অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, আল-কোরআন পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান। নবীজির দিকনির্দেশনায় সেই সময়েও নারীর অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।

রোববার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্‌যাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ধর্ম উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সিরাতে রাসুল (সা.

) এক কালজয়ী আদর্শ। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শের আলোকে সমগ্র পৃথিবী আলোকিত হয়েছিল, জাহেলিয়াতের অন্ধকার দূর হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজকের যুগে আমরা বাইরের আচার-আচরণ ও বাহ্যিক জ্ঞানার্জনে যতটা মনোযোগী, অন্তরের চালচলন ও জীবনধারায় সিরাত ও সুন্নতের প্রভাব ততটা প্রতিফলিত হচ্ছে না।’

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাদর্শ ও চরিত্র থেকে আমরা কতটা শিক্ষা গ্রহণ করছি এবং কতটা তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হচ্ছি—এই আয়োজন তারই প্রতিফলন। আমাদের শিক্ষার্থীরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। মহানবী (সা.) বলেছেন, “জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলিম নর–নারীর জন্য জরুরি।” তাই জ্ঞানচর্চার মাধ্যমেই আমাদের জীবন হবে সমৃদ্ধ। নবীর আদর্শকে অনুসরণ করলে সততাই আমাদের শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মো. রইছ উদ্‌দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ সাবিনা শরমীন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. মোশাররাফ হোসেন।

প্রথমবারের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্‌যাপন করেছে। অনুষ্ঠানে বিজয়ী প্রতিযোগী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণের পর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

হজরত আদম (আ.) এবং পৃথিবীতে তাঁর প্রথম আবাস

আমাদের এই পৃথিবীতে মানবজাতির ইতিহাস শুরু হয়েছিল নবী হজরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালা যখন ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করলেন, ‘আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে যাচ্ছি,’ তখনই মূলত সূচনা ঘটে মানব ইতিহাসের। ফেরেশতারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আপনি কি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে সেখানে ঝগড়া-ফাসাদ ও রক্তপাত ঘটাবে?’

আল্লাহ তায়ালা তখন বলেন, ‘আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।’ (সুরা বাকারা, ৩০-৩৪)

কোরআনে উল্লেখ আছে, আল্লাহ তাঁকে সৃষ্টি করেছেন ‘শুষ্ক কাদামাটি থেকে, যা রূপান্তরিত হয়েছিল কালচে শুকনো মাটিতে।’ (সুরা হিজর, ২৬)

আল্লাহ নিজ হাতে আদম (আ.)-এর অবয়ব তৈরি করেন, তাতে প্রাণ ফুঁকে দেন এবং ফেরেশতাদের আদেশ করেন তাকে সেজদা করতে।

আল্লাহ নিজ হাতে আদম (আ.)-এর অবয়ব তৈরি করেন, তাতে প্রাণ ফুঁকে দেন এবং ফেরেশতাদের আদেশ করেন তাকে সেজদা করতে। সকল ফেরেশতা তাকে সেজদা করলেও শয়তান অহংকারের কারণে তা অস্বীকার করে এবং চিরকালীন অভিশপ্ত হয়ে যায়। এই অহংকার-অবাধ্যতার প্রতিচ্ছবি পরবর্তীকালে মানবজীবনের পরীক্ষার অংশ হয়ে যায়। (সুরা হিজর-এর ব্যাখ্যা, তাফসিরে তাবারি)

জান্নাতে আদম (আ.) শান্তি ও আনন্দে জীবনযাপন করছিলেন। আল্লাহ তাঁর জন্য সঙ্গী হিসেবে সৃষ্টি করলেন হাওয়া (আ.)-কে। উভয়েই জান্নাতের ফলভরা বাগানে নির্ভাবনায় ছিলেন, যতক্ষণ না শয়তান তাঁদের প্রতারণায় ফেলে দেয়। শয়তান আল্লাহর নিষেধ করা গাছের ফল খেতে প্রলুব্ধ করে। ফলে তাদের জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়।

আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সবাই নামো পৃথিবীতে, একে অপরের শত্রু হিসেবে। সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে বাসস্থান ও জীবিকা কিছু সময়ের জন্য।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ২৪)

আরও পড়ুনআদম (আ.)–কে যে দোয়া শিখিয়ে দেন আল্লাহ ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থের ভাষ্যমতে, আদম (আ.) অবতরণ করেন পৃথিবীর দক্ষিণ প্রান্তে, বর্তমান শ্রীলঙ্কার সেরেন্দিব বা আদম ’স পিক নামক এক পাহাড়ে। ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে ইমাম তাবারি ও ইবনে কাসিরের বর্ণনা অনুযায়ী, আদম (আ.)-এর পায়ের ছাপ সেই পাহাড়ের চূড়ায় দীর্ঘকাল ধরে মুসলিম, বৌদ্ধ ও হিন্দু ঐতিহ্যে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে হাওয়া (আ.) অবতরণ করেন আরবের জেদ্দা শহরে, যার নামের অর্থই ‘দাদি’। ইসলামি ইতিহাসবিদ ইমাম সুয়ুতি উল্লেখ করেন, বহুদিন পর তাঁদের পুনর্মিলন ঘটে মক্কার নিকটে আরাফাতের ময়দানে। সে কারণেই এ স্থানটির নাম ‘আরাফাত’, যার অর্থ ‘পরিচিত হওয়া’। (ইমাম তাবারি, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক; ইমাম ইবনে কাসির, কাসাসুল আম্বিয়া; ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানসুর)

পৃথিবীতে এসে আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) মানবজীবনের প্রথম অধ্যায় রচনা করেন। আল্লাহ তাদের কৃষিকাজ, পোশাক তৈরির জ্ঞান এবং পারস্পরিক সহাবস্থানের শিক্ষা দেন। ইবনে কাসির (রহ.) বর্ণনা করেন, আদম (আ.) ছিলেন প্রথম নবী ও প্রথম শিক্ষক যিনি তার সন্তানদের আল্লাহর একত্ববাদ ও ন্যায়পরায়ণতার শিক্ষা দিতেন।

মানবজাতির প্রথম সংঘাতও ঘটে তাদের সন্তান কাবিল ও হাবিলের মাধ্যমে। এই ঘটনাই মানবসমাজে ন্যায়বিচার ও অনুশোচনার প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে গৃহীত হয়। (সুরা মায়িদাহ, ২৭–৩১; তাফসিরে ইবনে কাসির; ইমাম নববি, শারহে মুসলিম)

আরও পড়ুনআদম-হাওয়া (আ.)-এর বিয়ে ও সন্তান১৭ নভেম্বর ২০২৪মানবজাতির প্রথম সংঘাতও ঘটে তাদের সন্তান কাবিল ও হাবিলের মাধ্যমে। এই ঘটনাই মানবসমাজে ন্যায়বিচার ও অনুশোচনার প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে গৃহীত হয়।

কোনো কোনো তাফসিরকার উল্লেখ করেছেন, আদম (আ.) পরবর্তীতে মক্কা অঞ্চলে চলে আসেন এবং সেখানে প্রথম ইবাদতের ঘর বাইতুল্লাহ নির্মাণ করেন। ইমাম ইবনে কাসির ও ইমাম কুরতুবির মতে, এই ঘরটি পৃথিবীর প্রথম ইবাদত কেন্দ্র, যা পরে নবী ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) পুননির্মাণ করেন। (ইবনে কাসির, কিসাসুল আম্বিয়া; কুরতুবি, তাফসিরে সুরা আল-বাকারা)

ইসলামি বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী যদিও পৃথিবীতে আদম (আ.)-এর পদচিহ্ন সম্পর্কিত স্থানগুলোর নির্দিষ্ট কোনো ভিত্তি নেই, তবু শ্রীলঙ্কার আদম’স পিক এখনো বহু মুসলমানের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত। অন্যান্য ধর্মের মানুষও এ স্থানকে পবিত্রজ্ঞান করে থাকে।

জেদ্দায় হাওয়া (আ.)-এর সমাধিস্থল হিসেবে পরিচিত স্থানের ঐতিহ্য ইসলামি ঐতিহাসিক সূত্রে বিদ্যমান, যদিও আধুনিক কালে তা চিহ্নিত নয়। আরাফাত ময়দান আজও হজের অন্যতম কেন্দ্র; যেখানে লক্ষ লক্ষ মুসলমান আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর পুনর্মিলনের স্মৃতিতে দাঁড়িয়ে তাওবা করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে।

আরও পড়ুনহজরত আদম (আ.) বিশ্বের প্রথম নবী০৭ জানুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হজরত আদম (আ.) এবং পৃথিবীতে তাঁর প্রথম আবাস
  • সময়মতো চূড়ান্ত প্রার্থী তা‌লিকা ঘোষণা কর‌বে জামায়াত: শফিকুর রহম