁর অর্জন ও সাফল্যের কথা। ২০২৪ সালে জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদের ৪৩ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে হয়েছেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক মাস্টার। ওপর–নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে এবার বললেন, ‘হুম।’
এসবই মনন করেছেন ১৫ বছরে পা রাখার আগে। এখনো তাঁর সামনে পুরো জীবন পড়ে আছে—দাবার বোর্ডে মনন আরও কত কী করবেন ভবিষ্যতের সেই জীবনে, এমন আলোচনা দেশের দাবার অঙ্গনে। সেই সম্ভাবনার কথা ভেবেই মননকে সিটি গ্রুপ–প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার ২০২৪–এর বর্ষসেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
মননের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী আর এখন কীই–বা চান?’ মনে হচ্ছিল, আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়া মনন নিশ্চয়ই গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার স্বপ্নের কথাই বলবেন, যেটা থেকে খুব বেশি দূরেও নন তিনি। কিন্তু মনন ওই প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘আমি তো অনেক কিছুই করতে চাই। কিন্তু চাইলেই তো আর পাওয়া যাবে না। এর জন্য পরিশ্রম করতে হবে। লাগবে অবকাঠামোগত সহযোগিতাও।’
মননের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, পাশে বসে ছিলেন অন্য এক খেলার বর্ষীয়ান এক ক্রীড়াবিদ। তিনি একটু অবাক হয়েই বলে উঠলেন, ‘ছেলেটা ওর বয়সের চেয়ে বড়!’
মনন রেজার হাতে পুরস্কার তুলে দেন ২০০৪ সালের উদীয়মান রাসেল মাহমুদ জিমি.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলও কি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে
১৫ বছর ধরে অনেক ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল আর সংগঠন মিলে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন।
এর ফলে হাসিনা সরকারের পতন হয় ও তিনি এবং তাঁর দলের কর্মীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এ পরিবর্তন শুধু একটা সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের ভয় ও দমনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সাহস, আশা ও গণতান্ত্রিক চেতনার একটি বড় জয় ছিল।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, কিছু গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনের সফলতাকে শুধু নিজের নামে দাবি করতে শুরু করে। কেউ কেউ বলতে থাকে, তাদের কারণেই সরকার পতন ঘটেছে। তাই তারাই ভবিষ্যতে ক্ষমতার একমাত্র ভাগীদার।
আবার কিছু ধর্মীয় বা আদর্শিক গোষ্ঠী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যারা আগে প্রকাশ্যে তেমন সক্রিয় ছিল না। এ ছাড়া কিছু নতুন দল, যারা আগে রাজনীতিতে খুব একটা পরিচিত ছিল না, তারাও হঠাৎ করে সামনে চলে এসেছে। তারা নিজেদের ‘নতুন শক্তি’, ‘ভিন্নধারার দল’ হিসেবে উপস্থাপন করে, কিন্তু তাদের আচরণে কখনো কখনো পুরোনো রাজনীতির কৌশলই দেখা যায়।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনা স্বৈরশাসকদের টিকে থাকার দুটি মূলমন্ত্রেই ব্যর্থ২২ আগস্ট ২০২৪এই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী একসঙ্গে থাকলেও আন্দোলনের পর তারা নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ করছে। এতে আন্দোলনের মূল চেতনা—জনগণের অধিকার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেন ধীরে ধীরে পেছনের দিকে চলে গেছে।
এ বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে, যাঁরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরাই কি আবার ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গিয়ে নতুন একধরনের স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেবেন?
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্ট, ২০২৪