দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ও লাগাতার কর্মসূচির অবসান ঘটিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনী প্রচার আবার শুরু হয়েছে। শিক্ষক ও কর্মকর্তারা আপাতত কোনো নতুন আন্দোলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কেটেছে। অবশেষে আগামী ১৬ অক্টোবর নির্বাচন  অনুষ্ঠিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

এদিকে, শঙ্কা কেটে যাওয়ায় নির্বাচন কমিশন, প্রার্থী ও সংশ্লিষ্টরা স্বস্তিবোধ করছেন। তাদের ধারণা, একটি উৎসবমুখর পরিবেশে রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আরো পড়ুন:

জাবিতে অনুষ্ঠিত হবে দুই দিনব্যাপী বিজ্ঞান উৎসব

নোয়াখালী কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চান ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনার পরই এই স্বস্তির খবর এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, “প্রশাসন রাকসুর আগে কোনো কর্মসূচি না দিতে অনুরোধ করে। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি ছিল, শিক্ষক ও ক্যাম্পাসের পুরোপুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িতদের বিচার করা। প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছে। এজন্য রাকসু নির্বাচনের স্বার্থে আমাদের আপাতত কোনো কর্মসূচি নেই।”

এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রাকসু নির্বাচনের আগে কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতির সভাপতি মো.

মোক্তার হোসেন বলেন, “আমরা রাকসু নির্বাচনের আগে আর কোনো কর্মসূচি দিচ্ছি না। এখন কর্মসূচির কারণে নির্বাচন আটকে গেলে আমাদের দোষারোপ করা হবে। আমরা রাকসু নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করব। পূর্ণ সহযোগিতাও থাকবে।”

রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, “রাকসু নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের কর্মসূচি দেবেন না বলে শিক্ষক-কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন। তারা নির্বাচনে পূর্ণ সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন। তাই নির্বাচন নিয়ে আর শঙ্কা দেখা যাচ্ছে না।”

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে যেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা নতুন করে কোনো কর্মসূচি না দেন, তা নিয়ে তৎপর ছিল প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর ৫ অক্টোবর প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হয়। সেখানে উপাচার্য নির্বাচনের আগে কর্মসূচি না দিতে অনুরোধ করেন।

এর আগে, সাত কর্মদিবসের মধ্যে দাবি আদায়ের আল্টিমেটাম দিয়ে লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি স্থগিত করেছিল অফিসার্স সমিতি। অন্যদিকে, উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তির দাবি জানিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করেছিল জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর অফিসার্স সমিতি ও পর দিন ২৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক ফোরাম কর্মসূচি স্থগিত করেছিল। মাঝে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি ছিল। ৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর প্রশাসন শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফা বসে রাকসুর আগে আর কোনো কর্মসূচি না দেওয়ার আহ্বান জানায়।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ১০ শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ২০ সেপ্টেম্বর জুবেরী ভবনে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম ও কর্মকর্তারা পোষ্য কোটা পুনর্বহাল এবং শিক্ষক লাঞ্ছনাকারীদের শাস্তির দাবিতে এক দিনের কর্মবিরতি পালন করেন। তারপর তা অনির্দিষ্টকালের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে রূপ নেয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে জরুরি সিন্ডিকেট সভা হয়। সভায় পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপরও শিক্ষক-কর্মকর্তারা লাগাতার কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাকসু নির্বাচন ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করতে বাধ্য হয় নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ অক্টোবর।

এদিকে, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নতুন করে কর্মসূচি না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।

ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন বলেন, “রাকসু নির্বাচন নিয়ে একটা শঙ্কা ছিল। যদিও শিক্ষার্থীরা রাকসু আদায় করে নিত। কেউ যদি বানচালের ষড়যন্ত্রও করত, শিক্ষার্থীরা উৎখাত করত। শিক্ষার্থীদের মাঝে যে আমেজ, তা কোনোভাবেই নষ্ট হতে দেবো না আমরা। ১৬ তারিখেই ভোট হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও রাকসু ভিপি প্রার্থী মুস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, “শিক্ষক-কর্মকর্তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমরা তাদের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। রাকসু সবার অধিকার, এটা সঠিক সময়ে হতেই হবে। শুরু থেকেই একটা গোষ্ঠী নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে আসছে। তবে সব চেষ্টা ব্যার্থ করে আমরা আমাদের আদায় করে নেব।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স প ট ম বর অন ষ ঠ ত আম দ র ত কর ছ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন মির্জা আব্বাস, রিজভীসহ ১৬৭ জন

সাত বছর আগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, তাঁর স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ১৬৭ ব্যক্তি।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ সাব্বির ফয়েজ আজ সোমবার এ আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরী।

মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকার সড়ক বন্ধ করে মিছিল করা, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি ও পুলিশকে মারধরের অভিযোগে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর মামলাটি করা হয়। পল্টন থানায় মামলাটি করে পুলিশ। মামলায় মির্জা আব্বাস, তাঁর স্ত্রী আফরোজা আব্বাসসহ অন্যদের আসামি করা হয়। মামলায় সম্প্রতি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। এতে মামলা থেকে ১৬৭ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়। আদালত পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মির্জা আব্বাসসহ অন্যদের মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন।

আরও পড়ুনমাকে ৩৬ কোটি টাকার শেয়ার উপহার দিলেন মির্জা আব্বাসের ছেলে০৫ অক্টোবর ২০২৫

মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া অন্যদের মধ্যে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব প্রমুখ।

আরও পড়ুননির্বাচন সামনে রেখে আরও অনেক কিছু দেখতে পাবেন: মির্জা আব্বাস০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ