দেশের ৪৪ উপজেলায় পাবলিক লাইব্রেরি নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই তথ্য প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে জানতে পারে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র।

পাঠাগার পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র বলছে, উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরির নির্মাণকাজে তাদের যুক্ত করা হয়নি। যুক্ত করলে ভালো হতো।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে ৪৪ উপজেলায় পাঠাগার নির্মাণের তথ্য জানতে পারেন তিনি। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র যেহেতু সারা দেশের বিভিন্ন পাঠাগারের সঙ্গে কাজ করে, তাই এই দুই প্রতিষ্ঠান বিষয়টি জানলে আরও ভালো হতো। এ ক্ষেত্রে এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ প্রয়োজন।

উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে নির্মাণাধীন লাইব্রেরিগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় গত জুনে। প্রতিটি লাইব্রেরি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ৫৩ লাখ টাকা। মোট বরাদ্দ ২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। লাইব্রেরিগুলোর পরিচালন ব্যয় পরবর্তী সময়ে নির্ধারিত হবে।

নির্মাণাধীন লাইব্রেরিগুলোর অধিকাংশ উপজেলা পরিষদ চত্বরের ভেতরে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা শাখা। অধিকাংশ স্থানের একতলা লাইব্রেরি ভবনের নির্মাণকাজ আগস্ট নাগাদ অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে নির্মাণাধীন লাইব্রেরিগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় গত জুনে। প্রতিটি লাইব্রেরি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ৫৩ লাখ টাকা। মোট বরাদ্দ ২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। লাইব্রেরিগুলোর পরিচালন ব্যয় পরবর্তী সময়ে নির্ধারিত হবে।পাঠক যাওয়া নিয়ে সন্দেহ-শঙ্কা

দেশে সরকারি-বেসরকারি তালিকাভুক্ত (গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের) পাঠাগারের সংখ্যা এক হাজার ৬০০টির বেশি। পাঠাগারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদ্যমান তালিকাভুক্ত পাঠাগারগুলো পাঠকবান্ধব স্থানে অবস্থিত। কিন্তু উপজেলা পরিষদ চত্বরের লাইব্রেরিগুলোতে পাঠক খুব একটা যাবে বলে তাঁরা মনে করেন না। কারণ, সরকারি অফিস-স্থাপনার ভেতরের লাইব্রেরিতে পাঠক যেতে স্বস্তিবোধ করবে না। তা ছাড়া যেসব উপজেলায় তালিকাভুক্ত পাঠাগার আছে, সেখানে নতুন করে তা নির্মাণ না করলেও চলত। বরং পুরোনো পাঠাগার সংস্কার করলেই ভালো হতো।

কুড়িগ্রাম সদরে আগে থেকে আছে কুড়িগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরি। এখানকার লাইব্রেরিয়ান নয়ন সরখেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পাঠাগারটি অনেক দিনের পুরোনো। এখন দিনে ছয় থেকে সাতজন করে পাঠক আসেন। এর ২ কিলোমিটারের মধ্যে উপজেলা পরিষদে লাইব্রেরি হচ্ছে। এমনিতেই ব্যাক সাইডে বলে ওদিকে (উপজেলা পরিষদ) মানুষ কম যায়। বিদ্যমান লাইব্রেরিটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলেই ভালো হতো।’

বিভিন্ন পাঠাগারের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারি অফিস-স্থাপনার মধ্যে দিনের বেলায় সাধারণ মানুষ সাধারণত যেতে চায় না। সেখানে নির্মাণাধীন উপজেলায় পাবলিক লাইব্রেরিতে পাঠক কেন বই পড়তে যাবেন?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা পরিষদ চত্বরে নির্মাণাধীন পাঠাগারে পাঠকের উপস্থিতি প্রত্যাশা করা চলে না। জনগণের টাকা খরচ হচ্ছে অহেতুক।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে দেখেছেন, কোথাও কোথাও শিক্ষার হার ৫০ শতাংশের কম। তাই সেসব উপজেলায় শিক্ষার হার বাড়াতে তাঁরা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই উদ্যোগের অংশ ৪৪ পাঠাগার নির্মাণ। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় করে তা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এই লাইব্রেরিগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ শিক্ষার্থীরা যাতে এখানে আসে, সে জন্য তাঁরা কাজ করছেন।

আমাদের পাঠাগারটি অনেক দিনের পুরোনো। এখন দিনে ছয় থেকে সাতজন করে পাঠক আসেন। এর ২ কিলোমিটারের মধ্যে উপজেলা পরিষদে লাইব্রেরি হচ্ছে। এমনিতেই ব্যাক সাইডে বলে ওদিকে (উপজেলা পরিষদ) মানুষ কম যায়। বিদ্যমান লাইব্রেরিটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলেই ভালো হতো।নয়ন সরখেল, কুড়িগ্রাম পাবলিক লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ানএকাধিক পাঠাগার

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায়, ৪৪ উপজেলার মধ্যে ১৮টিতে আগে থেকে তালিকাভুক্ত পাঠাগার আছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বটতলী বাজার এলাকায় অক্সিজেন জ্ঞান সমৃদ্ধ কেন্দ্র নামে একটি পাঠাগার আছে। এর দেড় কিলোমিটার দূরে বানানো হচ্ছে উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি।

রংপুর সদরের পাবলিক লাইব্রেরির বয়স প্রায় ২০০ বছর। জরাজীর্ণ এই পাঠাগারে দিনে পাঠক আসেন মাত্র সাত থেকে আটজন। যত্নের অভাবে এটি পুরোপুরি ধ্বংস হতে চলছে। পাঠাগারটির তথ্যদানকারী কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছেই অবস্থিত সরকারি গণগ্রন্থাগারের বয়স চার দশকের বেশি। এখানে দুটি পাঠাগার থাকতে তৈরি হচ্ছে উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি। বরং পুরোনো পাঠাগারটি সংস্কার করলে ভালো হতো।’

তবে রংপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পাবলিক লাইব্রেরি তৈরি হওয়ায় স্থানীয় পাঠক-শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায়, ৪৪ উপজেলার মধ্যে ১৮টিতে আগে থেকেই তালিকাভুক্ত পাঠাগার আছে।

কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় তৈরি করা হচ্ছে পাবলিক লাইব্রেরি। এর মধ্যে নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কাছাকাছি রয়েছে পাবলিক লাইব্রেরি, সাধারণ পাঠাগার।

দিনাজপুরের ১০ উপজেলায় পাবলিক লাইব্রেরি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫ উপজেলায় আগে থেকে পাঠাগার আছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর, নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় বিদ্যমান পাঠাগারের কাছাকাছি স্থানে তৈরি হচ্ছে উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি।

স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ উপজেলা পরিষদ শাখা দেখেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উপদেষ্টার বিশেষ বরাদ্দের কোটা থেকে এই লাইব্রেরিগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি লাইব্রেরিতে ৫০ থেকে ৬০ জন করে পাঠক একসঙ্গে বসে পড়তে পারবে। ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য উপজেলায় এমন লাইব্রেরি হতে পারে।

বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও শিক্ষার হার ৫০ শতাংশের কম। তাই এসব উপজেলায় শিক্ষার হার বাড়াতে তাঁরা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই উদ্যোগের অংশ ৪৪ পাঠাগার নির্মাণ। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় করে তা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে।আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাসংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে চিঠি

পত্রিকায় উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি নির্মাণের খবর দেখে এ বিষয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনীষ চাকমা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কিছু বই রেখে বুক কর্নার তৈরি করা আর পাঠকের জন্য পাঠাগার তৈরির মধ্যে পার্থক্য আছে। তাঁরা সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন। বলেছেন, পাঠাগার তৈরির কাজের সঙ্গে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরকে যুক্ত করলে পাঠকসেবার মান বাড়বে। এ জন্য আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় সারপুকুর যুব ফোরাম পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১১ বছর আগে। তালিকাভুক্ত এই পাঠাগারের সভাপতি মো.

জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরিটি তৈরি হচ্ছে শিক্ষা অফিস, সমাজসেবা অফিস ও ইউএনও বাংলোর মাঝখানে। সাধারণ পাঠকসহ শিক্ষার্থীরা সেখানে যাবেন না বলেই আমার ধারণা।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র প রথম আল ক উপজ ল য় প ৪৪ উপজ ল উপজ ল র ন উপজ ল উপদ ষ ট র পর চ র জন য বর দ দ উদ য গ

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিসে মাস্টার্স, সুযোগ বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগে ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষে এক বছর মেয়াদি (দুই সেমিস্টার) প্রফেশনাল মাস্টার্স ইন ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস প্রোগ্রামে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

দরকারি তথ্য
১. এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম।
২. আইনজীবী, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য ও ক্রাইম রিপোর্টারদের আবেদন করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

ভর্তি যোগ্যতা
১. বাংলাদেশি ও বিদেশি উভয় নাগরিকের জন্য ভর্তি উন্মুক্ত।
২. যাঁদের কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি ও ন্যূনতম সিজিপিএ ২.৫০ (৪.০০–এর মধ্যে) বা সমমানের।
৩. যেকোনো পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণি বা বিভাগ পাওয়া আবেদনকারীরা আবেদন করতে পারবেন না।

আরও পড়ুনপ্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকেরা ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে পাচ্ছেন উচ্চতর স্কেল ২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনঅক্সফোর্ড–কেমব্রিজ নেই সেরা তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে, ৩২ বছরে প্রথম ঘটনা২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫বাংলাদেশি ও বিদেশি উভয় নাগরিক প্রফেশনাল মাস্টার্স ইন ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ