সিওপিডি প্রতিরোধ ও চিকিৎসাযোগ্য, বিশেষত যদি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হয়। সঠিক চিকিৎসা, ফুসফুসের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, পুষ্টিসহায়তা, প্রতিষেধক টিকা ও ধূমপান ত্যাগ করে এ রোগে আক্রান্ত অনেক মানুষ সক্রিয় ও পরিপূর্ণ জীবনযাপন চালিয়ে যেতে পারেন।

কীভাবে বুঝবেন, কেন হয়

সিওপিডিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা হাঁটা, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা, এমনকি দীর্ঘ সময় কথা বলার মতো দৈনন্দিন কাজেও রুদ্ধশ্বাস অনুভব করেন। রোগটি ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে খেয়াল না–ও হতে পারে। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে দেরিতে রোগ নির্ণয় করা হয়।

ধূমপান সিওপিডির সবচেয়ে সাধারণ কারণ, তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়। কর্মক্ষেত্রে বায়ুদূষণ, পরোক্ষ ধোঁয়া, ধুলা, ধোঁয়া ও রাসায়নিকের দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শে থাকাও ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, বংশগত কারণের ভূমিকাও থাকে।

সচেতনতা জরুরি কেন

বিশ্বব্যাপী লাখো মানুষ সিওপিডিতে আক্রান্ত। অনেকেই যে রোগটিতে আক্রান্ত, সেটা তাঁরা নিজেরা জানেন না। প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেলে জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগটির অগ্রগতি ধীর করে দেওয়া যায়।

শ্বাস-প্রশ্বাসের সামান্য অস্বস্তিও দৈনন্দিন কাজকর্ম, ঘুমের মান, মানসিক সুস্থতায় প্রভাব ফেলে। তামাকজাত পণ্য পরিহার, দূষণের সংস্পর্শ কমানো ও ফুসফুসের জন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখা ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়।

এ রোগ উদ্বেগ ও হতাশা তৈরি করে। সামাজিক কার্যকলাপকে সীমিত করতে পারে। তাই আগেই সচেতন হতে হবে।

আরও পড়ুনদূষিত বায়ুর এই শহরে ফুসফুস ভালো রাখবেন কীভাবে০৩ মার্চ ২০২৪করণীয়

সিওপিডি হলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপান এড়িয়ে চলুন। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যায়াম করুন। মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে সাহায্য নিন। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকুন। বাড়িতে বায়ুদূষণ যেন না হয়, তা নিশ্চিত করুন।

অতিরিক্ত ওজন হলে তা কমান। দৌড়, হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার এমনকি জিমে যাওয়ার মাধ্যমে সক্রিয় থাকুন। সিওপিডি দ্রুত ও সহজে নির্ণয় করা হয় না। কারণ, এর প্রাথমিক লক্ষণকে ‘স্বাভাবিক বার্ধক্য’, ‘ফিটনেসের অভাব’ বা ‘ধূমপানের কারণে কাশি’ বলে ভুল করা হয়।

অনেকে শ্বাসকষ্টে অভ্যস্ত হয়ে যান, বুঝতেও পারেন না যে রোগটি হয়েছে। এই বিলম্বের কারণে রোগটি নির্ণয় করতে করতে ফুসফুসের ক্ষতিও অনেক বেড়ে যায়।

ডা.

মো. জাকির হোসেন সরকার, সভাপতি, বাংলাদেশ ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড স্লিপ সোসাইটি (বিপস)

আরও পড়ুনফুসফুস সুস্থ রাখতে কী করবেন২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি

ব্যবসায় অংশীদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২৭ লাখ টাকা ‘আত্মসাৎ করা ও হত্যার হুমকি দেওয়ার’ অভিযোগের মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী ও তার ভাই আলিসান চৌধুরী। 

রবিবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক আফরোজা তানিয়া শুনানি শেষে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন মেহজাবীন চৌধুরীর আইনজীবী তুহিন হাওলাদার। 

আরো পড়ুন:

আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন মেহজাবীন চৌধুরী

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে যা বললেন মেহজাবীন

সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে মেহজাবীন চৌধুরী তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। তাতে এ মামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন এই অভিনেত্রী।    

মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “একজন অজানা ব্যক্তি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে আমার ও আমার ১৯ বছর বয়সি ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত নয় মাসে আমি এই মামলার কোনো তথ্য পাইনি, কারণ অভিযোগকারী পুলিশকে আমার সঠিক ফোন নম্বর, সঠিক ঠিকানা বা কোনো যাচাইকৃত তথ্য দিতে পারেননি। তিনি দাবি করেন যে, ২০১৬ সাল থেকে তিনি আমার সাথে ‘ব্যবসা’ করছিলেন।”  

মেহজাবীন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি অভিযোগকারী। এ বিষয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “তবে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ নেই। তিনি বলেন, ‘তিনি ২০১৬ সাল থেকে আমাকে ফেসবুকে মেসেজ দিতেন। কিন্তু তিনি যা দেখাতে পারেননি।’ একটি মেসেজ যেটা তিনি আমাকে পাঠিয়েছিলেন মেসেজের, হোয়াটসঅ্যাপ বা আমার নম্বরে, কিংবা আমার পক্ষ থেকে একটি উত্তর, এমনকি একটি স্ক্রিনশটও না।” 

অভিযোগকারীর পরিচয় অসম্পূর্ণ। এ তথ্য উল্লেখ করে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “তার পরিচয় অসম্পূর্ণ। তার সম্পূর্ণ পরিচয়পত্র এখনো জমা দেয়া হয়নি। তার এনআইডি পর্যন্ত অনুপস্থিত। অভিযোগকারী ও তার আইনজীবী ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। গতকাল খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে অভিযোগকারী তার ফোন বন্ধ করে রেখেছেন, এমনকি তার আইনজীবীর নম্বরও বন্ধ।” 

আর্থিক লেনদেনের কোনো নেই। মেহাজাবীনের ভাষায়, “আর্থিক লেনদেনের কোনো প্রমাণ নেই। তিনি দাবি করেন যে, তিনি আমাকে ২৭ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি দেখাতে পারেননি—কোনো ব্যাংক লেনদেন, কোনো চেক, বিকাশ লেনদেন, কোনো লিখিত চুক্তি, কোনো রশিদ, কোনো সাক্ষী, কিছুই না। একটি কাগজপত্রও নেই।” 

অপহরণের অভিযোগের বিষয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “১১ ফেব্রুয়ারির ঘটনাটি সম্পূর্ণ প্রমাণহীন। তিনি দাবি করেন ১১ ফেব্রুয়ারি আমি তাকে চোখ বেঁধে হাতিরঝিলের একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিলাম, আমার ছোট ভাইসহ আরো ৪–৫ জনকে নিয়ে। গত নয় মাসে তিনি দেখাতে পারেননি রেস্টুরেন্ট বা আশেপাশের রাস্তার এক সেকেন্ডেরও সিসিটিভি ফুটেজ, কোনো সাক্ষী, কোনো প্রমাণ, কিছুই না। হাতিরঝিল ঢাকার সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি-নিয়ন্ত্রিত এলাকা, তবু তিনি একটি ছবি বা ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারেননি।” 

মামলা হওয়ার পর ৯ মাস কেটে গেলেও কোনো নোটিশ পাননি মেহজাবীন চৌধুরী। এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গত নয় মাসে আমি কোনো নোটিশ পাইনি। এই নয় মাসে আমি কোনো পুলিশ স্টেশনের ফোন কল, কোনো কোর্টের নোটিশ বা ডকুমেন্ট। একটি নোটিশ পেলেও আমি অনেক আগে থেকেই আইনি ব্যবস্থা নিতাম।” 

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন মেহজাবীন। তার ভাষায়, “আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই মামলার কোনো ভিত্তি না থাকলেও, যখন জানতে পারলাম যে একটি অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে, তখন আমি আইনি প্রক্রিয়া মেনে জামিন নিয়েছি। কারণ আমি আমাদের আইন ও নিয়ম মানি। প্রমাণ ছাড়া দায়ের করা মামলা কখনো সত্য হয়ে যায় না। সত্য খুব দ্রুতই আদালতে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখনকার দিনে কাউকে অপমান করা, মানহানি করা বা ভাইরাল হওয়ার জন্য অন্যকে ব্যবহার করা খুবই সহজ হয়ে গেছে। এই ব্যক্তির যে উদ্দেশ্যই থাকুক, আমার বা আমার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করে, সে যা-ই করতে চায়—আমি বিশ্বাস করি সবকিছু খুব দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে যাবে।” 

অনুরোধ জানিয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “এর আগ পর্যন্ত আমি সবাইকে অনুরোধ করব—দয়া করে সহানুভূতিশীল হোন, দয়া করে মানবিক হোন এবং কাউকে না জেনে কোনো মিডিয়া ট্রায়াল শুরু করবেন না। গত ১৫ বছর ধরে আমি আমার কাজ, আমার পেশা এবং আমার দর্শকদের জন্য যে পরিমাণ পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা দিয়ে এসেছি, সেই পরিশ্রমের পরেও আজ আমাকে এসব ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে—এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি