একসময় চাকরি মানে ছিল, জীবনের নিশ্চয়তা। ভালো একটা অফিস, ধীরে ধীরে পদোন্নতি আর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লম্বা সম্পর্ক—এই ছিল কর্মজীবনের চেনা ছক। এখন সেই ধারণা বদলে গেছে। বর্তমানের তরুণ প্রজন্ম, যাদের বলা হয় জেন–জি (Gen Z)। তারা চাকরিকে জীবনের কেন্দ্র নয়; বরং জীবনের একটি অংশ হিসেবে দেখে। কাজের মানে এখন কেবল আয় নয়, শেখা, আত্মতৃপ্তি ও স্বাধীনতা উপভোগ করা।

রাজধানীর উত্তরার এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহজাবিন রহমান বলেন, ‘আমি এমন কোনো চাকরি করতে চাই না, যেখানে প্রতিদিন একই রকম কাজ করতে হবে। আমি এমন কিছু করতে চাই, যেখান থেকে প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে পারব, নিজেকে গড়তে পারব। আর আমি মনে করি, আমার কাজের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষতা অর্জন করতে পারলে পুরো বিশ্বের দ্বার আমার জন্য উন্মুক্ত।’

‘নিশ্চয়তার’ ধারণা পাল্টে যাচ্ছে

মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত মা–বাবারা সাধারণত সন্তানদের বলে থাকেন, এমন একটা চাকরি করো, যাতে বাকি জীবনটা নিশ্চিন্তে কাটানো যায়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী তরুণ প্রজন্মের মনোজগতে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। জেন–জিরা বিশ্বাস করে, চাকরিতে দীর্ঘকালীন নিশ্চয়তা বলতে কিছু নেই। প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও অটোমেশনের হাত ধরে এই পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। তাই তরুণেরা খুঁজে নিচ্ছেন এমন পেশা, যেখানে পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত তাল মেলানো যায়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পেশাগত সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ডেলয়েটের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, তরুণ কর্মীদের প্রায় ৭০ শতাংশ প্রতি সপ্তাহে নতুন কোনো দক্ষতা শেখার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশেও অনেকেই দিনের কাজের পাশাপাশি রাতে অনলাইন কোর্সে অংশ নিচ্ছেন বা স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত হচ্ছেন।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ ব্যাংকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি, আবেদন করেছেন কি১৪ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশের জেন–জিরা কী ভাবছে

বাংলাদেশের জেন–জিরাও দীর্ঘমেয়াদি নিশ্চয়তা নয়; বরং কর্মক্ষেত্রে দ্রুত নতুন কিছু শিখতে চায়। তারা বুঝতে পারছে, একটা দক্ষতা সারা জীবন কাজে লাগবে না। তাই তারা শিখছে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। নিজেদের পরীক্ষা করছে। তবে ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্যারিয়ারের ভাবনা নিয়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের তরুণদের পার্থক্য রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক রিদওয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের জেন–জিদের মধ্যে পেশাসংক্রান্ত ধারণা দ্রুত বদলাচ্ছে। তবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের তরুণদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য আছে। ঢাকার বাইরে যাঁরা অবস্থান করছেন, তাঁরা এখনো নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য সরকারি চাকরিকে প্রাধান্য দেন। ঢাকার বাংলা মাধ্যমে পড়ুয়ারা সরকারি চাকরির প্রতি ততটা আগ্রহী নয়, তারা করপোরেট বা পেশাভিত্তিক কাজের দিকে ঝুঁকছে। আর ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়াদের মধ্যে আমি দেখেছি একেবারেই ভিন্ন আগ্রহ—কনটেন্ট রাইটিং, ব্লগিং, সৃজনশীল লেখা, এমনকি পোষা প্রাণীর চিকিৎসার মতো পেশায়ও তারা আগ্রহী।’

অধ্যাপক রিদওয়ানুল হকের মতে, দেশের প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন স্মার্ট জেন–জি প্রজন্ম পেশাগত জায়গায় শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না। তারা দক্ষতা অর্জন করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে চায়। তাদের অনেকের মধ্যেই এখন ‘গ্লোবাল সিটিজেনশিপ’–এর ভাবনা গড়ে উঠছে।

১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের ভেতর যাদের জন্ম, তারাই হলো জেন-জি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চয়ত জ বন র

এছাড়াও পড়ুন:

নারায়ণগঞ্জে সিমেন্ট কারখানায় বিস্ফোরণে ছয় শ্রমিক দগ্ধ

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় বসুন্ধরা সিমেন্ট কারখানার কয়লার কলে বিস্ফোরণে ছয় শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার মদনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

দগ্ধ শ্রমিকদের রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন আতিকুর রহমান (৪২), তোরাব আলী (৫৫), ফেরদৌস (৩৫), তাজুল ইসলাম (৩৫), কামাল হোসেন (৪৫) ও নাহিদ হাসান (২২)।

দগ্ধ শ্রমিকদের সহকর্মী মোবারক হোসেন বলেন, সিমেন্ট প্ল্যান্টের কয়লার কলে কয়লা পিষে গুঁড়া করা হয়। সেই গুঁড়া কয়লা ভাট্টিতে তাপ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। কয়লার কলে কাজ করার সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়লে তাঁদের ছয় সহকর্মী দগ্ধ হন। রাত নয়টার দিকে তাঁদের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আগুনে আতিকুর রহমানের শরীরের ২৭ শতাংশ, তোরাব আলীর ১৬ শতাংশ, ফেরদৌসের ১০ শতাংশ, তাজুল ইসলামের ১২ শতাংশ, কামাল হোসেনের ২৬ শতাংশ ও নাহিদ হাসানের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাঁদের সবার শ্বাসনালিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কয়লার কলে কয়লা গুঁড়া করার সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছিটকে শ্রমিকেরা দগ্ধ হন। দগ্ধ ছয় শ্রমিককে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, কয়লার কলে কয়লা গুঁড়া করার সময় বিস্ফোরণে উত্তপ্ত কয়লা ছিটকে ছয় শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন।

তবে এ বিষয়ে বসুন্ধরা সিমেন্ট কারখানা কর্তৃপক্ষের কারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ