কিশোরগঞ্জে কালীবাড়ী প্রাঙ্গণে মহালয়ার অনাড়ম্বর আয়োজন
Published: 21st, September 2025 GMT
‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, নমস্ত্যসৈ নমস্ত্যসৈ নমস্ত্যসৈ নমঃ নমঃ’- শ্রীচণ্ডীর এ শ্লোক উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে শ্রী শ্রী কালিবাড়ি কিশোরগঞ্জের আয়োজনে দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গার আগমনী আরাধনা- শুভ মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরে মা দুর্গার আগমনী বার্তায় এ আয়োজন করা হয়। এসময় শত শত দর্শনার্থী ও ভক্ত উপস্থিত ছিলেন কালীবাড়ি প্রাঙ্গণে।
আরো পড়ুন:
দুর্গাপূজায় প্রতিটি মণ্ডপে বিএনপির পাহারা থাকবে: দুলু
উৎসবমুখর পরিবেশে হবে দুর্গাপূজা: ডিএমপি কমিশনার
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শঙ্খ ধ্বনির মাধ্যমে শুরু হয় মহালয়ার প্রথম পর্ব। এরপর চন্ডিপাঠ, সমবেত সঙ্গীত, মাতৃ বন্দনা, সমবেত নৃত্য ও মহিষাসুর মর্দিনী- নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয়। মায়ের আগমনী বার্তা মহালয়ার এমন মনোমুগ্ধকর আয়োজনে ভক্তরা অনেক খুশি।
নৃত্য পরিচালক ধনেশ পণ্ডিত বলেন, “মায়ের আগমনীতে আমাদের এমন আয়োজন সকলের মাঝেই একটি বার্তা পৌছে দেয়। সেটি হচ্ছে, সকলের মাঝে সৌহার্দ্যতা-ভালোবাসা আর সংস্কৃতির সম্প্রীতি। মায়ের আগমনীবার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পেরে আমরাও অনেক খুশি হই। আমাদের এবারের আয়োজনে মহিষাসুর মর্দিনী- নৃত্যনাট্য দিয়েই মহালয়ার পর্ব শেষ হবে।”
শ্রী শ্রী কালীবাড়ির সভাপতি অসীম সরকার বাধন বলেন, “গত দুই বছর ধরে আমরা মহালয়ার আয়োজন করে আসছি। এবছর আরো অনাড়ম্বরভাবে মহালয়ার আয়োজনে করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রচুর ভক্ত ও দর্শনার্থীদের সমাগম হয়। ভক্তরা ভোর থেকেই মন্দির প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হন। জেলার শতাধিক শিল্পী স্বেচ্ছায় অংশ নিয়ে এই অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলেন।”
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত আজ থেকেই শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এই দিনটি সারা দেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে। মহালয়া উপলক্ষে মন্দির ও পূজা কমিটিগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
মহালয়ার ছয় দিন পর আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর শ্রী শ্রী দুর্গাষষ্ঠী। এর মাধ্যমেই মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্গাপূজা শুরু হবে। সেদিন দেবী দুর্গার ষষ্ঠাদি কল্পনারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা হবে। সেই সঙ্গে হবে দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। দুর্গোৎসবে ২৯ সেপ্টেম্বর হবে মহাসপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্টমী, ১ অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী।
শাস্ত্রমতে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া। এদিন আরো কিছু ধর্মীয় রীতি পালিত হতে দেখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো মৃত পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা। গঙ্গাতীরে দেখা যায় এমন আয়োজন। এ ছাড়া মন্দিরে মন্দিরে বেজে ওঠে শঙ্খধ্বনি। পুরোহিতদের শান্ত, অবিচল গম্ভীর কণ্ঠে শোনা যায় চণ্ডীপাঠ। এই মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে দেবতারা দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। তারা সমস্বরে দেবীকে আহ্বান জানান পৃথিবীর ঘোর অন্ধকার দূরীভূত করে মঙ্গল প্রতিষ্ঠায়। মহালয়ার সময় ঘোর অমাবস্যা থাকে। মহাতেজের আলোয় সেই অমাবস্যা দূর হয়। প্রতিষ্ঠা পায় শুভশক্তি।
দেবী দুর্গা দুর্গতিনাশিনী। হিন্দু সম্প্রদায় তাকে মহাশক্তির একটি রূপ মনে করেন। দেবী দুর্গার অনেকগুলি হাত। তার অষ্টাদশভূজা, ষোড়শভূজা, দশভূজা, অষ্টভূজা ও চতুর্ভূজা মূর্তিও দেখা যায়। তবে দশভূজা রূপটিই বেশি জনপ্রিয়। হিন্দুধর্মে দেবী দুর্গা পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ। হিন্দু পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে তিনি শিবের স্ত্রী পার্বতী, কার্তিক ও গণেশের জননী এবং কালীর অন্যরূপ।
এ বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকা/রুমন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উৎসব স প ট ম বর র আগমন মন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
মহালয়া উপলক্ষে গঙ্গার ঘাটে তর্পণ, মন্দিরে ভক্তদের ভিড়
পিতৃপক্ষের অবসান, দেবীপক্ষের শুরু। আজ রবিবার মহালয়া। আর মহালয়া মানেই দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়া।মহালয়া দুর্গতিনাশিনী দেবী দূর্গার আগমনী বার্তা। মহালয়া মানেই সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে চন্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গার মর্ত্যলোকে আগমনের আমন্ত্রণ জানানো। মন্দিরে-মন্দিরে পূজা দেওয়ার ভিড় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের।
এদিন স্থাপন করা হয় ঘট, করা হয় বিশেষ পূজা। অন্যদিকে, পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে মহালয়ার সকালে গঙ্গার ঘাটে-ঘাটে চলে তর্পণ। তর্পণের জন্য রবিবার সকাল থেকেই সাধারণ মানুষ ভিড় জমেছে গঙ্গাসহ এপার বাংলার বিভিন্ন নদীর ঘাটগুলোতে।
আরো পড়ুন:
তামান্না কী আধ্যাত্মিক মানুষ?
স্যামসনের ফিফটিতে ওমানকে ১৮৯ রানের টার্গেট দিল ভারত
‘মহালয়া’ শব্দটির অর্থ- মহান যে আলয় বা আশ্রয়। দেবী দুর্গাই হলেন সেই মহান আলয় বা আশ্রয়। এদিনই আক্ষরিক অর্থে দুর্গাপূজা শুরু হয়। কথিত আছে, মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। একই সঙ্গে শাস্ত্রমতে, এদিনই দেবীপক্ষের আগের কৃষ্ণা প্রতিপদে মর্ত্যধামে নেমে আসেন পিতৃপুরুষরা। অপেক্ষা করেন উত্তরসূরিদের কাছ থেকে জল পাওয়ার জন্য। মহালয়ার দিন পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে জলদানই তর্পণ।
কলকাতার দক্ষিণেশ্বর থেকে বাগবাজার, কুমারটুলি, আহিরিটোলা কিংবা বাবুঘাট- সকাল থেকেই ভিড় জমেছে কলকাতার বিভিন্ন ঘাটে। বিভিন্ন জেলার ঘাটগুলোর চিত্রও একই রকম। কোনো কোনো ঘাটে সকাল থেকেই তর্পণের জন্য পড়েছে লম্বা লাইন।
তর্পনের সময় দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্ক পুলিশ প্রশাসন। ড্রোনের মাধ্যমে চলছে নজরদারি। কোনোরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নদীপথে চলছে টলহদারি, প্রস্তুত রাখা হয়েছে রিভার ট্রাফিক পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যদেরও।
এদিকে, মহালয়ার আগের দিনই পূজা উদ্বোধনে নেমে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার তিনি শ্রীভূমি, টালা প্রত্যয়, হাতিবাগান সর্বজনীন সহ একাধিক বড় মণ্ডপের উদ্বোধন করেন। সূচনা হয়েছিল ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের হাতিবাগান সর্বজনীন থেকে। তবে মহালয়ার আগেই মণ্ডপ উদ্বোধন করা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানান, মাতৃমূর্তির উদ্বোধন তিনি তর্পণের আগে করেন না।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ