ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দিয়েছে: নেতানিয়াহু
Published: 8th, October 2025 GMT
শোক, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের প্রাণঘাতী হামলার বর্ষপূর্তি পালন করছেন ইসরায়েলবাসী। দিবসটি উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেছে ইসরায়েলে প্রধানমন্ত্রী দপ্তর।
বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের গাজায় গত দুই বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধকে ‘আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা ও ভবিষ্যতের জন্য যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেন।
নেতানিয়াহু আরও বলেন, ইসরায়েল ‘মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দিয়েছে’। সেই সঙ্গে এ অঞ্চলে ইরানের জোটবদ্ধ শক্তিগুলোকে রুখে দিয়েছে।
আরও পড়ুনএকদিকে আলোচনা, অন্যদিকে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল ১ ঘণ্টা আগেইসরায়েলের নাগরিকদের উদ্দেশে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্তের নেওয়ার দুর্ভাগ্যজনক দিনে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যুদ্ধের সব লক্ষ্য অর্জনে কাজ চালিয়ে যাব। এর মধ্যে রয়েছে: সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা, হামাসের শাসনের অবসান ঘটানো এবং গাজা যাতে আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয়, সেটা নিশ্চিত করা।’
বিবৃতিতে চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনার কথা উল্লেখ করা হয়নি। সেই সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকা থেকে পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়া হবে কিনা, সেই বিষয়েও কিছু বলা হয়নি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। ওই দিন থেকেই গাজায় টানা নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬৭ হাজার ১৭৩ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২০ হাজার ১৭৯ জন শিশু। একই সময়ে আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
আরও পড়ুননেতানিয়াহুর এই কথা কি সত্যি১৪ ঘণ্টা আগেহত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি গাজা অবরোধ করে সেখানে খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো জরুরি পণ্য প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এতে দুই বছরে অনাহারে উপত্যকাটিতে ৪৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৫৪টিই শিশু। খাবার না পেয়ে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে গাজার পাঁচ বছরের কম বয়সী ৫১ হাজার ১০০ জনের বেশি শিশু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজার ৩৮টি হাসপাতালের ২৫টিই ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। ৯২ শতাংশ আবাসিক ভবন ধ্বংস করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় আলোচকদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বললেন ট্রাম্প০৫ অক্টোবর ২০২৫আরও পড়ুনমিসরে ইসরায়েল ও হামাসের প্রথম দিনের আলোচনায় কী হলো ১৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসলামে পুরুষের জন্য স্বর্ণের অলঙ্কার পরা কেন বৈধ নয়
ইসলাম মানব সমাজে শালীনতা, পরিমিতি ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার ধর্ম। এটি শুধু ইবাদত নয়, বরং জীবনযাত্রার নান্দনিক ও নৈতিক দিকগুলোও নির্ধারণ করে। পুরুষ ও নারীর পোশাক, আচরণ, অলঙ্কার—সব ক্ষেত্রেই ইসলাম একটি স্পষ্ট পার্থক্য রেখেছে।
এর অন্যতম উদাহরণ হলো পুরুষের জন্য স্বর্ণ (Gold) পরিধান নিষিদ্ধকরণ। এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুশাসন নয়; বরং এটি সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও নৈতিক ভারসাম্য রক্ষার প্রজ্ঞায় ভরপুর এক বিধান।
কোরআনের নির্দেশনা ও ব্যাখ্যাযদিও কোরআনে সরাসরি পুরুষদের স্বর্ণ পরার নিষেধাজ্ঞা নেই, তবে এতে সাজসজ্জার সীমা ও শালীনতার নীতি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত। আল্লাহ বলেন, “বল, কে হারাম করেছে আল্লাহর সৌন্দর্যোপকরণ, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র জীবনোপকরণ।” (সুরা আ‘রাফ, আয়াত: ৩২)
সাজসজ্জা বৈধ, তবে তা এমনভাবে হতে হবে যাতে শরিয়তের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম না করে। পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ও রেশম সেই সীমা অতিক্রমের অন্তর্ভুক্ত।ইবনে কাসির (রহ.), তাফসির ইবনে কাসিরইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, “সাজসজ্জা বা সৌন্দর্যোপকরণ বৈধ, তবে তা এমনভাবে হতে হবে যাতে শরিয়তের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম না করে। পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ও রেশম সেই সীমা অতিক্রমের অন্তর্ভুক্ত।” (তাফসির ইবনে কাসির, সংশ্লিষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা)
অতএব, কোরআনের সাধারণ নীতিমালা থেকেই বোঝা যায়—যে সাজসজ্জা নারীদের জন্য বৈধ, পুরুষদের জন্য তা নিষিদ্ধ হতে পারে। হতে পারে তা নারীর অনুকরণের কারণে অথবা বিলাসিতা সৃষ্টি করার কারণে।
আরও পড়ুনইসলামি দিনারের উদ্ভব এবং ইতিহাসের প্রথম মুদ্রাযুদ্ধ১৪ জুন ২০২৫হাদিসে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞারাসুল (সা.)-এর জীবন থেকে আমরা এই নিষেধাজ্ঞার সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ পাই। আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) বলেন, “নবীজি রেশম ও স্বর্ণ পরিধান থেকে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন — ‘এই দুটি জিনিস আমার উম্মতের নারীদের জন্য বৈধ, কিন্তু পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ।’” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৫৭; সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৫৯৫)
ইবনে আব্বাস (রা.) একটি হাদিসে বর্ণনা করেন, “নবীজি এক ব্যক্তির হাতে স্বর্ণের আংটি দেখে তা খুলে ফেলে দেন এবং বলেন, ‘তুমি কি (দোজখের) আগুনের টুকরা হাতে নিতে চাও?’” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০৯০)
বুরাইদাহ (রা.) বলেন, “নবীজি পুরুষদের জন্য স্বর্ণের আংটি পরা হারাম করেছেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮৬৩)
চারটি প্রধান মাজহাব—হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি—সবগুলোর আলেমগণ একমত যে, পুরুষদের জন্য স্বর্ণ পরা বৈধ নয়।এগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে পুরুষদের জন্য স্বর্ণের ব্যবহার শরীয়তসম্মত নয়, বরং এটি জাহান্নামের আগুনের প্রতীক হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।
ফিকহি ব্যাখ্যা ও ঐক্যমতচারটি প্রধান মাজহাব—হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি—সবগুলোর আলেমগণ একমত যে, পুরুষদের জন্য স্বর্ণ পরা বৈধ নয়।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন: “পুরুষের জন্য স্বর্ণ বা রেশমের কোনো অংশ বৈধ নয়, যদি না যুদ্ধ বা চিকিৎসায় প্রয়োজন পড়ে।”
ইমাম নববী (রহ.) বলেন: “এই নিষেধাজ্ঞা এমন মাত্রায় প্রযোজ্য যে, স্বর্ণের সামান্য অংশও পরিধান করা জায়েয নয়।” (শারহ মুসলিম, খণ্ড ১৪, পৃ. ৩২)
আরও পড়ুনকেনা জমিতে খুঁড়ে পাওয়া গেল সোনা২৩ অক্টোবর ২০২৩নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ বিষয়ে পণ্ডিতদের ব্যাখ্যাইমাম গাজালি (রহ.) তাঁর বলেন, “পুরুষের জন্য স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে, যাতে নারী-পুরুষের বাহ্যিক রূপে পার্থক্য বজায় থাকে এবং পুরুষ অহংকার, বিলাসিতা ও আত্মম্ভরিতার পথে না যায়।” (ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, খণ্ড ২, পৃ. ৩১২)
ইবনে কাইয়িম জাওযি (রহ.) বলেন, “স্বর্ণের প্রতি আসক্তি আত্মতৃপ্তি ও অহংকারের প্রতীক, যা পুরুষের বিনয় ও আধ্যাত্মিক চরিত্রকে দুর্বল করে।” (ইলামুল মুওয়াক্কি‘ইন, খণ্ড ১, পৃ. ৪৮৬)
এই দৃষ্টিকোণ থেকে, স্বর্ণ নিষিদ্ধকরণ পুরুষের আত্মসংযম, বিনয় ও মানসিক শক্তি রক্ষার এক মাধ্যম। তা ছাড়া স্বর্ণ সাধারণত সৌন্দর্য, বিলাসিতা ও সামাজিক মর্যাদার প্রতীক। ইসলাম চায় না পুরুষ বাহ্যিক অলঙ্কারে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করুক; বরং তার মর্যাদা নির্ধারিত হোক চরিত্র, জ্ঞান ও দায়িত্ববোধে।
পুরুষের জন্য স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে, যাতে নারী-পুরুষের বাহ্যিক রূপে পার্থক্য বজায় থাকে এবং পুরুষ অহংকার, বিলাসিতা ও আত্মম্ভরিতার পথে না যায়।ইমাম গাজালি (রহ.), ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, ২/৩১২মনোবিজ্ঞানী কারেন হর্নাই (Karen Horney) তার Neurosis and Human Growth গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “যেসব সমাজে পুরুষরা বাহ্যিক সৌন্দর্য ও অলঙ্কারকে পরিচয়ের অংশ বানায়, সেখানে পুরুষত্বের ধারণা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আত্মমর্যাদাবোধ হ্রাস পায়।”
ইসলাম এই মানব-মনস্তাত্ত্বিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে পুরুষকে আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য ও নৈতিক দৃঢ়তা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করেছে।
আধুনিক ইসলামি চিন্তাবিদদের মধ্যে ইউসুফ কারজাভি বলেন, “স্বর্ণ পুরুষের জন্য মানানসই নয়; এটি পার্থিব সৌন্দর্যের প্রতীক, আর ইসলাম পুরুষকে আত্মিক সৌন্দর্যের দিকে আহ্বান করে।” (আল-হালাল ওয়াল-হারাম ফিল ইসলাম, পৃ. ৭৩)
বিকল্প ব্যবস্থা: রুপা পরিধানরাসুল (সা.) নিজে রুপার আংটি পরতেন। হাদিসে আছে, “রাসুল (সা.)-এর একটি রুপার আংটি ছিল, যার পাথরে লেখা ছিল ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’।’’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮৭৭)
সুতরাং, রুপা পরিধান পুরুষের জন্য বৈধ, তবে সেটিও অহংকার ও প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নয়, বরং সরলতার প্রকাশ হিসেবে।
পুরুষের জন্য স্বর্ণ পরিধান নিষিদ্ধকরণ ইসলামের গভীর সমাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। এই নিষেধাজ্ঞা পুরুষকে বিলাসিতা ও বাহ্যিক আভিজাত্য থেকে দূরে রেখে আত্মিক উন্নয়ন, বিনয় ও দায়িত্ববোধে উদ্বুদ্ধ করে।
ইসলাম পুরুষের মর্যাদা নির্ধারণ করেছে তার তাকওয়া, সততা ও কর্মে; স্বর্ণের অলঙ্কারের মাধ্যমে নয়।
আরও পড়ুনওসমানিয়া নারীদের মিথ ও বাস্তবতা১৯ জুন ২০২৫