‘নোট অব ডিসেন্টগুলো’ লিপিবদ্ধ হলে বিএনপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে: মির্জা ফখরুল
Published: 16th, October 2025 GMT
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা (বিএনপি) অবশ্যই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব; যদি যে কথাগুলো আমরা বলছি, সেগুলো যদি লিপিবদ্ধ করা হয়। যেগুলোতে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দিয়েছি, সেগুলো যদি লিপিবদ্ধ করা হয়।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের বন্দর এলাকায় উপজেলা বিএনপি আয়োজিত এক পথসভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছেন, বিএনপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে কি না? আরেকটু অপেক্ষা করেন। ওই দল দুটি বলে দিয়েছে, পিআর যদি না হয়, তাহলে তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না। আমরা কিন্তু সেই কথা বলিনি। বলেছি, আমরা অবশ্যই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব, যদি আমরা যে কথাগুলো বলেছি, সেগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়। যেগুলোতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি, সেগুলোও যদি লিপিবদ্ধ করা হয়।’
সবাইকে অপেক্ষার করার পরামর্শ দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কিন্তু গণভোট মেনে নিয়েছি। জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট হবে। আমরা এখন পর্যন্ত অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে চলেছি। আগামী দিনেই জানতে পারবেন, বিএনপি সনদে স্বাক্ষর করবে কি না? এত অস্থির হবেন না, একটু অপেক্ষা করেন। একটু টেনশন থাকা ভালো।’
আরও পড়ুনস্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়ার সুপারিশ, তাই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না সিপিবিসহ চার দল৪ ঘণ্টা আগেবিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি দেশে ফিরে এলেই জনগণের মধ্যে যে উত্তাল সমুদ্র সৃষ্টি হবে, সেই উত্তালে সব অপশক্তি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
জাতির সামনে সুযোগ সব সময় আসে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সামনে যে সুযোগ এসেছে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার এবং আমাদের ভবিষ্যৎকে গণতন্ত্রের পথে চলতে দেওয়ার—আমরা সেই সুযোগ গ্রহণ করব।’
আরও পড়ুনজুলাই সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ পরেও থাকবে, সংবাদ সম্মেলনে আলী রীয়াজ১ ঘণ্টা আগেমির্জা ফকরুল আরও বলেন, বিএনপির পরীক্ষিত রাজনৈতিক দল। যার জন্ম হয়েছে সংস্কারের মধ্য দিয়ে, গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে। বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিএনপিই সংবিধানের সন্নিবেশ করেছিল। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চার–চারবার সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। পরে শেখ হাসিনা সেটা বন্ধ করে দেয়। কারণ, তারা জানে, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা জিততে পারবে না।
আরও পড়ুনসনদে সই করব কি না অনুষ্ঠানে গেলে দেখতে পারবেন: তাহের১৫ অক্টোবর ২০২৫এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুর রহমান, রানীশংকৈল উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান আলী, সাধারণ সম্পাদক আল্লামা আল ওয়াদুদ বিন নুর আলিফসহ বিএনপির নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনআইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অংশীদার হবে না এনসিপি: নাহিদ ইসলাম৯ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ গণতন ত র ব এনপ র ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক জনসভায় জনসাধারণের ভোগান্তির কথা কে ভাবে
রাজনৈতিক জনসভা গণতন্ত্রচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ নিয়ে তেমন দ্বিমতও থাকার কথা নয়। দলগুলো তাদের শক্তি প্রদর্শন, কর্মসূচি ঘোষণা কিংবা জনগণের মতামত জানাতে এসব আয়োজন করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব আয়োজনের কারণে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন কতটা ব্যাহত হয়, তা কি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি?
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ‘সময়’ সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে, এসব রাজনৈতিক সমাবেশ ঘিরে মানুষের সময় নিয়ে ভোগান্তির শেষ থাকে না। এসব জনসভা বা সমাবেশের ফলে যখন রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়, যান চলাচল সীমিত হয়, তখন অফিসগামী কিংবা শ্রমজীবী মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে কাটাতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্কুলগামী শিশুদেরও নির্ধারিত সময়ে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স প্রচণ্ড বিপাকে পড়ে জরুরি রোগীকে হাসপাতালে নিতে গিয়েও নানা বাধার মুখোমুখি হতে হয়, যা কখনো কখনো জীবনহানির ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। এটি অত্যন্ত চিন্তা ও উদ্বিগ্নের বিষয়।
শুধু যানজটই নয়, লাউডস্পিকারের অতিরিক্ত শব্দ মানুষকে মানসিকভাবে ক্লান্ত করে। বয়স্ক, অসুস্থ কিংবা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য এটি আরও বেশি কষ্টদায়ক। পাশাপাশি মাইকিং, ভিড় ও সড়ক দখল—সব মিলিয়ে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল দুরূহ হয়ে পড়ে, যা গণতন্ত্রের জন্য কোনোভাবেই ভালো বার্তা নয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্য অবশ্যই জনস্বার্থে হওয়া উচিত। তাই জনসভার পাশাপাশি মানুষের দৈনন্দিন জীবন যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকও সমান গুরুত্ব পাওয়া জরুরি। আমরা জানি, অনেক দেশেই রাজনৈতিক দলগুলো বড় সমাবেশ নির্দিষ্ট মাঠ বা খোলা স্থানে আয়োজন করে থাকে, যা আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
জনপ্রিয়তা বা শক্তি প্রদর্শনের চেয়ে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখা অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। কেননা, গণতন্ত্রের শক্তি মানুষের অংশগ্রহণে, কিন্তু সেই অংশগ্রহণ যেন মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে না তোলে এই সচেতনতা রাজনীতি ও প্রশাসন উভয়েরই থাকা প্রয়োজন।
তৌহিদ-উল বারী
শিক্ষার্থী, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।