৪৬ জিম্মির ছবি প্রকাশ হামাসের, সবগুলোয় লেখা ‘রন আরাদ’
Published: 21st, September 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় এখনো বন্দী থাকা জিম্মিদের ছবি প্রকাশ করেছে হামাস। এগুলোকে ‘বিদায়কালীন’ ছবি বলে উল্লেখ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির সামরিক শাখা। হামাসের ভাষ্যমতে, ইসরায়েল যদি গাজা নগরীতে স্থল অভিযান চালিয়ে যায়, তাহলে এই জিম্মিরা বিপদের মধ্যে পড়বেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। ইসরায়েল থেকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় ২৫১ জনকে। ইসরায়েলি বাহিনীর তথ্যমতে, তাঁদের মধ্যে ৪৭ জন এখনো গাজায় রয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ জন মারা গেছেন। ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় নৃশংস হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গতকাল শনিবার বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে ৪৬ জিম্মির ছবি প্রকাশ করে হামাস। প্রতিটি ছবিতে রন আরাদের নাম লেখা ছিল। রন ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর একজন পাইলট। ১৯৮৬ সালে লেবাননে গৃহযুদ্ধের সময় তাঁর যুদ্ধবিমান দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ভূপাতিত হয়। তাঁকে লেবাননের শিয়া গোষ্ঠীগুলো আটক করেছিল বলে ধারণা করা হয়। পরে তাঁর আর কোনো খোঁজ মেলেনি। মরদেহও পায়নি ইসরায়েল।
টেলিগ্রামে ওই পোস্টে ছবিগুলোর পাশে হামাসের সামরিক শাখা আল–কাসেম ব্রিগেড লিখেছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমি এবং সেনাপ্রধান ইয়াল জমিরের নতি স্বীকার করার কারণে গাজা নগরীতে অভিযান শুরুর সময় এই বিদায়ী ছবিগুলো তোলা হয়েছিল। তবে এই জিম্মিদের কতজন মারা গেছেন বা জীবিত আছেন, তা পোস্টে উল্লেখ করা হয়নি।
আরও পড়ুনফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া৩ ঘণ্টা আগেগাজায় চলমান নৃশংসতার মধ্যেই গত মঙ্গলবার থেকে গাজা নগরীতে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এর পর থেকে সেখানে তীব্র হামলা চালানো হচ্ছে। শহর এলাকাটি থেকে পালিয়েছেন সাড়ে ৪ লাখ ফিলিস্তিনি। এই স্থল অভিযানের বিরোধিতা করে আসছেন জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের মতে, এতে জিম্মিদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। একই কথা সেনাপ্রধান ইয়াল জমিরেরও।
এদিকে আজ রোববারও গাজা নগরীর বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এদিন সেখানে অন্তত ৩১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা এক নারী ও তাঁর দুই শিশুসন্তান। ওই নারীর শ্বশুর মোসাল্লাম আল–হাদাদ রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার পুত্রবধূ, তার ছেলে, মেয়ে ও গর্ভে থাকা সন্তান, সবাইকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। আর আমার ছেলের অবস্থা গুরুতর।’
আরও পড়ুনগাজায় জাতিসংঘ কেন এত অক্ষম, এত অসহায়৮ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে চালাতে হবে সাইকেল
সাইকেল চালানো শরীরের জন্য ভালো। পকেটের ওপরও চাপ কমায়। সম্প্রতি করা এক গবেষণায় সাইকেল চালানোর উপকারিতার তালিকা আরও দীর্ঘ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, চলাচলের জন্য কেউ যদি গাড়ির বদলে সাইকেল বেছে নেন, তবে তা মস্তিষ্কের বিভিন্ন জটিলতা কমানোর ক্ষেত্রেও বেশ কাজে আসে।
এই গবেষণা করেছে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য গবেষণাবিষয়ক তথ্যের সবচেয়ে বড় ভান্ডার ‘ইউকে বায়োব্যাংক’। সম্প্রতি গবেষণাটি জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেন সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রাইভেট কার, বাস, ট্রেনে ভ্রমণের চেয়ে সাইকেল ব্যবহার করলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ১৯ শতাংশ এবং আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমে।
ডিমেনশিয়া বলতে মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি, স্মৃতিশক্তি ও কাজ করার ক্ষমতা হ্রাসকে বোঝায়। বিভিন্ন রোগের কারণে ডিমেনশিয়া হতে পারে। এমন একটি রোগ হলো আলঝেইমার। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার (এনএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, মস্তিষ্কের কোষের ভেতরে ও আশপাশে অস্বাভাবিকভাবে প্রোটিন জমলে আলঝেইমার হতে পারে।
এই গবেষণায় ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ অংশ নেন। তাঁদের গড় বয়স ছিল সাড়ে ৫৬ বছর। গবেষণায় যাতায়াতের চারটি বিকল্প তুলে ধরা হয়। অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়—বিগত চার সপ্তাহে যাতায়াতের জন্য তাঁরা কোন বিকল্পটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন।
যাতায়াতের ওই বিকল্পগুলোর মধ্যে ছিল—একেবারেই সক্রিয় না থাকা, অর্থাৎ বাস বা ট্রেনে করে যাতায়াত করা। আরেকটি ছিল হেঁটে যাতায়াত। তৃতীয় বিকল্পটি ছিল হাঁটা ও সক্রিয় থাকা লাগে না—এমন সব মাধ্যম ব্যবহার করে যাতায়াত। আর শেষ ধরনটি ছিল সাইকেল চালিয়ে এবং অন্য ধরনগুলো ব্যবহার করে যাতায়াত।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের যাতায়াতের ধরনগুলো নির্বাচন করার ১৩ বছরের বেশি সময় পর দেখা যায়, ৮ হাজার ৮৪৫ জনের মস্তিষ্কে ডিমেনশিয়া দেখা দিয়েছে। আর ৩ হাজার ৯৫৬ জন আলঝেইমারে আক্রান্ত। এ ছাড়া যাঁরা যাতায়াতের ক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটির ওপর ভরসা করেন, তাঁদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৬ শতাংশ কম।
গবেষণায় সাইকেল চালানোর ফলে ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমারের ঝুঁকি কমার প্রমাণও পাওয়া গেছে। এ–ও দেখা গেছে যে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস নামক অংশের তুলনামূলক বড় আয়তনের সঙ্গে সাইকেল চালানোর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মস্তিষ্কের এই অংশে স্মৃতি সংরক্ষণ থাকে এবং কোনো কিছু শেখার সঙ্গে জড়িত।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটির স্নায়ুবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জো ভারগেস বলেন, দশকের পর দশক ধরে চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়াম মস্তিষ্কের জন্য ভালো। সাইকেল চালানো হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে এবং মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ও পরিপাকের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে করে হয়তো ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে। তবে কেউ যদি সাইকেল চালানো শুরু করতে চান, তাহলে আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। দেখে নিতে হবে তিনি এখনই সাইকেল চালানো শুরু করার জন্য যথেষ্ট সুস্থ কি না। নাকি এর জন্য আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।