রাজশাহীতে বিপিএল আয়োজনে উদ্যোগী বিসিবি
Published: 12th, October 2025 GMT
উত্তরের জেলা রাজশাহীতে বিপিএল করতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
রবিবার (১২ অক্টোবর) রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামের অবকাঠামোসহ সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পরিদর্শন করেন বিসিবির তিন শীর্ষ কর্মকর্তা।
পরে তারা জানিয়েছেন, বিপিএল বা বড় টুর্নামেন্ট করতে স্টেডিয়ামটির ৭০ ভাগ সক্ষমতা আছে। আগামী এক মাসে বাকি কাজ স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
সম্প্রতি রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং দলের মধ্যকার ক্রিকেট সিরিজে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় হয়। এতে রাজশাহীতে বিপিএল করার পুরোনো আলোচনা আবারো ত্বরান্বিত হয়। এরপর ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল রাজশাহী স্টেডিয়ামে এসে মনোমুগ্ধকর পিচ, আউটফিল্ড দেখে বিপিএল করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এরপর বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন শেষে নতুন কমিটি, উত্তরের এ জেলাটিতে বিপিএল করার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সচেষ্ট হন। তারই ধারাবাহিকতায় রবিবার সকালে রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামের অবকাঠামোসহ সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পরিদর্শন করেন বিসিবির তিন শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফ্যাসিলিটিস কমিটির চেয়ারম্যান শাহনিয়ান তানিম, পরিচালক (অডিট) মোখলেসুর রহমান শামীম ও পরিচালক খালেদ মাসুদ পাইলট।
এদিনে সকালে কর্মকর্তারা স্টেডিয়াম ঘুরে দেখেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন, ১২০ জনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রেস গ্যালারি, ধারা ভাষ্যকার বক্স, স্টুডিও, স্কোর রুম, দুটি রেডিও রুম, ডাউনলিংক রুম, ব্রডকাস্ট পিসিআর রুম, ব্রডকাস্ট ও প্রেস ডাইনিং, জায়ান্ট স্ক্রিন স্থাপন করা প্রয়োজন।
এছাড়া ২০টি মোবাইল টয়লেটসহ গ্যালারির টয়লেট সংস্কার, স্টেডিয়াম সার্কুলার রোডের উন্নয়ন ও পুরো স্টেডিয়ামে রং করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুম স্থানান্তরিত করে প্যাভিলিয়নের নিচতলায় এবং ফ্লাডলাইট সংস্কারেরও সিদ্ধান্ত নেন তারা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফ্যাসিলিটিস কমিটির চেয়ারম্যান শাহনিয়ান তানিম বলেন, “বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে এই স্টেডিয়ামের ৭০ ভাগ সক্ষমতা আছে। আগামী এক মাসে বাকিটা করার পরিকল্পনা তাদের। তারা প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আগামী সমন্বয় সভায় তা পর্যালোচনা করা হবে। এতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে সংস্কার ব্যয় এবং কাজের সময়সূচি তৈরি করবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
মাঠ পরিদর্শন শেষে খেলোয়াড়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকার জায়গা, অনুশীলনের মাঠসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা দেখেন বিসিবি কর্মকর্তারা।
রাজশাহী বিভাগীয় এই স্টেডিয়ামে বিপিএলসহ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করতে এর আগে অন্তত নয় বার এমন আনুষ্ঠানিক পরিদর্শন করেছে বিসিবি। সেসব পরিকল্পনা আর প্রতিবেদন ফাইলে বন্দি থাকায়, বাস্তবায়ন হয়নি।
ঢাকা/কেয়া/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত কর র প
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে পুকুর ভরাট বন্ধে অভিযান, পুনঃখননের উদ্যোগ
রাজশাহী নগরে ভরাট হয়ে যাওয়া একটি পুকুর পুনঃখনন শুরু করেছে প্রশাসন। নগরের মোল্লাপাড়া মৌজায় ৬৩ শতাংশ জায়গার পুকুরটি কয়েকদিন ধরে ভরাট চলছিল। ইতোমধ্যে পুকুরটির সিংহভাগ ভরাট করে ফেলা হয়। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে অভিযানে যান। তার আগে পুকুর ভরাটের সঙ্গে জড়িতরা পালিয়ে যায়।
অভিযানে নিজেই গিয়েছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার আ. ন. ম. বজলুর রশীদ। তিনি জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ হলেও যারা এই কাজ করছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি পুনঃখননের খরচ পুকুর খেকোদের কাছ থেকে আদায় করা হবে বলেও জানান তিনি।
আরো পড়ুন:
ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানে বাধা, এনসিপি নেতাকে আসামি করে মামলা
কুষ্টিয়ার চরাঞ্চলে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৯
বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে ছিলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক তাছমিনা খাতুন, সহকারী পরিচালক মো. কবির হোসেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) নগর পরিকল্পক মো. রাহেনুল ইসলাম রনী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মহিনুল হাসান, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ, রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন ও জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার এসএম রকিবুল হাসান।
পুকুরপাড়ে গিয়ে বিভাগীয় কমিশনার নির্দেশ দেন, পুকুরটি আগে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এরপর খননযন্ত্র দিয়ে ভরাট করা মাটি তুলে পুকুরটি পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়। পুকুর পুনঃখনন না হওয়া পর্যন্ত সেখানে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন বলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এলাকার লোকজন জানান, খাইরুল ইসলাম খোকন ও মাহমুদুল হাসান নামের দুই ব্যক্তি পুকুরটির মালিক। সম্প্রতি পুকুরটি ভরাট শুরু করেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। স্থানীয়রা বিষয়টি গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) বোয়ালিয়া থানার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেনকে জানান। এরপর তিনি গিয়ে সবাইকে সতর্ক করে আসেন। কিন্তু শনিবার (২২ নভেম্বর) থেকে পুরোদমে ভরাট কাজ চলতে থাকে। এ অবস্থায় স্থানীয়রা বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনারকে অবহিত করেন। অভিযোগ পেয়ে বিভাগীয় কমিশনার নিজে ওই পুকুর উদ্ধার করতে যান।
এ সময় বিভাগীয় কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি। সিটি করপোরেশন এলাকায় পুকুর ভরাট করা নিষিদ্ধ। তাই এ পুকুরটা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। এখানে যে ব্যয় হবে, সেটা আমরা পুকুর ভরাটকারীদের কাছ থেকে আদায় করব। এই পুকুর ভরাটের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় আর কোনো পুকুর ভরাট হবে না। আমরা খবর পেলে বন্ধ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনব।’’
পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক তাছমিনা খাতুন বলেন, ‘‘এই পুকুর ভরাটের খবর পেয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমরা স্পটে এসে কাউকে পাইনি। তারপরও যাদের নামে এ জমি আছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত মামলা করব। এরপর থেকে কেউ কোনো পুকুর ভরাট করতে পারবে না।’’
একসময় রাজশাহী শহরে অসংখ্য পুকুর ছিল। কিন্তু অল্প কিছু পুকুর ছাড়া সবই ভরাট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ ২০১৪ সালে হাইকোর্টে রিট করে। তখন বোয়ালিয়া ভূমি কার্যালয় গণনা করে নগরে ৯৫২টি পুকুরের অস্তিত্ব পায়। ২০২২ সালের ৮ আগস্ট হাইকোর্ট এই পুকুরগুলো সংরক্ষণসহ কয়েকটি নির্দেশনা দেন। রাজশাহী শহরে আর কোনো পুকুর যেন ভরাট না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়।
পাশাপাশি ভরাট হওয়া পুকুরগুলো পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনারও নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। সিটি মেয়র, পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। কিন্তু ওই নির্দেশনার পরও শহরে একের পর এক পুকুর ভরাট হয়েছে। দীর্ঘ সময়েও একটি পুকুরও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়নি।
সবশেষ গত মার্চে নগরের ঘোষপাড়া মোড় এলাকায় ‘জোড়া পুকুর’ নামের একটি পুকুরের আংশিক উদ্ধার করা হয়। প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা আয়তনের পুকুরটি অল্প অল্প করে ভরাট করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে নগরের বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করেন। এ পুকুরটি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সংরক্ষণের তালিকায়ও আছে। পুকুরটির প্রায় ১০ কাঠা পুনঃখনন করা হয়। এরপর মোল্লাপাড়া এলাকার এ পুকুরটির পুরোটিই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
ঢাকা/কেয়া/বকুল