ঘড়ির কাঁটায় যদি বাড়তি দুই মিনিট থাকত তাহলেই হতো! মুশফিকুর রহিমকে অন্তত অপেক্ষায় থাকতে হতো না। দিন শেষে ৯৯ রানে নট আউট থাকার যে মধুর যন্ত্রণা, অপেক্ষা; সেটা পেতে হতো না। তবুও মুখে চওড়া হাসি নিয়েই ফিরেছেন ড্রেসিংরুমে।

টেস্টের ইতিহাসে শততম ম‌্যাচে সেঞ্চুরি করার ঘটনা এগারটি। রিকি পন্টিং একমাত্র ক্রিকেটার যিনি জোড়া সেঞ্চুরি করেছিলেন। তাতে যা দাঁড়ায়, দশ ক্রিকেটার পেয়েছেন নিজেদের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি। মুশফিকুর ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনেই ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে নিজের নাম তুলে ফেলতে পারতেন। কিন্তু দিনের খেলা শেষ হয়ে গেল নির্ধারিত সময়েই, বিকেল সাড়ে চারটায়।

আরো পড়ুন:

মুশফিকুরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পন্টিং বললেন, ‘অবিশ্বাস‌্য অর্জন’

রঙ চটা ক‌্যাপে ২০ বছর, একশ টেস্টে অনন‌্য মুশফিকুরের শ্রেষ্ঠত্ব

আলোক স্বল্পতায় আম্পায়াররা নির্ধারিত সময়েই খেলা শেষ করে দেন। তবুও মুশফিকুর আশায় ছিলেন। বাড়তি একটা ওভারের আশায় ক্রিজে দাঁড়িয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু আম্পায়াররা বেলস ফেলে খেলার ইতি টানেন। যদিও মুশফিকুরকে সেঞ্চুরি করতে না দেওয়ার কৌশল যতটা সম্ভব প্রয়োগ করেছে আয়ারল‌্যান্ড। শেষ ২১ মিনিটে মাত্র চার ওভার করেছে তারা। সময়ক্ষেপণ করে মুশফিকুরের অপেক্ষা বাড়িয়েছে অতিথিরা। শততম টেস্টে শতকের অপেক্ষায় তাকে থাকতে হবে আগামীকাল প্রথম প্রহর পর্যন্ত।

মুশফিকুরের টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ২৯২ রান তুলেছে। ৯৯ রানে অপরাজিত টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান করা মুশফিকুর। লিটন অপরাজিত ৪৭ রানে। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে এসেছে ৯০ রান। 
এই ম‌্যাচে সব আলো মুশফিকুরের ওপর। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে একশতম টেস্ট খেলার গৌরব তার। তাকে সম্মানও জানিয়েছে বিসিবি। বিশেষ টেস্ট ক‌্যাপ, অটোগ্রাফ করা জার্সি, ক‌্যাপের বিশেষ কেসকেট প্রদান করা হয়েছে। এদিন মুশফিকুর পাশে পেয়েছেন তার পরিবারকেও। বাবা-মা, স্ত্রী ও সন্তানদের সামনেই গৌরবের মুহূর্তটি ভাগাভাগি করে নিয়েছেন তিনি।

দিনের প্রথম সেশনেই মাঠে নামতে হয়েছে তাকে। নাজমুল হোসেন শান্ত তৃতীয় ব‌্যাটসম‌্যান হিসেবে আউট হলে ক্রিজে আসেন। পুরো গ‌্যালারি দাঁড়িয়ে তাকে স্বাগত জানায় মাঠে। ২০০৫ সালে টেস্ট অঙ্গনে প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন। ২০ বছর পর শততম টেস্ট খেলতে মাঠে নেমেছেন মিরপুর শের-ই-বাংলায়।

গ‌্যালারিতে ছিল বিশাল ব‌্যানার। স্টেডিয়ামের আশে-পাশে বিভিন্ন জায়গাতেও ছিল তার ব‌্যানার।

দিন শেষে ৯৯ রানে নট আউট মুশফিকুর। ক্রিজে সময় কাটিয়েছেন ২৫১ মিনিট। খেলেছেন ১৮৭ বল। বেশ নিয়ন্ত্রিত এই ইনিংস। প্রথম বাউন্ডারি পেতে অপেক্ষা করেছেন ৬৮ বল। ফিফটিতে পৌঁছান ১০৯ বলে। চা-বিরতির পর প্রথম বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে পেয়ে যান ফিফটি।

ফিফটি থেকে সেঞ্চুরির দিকে যেতে মুশফিকুর ছিলেন আরো নিয়ন্ত্রিত। ভুল কোনো শটই তিনি আজ খেলেননি। আয়ারল‌্যান্ডকে একটুও সুযোগ দেননি। সেঞ্চুরিতে আজকেই পূর্ণতা পেত তার ধৈর্যশীল ইনিংস। কিন্তু মুশফিকুর অপেক্ষায় থাকলেন, অপেক্ষায় রাখলেন গোটা বাংলাদেশকে। আগামীকাল সাত সকালেই হয়তো আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মুশফিকুর নাম লিখিয়ে ফেলবেন জাভেদ মিয়াদাদ, রিকি পন্টিংদের পাশে।

মিরপুরের উইকেট নিয়ে আলোচনা ছিল। পর্যাপ্ত রান হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিল। প্রথম দিন প্রায় তিনশর কাছাকাছি রান করায় কিছুটা বড় রানের আশা আছে। তবে বড় রানের উইকেটও নয়। মুমিনুল যেমন বললেন, ‘‘এখানে সাড়ে তিনশ মানেই অন‌্য মাঠে চারশর সমান। কারণ আউটফিল্ড স্লো।’’

এমন উইকেটে টস জিতে ব‌্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা খারাপ করেনি বাংলাদেশ। জয় ও সাদমান ৫২ রানের জুটি গড়েন। অনায়েসেই দুজন ব‌্যাটিং করছিলেন। আয়ারল‌্যান্ডের বোলাররা তেমন আলো ছড়াতে পারেননি। তবে দুই ওপেনার বড় স্কোরের সুযোগ হাতছাড়া করেন। সাদমান ৩৫ ও জয় ৩৪ রানে ফেরেন সাজঘরে। শান্ত ক্রিজে এসে হতাশ করে ফিরে যান ৮ রানে। ৯৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে খানিকটা ব‌্যাকফুটে ছিল বাংলাদেশ।

সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন মুশফিকুর ও মুমিনুল। ১০৭ রানের জুটি গড়েন দুজন। ৬৩ রানে মুমিনুলের ইনিংসটি থেমে গেলেও মুশফিকুর ছিলেন অবিচল। নিজের বড় উপলক্ষ রাঙাতে শেষ বিকেল পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান। সেঞ্চুরিটা হলে গেলে হয়তো দিনটা পুরোপুরি তার হয়ে যেত। তবে শেষ বিকেলে যে রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে, যে আবহ তৈরি হয়েছিল তার সেঞ্চুরিকে ঘিরে তা অন‌্য রকম এক আনন্দই দিয়েছে। রাত পেরিয়ে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত এই রোমাঞ্চেই ডুবে থাকতে হবে পুরো বাংলাদেশকে।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র প রথম উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

মুশফিকুরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পন্টিং বললেন, ‘অবিশ্বাস‌্য অর্জন’

প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে মুশফিকুর রহিম আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) শততম টেস্ট ম‌্যাচে মাঠে নেমেছেন। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ক‌্যারিয়ারের একশতম টেস্ট খেলছেন মুশফিকুর। ম‌্যাচ সংখ‌্যার তিন অঙ্কের ছোঁয়ায় মুশফিকুরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের অন‌্যতম সেরা ব‌্যাটসম‌্যান রিকি পন্টিং।

আইসিসির দেওয়া ভিডিও বার্তায় মুশফিকুরকে  অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘‘এটি একটি অবিশ্বাস্য অর্জন। মুশফিকুর এটি করা প্রথম বাংলাদেশি হয়েছেন।’’

আরো পড়ুন:

শততম টেস্টের মঞ্চে মুশফিকুরকে সম্মানজনক সংবর্ধনা

মুশফিকুরের ‘সেঞ্চুরির’ রঙে রাঙানো ক্যানভাস

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৬৮ টেস্টে ১৩ হাজার ৩৭৮ রান করেছেন পন্টিং। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তার ক‌্যারিয়ার। পন্টিংয়ের মতোই ক‌্যারিয়ার মুশফিকুরের, ২০ বছরের। ক‌্যারিয়ার লম্বা হওয়াতে মুশফিকুরকে বড় ভাবে মূল‌্যায়ন করেছেন পন্টিং, ‘‘আমি সবসময়ই বলেছি, আমি একজন উচ্চমানের ক্রিকেটারকে তাদের লম্বা ক‌্যারিয়ার দিয়ে বিচার করি। সেরা খেলোয়াড়রা বছরের পর বছর ধরে বড় মঞ্চে পারফর্ম করে।’’

‘‘যখন আপনি ৭০, ৮০, ৯০টি টেস্ট খেলেন, তখন আপনি নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার এবং উন্নত করার, এমনকি আরও ভালো হওয়ার সুযোগ পান। এটা কখনোই সহজ নয়। এটা একটি অসাধারণ কৃতিত্ব। আমি মুশফিকুরকে তার ১০০তম টেস্টের জন্য অভিনন্দন জানাই এবং আশা করি সে তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ম্যাচটি খেলবে।’’

সেই পথেই আছেন তিনি। প্রথম দিন শেষে ৯৯ রানে অপরাজিত আছেন। পন্টিং একমাত্র ক্রিকেটার যিনি একশতম টেস্টে দুই ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। এছাড়া আরো নয় ক্রিকেটার নিজেদের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি পেয়েছেন। এই ম‌্যাচে সেঞ্চুরি তুলে মুশফিকুর কী অমরত্বের স্বীকৃতি পেয়ে যাবেন?

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুশফিকুরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পন্টিং বললেন, ‘অবিশ্বাস‌্য অর্জন’
  • ছবির গল্পে মুশফিকের শততম টেস্টের আয়োজন
  • শততম টেস্টে শতভাগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মুশফিকের
  • মুশফিকের শততম টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
  • ‘ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা যে কারও চেয়ে মুশফিকের বেশি’
  • মুশফিকের শততম টেস্ট বিনা মূল্যে দেখতে পারবেন শিক্ষকেরাও
  • ছবির আবদার, অনুশীলন— শততম টেস্টের আগে আর কী করলেন মুশফিক
  • মুশফিকের মধ্যে ১৫০ টেস্টের ক্ষুধা দেখেন সিমন্স
  • মুশফিকুরের পর্দার আড়ালের পরিশ্রমের গল্প শোনালেন আয়ারল্যান্ডের কোচ