আলোচনা

মো. সফিউল ইসলাম আফ্রাদ

কোষাধ্যক্ষ, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের দেশে প্রধানত চার ধরনের ভোজ্যতেল ব্যবহৃত হয়—শর্ষে, ধানের কুড়া, সয়াবিন ও সূর্যমুখী। এ ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতার সুযোগ আছে কয়েকটি মাত্রায়। যেমন আমরা ফসলবিন্যাসে পরিবর্তন আনতে পারি। মাঝারি নিচু জমিতে বর্ষার পানি নেমে গেলে বোরো চাষের আগে শর্ষে করা সম্ভব। নতুন জমিও অন্বেষণ করা দরকার। পতিত জমিগুলোয় তেলবীজ চাষের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কৃষকদের সচেতন ও সংগঠিত করা জরুরি।

কৃষককে জোর করে একটা জিনিস দিতে পারব না। কৃষক এটা চিন্তা করেন যে ‘খরচ করে আমি দিন শেষে কত টাকা পাচ্ছি।’ তাঁকে বোঝাতে হবে, ধান বা প্রচলিত ফসলের মতো তেলবীজ চাষেও তিনি বেশি লাভবান হতে পারেন।

কৃষক সব সময় ভবিষ্যতের বাজার দেখেন। চরাঞ্চলে ভুট্টার ক্ষেত্রেই যেমন হয়েছিল, প্রথমে ক্ষতির শঙ্কা থাকলেও ফিড কোম্পানিগুলো বাজারের নিশ্চয়তা দিলে কৃষক উৎসাহিত হন। তাই তেলবীজের ক্ষেত্রেও বাজার নিশ্চিত করতে হবে। বাজারের সমস্যা হলো, মৌসুমে উৎপাদন বেশি হলে দাম পড়ে যায়। অনেক সময় তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসে। তাই স্টোরেজের ব্যবস্থা থাকা দরকার। সব মিলিয়ে আমাদের লক্ষ্য হবে ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা’। যে ফসলের বহুমুখী ব্যবহার আছে, যেটা কৃষক লাভজনক মনে করেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি কমায় ও ঔষধি গুণও আছে, সেটাকেই প্রাধান্য দিতে হবে।

মো.

হোসেন আলী

পরিচালক (গবেষণা), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার অ্যাগ্রিকালচার

আমাদের একটি পরিপূর্ণ উদ্যোগ বা ফসলবিন্যাসে যেতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি শর্ষে চাষে কৃষকের লাভ কমে যায়। আমনের পর জমি চাষ, আবার শর্ষের পর বোরো ধানের জন্য জমি তৈরি—এতে কৃষকের ভয় থাকে, ধান চাষ না ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা দেরি হয়ে যায়।

তাই সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। সমন্বিত পদ্ধতিতে স্বল্পমেয়াদি উচ্চফলনশীল আমনের পর শর্ষে দেখাতে হবে, যাতে বোরোর কোনো সমস্যা না হয়।

ছোট প্লটে শর্ষে চাষ করলে সেচ দেওয়া কঠিন। কিন্তু ৫০ বা ১০০ বিঘার ব্লকে করলে সহজেই সেচ দেওয়া যায়, ফলনও বাড়ে। কারণ উচ্চফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে সেচ ও সার না দিলে কাঙ্ক্ষিত ফলন আসে না।

আমরা যদি এভাবে কৃষককে মাত্র দুই মৌসুম দেখাতে পারি, তবে ফসলবিন্যাসে দিকনির্দেশনা স্পষ্ট হবে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কৃষক অন্তত ৮০ শতাংশ ফলন পেলেও ফসল নিরাপদে তুলতে পারবে। আমরা সেভাবে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য সঠিক জাত উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছি। লবণাক্ত মাটির জন্য লবণ-সহনশীল জাতও আছে।

মূল কথা হলো, বিদ্যমান প্রযুক্তিসুবিধা আর জাতগুলো যদি আমরা কৃষকের কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে পারি এবং সামগ্রিক পরিকল্পনা দিতে পারি, তাহলে শর্ষের উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব।

আবদুল বাসেত মিয়া

ডিন, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সয়াবিনে তেল তুলনামূলক কম হলেও প্রোটিন বেশি। এটি জনপ্রিয় করা গেলে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। চর বা নতুন জেগে ওঠা জমিতে চাষ বাড়ানো সম্ভব। তবে এটিকে কৃষকবান্ধব করতে হবে।

সয়াবিন থেকে নানা ভ্যালু অ্যাড করা যায়, তবে মূল সমস্যা হলো বাজার। একজন কৃষকের ২০ কেজি সয়াবিন হলে কোথায় বিক্রি করবে, সে নিশ্চয়তা দিতে হবে। মালয়েশিয়ায় পাম তেল দিয়ে হালাল কসমেটিকস ও ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল তৈরি হয়। সয়াবিনেও তেমন সুযোগ আছে। এটি শুধু তেলবীজ নয়, বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য ফসল। কৃষক লাভ দেখলেই চাষ করবে।

শর্ষের ক্ষেত্রেও কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। তবে ভ্রান্ত ধারণা আছে—এতে নাকি ‘ইউরিসিক অ্যাসিড’ থাকে, যা ইউরিক অ্যাসিডের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়। মেডিকেল সেক্টর থেকে যদি স্পষ্ট বার্তা আসে যে শর্ষের তেল নিয়ে ভয় নেই, তবে শর্ষের চাষ আরও বাড়বে। রাইস ব্র্যান অয়েলও সম্ভাবনাময়। ধানের কুঁড়ো আমাদের দেশে প্রচুর। একসময় এটি জনপ্রিয় হয়েছিল। যদিও মিশ্রণ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল; তবু সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে বড় সুযোগ আছে।

আমরা এখন স্মার্ট কৃষির যুগে প্রবেশ করছি। ব্যবস্থাপনা এমন হতে হবে, যাতে কৃষক ব্যর্থ না হয়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, অ্যাগ্রো-অ্যাডভাইজরি সার্ভিস, উন্নত যোগাযোগ, ড্রোন ও রিমোট সেন্সিং কাজে লাগাতে হবে। প্রয়োজনে ফসলবিমার দিকেও যেতে হবে।

মো. আবদুল্লাহ আল মামুন

উপপ্রকল্প পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

সয়াবিন আমাদের একটি ভালো ফসল। তবে বর্তমানে তা থেকে তেল নিষ্কাশন করে ভোজ্যতেলের বড় চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। প্রধান তেলবীজ ফসল হিসেবে শর্ষে সম্ভাবনাময়। বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে শর্ষে আবাদ করা হচ্ছে। আমন ও বোরোর মাঝের বিরতিতে প্রায় ২০ লাখ হেক্টর পতিত জমি রয়েছে, যেখানে উদ্যোগ নিলে শর্ষে চাষ বাড়ানো সম্ভব।

ফসল তোলার পর শর্ষের অপচয় তেমন হয় না। সমস্যা বেশি তেল নিষ্কাশনে। উন্নত মেশিন ব্যবহার করলে উৎপাদন ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। বাজারজাতকরণও গুরুত্বপূর্ণ। দাম কমে গেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। টিসিবি যদি শর্ষের তেল কিনে সরবরাহ করে, তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা যাবে। সূর্যমুখীও সম্ভাবনাময়। বরিশাল ও উপকূলীয় অঞ্চলে চাষের বড় সুযোগ আছে। মেশিনের অভাবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা কঠিন, তবে মেশিন থাকলে এটি ভোজ্যতেলের স্বয়ংসম্পূর্ণতায় অবদান রাখবে।

ধান আমাদের প্রধান ফসল হওয়ায় রাইস ব্র্যান অয়েলের সম্ভাবনা বিশাল। দেশে থাকা ধানের কুঁড়া থেকে প্রতিদিন চার হাজার মেট্রিক টন তেল উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমানে অধিকাংশ অপরিশোধিত তেল ভারতে রপ্তানি হয়। দেশে পরিশোধনের ব্যবস্থা থাকলে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

মো. আবদুল মুঈদ

সাবেক মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

প্রতিবছর আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার আমাদের ভোজ্যতেলের জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির জন্য এটি বিরাট একটি বোঝা। তেলবীজ উৎপাদন বাড়ালে এই ব্যয় কমানো যাবে।

সয়াবিনের চাষ সারা দেশেই সম্ভব। কারণ, এটি বেলে-দোআঁশ মাটিতে ভালো হয় এবং সেচের পরিমাণও খুব কম লাগে। এটি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না, তাই জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে পানির স্বল্পতা রয়েছে, সেখানে সয়াবিন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফসল হতে পারে।

সয়াবিনের বীজের একটি সমস্যা হলো এর সুপ্তিকাল খুব কম। এটি নষ্ট হয়ে গেলে পরে আর গজায় না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক চাষি বছরে দুবার চাষ করেন। খরিফ-২ মৌসুমে যেটা উৎপাদন করেন, সেটাই আবার রবি মৌসুমে বীজ হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে এখন অনেক কৃষক ড্রামে করে বাতাসরোধী ব্যবস্থায় বীজ সংরক্ষণ করে এই সমস্যার সমাধান করছেন। এই বিষয়ে আরও গবেষণা দরকার, যাতে সয়াবিনের সুপ্তিকাল বাড়ানো যায়।

দেশীয় সয়াবিন থেকে ভালোভাবে তেল হয় না বলে একটি অভিযোগ আছে। এখানেও গবেষণার মাধ্যমে যদি সমস্যার সমাধান করা যায়, তাহলে নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে দেশ ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে।

সৈয়দা আফজালুন নেসা

হেড অব সাসটেইনেবিলিটি, এইচএসবিসি বাংলাদেশ

প্রকল্পটি আমাদের সিএসআরের একটি অংশ। আমরা জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কাজ করে জলবায়ু স্মার্ট কৃষি কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। প্রতিটি উদ্যোগ যেন দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই হয়, তা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

এই প্রকল্প শুধু কৃষিক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি সামাজিক ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তিও নিশ্চিত করছে। নারী উদ্যোক্তাদের চাষাবাদের পাশাপাশি উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং কৃষকদের আর্থিক শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে আমরা প্রকল্পের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব নিশ্চিতকরণে, বহুমাত্রিক পদ্ধতিতে কাজ করছি।

আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের সহযোগী সংগঠন সলিডারিডাড ও নারিশ মাঠপর্যায়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, আর ইউনিমার্ট ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের পণ্যগুলো তাদের আউটলেটগুলোয় প্রদর্শন করছে। আমরা একই সঙ্গে একটি সাসটেইনেবল সাপ্লাই চেইন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি, যা সমাজ ও পরিবেশ—উভয়ের জন্যই সুফল বয়ে আনবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

সেলিম রেজা হাসান

কান্ট্রি ম্যানেজার, সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া

সয়াবিনের উৎপাদন বৃদ্ধি, বীজের জাত উন্নয়ন এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া, নেদারল্যান্ডস সরকার ও এইচএসবিসির আর্থিক সহযোগিতায় জলবায়ুসহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল সয়াবিন জাত সম্প্রসারণে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বর্তমানে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ছয়টি উপজেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি সয়াবিনচাষির জীবনমান উন্নয়নে সহযোগিতা করছে।

৭০ হাজারের বেশি কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে জ্ঞান বৃদ্ধি করা হয়েছে, যার মধ্যে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষমতা উন্নয়ন, পুনরুৎপাদন কৃষি, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা এবং রাসায়নিকের ব্যবহার কমিয়ে আনার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চাষিদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বীজের জাত উন্নয়ন, ভালো বীজ চেনার উপায় এবং উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার ওপর কারিগরি এবং ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের অংশীদার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ৯টি উচ্চ ফলনশীল জাত সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং এর মধ্যে কয়েকটি লবণাক্ত ও জলবায়ুসহিষ্ণু জাত রয়েছে। এই নতুন জাতগুলো ওই অঞ্চলে সয়াবিনের আবাদ বৃদ্ধি করেছে। উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং সয়াবিনের গুণগতমান ভালো হওয়ায় এ জাতগুলো এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যা বাংলাদেশে সয়াবিনের মোট আবাদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।

প্রকৃত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য আমাদের একটি পরিষ্কার ধারণাপত্র এবং বাস্তবায়নের জন্য রোডম্যাপ থাকতে হবে। আমাদের গবেষণাকাজ চালিয়ে যেতে হবে। উচ্চ ফলনশীল জাত ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম জাত উন্নয়নে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। অর্থাৎ কৃষকের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি থেকে শুরু করে কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন, জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ এবং উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার সব ধাপেই আমাদের কাজ করতে হবে।

সয়াবিনকে বলা হয় ‘মিরাকল ক্রপ’। এটি তেল, পশুখাদ্য, পোলট্রি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও মানব পুষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এখন সীমিত হলেও উদ্যোক্তারা সয়াভিত্তিক পণ্য তৈরি শুরু করেছেন। এটিকে বৃদ্ধি করতে হবে। সলিডারিডাড উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ধান প্রধান ফসল হলেও সঠিক শস্য পরিকল্পনা জরুরি। সয়াবিনের নতুন জাত ব্যবহারে ফলন ৫০ শতাংশ ও কৃষকের আয় ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। সয়াবিন লিগুমিনাস হওয়ায় মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সহায়ক।

আমরা বিশ্বাস করি, একটি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে তেলের জাতীয় চাহিদা পূরণ, কৃষকের আয় বৃদ্ধি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সলিডারিডাড আশা করছে, নিকট ভবিষ্যতে দেশে সয়াবিনের ক্রমবর্ধমান চাহিদার আমদানি–নির্ভরতা কমে আসবে, পাশাপাশি ভোজ্যতেল উৎপাদনে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ।

আবদুল করিম

অধ্যাপক, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি)

বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা বছরে প্রায় ৩ মিলিয়ন টন, যার প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। জমির সীমাবদ্ধতার কারণে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব নয়। তবে আগামী ১০ থেকে ২০ বছরে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ স্বয়ংসম্পূর্ণতার লক্ষ্য বাস্তবসম্মত।

দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার নতুন চরভূমি তৈরি হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের এসব উর্বর জমি শীতকালে চাষযোগ্য, কিন্তু এখনো যথাযথভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। নীতিগতভাবে এসব চরজমিতে শর্ষে, সয়াবিন, নাইজার ইত্যাদি তেলবীজ চাষে জোর দেওয়া উচিত। পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া ফসল, যেমন তিল, কুসুম ফুল, গর্জন তিলকেও ফিরিয়ে আনতে হবে। রাইস ব্র্যান অয়েলও বড় সম্ভাবনা—ধানের কুঁড়োতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত তেল থাকে। এর আংশিক ব্যবহারে আমদানিনির্ভরতা অনেকটা কমতে পারে। সলিডারিডাড গবেষক, উন্নয়ন সংস্থা ও কৃষকের সমন্বয়ে ত্রিভুজ মডেল তৈরি করেছে, যা সয়াবিনের জাত সম্প্রসারণে কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে। নারিশের মতো কোম্পানিগুলো বীজ উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে, তবে বীজ কোম্পানিগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

ইতিমধ্যে এইচএসবিসি ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক কৃষকদের অর্থায়ন করছে। স্বল্প সুদে ঋণ নিশ্চিত হলে যান্ত্রিকীকরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের সমস্যা অনেকটাই কমবে।

এ বি এম আরিফ হাসান

অধ্যাপক, জেনেটিকস অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগ,

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশে তেল–ফসলের ৬৭ থেকে ৭০ শতাংশ জমিতে শর্ষে চাষ হয়। তবে শর্ষে চাষের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে নতুন নতুন উদ্বেগও আসছে। যেমন ২০১১ সালে বাংলাদেশে শর্ষের একটি রোগ—ক্লাবরুট—শনাক্ত হয়। রোগটি গাছের গোড়ায় গিঁট তৈরি করে এবং তার খাদ্য ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা (ফ্লোয়েম, জাইলেম) বন্ধ করে দেয়, যাতে ৫০ থেকে শতভাগ পর্যন্ত ফসলহানি হতে পারে। এই চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।

আমাদের এমন জাত নির্বাচন করতে হবে, যেগুলোয় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেশি। আমরা ‘বাউ সরিষা–৫’ নামে এমন একটি জাত তৈরি করেছি, যা খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো, এর সম্প্রসারণ হচ্ছে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। সমন্বয়হীনতাগুলো আমাদের অবশ্যই সমাধান করতে হবে।

আশার কথা হচ্ছে, সয়াবিনের ক্ষেত্রে ৬০ দিনের জাত আসছে, যা খুব ভালো দিক। নতুন নতুন চর জাগছে, সেখানে আমরা আরও জমি চাষের আওতায় আনতে পারব। আমরা যদি শুধু শর্ষের কথাই ধরি, এর উৎপাদন বাড়িয়ে আমাদের জাতীয় চাহিদার ১৫–২০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে নিয়ে আসতে পারি, তাহলেই কিন্তু আমরা আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আমদানি ব্যয় থেকে আধা বিলিয়ন কমিয়ে ফেলতে পারি।

মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন

অধ্যাপক, এন্টোমোলজি বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সাত বছর আগেও আড়াই থেকে তিন লাখ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হতো। এখন তা ১২ লাখ হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে। এটি একটি বিশাল উন্নতি। অন্যদিকে, সয়াবিন আমাদের দেশে প্রায় উপেক্ষিত একটি ফসল ছিল। এ ক্ষেত্রে আমি সলিডারিডাড এবং বিশেষ করে নারিশকে ধন্যবাদ জানাব। তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় এবং খরা ও লবণাক্ততা-সহনশীল জাত নিয়ে কাজ করার ফলে লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে সয়াবিন চাষে একটি বিপ্লব এসেছে, যা আশার আলো দেখাচ্ছে। আমাদের ফিড ইন্ডাস্ট্রি, বিশেষ করে পোল্ট্রি, লাইভস্টক এবং ফিশারিজের জন্য সয়াবিন ও সরিষার খৈল অত্যন্ত জরুরি।

আমাদের পাম বা সূর্যমুখী চাষ নিয়ে জোর দিতে হবে। যদিও বরগুনায় প্রচুর পরিমাণে সূর্যমুখী চাষ হচ্ছে এবং সরকারের উদ্যোগও রয়েছে। সয়াবিনের ক্ষেত্রে চর এলাকা ও পাহাড়ি এলাকায় পাম চাষের কথা ভাবা যেতে পারে। একসময় আমাদের দেশে পাম চাষের ভালো সুযোগ ছিল, কিন্তু প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে আমরা এগোতে পারিনি। যদিও আমরা দেড় মিলিয়ন টন পাম তেল আমদানি করছি এবং কোনো না কোনোভাবে তা খাচ্ছি।

ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে, আমাদের প্রধান ফসল ধানকে ঠিক রেখে সরিষার উৎপাদন বাড়াতে হবে। ধানের জমি কমানো যাবে না। ধানের পর আমাদের পতিত জমি, পাহাড়ি এলাকা ও চরাঞ্চলে সয়াবিন, সূর্যমুখী, পাম, এমনকি জলপাই (অলিভ) চাষের কথাও ভাবা যেতে পারে।

গাজী মাহফুজুর রহমান

চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, ইউনিমার্ট

এই গোলটেবিল বৈঠক আমার জন্য একটা চোখ খুলে দেওয়ার মতো। সয়াবিন নিয়ে যে এত কিছু হচ্ছে, এটা আসলে আমরা বিক্রি করি, কিন্তু আমি জানতাম না।

আমার ইউনিমার্টের একটি ইউনিক প্রস্তাবনা হচ্ছে—বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে না এমন পণ্য ইউনিমার্টে পাওয়া যায়। সেটা বিদেশি পণ্যই হোক বা দেশীয় পণ্যই হোক। দেশীয় পণ্যের ক্ষেত্রে, এখন পর্যন্ত যত উদ্যোক্তা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, আমরা কিন্তু তাদের পণ্য রাখছি। আমরা আমাদের লাভ দেখছি না, কিন্তু আমাদের ক্রেতারা আসলে এ ধরনের পণ্য চায়। এ কারণে আমি আজকে এখানে বসেই চিন্তা করলাম যে নারিশ, সলিডারিডাড ও ফৌজিয়া ফুডের সঙ্গে আরও কীভাবে ইউনিমার্টের পক্ষ থেকে সরাসরি কৃষকদের সঙ্গে কাজ করা যায়।

আমরা সয়াবিন নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে চাই। আমরা আসলে লাভের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং সামাজিক দায়বদ্ধতার দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ করতে চাই। এটা ইউনিমার্টের পক্ষ থেকে একটি সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতিশ্রুতি।

আরও যদি এ রকম কোনো নতুন নতুন উদ্যোগ আসে, আমরা এর অংশ হতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, সমন্বিতভাবে সবাই এগিয়ে এলে ভোজ্যতেল উৎপাদনে আমরা সয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব।

এম এ মান্নান

অধ্যাপক, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে পতিত জমিগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর কমে যাওয়ায় ধান চাষ সীমিত করার কথা ভাবছেন কৃষকেরা। অর্থাৎ এক বছর অর্ধেক কৃষক ধান চাষ করলে বাকি অর্ধেক রবিশস্য করবেন। এই রবিশস্যের জায়গায় আমরা তেলবীজ ফসলকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, যা একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র।

দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় শুধু লবণাক্ততাই মূল সমস্যা নয়, সেখানে জমি দেরিতে শুকায় এবং বর্ষার পানি তাড়াতাড়ি চলে আসে, ফলে ফসল করার জন্য সময় খুব কম পাওয়া যায়। এই স্বল্প সময়ে আমরা যদি উচ্চফলনশীল জাত দিতে পারি, তাহলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।

দক্ষিণাঞ্চলে যদি সরকারি উদ্যোগে স্বল্পমেয়াদি উচ্চফলনশীল ধানের জাত দেওয়া যায়, তাহলে মাঝারি উঁচু জমিগুলোতে স্বল্পমেয়াদি শর্ষে বা সয়াবিন চাষ করা সম্ভব হবে। সিলেট ও পার্বত্য অঞ্চলের ভ্যালি এলাকাগুলোতে সেচের অভাবে জমি পতিত থাকছে, সেখানেও আমরা খরা-সহনশীল ও স্বল্পমেয়াদি তেলবীজ ফসল দিতে পারি।

শুধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চফলনশীল জাত দেওয়া বা সলিডারিডাডের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সরকারের সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগোতে পারবে।

সৈয়দ তামজিদুর রহমান

পরিচালক, চেঞ্জমেকার ইন্টারন্যাশনাল

আমাদের জমির পরিমাণ সীমিত এবং অনেক মানুষকে খাওয়াতে হয়। ধান, তেলসহ সব ফসলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা উৎপাদন করব, নাকি কিনব এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে সম্পূর্ণ আমদানির ওপর নির্ভরশীল হওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই দুটির মধ্যে ভারসাম্য রাখা জরুরি।

অনেক কৃষক ফসল নষ্ট হওয়ার ভয়ে চাষে আসেন না। ফসল বিমার ব্যবস্থাটি আমাদের দেশে জনপ্রিয় হয়নি। কয়েকটি জায়গায় উদ্যোগ নেওয়া হলেও কেন এটি এগোচ্ছে না, তা আমাদের খতিয়ে দেখা উচিত। আমরা যা উৎপাদন করি, তার অনেক অংশ অপচয় হয়। এ অপচয় কমালে ঘাটতি অনেক হ্রাস পাবে।

তেল প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রযুক্তি অনেক পুরোনো। গ্রামে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। উন্নত প্রযুক্তি বাইরে থেকে এনে ব্যবহার করা যেতে পারে। কৃষকদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ–সংক্রান্ত স্কিমটি প্রান্তিক চাষিদের জন্য স্থায়ীভাবে চালু করা উচিত।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো উৎপাদনের খরচ কমানো। এটি হলে বাজারদর নিয়ন্ত্রণ না করলেও কৃষক লাভবান হবেন। উন্নয়ন খাতের উদ্যোগগুলো এখানে সহায়ক হতে পারে।

রীনা রানী পাল

প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট

তেল আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি জরুরি ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস। বাংলাদেশে তেলে ভিটামিন ‘এ’ ফোর্টিফিকেশন করা হচ্ছে এবং শিগগিরই ভিটামিন ‘ডি’ যুক্ত হতে পারে, যা পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখবে।

হৃদ্‌রোগ বা অসংক্রামক রোগের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর তেল পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার কথা বলি। আমরা কখনো বলি না যে কোনো একটি তেল খুব ভালো আর অন্যটি খারাপ। আমরা বলি, উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আসা তেল, যেগুলোতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম, সেগুলোই মানুষের জন্য নিরাপদ। যেহেতু বাংলাদেশে উৎপাদিত শর্ষে, সয়াবিন, তিল, রাইস ব্র্যান ও সূর্যমুখী তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম, তাই সব কটিই ভালো ও সুপারিশযোগ্য।

আমাদের প্রধান সুপারিশ হলো ‘মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ’, অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের তেলের সংমিশ্রণ। যেমন ভর্তা বা ভাজার জন্য এক-দুই চামচ শর্ষের তেল ঠিক আছে; কিন্তু প্রতিদিনের রান্নায় এর অতিরিক্ত ব্যবহার ঠিক নয়। দৈনন্দিন রান্নায় আমরা সয়াবিন, সূর্যমুখীসহ বিভিন্ন তেল মিশিয়ে খেতে পারি, যা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।

সারা বিশ্ব এখন টেকসই খাদ্যব্যবস্থা ও পরিবেশবান্ধব খাদ্যাভ্যাসের দিকে ঝুঁকছে। প্রাণিজ আমিষের বদলে উদ্ভিজ্জ আমিষ, যেমন সয়াবিন, তফু, সয়া নাগেটস ইত্যাদিকে জনপ্রিয় করা আমাদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

ফসিউল আলম ভুঁইয়া

এজিএম, নারিশ ফিড

আমাদের কারখানায় প্রতি মাসে প্রায় ১৬ হাজার টন সয়াবিন লাগে। এর ৯৫ শতাংশ আমদানি করতে হতো, মাত্র ৫ শতাংশ স্থানীয়ভাবে পাওয়া যেত। সলিডারিডাডের সঙ্গে কাজ শুরু করার পর আমরা বিভিন্ন দেশি জাত পরীক্ষা করে দেখেছি, বাংলাদেশে ধীরে ধীরে সয়াবিনের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। দেশে বছরে প্রায় ২৫ লাখ টন সয়াবিন প্রয়োজন, যার ১২–১৩ লাখ টন শুধু ফিড ইন্ডাস্ট্রির জন্য। এই পরিমাণ দেশেই উৎপাদন করতে পারলে বড় অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় হবে।

কিছু জাত সিঙ্গাপুরের ল্যাবে পরীক্ষা করে আমরা কৃষকদের মধে৵ ছড়িয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য বীজ ব্যবসা নয়; বরং বীজের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা। প্রতিবছর বীজ উদ্যোক্তাদের কাছে আমরা বিশুদ্ধ বীজ সরবরাহ করি, যাতে জাতের মান ঠিক থাকে।

গত পাঁচ বছরে সয়াবিন উৎপাদন ৬০ হাজার টন থেকে বেড়ে আড়াই লাখ টন ছাড়িয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে এটি ১১–১২ লাখ টনে পৌঁছানো সম্ভব। লবণাক্ত জমিতে চাষের জন্য লবণসহিষ্ণু জাত এবং ইনোকুলাম ব্যবহার করে নোয়াখালীর ৪০ থেকে ৫০ হাজার একর খালি জমি কাজে লাগানো সম্ভব। এই উদ্যোগে পাঁচ বছরের মধ্যে ফিড ইন্ডাস্ট্রির জন্য দেশের সয়াবিনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব।

Suvra Kanti Das

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ন শ চ ত কর ভ জ যত ল র আম দ র দ শ ইউন ম র ট ব যবহ র ক র ব যবস থ র পর ম ণ আম দ র প আম দ র স র জন য স আম দ র ক উদ য ক ত র র জন য ন র জন য র লক ষ য সমন ব ত ক ষকদ র লবণ ক ত প রকল প আর থ ক নত ন জ ন র পর ক জ কর চ ষ কর ল খ টন উদ য গ ন র পদ স বল প র চ লক আমদ ন র একট ন করছ ফসল হ সহয গ জলব য় সমস য সরক র আবদ ল জনপ র ত বছর দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দলে ফিরলেন স্টার্ক

ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। ৩৫ বছর বয়সী তারকা পেসার মিচেল স্টার্ক ফিরেছেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দলে। গত বছর নভেম্বরে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেন এই বাঁহাতি পেসার। বাদ পড়েছেন ব্যাটসম্যান মারনাস লাবুশেন। এ সিরিজ দিয়ে ওয়ানডেতে অভিষেক হতে পারে স্কোয়াডে ডাক পাওয়া ২৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান ম্যাট রেনশর। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ১৯ অক্টোবর পার্থে।

ওয়ানডে সিরিজের পর ভারতের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজও খেলবে অস্ট্রেলিয়া। এ সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচের স্কোয়াডও ঘোষণা করেছে সিএ। চোট থেকে সেরে না ওঠায় গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের বাইরে রাখা হয়েছে। ৩১ বছর বয়সী নাথান এলিসকে ফেরানো হয়েছে এই সংস্করণে। ২৯ অক্টোবর ক্যানবেরায় অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ।

অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে স্কোয়াড:মিচেল মার্শ (অধিনায়ক), হ্যাভিয়ের বার্টলেট, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটকিপার), কুপার কনোলি, বেন ডওয়ারশুইস, নাথান এলিস, ক্যামেরন গ্রিন, জশ হ্যাজলউড, ট্র্যাভিস হেড, জশ ইংলিশ (উইকেটকিপার), মিচেল ওয়েন, ম্যাট রেনশ, ম্যাথু শর্ট, মিচেল স্টার্ক ও অ্যাডাম জ্যাম্পা।

লাবুশেনের ওয়ানডে স্কোয়াড থেকে বাদ পড়াটা প্রত্যাশিতই ছিল। এই সংস্করণে সর্বশেষ ১০ ইনিংসে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ৪৭। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে রান পাওয়ায় ওয়ানডে স্কোয়াডে ডাক পেয়েছেন রেনশ। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের হয়ে সেঞ্চুরি করেন রেনশ। ২০২২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে স্কোয়াডে ডাক পেলেও সেবার অভিষেকের সুযোগ পাননি তিনি।

আরও পড়ুনটি–টোয়েন্টিতে ছক্কাবাজি: পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশ২ ঘণ্টা আগে

সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে শেফিল্ড শিল্ডে ম্যাচ থাকায় পার্থে প্রথম ওয়ানডেটি খেলতে পারবেন না উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ক্যারি। অ্যাশেজ সামনে রেখে লাবুশেনেরও শেফিল্ড শিল্ডে রান করে টেস্ট দলে ফেরার সুযোগ আছে। তাসমানিয়ার বিপক্ষে ১৬০ রানের ইনিংসে মৌসুমে শুরুটা দারুণ করেছেন লাবুশেন।

ওয়ানডে স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছেন লাবুশেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ