অগ্রণী ব্যাংকের ১৮৯ কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারি মামলায় ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি একসময় অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ছিলেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ সাব্বির ফয়েজ এই আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মশিউর রহমান জানান, আজ ওবায়েদ উল্লাহকে আদালতে হাজির করা হয়। তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। দুদকের পক্ষে তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজালাল তাঁকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে আজ সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে ওবায়েদ উল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আবেদনে বলা হয়েছে, আসামির বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অগ্রণী ব্যাংকের চট্টগ্রামের আছাদগঞ্জ শাখা থেকে বিতরণকৃত ট্রাস্ট রিসিপ্ট (টিআর) ঋণের মাধ্যমে ৫১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় মামলা হয়েছে। বর্তমানে সুদে-আসলে এ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। মামলার তদন্ত ও বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কারাগারে রাখা প্রয়োজন।

ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ২০২৫ সালের ১৬ জুলাই ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর আগে তিনি রূপালী ব্যাংকের এমডি, অগ্রণী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর অগ্রণী ব্যাংকের চট্টগ্রামের আছাদগঞ্জ শাখা থেকে নিয়ম ভেঙে ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে ১৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

মামলার অপর আসামিরা হলেন অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ আবদুল হামিদ, অগ্রণী ব্যাংকের আছাদগঞ্জ শাখার সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার ও মহাব্যবস্থাপক মোস্তাক আহমেদ, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক মো.

আবুল হোসেন তালুকদার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক তাজরীনা ফেরদৌসী ও সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. মোফাজ্জল হোসেন। এ ছাড়া মেসার্স মিজান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. মিজানুর রহমান, জাসমীর ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেডের এমডি জহির আহমেদ, ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক টিপু সুলতান ও ফরহাদ মনোয়ারকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মেসার্স মিজান ট্রেডার্সের নামে ছোলা ও গম আমদানির জন্য ঋণ মঞ্জুর করা হলেও প্রকৃত সুবিধাভোগী ছিল নুরজাহান গ্রুপ ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাসমীর ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেড। বেতনভোগী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ঋণ অনুমোদন ও উত্তোলন করে। নুরজাহান গ্রুপের একটি বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে শাখায় হিসাব খোলা থেকে শুরু করে হিসাব পরিচালনার জন্য নুরজাহান গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাসমীর ভেজিটেবল অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদকে হিসাব পরিচালনার জন্য দেওয়া হয়। নতুন এই প্রতিষ্ঠানকে বিপুল অঙ্কের ঋণ মঞ্জুরি এবং পরে ঋণ মঞ্জুরিপত্রের শর্তাবলি যথাযথভাবে পরিপালন নিশ্চিত না করে সুপরিকল্পিতভাবে ব্যাংকের ৫১ কোটি টাকা (বর্তমানে সুদে-আসলে ১৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা) আত্মসাৎ করেন আসামিরা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত ১৮৯ ক ট ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

এস আলমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগসংক্রান্ত আদেশ স্থগিত

এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এ–সংক্রান্ত মেমো স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী ও বিচারপতি রাজিউদ্দিন আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেন।

এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ ২০২০ সালের ১৯ জুলাই এক মেমোতে জানায়, সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব গ্রহণের কারণে সাইফুল আলমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের আবেদন সরকার মঞ্জুর করেছে। এর বৈধতা নিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পক্ষে চলতি মাসে রিটটি করা হয়।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ূম, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আলম মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ূম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতারণামূলক উদ্দেশ্য থেকে সাইফুল আলম (এস আলম) ২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন; যাতে দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া টাকা দিতে না হয় এবং ভবিষ্যতে সিঙ্গাপুরের নাগরিক দাবি করে সুরক্ষা পেতে পারেন। নিজেকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে দাবি করে তিনি আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে গিয়েছেন। অসৎ উদ্দেশ্যে তাঁর বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। সাইফুল আলমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে মেমো দিয়ে মঞ্জুর করেছিল, তা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ফলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বহাল থাকছেন।

জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী আরও বলেন, ২০২০ সালে নাগরিকত্ব ত্যাগ করলেও বিভিন্ন ঋণসংক্রান্ত নথি–তথ্যাদিতে এস আলম নিজেকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে দাবি করছেন দেখা যাচ্ছে। আবার সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে আন্তজাতিক সালিসি আদালতে গিয়ে বাংলাদেশে তাঁর বিনিয়োগের সুরক্ষা চাচ্ছেন। তাঁর কাছে ইসলামী ব্যাংকের পাওনা এক হাজার কোটির বেশি টাকা।

সিঙ্গাপুর থেকে সাইফুল আলমকে কূটনৈতিক মাধ্যমে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি এবং গ্রাহকদের টাকা পরিশোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয় ও পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—এ বিষয়ে রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে বলে জানান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ূম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণমাধ্যমে আসামির বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার ব্যাখ্যা দিলেন পুলিশ কমিশনার
  • আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখা দিলেন আরএমপি কমিশনার
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আপিলের রায় হলে কী হতে পারে
  • লালদিয়ার পর এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিউমুরিং টার্মিনাল
  • এই রায়ে কষ্ট পেয়েছি: শেখ হাসিনার আইনজীবী
  • বিশ্ব দেখছে শেখ হাসিনার বিচার
  • হৃদয় থেকে বলছি, শেখ হাসিনা খালাস পেলে খুশি হব: রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী
  • দুই আসামিকে খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি পেল রাষ্ট্রপক্ষ
  • এস আলমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগসংক্রান্ত আদেশ স্থগিত