৪৪ উপজেলায় পাঠাগার করছে স্থানীয় সরকার, ফেসবুক থেকে জানতে পারে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র
Published: 21st, September 2025 GMT
দেশের ৪৪ উপজেলায় পাবলিক লাইব্রেরি নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই তথ্য প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে জানতে পারে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র।
পাঠাগার পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র বলছে, উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরির নির্মাণকাজে তাদের যুক্ত করা হয়নি। যুক্ত করলে ভালো হতো।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে ৪৪ উপজেলায় পাঠাগার নির্মাণের তথ্য জানতে পারেন তিনি। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র যেহেতু সারা দেশের বিভিন্ন পাঠাগারের সঙ্গে কাজ করে, তাই এই দুই প্রতিষ্ঠান বিষয়টি জানলে আরও ভালো হতো। এ ক্ষেত্রে এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ প্রয়োজন।
উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে নির্মাণাধীন লাইব্রেরিগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় গত জুনে। প্রতিটি লাইব্রেরি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ৫৩ লাখ টাকা। মোট বরাদ্দ ২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। লাইব্রেরিগুলোর পরিচালন ব্যয় পরবর্তী সময়ে নির্ধারিত হবে।
নির্মাণাধীন লাইব্রেরিগুলোর অধিকাংশ উপজেলা পরিষদ চত্বরের ভেতরে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা শাখা। অধিকাংশ স্থানের একতলা লাইব্রেরি ভবনের নির্মাণকাজ আগস্ট নাগাদ অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে নির্মাণাধীন লাইব্রেরিগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় গত জুনে। প্রতিটি লাইব্রেরি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ৫৩ লাখ টাকা। মোট বরাদ্দ ২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। লাইব্রেরিগুলোর পরিচালন ব্যয় পরবর্তী সময়ে নির্ধারিত হবে।পাঠক যাওয়া নিয়ে সন্দেহ-শঙ্কাদেশে সরকারি-বেসরকারি তালিকাভুক্ত (গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের) পাঠাগারের সংখ্যা এক হাজার ৬০০টির বেশি। পাঠাগারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদ্যমান তালিকাভুক্ত পাঠাগারগুলো পাঠকবান্ধব স্থানে অবস্থিত। কিন্তু উপজেলা পরিষদ চত্বরের লাইব্রেরিগুলোতে পাঠক খুব একটা যাবে বলে তাঁরা মনে করেন না। কারণ, সরকারি অফিস-স্থাপনার ভেতরের লাইব্রেরিতে পাঠক যেতে স্বস্তিবোধ করবে না। তা ছাড়া যেসব উপজেলায় তালিকাভুক্ত পাঠাগার আছে, সেখানে নতুন করে তা নির্মাণ না করলেও চলত। বরং পুরোনো পাঠাগার সংস্কার করলেই ভালো হতো।
কুড়িগ্রাম সদরে আগে থেকে আছে কুড়িগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরি। এখানকার লাইব্রেরিয়ান নয়ন সরখেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পাঠাগারটি অনেক দিনের পুরোনো। এখন দিনে ছয় থেকে সাতজন করে পাঠক আসেন। এর ২ কিলোমিটারের মধ্যে উপজেলা পরিষদে লাইব্রেরি হচ্ছে। এমনিতেই ব্যাক সাইডে বলে ওদিকে (উপজেলা পরিষদ) মানুষ কম যায়। বিদ্যমান লাইব্রেরিটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলেই ভালো হতো।’
বিভিন্ন পাঠাগারের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারি অফিস-স্থাপনার মধ্যে দিনের বেলায় সাধারণ মানুষ সাধারণত যেতে চায় না। সেখানে নির্মাণাধীন উপজেলায় পাবলিক লাইব্রেরিতে পাঠক কেন বই পড়তে যাবেন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা পরিষদ চত্বরে নির্মাণাধীন পাঠাগারে পাঠকের উপস্থিতি প্রত্যাশা করা চলে না। জনগণের টাকা খরচ হচ্ছে অহেতুক।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে দেখেছেন, কোথাও কোথাও শিক্ষার হার ৫০ শতাংশের কম। তাই সেসব উপজেলায় শিক্ষার হার বাড়াতে তাঁরা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই উদ্যোগের অংশ ৪৪ পাঠাগার নির্মাণ। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় করে তা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এই লাইব্রেরিগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ শিক্ষার্থীরা যাতে এখানে আসে, সে জন্য তাঁরা কাজ করছেন।
আমাদের পাঠাগারটি অনেক দিনের পুরোনো। এখন দিনে ছয় থেকে সাতজন করে পাঠক আসেন। এর ২ কিলোমিটারের মধ্যে উপজেলা পরিষদে লাইব্রেরি হচ্ছে। এমনিতেই ব্যাক সাইডে বলে ওদিকে (উপজেলা পরিষদ) মানুষ কম যায়। বিদ্যমান লাইব্রেরিটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলেই ভালো হতো।নয়ন সরখেল, কুড়িগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ানএকাধিক পাঠাগারগণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায়, ৪৪ উপজেলার মধ্যে ১৮টিতে আগে থেকে তালিকাভুক্ত পাঠাগার আছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বটতলী বাজার এলাকায় অক্সিজেন জ্ঞান সমৃদ্ধ কেন্দ্র নামে একটি পাঠাগার আছে। এর দেড় কিলোমিটার দূরে বানানো হচ্ছে উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি।
রংপুর সদরের পাবলিক লাইব্রেরির বয়স প্রায় ২০০ বছর। জরাজীর্ণ এই পাঠাগারে দিনে পাঠক আসেন মাত্র সাত থেকে আটজন। যত্নের অভাবে এটি পুরোপুরি ধ্বংস হতে চলছে। পাঠাগারটির তথ্যদানকারী কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছেই অবস্থিত সরকারি গণগ্রন্থাগারের বয়স চার দশকের বেশি। এখানে দুটি পাঠাগার থাকতে তৈরি হচ্ছে উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি। বরং পুরোনো পাঠাগারটি সংস্কার করলে ভালো হতো।’
তবে রংপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পাবলিক লাইব্রেরি তৈরি হওয়ায় স্থানীয় পাঠক-শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায়, ৪৪ উপজেলার মধ্যে ১৮টিতে আগে থেকেই তালিকাভুক্ত পাঠাগার আছে।কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় তৈরি করা হচ্ছে পাবলিক লাইব্রেরি। এর মধ্যে নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কাছাকাছি রয়েছে পাবলিক লাইব্রেরি, সাধারণ পাঠাগার।
দিনাজপুরের ১০ উপজেলায় পাবলিক লাইব্রেরি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫ উপজেলায় আগে থেকে পাঠাগার আছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর, নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় বিদ্যমান পাঠাগারের কাছাকাছি স্থানে তৈরি হচ্ছে উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ উপজেলা পরিষদ শাখা দেখেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উপদেষ্টার বিশেষ বরাদ্দের কোটা থেকে এই লাইব্রেরিগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি লাইব্রেরিতে ৫০ থেকে ৬০ জন করে পাঠক একসঙ্গে বসে পড়তে পারবে। ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য উপজেলায় এমন লাইব্রেরি হতে পারে।
বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও শিক্ষার হার ৫০ শতাংশের কম। তাই এসব উপজেলায় শিক্ষার হার বাড়াতে তাঁরা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই উদ্যোগের অংশ ৪৪ পাঠাগার নির্মাণ। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় করে তা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে।আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাসংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে চিঠিপত্রিকায় উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি নির্মাণের খবর দেখে এ বিষয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনীষ চাকমা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কিছু বই রেখে বুক কর্নার তৈরি করা আর পাঠকের জন্য পাঠাগার তৈরির মধ্যে পার্থক্য আছে। তাঁরা সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন। বলেছেন, পাঠাগার তৈরির কাজের সঙ্গে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরকে যুক্ত করলে পাঠকসেবার মান বাড়বে। এ জন্য আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় সারপুকুর যুব ফোরাম পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১১ বছর আগে। তালিকাভুক্ত এই পাঠাগারের সভাপতি মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র প রথম আল ক উপজ ল য় প ৪৪ উপজ ল উপজ ল র ন উপজ ল উপদ ষ ট র পর চ র জন য বর দ দ উদ য গ
এছাড়াও পড়ুন:
টেপরির গল্প
আমার ছোট বোন টেপরি যখন জন্ম নিল, তখন বাংলা সিনেমার চিরায়ত সেই দুটি অপশন আমাদের সামনে চলে এল। ‘আম্মা নাকি টেপরি?’ অর্থাৎ সেদিন হাসপাতালে কোনো টেরিবেরি হয়ে গেলে আজ টেপরির জন্মদিনটাই আম্মার নিরস মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিণত হতে পারত।
জন্মের সময় টেপরির নাক প্রচলিত অর্থে বোঁচা ছিল। এই কারণেই আমি এই নাম রেখেছিলাম দুষ্টামি করে। জন্মের পর ওর গায়ের রং শ্যামলা ছিল, চুল ছিল কোঁকড়ানো। এই তথ্য গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পর দাদি মরাকান্না জুড়িয়ে দিলেন।
আমরা বুঝতেই পারছিলাম না, দাদির এই কান্নার কারণ কী! তারপর জানা গেল, ‘শ্যামলা মেয়েকে কেউ বিয়ে করে না’; ‘কোঁকড়ানো চুলের মেয়েদের স্বামীকপাল মন্দ হয়’...মূলত এসব ছাইভষ্ম ভেবে দাদি গঙ্গাকে আরও জলবতী করবার ব্রত নিয়েছিলেন।
মেয়ে ‘কালো’ নাকি ফরসা—এই বিষয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের ১১৪ নম্বর কেবিনের আশেপাশে ঘোরাফেরা করা কয়েক শ বছরের এক বৃদ্ধা আয়া আঙুল তুলে বললেন, ‘এই ম্যায়ার চুল পাতলা হইব, মাথার তালু ফরসা, মুখে-চোখে-গতরে কালা দাগগুনি সব প্যাটের ময়লা। ফুটব ফুটব গায়ের রং ফুটব!’
টেপরি বড় হতে থাকল, সেই শতবর্ষী আয়ার কথামতো আজ টেপরির চুলগুলোতে কেমন মিষ্টি অথচ আঁশটে গন্ধ, আর গায়ের রং? ওর গায়ের রং রুই মাছের ডিমের মতো, যখন তা ঢিমে আঁচে রান্না করা হয় সাত–আটটা কাঁচা মরিচের ভাপে।
এসব বাহ্যিক রূপবৈচিত্র্যের বাইরেও ও টেপরি, যে কিনা সকালে দাঁত মাজা বাদ দিয়ে আম্মার পাশে একটা ছোট বঁটি নিয়ে পেঁয়াজের পর পেঁয়াজ, রসুনের পর রসুন দফারফা করে।
এই তো কিছুদিন আগেও, মাহমুদুল হকের ‘জীবন আমার বোন’ পড়ার পর টেপরির সঙ্গে অনেক দিন কথা বলিনি। বলতে পারিনি। আমার ভেতর তখন কী হয়েছিল আমি আজও বুঝিনি। উপন্যাসে ছোট বোন রঞ্জু মারা গিয়েছিল। আর তার ভাই ‘খোকা’ ভেসে গিয়েছিল দেশ নামের একটা পুকুরের অনেক গভীরে। হয়তো এই দেশকে আমারও তখন একটা পুকুর মনে হয়েছিল।
একুশ মে, বারটা এক, একটা ছোট্ট কেক, আমরা চারজন। দেশলাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে মোমবাতিগুলো কেকের ওপর চোখ বন্ধ করে বসে ছিল নাগা সন্ন্যাসীদের মতো। কেকের ওপর আমার দেওয়া ‘টেপরি’ নামটাই লেখার কথা ছিল, কিন্তু সেটা বানান ভুল হয়ে ‘পেটরি’ হয়ে গেছে। এত চ্যুতি–বিচ্যুতির ভেতর আব্বা কেক মুখে নিয়ে বলে, ‘মা, তোমার হাত ধোয়া ছিল তো?’
পরিবারের আত্মীয় নাম্নী লোকেরা টেপরির জন্মদিনের কথা জানে নাকি জানে না, আমি জানি না। খেয়াল করলাম, তেমন কেউই টেপরিকে বারটায় কিংবা বারটা একে, এমনকি তিরিশেও উইশ করল না। এমন সময়ে টেপরির মোবাইলে একটা মেসেজ এল, কিন্তু সেটাও টেলিকম কোম্পানি থেকে। টেপরিও এসব বুঝে যাবে...এদের সবাইকে চিনে যাবে একদিন।
টেপরির ব্যাপারে একটা–দুটো বাক্য বলা অসম্ভব। সে হয়তো সেই বোনটা, যে টেলিফোনের অন্য পাশে বসে তার রাগের মাথায় ঘরছাড়া ভাইকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য হু হু করে কাঁদে।
অকারণ এই কান্নাপর্ব আমার যাপিত সময়ে সশস্ত্র হামলা করে, দেখি অপু আর দুর্গা কাশবনে ছুটছে, দূরে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে হারিয়ে যাচ্ছে রেলগাড়ি।
টেপরি বড় হয়ে গেল। বিস্ময়কর একটা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে কিশোরী থেকে তরুণী আর তারপর আরও ধীরে ধীরে ধীরে কোনো এক ‘নারী’ হয়ে উঠল ও।
আমি ওকে দেখি আর ভাবি, বিকেলের পর বিকেল। দেব দেব করে কোনো একটা বড়সড় গিফট আর দেওয়া হয়ে ওঠে না। এই মন ভোলানো ভাবনাগুলোই ওকে গিফট হিসেবে দেওয়া গেলে ভালো হতো।
কিন্তু এসব ভাবতে ভাবতে দাদির দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে টেপরির বিয়েটাও হয়ে গেল। আম্মার শরীর খারাপ থেকে খারাপতর হওয়ায় নিজের বিয়ের কাজও ওকেই করতে হলো।
বিয়ের আগের সময়গুলোতে আমাদের প্রিয় আব্বা হঠাৎ এক–দেড় মাসেই অনেকটুকু বুড়িয়ে গেলেন। ধীরে ধীরে আমি বুঝলাম, আব্বা ইস্পাত কঠিন হলে এই একটা মাত্র বিষয়ে উনি প্রচণ্ড অসহায়বোধ করেন। বাবা–মেয়ের সম্পর্কটাই হয়তো এমন।
টেপরি এখন দূরে চলে যাবে আমাদের কাছ থেকে। আমাদের বাসাটা ‘পাখিহীন’ হয়ে কীভাবে টিকে থাকবে; আমি অফিসের ফাঁকে, রাস্তার জ্যামে, সিনেমা হলে সিনেমা শেষ হওয়ার পর, নদীর পাড়ের বাতাসে কিংবা মধ্যরাতের ছাদে হঠাৎ-বিঠাৎ সেইটাই ভাবি।