ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) পাঞ্জাব রাজ্যের রূপনগর রেঞ্জের উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) পদে কর্মরত এক জ্যেষ্ঠ আইপিএস কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে। আট লাখ টাকার ঘুষের অভিযোগ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। পরে এই মামলায় তাঁর মালিকানায় প্রায় ৫ কোটি রুপি, বিলাসবহুল গাড়ি, গয়না, দামি ঘড়িসহ বিশাল অবৈধ সম্পত্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

২০০৯ ব্যাচের আইপিএস কর্মকর্তা ডিআইজি হরচরণ সিং ভুল্লারকে তাঁর কথিত মধ্যস্থতাকারী কৃষ্ণ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিবিআই জানিয়েছে, ডিআইজি স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে করা ফৌজদারি মামলা ‘মিটমাট’ করতে এই মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ঘুষ দাবি করছিলেন এবং নিচ্ছিলেন। এ ছাড়া তিনি নিয়মিত মাসিক চাঁদা চাইতেন।

অভিযোগ ও অভিযান

পাঞ্জাবের ফতেহগড় সাহিবের আকাশ বাট্টা নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ী পাঁচ দিন আগে সিবিআইয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিলে গতকাল বৃহস্পতিবার মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। অভিযোগকারী ব্যক্তি জানান, ডিআইজি ভুল্লার তাঁর কাছে আট লাখ রুপি ঘুষ দাবি করেন। নইলে তাঁকে ব্যবসাসংক্রান্ত একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিলেন। পরে ‘মিটমাট’-এর জন্য মাসে মাসে টাকা দিতে থাকেন।

সিবিআইয়ের এফআইআর অনুযায়ী, ভুল্লার তাঁর সহযোগী কৃষ্ণার মাধ্যমে দেওয়া হয় অর্থ দিতে অভিযোগকারীকে বারবার চাপ দিচ্ছিলেন। জব্দ করা একটি কথোপকথনে কৃষ্ণকে বলতে শোনা যায়, ‘আগস্টের টাকা দেওয়া হয়নি, সেপ্টেম্বরের টাকা দেওয়া হয়নি।’

অভিযোগ প্রাথমিকভাবে যাচাইয়ের পর সিবিআই চণ্ডীগড়ের সেক্টর ২১-এ একটি ফাঁদ পাতে। অভিযানের সময় ডিআইজির পক্ষে অভিযোগকারীর কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার সময় কৃষ্ণকে হাতেনাতে আটক করা হয়।

কর্মকর্তারা জানান, টাকা হস্তান্তরের পরই অভিযোগকারী এবং ডিআইজির মধ্যে নিয়ন্ত্রিত একটি ফোনকলের ব্যবস্থা করা হয়। সেই কলে অফিসার টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত এবং দুজনকেই তাঁর অফিসে দেখা করতে নির্দেশ দেন।

এই প্রমাণের ভিত্তিতে সিবিআইয়ের দল ডিআইজি ভুল্লারকে তাঁর মোহালির অফিসে গিয়ে খুঁজে বের করে এবং অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

তল্লাশি ও উদ্ধার

গ্রেপ্তারের পর সিবিআই পাঞ্জাবের রূপনগর, মোহালি ও চণ্ডীগড়ে ভুল্লারের সঙ্গে যুক্ত একাধিক বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। এ সময় উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্রের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৫ কোটি রুপি, দেড় কেজি সোনা, পাঞ্জাবজুড়ে স্থাবর সম্পত্তির নথিপত্র, বিলাসবহুল মার্সিডিজ ও অডি গাড়ির চাবি।

এ ছাড়া আরও পাওয়া গেছে ২২টি দামি হাতঘড়ি, লকারের চাবি, আমদানি করা ৪০ লিটার মদ, আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ, যার মধ্যে রয়েছে একটি ডাবল-ব্যারেল শটগান, একটি পিস্তল, একটি রিভলবার ও একটি এয়ারগান।

কথিত মধ্যস্থতাকারী কৃষ্ণের বাড়ি থেকে সিবিআই অতিরিক্ত ২১ লাখ রুপি উদ্ধার করেছে।

প্রশ্নবিদ্ধ কর্মজীবন

২০০৯ ব্যাচের আইপিএস কর্মকর্তা ভুল্লার এর আগে পাতিয়ালা রেঞ্জের ডিআইজি, ভিজিল্যান্স ব্যুরোর যুগ্ম পরিচালক এবং মোহালি, সাঙ্গরুর, খান্না, হোশিয়ারপুর, ফতেহগড় সাহিব ও গুরুদাসপুরের সিনিয়র পুলিশ সুপারসহ (এসএসপি) বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০২১ সালে শিরোমণি আকালি দলের (এসএডি) নেতা বিক্রম সিং মাজিঠিয়ার বিরুদ্ধে আলোচিত মাদক পাচার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে বিশেষ তদন্ত দলের (এসআইটি) নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ভুল্লার। তিনি পাঞ্জাব সরকারের মাদক নেটওয়ার্ক ধ্বংসের লক্ষ্যে চালু মাদকবিরোধী অভিযান ‘যুদ্ধ নশিয়ান বিরুদ্ধ’-এও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

কর্মকর্তারা বলেন, ভুল্লার মোহালি, রূপনগর ও ফতেহগড় সাহিব জেলার তদারকির জন্য গত বছরের নভেম্বরে রূপনগর রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনি পাঞ্জাবের সাবেক ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিজিপি) এম এস ভুল্লারের ছেলে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র পনগর উদ ধ র স ব আই ড আইজ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

মিরপুরে আগুনের ঘটনায় শ্রমিকেরা ‘সেফ এক্সিট’ পাননি

রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হওয়ার এক দিন পরও পুলিশ এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বুধবার রাতে নিহত পোশাকশ্রমিক ছানোয়ার হোসেনের ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে আলম রাসায়নিকের গুদামের মালিক শাহ আলমসহ আটজনের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে রূপনগর থানায় মামলা করেন।

বৃহস্পতিবার রাতে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এজাহারভুক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন ‘আলম কেমিক্যাল গোডাউন’ নামের ওই রাসায়নিকের গুদামের ব্যবস্থাপক আকরাম, এভারগ্রিন কালার প্রিন্ট ফ্যাক্টরির মালিক, ব্যবস্থাপক, এনআরএস-ওয়াস ফ্যাক্টরির মালিক, এনআরএস-ওয়াস ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক, শাহ আলী ওয়াস ফ্যাক্টরি মালিক, শাহজালী ওয়াস ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

রূপনগর থানায় হওয়া মামলায় অভিযোগ করা হয়, শাহ আলম আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য শিয়ালবাড়ি আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অনুমোদনহীন ভবনে দাহ্য পদার্থ মজুত করেন। গত মঙ্গলবার এই গুদামে আগুন লাগলে তা দ্রুত আশপাশের ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এতে পাশের ভবনে থাকা এভারগ্রিন কালার প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, এনআরএস ওয়াস ফ্যাক্টরি ও শাহ আলী ওয়াস ফ্যাক্টরিতেও আগুন লাগে। আগুনের ভয়ে এসব কারখানার শ্রমিকেরা দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি করেন।

শ্রমিকেরা ভবনগুলো থেকে নামার কোনো সেফ এক্সিট পাননি। আবার কয়েকটি ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগানো ছিল। শ্রমিকেরা প্রাণ বাঁচাতে ভবনের ছাদে গিয়েও বের হতে পারেননি। সেখানেও তালা লাগানো ছিল। মামলার আসামিরা আবাসিক এলাকার ভবনগুলো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তাব্যবস্থা মাথায় না রেখে কারখানা পরিচালনা করে আসছিলেন। ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ–ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এতে আগুনে পুড়ে ১৬ জন শ্রমিক নিহত হন।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কারখানার যন্ত্রাংশ, কাঁচামালসহ বিভিন্ন রাসায়নিক এবং ঘটনাস্থলের পাশে থাকা ৩টি মোটরসাইকেল, ১৫টি গ্যাস সিলিন্ডার, রাস্তায় থাকা পিকআপের সামনের অংশসহ ২টি রিকশা পুড়ে যাওয়ায় প্রাথমিকভাবে ৩০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

১৬ মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন

শিয়ালবাড়িতে আগুনে পুড়ে নিহত ১৬ জনের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। তাঁদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রূপনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মুখলেছুর রহমান এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

বুধবার ছয় মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তাঁরা হলেন মাহিরা আক্তার (১৪), নার্গিস আক্তার (১৮), নুরে আলম (২৩), সানোয়ার হোসেন (২২), আবদুল্লাহ আল-মামুন (৩৯) ও রবিউল ইসলাম রবিন (১৯)।

বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়া ১০ মরদেহের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন মুনা আক্তার সামিরা (১৪), ফারজানা আক্তার (১৫) ও মুক্তা আক্তার (৩০)। বাকি এক নারী ও ছয় পুরুষের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিরপুরে আগুনের ঘটনায় শ্রমিকেরা ‘সেফ এক্সিট’ পাননি
  • রূপনগরে কেমিক্যাল গোডাউন থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে