চীনের স্টক মার্কেটে গতি এসেছে। একদিকে দেশটির এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতের উত্থান, অন্যদিকে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ— এই দুয়ে মিলে শ্লথ অর্থনীতি ও মার্কিন–চীন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব খানিকটা মোকাবিলা করতে পারছে চীন।

চীনের শীর্ষ যে ১০০ ধনীর তালিকা করেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন, সেই তালিকায় দেশটির দুই–তৃতীয়াংশ ধনীর সম্পদ বেড়েছে। ১ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁদের সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৩৫ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি ডলার। আগের বছর ছিল ১ লাখ ২ হাজার কোটি ডলার। সব মিলিয়ে এবার এই ১০০ ধনীর সম্পদ বেড়েছে ৩১ শতাংশের বেশি।

এ নিয়ে টানা পাঁচ বছর তালিকার শীর্ষে আছেন পানীয় ব্যবসায়ী ঝং শ্যান শ্যান। তিনি পানীয় কোম্পানি নোংফু স্প্রিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা। বছরের প্রথম ছয় মাসে ঝং শ্যান শ্যানের সম্পদ বেড়েছে ২৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৩০ কোটি ডলার। ১ নভেম্বর তাঁর সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ৭৭ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৭১০ কোটি ডলার। বছরের প্রথম প্রান্তিকে তাঁর রাজস্ব ও মুনাফা উভয়ই বেড়েছে।

বাইটড্যান্সের সহপ্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইমিংর সম্পদ বেড়েছে ২৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৭০ কোটি ডলার। ফলে এক ধাপ এগিয়ে এখন তিনি দ্বিতীয় স্থানে। তাঁর মোট সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার। বাইটড্যান্সের জন্য স্বস্তির বিষয় হলো, তাদের শর্ট ভিডিও অ্যাপ টিকটক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা থেকে আপাতত রক্ষা পেয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেপ্টেম্বরে এক নির্বাহী আদেশে বলেন, টিকটকের জন্য নতুন যৌথ কোম্পানি গঠন করতে হবে, যার বেশির ভাগ মালিকানা থাকবে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের হাতে। তারাই এই প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করবে।

অন্যদিকে টেনসেন্ট হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান মা হুয়াতেংয়ের সম্পদ এক-তৃতীয়াংশের বেশি বেড়ে ৬২ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ২৮০ কোটি ডলারে পৌঁছালেও তিনি তালিকায় এক ধাপ পিছিয়ে গেছেন। এখন তাঁর অবস্থান তৃতীয়। গত এক বছরে এআই-ভিত্তিক এই কোম্পানির শেয়ারদর ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। অনলাইন গেমের বিক্রি বৃদ্ধি এবং তাদের সুপারঅ্যাপ উইসিনে (যা আন্তর্জাতিকভাবে উইচ্যাট নামে পরিচিত) বিজ্ঞাপন বৃদ্ধির কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

তালিকায় চতুর্থ স্থানে আছেন জ্বালানি খাতের ব্যবসায়ী রবিন জেং। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৫ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। পঞ্চম স্থানে আছেন প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ী উইলিয়াম ডিং। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৪৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার।

এদিকে এক পুতুল নিয়ে বৈশ্বিক উন্মাদানার কারণে ফুলে ফেঁপে উঠেছে পপ মার্ট ইন্টারন্যাশনাল। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ওয়াং নিংকের সম্পদ বেড়েছে। এই খেলনা–সাম্রাজ্যের কর্তার সম্পদ এক বছরে চার গুণের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২২০ কোটি ডলারে। কেমব্রিকন টেকনোলজিসের চেয়ারম্যান ও সিইও চেন তিয়ানশির সম্পদও প্রায় তিন গুণ বেড়ে ২১ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। ‘চীনের এনভিডিয়া’ হিসেবে খ্যাত এই এআই চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের আইপিওর পর আগস্টে এই প্রথম নিট মুনাফা ঘোষণা করেছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৪০ মিলিয়ন বা ১৪ কোটি ডলার নিট মুনাফা ঘোষণা করে।

এ বছরের তালিকায় আটজন নতুন ধনকুবের স্থান পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শীর্ষে আছেন ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলার। তালিকায় তাঁর অবস্থান ৩৪।

চীনের এআই প্রতিষ্ঠান ডিপসিক জানুয়ারিতে তাদের স্বল্প খরচের এআই মডেল উন্মোচন করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দারুণ আলোড়ন তোলে। বৈশ্বিক এআই–ঝড়ের মধ্যেই ডেটা সেন্টার অপারেটর রেঞ্জ ইন্টেলিজেন্ট কম্পিউটিং টেকনোলজি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ঝৌ চাওনান এই প্রথম তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৫৩০ কোটি ডলার। এই পরিমাণ সম্পদ নিয়ে তাঁর অবস্থান ৮৫তম।

আগের বছরের তালিকা থেকে ছিটকে পড়লেও ছয়জন ধনী এবার আবারও তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন রোবট ভ্যাকুয়াম নির্মাতা ইকোভ্যাকস রোবোটিকসের প্রতিষ্ঠাতা চিয়ান দোংছি। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে গৃহস্থালি যন্ত্রপাতির বিক্রি বাড়ায় কোম্পানিটির নিট মুনাফা ৬০ শতাংশের বেশি বেড়ে ১৩৮ মিলিয়ন বা ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারে উঠেছে।

সব ধনীর যে সম্পদ বেড়েছে, তা নয়। কিছু কিছু ধনীর সম্পদ কমেছেও। সবচেয়ে বেশি সম্পদ কমেছে মেইতুয়ানের চেয়ারম্যান ও সিইও ওয়াং শিং। আলিবাবা ও জেডি ডটকমের সঙ্গে তীব্র মূল্যযুদ্ধের কারণে খাদ্য ডেলিভারি করা এই কোম্পানির মুনাফা কমে যাওয়ায় তাঁর সম্পদ ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ৬২০ কোটি ডলার; অর্থাৎ ৪২ শতাংশের বেশি কমে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৮৪০ কোটি ডলার।

যে ১৪ জন ধনী শীর্ষ ১০০ ধনীর তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন দালিয়ান ওয়ান্ডা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও একসময় চীনের শীর্ষ ধনী ওয়াং জিয়ানলিন। তাঁর আবাসন সাম্রাজ্য সম্প্রতি তারল্য–সংকটে পড়ে একের পর এক সম্পদ বিক্রি করছে।

এদিকে তালিকায় স্থান পাওয়ার ন্যূনতম মানদণ্ড বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত বছর তালিকায় স্থান পেতে ন্যূনতম সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩৯০ কোটি ডলার । এবার তা বৃদ্ধি করে ৪৬০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র প রথম দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে সূচকের পতনে সপ্তাহ শুরু

চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার (৯ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ নিয়ে টানা ৬ কার্যদিবস পুঁজিবাজারে পতন ঘটেছে। এর ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪ হাজার পয়েন্টের ঘরে নেমে এসেছে, যা চার মাস আগের অস্থানে নেমে এসেছে।

এদিন আগের কার্যদিবসের চেয়ে ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমলেও সিএসইতে বেড়েছে। একইসঙ্গে পুঁজিবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম কমেছে।

আরো পড়ুন:

২২ বিনিয়োগকারীকে ৪০০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড হাইকোর্টে বহাল

বিএসইসির নতুন মার্জিন রুলসের গেজেট প্রকাশ

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অনেক দিন ধরে পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতে সূচকের উত্থান দেখা গেলেও লেনদেন শেষে তা পতনে রূপ নেয়। রবিবার সকালে ডিএসইএক্স সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু হয়। তবে লেনদেন শুরুর ১১ মিনিটের পর থেকে সূচকের পতন লক্ষ্য করা যায়। লেনদেন শেষ পর্যন্ত পতনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন অনেক কমে গেছে।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৬৮.০১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৮৯৯ পয়েন্টে। এর আগে চলতি বছরের ৩ জুলাই ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৪ হাজার ৮৯৪ পয়েন্টে। এদিন ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৬.৬০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২২ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১১.৮১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯২৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইতে মোট ৪১০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৩৪টি কোম্পানির, কমেছে ৩২৯টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৭টির।

এদিন, ডিএসইতে মোট ৪০২ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪১৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৩৫.৯৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৫৭৯ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৫ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৮৮৩ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ৪.৪৪ পয়েন্ট কমে ৮৭০ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ১১.৩৮ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ৪০১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সিএসইতে মোট ১৫৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৪২টি কোম্পানির, কমেছে ১০৯টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৪টির।

সিএসইতে ২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ