দেম্বেলেই তাহলে আজ ব্যালন ডি’অর পাচ্ছেন
Published: 22nd, September 2025 GMT
২০১৭ সালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ছেড়ে বার্সেলোনার জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন উসমান দেম্বেলে। কিন্তু তাঁকে নিয়ে বার্সেলোনা যে স্বপ্ন দেখেছিল, দেম্বেলে তার ধারেকাছেও যেতে পারেননি। বার্সেলোনায় ছয় বছর নিজের ছায়া হয়ে থাকা দেম্বেলের পারফরম্যান্সের চেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল তাঁর চোট ও মাঠের বাইরের নানা ঘটনা। বার্সার হাওয়া-বাতাস যেন তাঁর সইছিল না। শেষ পর্যন্ত হতাশা আর আক্ষেপের বোঝা নিয়ে ২০২৩ সালের আগস্টে পাড়ি জমান পিএসজিতে।
পিএসজি তখন বড় পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। লিওনেল মেসি ও নেইমার প্রায় একই সময়ে বিদায় নিয়েছেন। এমবাপ্পেও তখন যাই যাই করছিলেন, পরের মৌসুমে চলেই যান। তখনই নতুন পোস্টার বয় হয়ে হাজির দেম্বেলে। লুইস এনরিকের পিএসজি তখন একেবারে মেদহীন, ঝরঝরে এক দল।
তবে এই দল নিয়ে পিএসজি ইউরোপে কতটা সফল হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। কিন্তু গত মৌসুমে পিএসজি বদলে দিয়েছে সেই ধারণা। আর এতে বড় ভূমিকা ছিল দেম্বেলের। তাঁর পারফরম্যান্সই তাঁকে এবার ব্যালন ডি’অর জেতার কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। নাটকীয় কিছু না ঘটলে আজ প্যারিসের আলো ঝলমল মঞ্চে সোনালি ট্রফিটা উঠতে যাচ্ছে তাঁর হাতেই।
আরও পড়ুনইয়ামাল, দেম্বেলে নাকি ভিতিনিয়া—কার হাতে ব্যালন ডি’অর দেখতে চান রদ্রি০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ব্যালন ডি’অর একজন ফুটবলারের জন্য সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সম্মান। এই ট্রফি জেতা এবং না জেতা—ফুটবলাররা অঘোষিতভাবেই দুটি আলাদা শ্রেণিতে ভাগ হয়ে যান। লম্বা সময় ধরে এই পুরস্কারটা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন লিওনেল মেসি (৮) ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (৫)।
তবে এখন তাঁরা পর্দার আড়ালে চলে যাওয়ায় মঞ্চটা একরকম উন্মুক্ত হয়ে আছে। যেকোনো মৌসুমে দুর্দান্ত পারফর্ম করে যে কেউ বাজিমাত করে জিতে নিতে পারেন এই ট্রফি। গত বছর যেমন ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার রদ্রি এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। এবার পারফরম্যান্স আর দলীয় সাফল্য—দুটি দিক থেকেই দেম্বেলে অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে আছেন রাফিনিয়া ও ইয়ামাল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প এসজ
এছাড়াও পড়ুন:
লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।
সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।
আরো পড়ুন:
আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র
মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা
চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।
তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।
শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।
তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।
তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।
ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।
রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।
“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”
“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”
“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”
টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”
“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।”
সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।
ঢাকা/আমিনুল