রাজশাহীতে পুকুর ভরাট বন্ধে অভিযান, পুনঃখননের উদ্যোগ
Published: 25th, November 2025 GMT
রাজশাহী নগরে ভরাট হয়ে যাওয়া একটি পুকুর পুনঃখনন শুরু করেছে প্রশাসন। নগরের মোল্লাপাড়া মৌজায় ৬৩ শতাংশ জায়গার পুকুরটি কয়েকদিন ধরে ভরাট চলছিল। ইতোমধ্যে পুকুরটির সিংহভাগ ভরাট করে ফেলা হয়। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে অভিযানে যান। তার আগে পুকুর ভরাটের সঙ্গে জড়িতরা পালিয়ে যায়।
অভিযানে নিজেই গিয়েছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার আ.
আরো পড়ুন:
ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানে বাধা, এনসিপি নেতাকে আসামি করে মামলা
কুষ্টিয়ার চরাঞ্চলে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৯
বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে ছিলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক তাছমিনা খাতুন, সহকারী পরিচালক মো. কবির হোসেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) নগর পরিকল্পক মো. রাহেনুল ইসলাম রনী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মহিনুল হাসান, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ, রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন ও জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার এসএম রকিবুল হাসান।
পুকুরপাড়ে গিয়ে বিভাগীয় কমিশনার নির্দেশ দেন, পুকুরটি আগে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এরপর খননযন্ত্র দিয়ে ভরাট করা মাটি তুলে পুকুরটি পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়। পুকুর পুনঃখনন না হওয়া পর্যন্ত সেখানে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন বলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এলাকার লোকজন জানান, খাইরুল ইসলাম খোকন ও মাহমুদুল হাসান নামের দুই ব্যক্তি পুকুরটির মালিক। সম্প্রতি পুকুরটি ভরাট শুরু করেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। স্থানীয়রা বিষয়টি গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) বোয়ালিয়া থানার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেনকে জানান। এরপর তিনি গিয়ে সবাইকে সতর্ক করে আসেন। কিন্তু শনিবার (২২ নভেম্বর) থেকে পুরোদমে ভরাট কাজ চলতে থাকে। এ অবস্থায় স্থানীয়রা বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনারকে অবহিত করেন। অভিযোগ পেয়ে বিভাগীয় কমিশনার নিজে ওই পুকুর উদ্ধার করতে যান।
এ সময় বিভাগীয় কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি। সিটি করপোরেশন এলাকায় পুকুর ভরাট করা নিষিদ্ধ। তাই এ পুকুরটা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। এখানে যে ব্যয় হবে, সেটা আমরা পুকুর ভরাটকারীদের কাছ থেকে আদায় করব। এই পুকুর ভরাটের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় আর কোনো পুকুর ভরাট হবে না। আমরা খবর পেলে বন্ধ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনব।’’
পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক তাছমিনা খাতুন বলেন, ‘‘এই পুকুর ভরাটের খবর পেয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমরা স্পটে এসে কাউকে পাইনি। তারপরও যাদের নামে এ জমি আছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত মামলা করব। এরপর থেকে কেউ কোনো পুকুর ভরাট করতে পারবে না।’’
একসময় রাজশাহী শহরে অসংখ্য পুকুর ছিল। কিন্তু অল্প কিছু পুকুর ছাড়া সবই ভরাট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ ২০১৪ সালে হাইকোর্টে রিট করে। তখন বোয়ালিয়া ভূমি কার্যালয় গণনা করে নগরে ৯৫২টি পুকুরের অস্তিত্ব পায়। ২০২২ সালের ৮ আগস্ট হাইকোর্ট এই পুকুরগুলো সংরক্ষণসহ কয়েকটি নির্দেশনা দেন। রাজশাহী শহরে আর কোনো পুকুর যেন ভরাট না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়।
পাশাপাশি ভরাট হওয়া পুকুরগুলো পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনারও নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। সিটি মেয়র, পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। কিন্তু ওই নির্দেশনার পরও শহরে একের পর এক পুকুর ভরাট হয়েছে। দীর্ঘ সময়েও একটি পুকুরও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়নি।
সবশেষ গত মার্চে নগরের ঘোষপাড়া মোড় এলাকায় ‘জোড়া পুকুর’ নামের একটি পুকুরের আংশিক উদ্ধার করা হয়। প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা আয়তনের পুকুরটি অল্প অল্প করে ভরাট করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে নগরের বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করেন। এ পুকুরটি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সংরক্ষণের তালিকায়ও আছে। পুকুরটির প্রায় ১০ কাঠা পুনঃখনন করা হয়। এরপর মোল্লাপাড়া এলাকার এ পুকুরটির পুরোটিই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
ঢাকা/কেয়া/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য ন র অবস থ য় ফ র য় প ক র ভর ট প ন খনন ব যবস থ র ট কর এল ক য় ভর ট ক খবর প সহক র নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের অফিসের সাইনবোর্ডে আগুন
কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় গ্রামীণ ব্যাংকের আঞ্চলিক অফিসের সাইনবোর্ডে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আজ রোববার ভোরে শহরের পিটিআই সড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে।
বিপ্লব দাস নামে ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি ব্যাংকের ভেতরেই ছিলাম। রাত ১২টার পর ঘুমিয়ে পড়ি। এরপর আর কিছুই টের পাইনি। সকালে উঠে দেখি, অফিসের সাইনবোর্ডে আগুন দেওয়া হয়েছে।’
আজ সকালে পিটিআই সড়কে অবস্থিত গ্রামীণ ব্যাংকের ওই আঞ্চলিক শাখায় গিয়ে দেখা যায়, চারতলা ভবনের নিচতলায় অফিস। কয়েক শ গজ দূরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ি (পরিত্যক্ত)। গ্রামীণ ব্যাংকের অফিসের গ্রিলে টাঙানো সাইনবোর্ডের নিচের অংশে পোড়া দাগ আছে। তবে আগুন দেওয়ার বিষয়ে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটেরা কেউ কিছু দেখেননি বলে জানান। এরপর দুপুর ১২টার দিকে গিয়ে অফিসে কাউকে পাওয়া যায়নি। সাইনবোর্ডও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। আগুনের তেমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। শুধু সাইনবোর্ডে পোড়া চিহ্ন আছে। কেউ কিছুই বলতে পারেননি। ধারণা করছি, রাতে রাস্তায় টায়ারে আগুন দেওয়া হয়েছিল। সেই আগুনের আঁচ সাইনবোর্ডে লেগেছে। আগুন কেউ দেখেননি। কেউ নেভাননি। তবে এ বিষয়ে মামলা দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে গত শুক্রবার ভোরে কুমারখালী উপজেলার চৌরঙ্গী বাজার এলাকায় গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা অফিসে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ঘটনাস্থল থেকে এক বোতল পেট্রল জব্দ করে পুলিশ।