২০২৪’র বিপ্লব লুটেরাদের লুটে খাওয়ার জন্য হয় নাই : ড. আব্দুল মঈন খান
Published: 9th, August 2025 GMT
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে, ইতিহাস কখনো ক্ষমা করে না। আজ আওয়ামীলীগ তাদের কুকর্মের জন্য আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ হয়েছে। তবুও তাদের অনুশোচনা নেই। আওয়ামীলীগ আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখছে, তারা পরাশক্তিকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে, কিন্তু তাদের আকাশ কুসুম স্বপ্ন কখনো বাস্ববায়ন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড.
তিনি বলেন, ২০২৪ সালে যে বিপ্লব সেই বিপ্লব কিন্তু লুটেরা দের লুটে খাওয়ার জন্য হয় নাই। সেই বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে পুনরায় একটি লুটেরা শ্রেণি তারা এই দেশকে আবার দখল করে এই দেশকে লুটেপুটে খাবে সেটা হতে পারে না। ছাত্র জনতা যারা জীবন দিয়েছিল তাদের প্রতি তাদের রক্তের প্রতি আমরা বিশ্বাসঘাতকতা যেন কোন অবস্থাতেই না করি। সে বিষয়ে আপনাদের প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে ।
শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া কলেজ অডিটোরিয়ামে বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধুরীর ১৩ম মৃত্যু বার্ষিকি উপলক্ষ্যে এক স্বরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় ডক্টর আব্দুল মঈন খান আরও বলেন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জিম্মি করে অর্থ পাচার ও লুটপাট করেছে শেখ পরিবার, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। বিগত সময়ে তারা পরিবারতন্ত্র কায়েম করেছে। আর পরিবারতন্ত্রের মাধ্যমে দেশের মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি দল গঠন করে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করবে।
বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না, বিএনপি সবসময় ধৈর্য্যের রাজনীতির শিক্ষা দেয়। রাজনীতিতে সহনশীলতা ও ভাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করাই বিএনপির লক্ষ্য। আগামী নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলে অতীতের মতো নীতির সাথে কখন আপোষ করবে না। সকল প্রকার অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে এবং অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা যদি কোন অন্যায় করি আমরা যদি কোন দুর্নীতি করি আমরা যদি কোন চাঁদাবাজি করি তাহলে কিন্তু শহীদের রক্ত বৃথা যাবে সেটা আপনাদের মনে রাখতে হবে। কাজেই আমাদের কাছে দেশবাসীর কি প্রত্যাশা সেদিকে আমাদের শ্রদ্ধা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সকলের রাজনীতি হবে সকলে একসাথে মিলেমিশে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে নতুন করে গড়ে তুলবো সেই রাজনীতি। আজকে আমি আপনাদের কাছে একটি অনুরোধ করবো। আসুন আমরা আওয়ামী লীগের হিংসা, রেশ, দমন, পিড়ন, মামলা ও হামলার রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করি।
তাদের সেই অত্যাচার নির্যাতন গুম খুন এইসব রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করি। আগামীতে বাংলাদেশে একটি একটি শান্তির রাজনীতি তৈরি করি এবং সে রাজনীতি যেন হয় মানুষের কল্যাণের জন্য।
তিনি মতিন চৌধুরীর স্বৃতিচারন করে বলেন, আধুনিক রূপগঞ্জ ও পুর্বাচল উপশহরের স্বপ্নদ্রষ্ট্রা ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরী। রূপগঞ্জের মানুষ এই পুর্বাচল উপশহর গড়ার বিরোধিতা করেছিলেন, তারা বুজতেই পারেনি এই পুর্বাচল একদিন আধুনিক শহর হবে।
আজ পুর্বাচলকে ঘিরেই আশপাশের এলাকায় কতশত উন্নয়নের মহাযঙ্গ চলছে। অথচ উপজেলার কোন স্থাপনায় মতিন চৌধুরীর নামফলক বা স্বৃতি চিহ্ন। এবিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
স্বরণসভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান মনির'র সভাপতিত্বে ও জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সদস্য সচিব এ্যাড আমিরুল ইসলাম ইমনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন, জেলা যুদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন, জেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান, জেলা কৃষক দলের সভাপতি শাহিন মিয়া, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হামিদুল হক খান, তারাবো পৌর যুবদলের সদস্য সচিব কাজী আহাদ, জেলা ছাত্রদল নেতা আবু মোহাম্মদ মাসুম প্রমুখ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ মত ন চ ধ র ব এনপ র স র র জন ত র সদস য র জন য দল র স
এছাড়াও পড়ুন:
ফারইস্ট লাইফের ৫৫ হাজার কর্মীর তথ্য পাচার, এই অভিযোগে আইডিআরএর সদস্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৫৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য পাচার করা হয়েছে। কোম্পানিটি সাবলাইন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য পাঠায়। দাবি করা হচ্ছে, এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই।
গত বছর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বদলের পর এ তথ্য পাচারের সন্ধান পায় প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আপেল মাহমুদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কোম্পানিটির বর্তমান কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত আপেল মাহমুদ নিজেই বর্তমানে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অপর দুই অভিযুক্ত হলেন ফারইস্ট লাইফে কর্মরত তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ লোকমান ফারুক ও সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ওসমান গনি। অজ্ঞাতনামা আরও আসামির কথা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
কোম্পানিটির পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি হিসেবে আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন ৪ আগস্ট সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর ১৯, ২১ ও ২২ ধারায় শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন।
জানতে চাইলে ফারইস্ট লাইফের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফকরুল ইসলাম গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোম্পানির বর্তমান পর্ষদের সিদ্ধান্তেই মামলা হয়েছে। সাবলাইন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আসামিরা তথ্য পাচার করেছেন। দেশি-বিদেশি কারও প্রতিষ্ঠানের কাছেও তাঁরা এ তথ্য বিক্রি করে থাকতে পারেন বলে আমাদের সন্দেহ।’
এত দিন পর মামলা করার কারণ জানতে চাইলে ফকরুল ইসলাম বলেন, এত দিন পর ধরতে পেরেছি। আর যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি সাবলাইন নামের কোনো কোম্পানি নেই। ফলে ধরে নেওয়া যায় এটি ভুয়া কোম্পানি।
ঘটনাটি একটু পেছন থেকে দেখতে হবে। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ অপসারণ করে নতুন ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মো. রহমত উল্লাহকে বানানো হয় চেয়ারম্যান। এ পর্ষদের দুই স্বতন্ত্র পরিচালক মো. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম ও বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হককে রাখা হয় পর্ষদে।
পরে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএসইসি। মোজাম্মেল হক ও রফিকুল ইসলামকে নতুন পর্ষদেও রাখা হয়। এ ছাড়া পর্ষদে নিয়োগ দেওয়া হয় বেক্সিমকো গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান ট্রেড নেক্সট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও জুপিটার বিজনেস লিমিটেডের মনোনীত প্রতিনিধি। বেক্সিমকো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে আসেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক শেখ মামুন খালেদ।
অন্যদের মধ্যে পর্ষদ সদস্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট ও রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক লাফিফা জামাল, বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, সাবেক সংস্কৃতিসচিব ইব্রাহিম হোসেন খান প্রমুখ। স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনীত হয়ে কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা হিসেবে পরিচিত শেখ কবির হোসেন। তথ্য পাচারের অভিযোগের ঘটনা এ পর্ষদের সময়ের। পটপরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে শেখ কবির হোসেন কোম্পানিটি থেকে পদত্যাগ করেন। কাছাকাছি সময়ে পদত্যাগ করেন অন্যরাও।
এজাহারে যা আছেমামলার এজাহারে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের তথ্যভান্ডারে প্রবেশ করে ৫৫ হাজার ৮৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সব গোপনীয় তথ্য সাবলাইন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ করেছেন। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক হিসাব, মুঠোফোল নম্বর, বেতন-ভাতা, কর্মচারীর পরিচিতি নম্বর ইত্যাদি। তথ্যগুলো সরবরাহ করায় ফারইস্ট লাইফের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবন ও সম্পদ হুমকির মধ্যে রয়েছে।
এজাহারে আপেল মাহমুদের পরিচয় কোম্পানির সাবেক সিইও দেওয়া হলেও বর্তমানে যে তিনি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য, তা উল্লেখ করা হয়নি। আপেল মাহমুদ আইডিআরএর সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর।
এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালের ২৭ মে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়ে তাঁরা বেআইনিভাবে কোম্পানির কম্পিউটারে প্রবেশ করে ৫৫ হাজার ৮৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যক্তিগত তথ্য সাবলাইন লিমিটেডের কাছে পাঠানোর জন্য সংগ্রহ করেন। সাবলাইনের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি আরও প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব তথ্য পাঠান আসামিরা।
আইডিআরএর সদস্য আপেল মাহমুদ গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ফারইস্ট লাইফের ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তখনকার পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তেই সাবলাইন লিমিটেডকে তথ্য দেওয়া হয়।
তবে আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন তা খণ্ডন করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবলাইনকে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে আমরা পর্ষদ সিদ্ধান্তের কোনো প্রমাণ পাইনি। প্রমাণ দেখাতে পারলে সাবেক সিইওর দায় কিছু কমবে বলে মনে হয়।’